২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সঙ্কট ও এর উত্তরণ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সঙ্কট ও এর উত্তরণ। - ছবি : সংগৃহীত

বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন-পরবর্তী বিদ্যমান ব্যবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অনড়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী-পরবর্তী দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনবিষয়ক সংবিধানের বিদ্যমান ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী প্রবর্তন-পূর্ববর্তী সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না এমন অভিযোগ অবসানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। এ ব্যবস্থা প্রবর্তন-পরবর্তী সংবিধানসম্মত পন্থায় গঠিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রথমটিতে আওয়ামী লীগ এবং অপরটিতে বিএনপি বিজয়ী হয়ে পূর্ণ মেয়াদ সরকার পরিচালনা করে।

অষ্টম সংসদের মেয়াদ অবসান-পরবর্তী সংবিধান নির্দেশিত সব বিকল্প নিঃশেষিত না করে দলীয় সরকার মনোনীত রাষ্ট্রপতির অধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হলে সেটি বিতর্কের আবর্তে নিপতিত হয়। অতঃপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত এক গভর্নরের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগমন ঘটে।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারটির অধীন নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের অধিক- ২৩০টি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এ নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ও স্বতন্ত্রের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ছিল যথাক্রমে- ৩০, ২৭, ২ ও ১১টি। এ নির্বাচনে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৮৬ শতাংশের অধিক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন দেখানো হয়। অথচ এ নির্বাচনটির এক মাস পর যে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্যমতে, ভোট প্রদানের হার ছিল ৪৫ শতাংশ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে স্থানীয় নির্বাচনে অধিক হারে ভোট পড়ে। এক মাসের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত দু’টি নির্বাচনে ভোট প্রদানের হারের যে তারতম্য সে বিষয়ে সে সময়কার নির্বাচন কমিশন থেকে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রত্যাশিত হলেও পাওয়া যায়নি। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি সংবিধানের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত বিধানাবলি অনুসরণপূর্বক সাংবিধানিকভাবে গঠিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে অদ্যাবধি এ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারটিকে সংসদে বৈধতা দেয়া হয়নি, যদিও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতা বিষয়ক রিট মামলার আপিলের রায়ে বিচার্য বিষয় বহিভর্‚ত অপ্রাসঙ্গিক আলোচনার অবতারণায় সেনাসমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারটিকে বৈধতা দেয়ার প্রয়াস নেয়া হয়।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল-পরবর্তী দশম সংসদ নির্বাচন তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনে একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে এর অর্ধেকেরও অধিক আসনের ১৫৩ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বিন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। অপর যে ১৪৭টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় এগুলোতে প্রধান বিরোধী দলের বর্জনের কারণে ভোটার উপস্থিতি নগণ্য হলেও অনুগত নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন ক্ষমতাসীনদের বাসনা অনুযায়ী সবধরনের অনিয়ম অবজ্ঞা এবং উপেক্ষাপূর্বক একপেশে ফলাফল প্রকাশ করে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করে। সংসদ গঠনবিষয়ক সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫(২) ও (৩) এ যে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে তাতে উল্লেখ রয়েছে- একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ৩০০ সদস্য এবং তাদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভোটে নির্বাচিত ৫০ জন মহিলা সদস্য সর্বমোট ৩৫০ সদস্য সমন্বয়ে সংসদ গঠিত হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১(১) এ সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ রয়েছে- সংবিধান ও আইন মেনে চলা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি সংসদ গঠনবিষয়ক সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ৬৫(২) ও (৩) এর বিধানাবলির আলোকে বিবেচনায় নেয়া হলে প্রতীয়মান হয়, এ সংসদটি সংবিধানসম্মত পন্থায় গঠিত হয়নি।

দশম সংসদটি সংবিধানসম্মত পন্থায় গঠিত না হলেও এটি তার মেয়াদ পূর্ণের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন দল আগেকার মতো তাদের অধীন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এ নির্বাচনটি অনুষ্ঠানের আগে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয় যে, সমসুযোগ সম্বলিত মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষমতাসীনদের আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে জনসমর্থনের দিক থেকে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনটিতে অংশগ্রহণ করলেও আনুষ্ঠানিক ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের আগের রাতে সচেতন দেশবাসীকে হতবাক ও বিস্মিত করে ক্ষমতাসীনরা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় এবং আইশৃঙ্খলাবাহিনীর নির্লিপ্ততায় ব্যালট পেপারে জোরপূর্বক সিল মেরে ভোটের বাক্স পূর্ণ করলে নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১১(১)(ঘ)-এর বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ের ভোট গ্রহণ প্রয়োজনীয়তা হারায়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন-বিষয়ক সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুযায়ী মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিধানটি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়। এর আগে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচন-বিষয়ক বিধানে উল্লেখ ছিল- মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিধানটি কার্যকর থাকাকালীন সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ যাবৎকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন সাতটি (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, দশম ও একাদশ) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সাতটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়ে পুনঃসরকার গঠন করে। এ সাতটি নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন প্রথম, দশম ও একাদশ- এ তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন ছিল। দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ এ দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন বিএনপি ক্ষমতাসীন ছিল। তৃতীয় ও চতুর্থ এ দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন জাতীয় পার্র্টি ক্ষমতাসীন ছিল। অবশিষ্ট পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম- এ চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনটি কর্মরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকারের অধীন, সপ্তম ও অষ্টম- এ দু’টি সংসদ নির্বাচন সংবিধানসম্মত পন্থায় গঠিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন এবং নবম সংসদ নির্বাচন অসাংবিধানিক পন্থায় গঠিত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। এ চারটি নির্বাচনের কোনোটিতেই নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হতে পারেনি।

এ দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় যে আওয়ামী লীগের অগ্রণী ভ‚মিকা ও অনন্য অবদান ছিল সে দলটি নবম জাতীয় সংসদে নিরেট সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জনমতকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষাপূর্বক একতরফাভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করে সংসদ বহাল থাকাবস্থায় ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তন করে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বছরাধিককাল অবশিষ্ট থাকাবস্থায় ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণে কী পদ্ধতি অনুসৃত হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার এককভাবে নির্বাচন কমিশনের। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ইভিএমের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে ৩০০টি আসনের প্রতিটির সব ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর জোটভুক্ত দলগুলোর ইভিএমের সপক্ষে অবস্থান হলেও অতীতের মতো বিএনপিসহ এর সমমনা দলগুলোর অবস্থান ইভিএমের বিপক্ষে। তা ছাড়া জনমতও ইভিএমের সপক্ষে নয়। সম্প্রতি ডা: জাফরুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইভিএমে যে প্রতীকেই ভোট দেয়া হোক না কেন ভানুমতির খেলায় ১০টি ভোটের সাতটি চলে যাবে ক্ষমতাসীনদের প্রতীক নৌকায়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করলেও দেশের প্রধান বিরোধী দল কোনোভাবেই অতীতের দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে ক্ষমতাসীনদের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আগ্রহী নয়। দেশের বিশিষ্টজনদের মধ্যে অন্যতম ডা: জাফরুল্লাহ ইতোমধ্যে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন জাতীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠানের একটি রূপরেখা ও এর ধরন জাতির সামনে উত্থাপন করেছেন। ডা: জাফরুল্লাহর জাতীয় সরকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রত্যাখ্যান করায় এটি নিয়ে ভাববার কোনো অবকাশ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।

এ কথাটি অনস্বীকার্য যে, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অধীন ব্যালট বা ইভিএম- যে পন্থায়ই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হোক না কেন নির্বাচনে যে তারাই বিজয়ী হবে এ বিষয়ে কোনো দ্বিধা নেই। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দেