২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘প্রভু, এ কেমন কৌতুক’

দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হানাহানি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছেই। - ফাইল ছবি

মাত্র কিছুদিন আগে ঢাকা কলেজের সম্মুখে ছাত্র-হকারদের সংঘর্ষ দেশের মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। কারণ সংঘর্ষের উপলক্ষ ছিল ছাত্রদের চাঁদাবাজি! অধুনা একশ্রেণীর নীতিহীন-মানুষ নামধারী কিছু দুর্বৃত্তের চাঁদাবাজি পেশায় পরিণত হয়েছে। ছাত্ররা যদি এখন ছাত্রত্ব ফেলে রেখে দুর্বৃত্তের পেশায় নাম লেখায়, সে জন্যই জাতি স্তম্ভিত ও হতবিহ্বল হয়েছিল। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা আগামী দিনে আশা ভরসাস্থল ছাত্রসমাজের এক বীভৎস চিত্র সে দিন বেরিয়ে এসেছিল। এরপর অতিসম্প্রতি দুই বৃহৎ ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দু’দিন দফায় দফায় সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সংঘটিত হয়ে গেল। তা ছাড়া হরহামেশাই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হানাহানি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছেই। এসব সংঘর্ষে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র হরদম ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন জনপদের এমন সংঘর্ষকে ধরে নেয়া হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অসহিষ্ণুতা। এটা অবশ্য মুদ্রার একটা পিঠ, সন্দেহ নেই; কিন্তু আরো গভীরে প্রবেশ করলে, বলতে হবে আদর্শিক দেউলিয়াত্ব এবং নিজেদের আদর্শ দিয়ে মানুষ বিমোহিত করতে না পারার ভীতি ও বোধ। তাদের আদর্শের আবেদন মানুষের কাছে ফিকে, ভুল ত্রুটিপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্তম আদর্শের জোয়ারে হয়তো জনগণ ভেসে যাবে। নিজেদের আদর্শের এমন পরাজয় নিয়ে ভেবে তাকে পরিশুদ্ধ, গ্রহণযোগ্য ও জননন্দিত করার সামর্থ্যহীনতায় প্রতিপক্ষের জন্য আদর্শ ঠেকাতে লাঠিসোটা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে। এটা কোনো দল বিশেষের নিছক নৈতিক পরাজয় নয়, জাতির ললাটে ভয়ানক এক দুর্যোগের চিহ্ন এঁটে দেয়া। এসব নিয়ে নেতারা কিছু কি ভাবছেন? আরো একটা বিষয় ভেবে দেখা দরকার, যখন সংঘর্ষ চলে তখন অদূরেই পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে থাকে কেন? এসব নীরবতার কারণ কী? তাদের পুরোপুরি অনুরাগ বিরাগের বশবর্তী হওয়া। তাদের আনুগত্য থাকবে শুধু সংবিধান ও অন্যান্য বিধিবিধানের প্রতি; কিন্তু আজ এই আনুগত্যের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে দেখা যেতে পারে। আমাদের সংবিধান বলছে (অনুচ্ছেদ : ৩৭) ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অন্যান্য স্থানে যে হুজ্জত হাঙ্গামা আমরা দেখছি, সেখানে বহুজনকে কি জনগণ সশস্ত্র অবস্থায় দেখতে পাচ্ছে না? এসব দৃশ্য আর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতি কি সাদৃশ্যপূর্ণ? তাদের তো বরং সবসময় পক্ষপাতিত্বের আচরণ করতে দেখা যায়। এর কারণটা কী, সেটি স্পষ্ট করার জন্য সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল তার লিখিত দীর্ঘ চাকরিজীবনের অভিজ্ঞতাসংবলিত পুস্তকের প্রকাশনা উৎসবে বক্তব্য পেশ করেছেন। তাতেই আমাদের প্রশ্নের জবাব আছে। ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার দেয়া সেই বক্তব্য প্রায় জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘এ দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল চায় তারা যা বলবে পুলিশ তাই করবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক শক্তি ও আমলাতন্ত্র, এরা কখনো পুলিশের পরিবর্তন চাইবে না। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা মনে করে, পুলিশ তাদের নিজের সম্পদ। সংসদ সদস্য চান, তিনি যা বলবেন, ওসি (থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তা) সেটিই করবেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় মৌলভীবাজারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হইনি। সাবেক পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে আইনের সংস্কার প্রয়োজন। বিচারব্যবস্থা নিয়ে শহীদুল হক আরো বলেন, বিচারব্যবস্থার একটি অংশ পুলিশ। তারা যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারে তাহলে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম (অপরাধীদের বিচারব্যবস্থা) কখনো কার্যকর হবে না। তিনি বলেন, সবাই পুলিশের সেবা চায়; কিন্তু কেউ পুলিশকে পছন্দ করে না। এসব বক্তব্য সাবেক পুলিশ প্রধানের অভিজ্ঞতাসঞ্জাত। আমরা এ থেকে সহজেই বুঝতে পারি, ক্ষমতাসীনদের অনুগামীরা কিভাবে এত সাহস দেখায়, পুলিশ কেন নীরব থাকে, অথবা সশস্ত্র অবস্থায় মিছিলকারীদের সহযোগী হয়। দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থা গত ৫০ বছরে কি এতটুকু উন্নত করার লক্ষ্যে কোনো সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছে? এ দিকে কোনো সরকারের মনোযোগও তো ছিল না। তাদের উৎসাহ ছিল রাজনীতি এবং নিছক রাজনীতি। রাজনীতি ও আদর্শের কখনো তারা সমন্বয় করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে একসেপশন কিছুটা হয়তো আছে; কিন্তু সময়টা কখনোই তাদের জন্য অনুকূল ছিল না বিধায় এ ব্যাপারে ষোলআনা মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু এমনটা তো গণতান্ত্রিক দেশের চলার পথ নয়। সব সভ্য দেশে কোথাও কখনো হাঙ্গামা শুরুর কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সেখানে উপস্থিত হয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে এতটুকু বিলম্ব হয় না। এমন দিন কবে এ দেশে আসবে?

এসব গোলযোগ হাঙ্গামা নিয়ে এখনো আমাদের নেতাদের মাঝে গভীর কোনো বোধ সচেতনতা জাগ্রত হচ্ছে, সেটি বলা যাবে না। সমাজে যা গভীর থেকে গভীরতর ক্ষতের সৃষ্টি করে চলেছে, সাথে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি মানসিক বৈকল্য দেখা দিতে পারে। নেতাদের মাঝে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না হয়ে থাকতে পারে; কিন্তু সেসব অভিভাবক যারা কষ্ট করে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন, তারা এখন অপরাজনীতির খলনায়ক হয়ে উয়ে উঠছেন! তাদের মনোকষ্টটা কেউ উপলব্ধি করছে? এ দিকে, কিন্তু সুশীলসমাজ ও অগ্রসর মানুষ যারা দেশ জাতির মঙ্গল নিয়ে ভাবেন ও ভাবছেন, তারা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে হতাশ ও শঙ্কিত। কোন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-ছাত্রসংগঠন ও রাজনীতিক দল এসব ঘটাচ্ছে; এটা বড় প্রশ্ন নয়, বোঝার বিষয় হচ্ছে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়া, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা, সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা যেভাবে উবে যাচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়া। এসব অপরাজনীতি তথা সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ এই জনপদকে আগামীতে একটা ‘নৈরাজ্যের ক্ষেত্র’ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে চিহ্নিত করে দেবে। এটাই বোদ্ধাসমাজের উদ্বেগের কারণ। অথচ রাষ্ট্রের পক্ষ-বিপক্ষের রাজনৈতিক শক্তির চেতনায় এমন অনুভূতি কি অনুপ্রবেশ করছে?

কথা আরো আছে, সভ্য ভব্য সমাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নাগরিকদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং নির্দোষ আইন রচনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নাগরিকদের যাবতীয় মৌলিক-অধিকার সমুন্নত রাখা, যাতে মানুষ শান্তি স্বস্থি স্থিতি লাভ করে। এ ধারণার ওপর অটুট আস্থা রাখা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পবিত্র দায়িত্ব। কেউ যেন বিধিবিধানের কোনো ব্যত্যয় না ঘটায় এবং কারো অধিকার নেই, আইনকে হাতে তুলে নেয়ার; এসব ঘটনা শুধু অসহিষ্ণুতা, দুর্নীতি, আদর্শের অবক্ষয়জনিত কারণেই ঘটছে বলে চিহ্নিত করা ঠিক হবে না। এসবের সাথে আরো অনেক বিষয়কে সম্পৃক্ত করতে হবে, যারা সমাজচিন্তক তারা এর কারণটির সঠিক ব্যাখ্যাটা দিতে বেশি সক্ষম হবেন। আমাদের সাদামাটা চোখে বিবেচনা বোধে যতটুকু ধরা পড়ছে, তার কিছু কথা এখানে উল্লেখ করা খুব অসঙ্গত হবে না। অনেকেই মনে করেন, দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আমরা যে চরম নৈতিকতার সঙ্কটে ভুগছি, এও সেসব সংঘর্ষ-সঙ্ঘাতের অন্যতম একটি কারণ, তাত্ত্বিকদের বিবেচনায়, ‘নৈতিকতার’ অর্থ হলো ভদ্রতা, উন্নত ও দৃঢ়চরিত্র, উত্তম আচরণ। এটি মূলত উদ্দেশ্য, সিদ্ধান্তের মধ্যকার ভালো-মন্দের দ্বন্দ্ব, উচিত-অনুচিতের ভেতর পার্থক্যকারী। মন্দ-অনুচিতের একটা ‘ওয়েভ’ বা প্রবাহ অব্যাহতভাবে জাতির ওপর দিয়ে এখন প্রবাহিত হচ্ছে, তার সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে উপরে বর্ণিত দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতের কারণগুলোর।

নৈতিকতা হলো এমন মানদণ্ড বা নীতিমালা যা নির্দিষ্ট কোনো আদর্শ, ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে। আজকে অবশ্য অনেকেই একে সেকেলে বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারেন। কিন্তু এসব বিষয়কে সমগ্র মানুষের কল্যাণকর হিসেবেই আখ্যায়িত করা উচিত। নৈতিকতাকে ‘সঠিকতা বা ন্যায্যতা’-ও বলা যায়। নৈতিকতার আদর্শে পরানীতিবিদ্যার অন্তর্ভুক্তি থাকে, যেখানে নৈতিক বৈশিষ্ট্যগুলো, উক্তি, প্রবণতা এবং বিচারের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা-বিশ্লেষণ করা হয়। নৈতিকতার একটি আদর্শ উদাহরণ হলো- আমাদের উচিত অন্যের সাথে সেভাবে আচরণ করা, যেমনটা আমরা নিজেরা অন্যের কাছ থেকে আশা করি। এমনতর মন-মানসিকতা জাতীয় জীবনে কি আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি? নিজেরা বা প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা এসব বোধকে আত্মস্থ করতে পেরেছি? যেহেতু পারিনি, তাই তার ফল তো ভোগ করতেই হবে। যেমন করে নদীর পাড় পানির তোড়ে তীরের নিচে ক্ষয়ে যেতে থাকে, তা কেউ দেখে না। পরে একসময় বড় মাটির খণ্ড যখন ওপর থেকে ধপাস করে ভেঙে পড়ে নদীর পানিতে, তখন সবাই ভাঙনটা দেখে। এভাবেই পাড় ভাঙতে ভাঙতে গ্রামের পর গ্রাম, এমনকি শহর ভেঙে বিলীন হয়ে যায় নদীতে। বাংলাদেশের সমাজের মানুষের সততা নীতিনৈতিকতার বোধ ক্ষয়ে যেতে যেতে এভাবেই অদৃশ্য হয়ে গেছে বহু আগে। তাই বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে দুর্নীতি অবক্ষয়ের প্রতিযোগিতায় আমরা শীর্ষদের তালিকায় থাকছি বরাবরই।

উপরে যা কিছু বলে এসেছি তার সবই আইনের শাসনের পরিপন্থী। যখন যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনের শাসন হতে হবে মূল ভিত্তি। আইনের শাসন প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার নীতিবিশেষ, যেখানে সরকারের সব কার্যক্রম আইনানুগভাবে পরিচালিত হতে হবে এবং সেখানে আইনের স্থান সব কিছুর ঊর্ধ্বে। ব্যবহারিক ভাষায় আইনের শাসনের অর্থ এই যে, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার সর্বদা আইন অনুযায়ী কাজ করবে, যার ফলে রাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিকের কোনো অধিকার লঙ্ঘিত হলে ত্বরিত তার প্রতিকার করবে। মোটকথা, আইনের শাসন তখন বিদ্যমান থাকে যখন সরকারি ক্ষমতা কর্তৃত্ব অনুশীলন হয় জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে, একটি উপযুক্ত আস্থাভাজন সংসদের মাধ্যমে।

সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের (৩২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না) সীমিত শাসন ও আইনের শাসনের ধারণাটি এখানে দৃঢ়তর হয়েছে, যেখানে একজন ব্যক্তির বাঁচার অধিকার ও স্বাধীনতা তথা মৌলিক অধিকারগুলোর মর্ম নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার অনুপস্থিতি এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও অধিকারের অঙ্গীকার রয়েছে এখানে।

আমরা সবাই তো উপলব্ধি করছি, এখন কোনোরকমে দিন অতিবাহিত করছি। গত ৫০ বছরে দেশে যারাই যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেছে, তাদের দ্বারা কতটা সুশাসন হয়েছে তা আজকে যত ক্লেদ গ্লানি দুঃখ জমেছে তা থেকে তার স্পষ্ট প্রমাণ হয়ে গেছে। এই জনপদে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বৈষম্য-বঞ্চনা, হত্যা-খুন, জখম-গুম হয়ে যাওয়া, সবই এখন সমাজ জীবনের নিত্যসঙ্গী। তাই কিছুসংখ্যক মানুষ ব্যতিরেকে আর সবাই তো দুঃখ সইতে পারছে না। শোক-তাপে মর্মে মর্মে মানুষ মরে আছে। ঢাকার রাজপথে যখন দেখা যায়, সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ মানুষ বয়সের ভারে নুয়ে পড়ে থাকাবস্থায় জীবনে চাকা ঘুরাতে রিকশার প্যাডেল ঘোরাচ্ছেন, পত্রিকায় যখন পাঠ করি নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্র মানুষ দু’বেলা খেতে পাচ্ছে না, মধ্যবিত্ত সমাজ উধাও হতে চলেছে, বাজারে গিয়ে মানুষ পণ্যে অগ্নিমূল্যের কারণে কিছু কিনতে পারছে না, তারপরও বলা হয় মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, মানুষ নাকি ভালো আছে। প্রভু! এমন কৌতুক কী করে সহা যায়। প্রভু! তোমার অসীম দয়া, তুমি ক্ষমা কর আমাদের, তোমার রোষ যেন পতিত না হয় আমাদের ওপর। আর কতকাল, ৫০ বছর তো গেল অসত্য আশ্বাসের ভেতর দিয়ে, পা ভারী হয়ে গেছে, আর তো চলা সম্ভব হচ্ছে না।

ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement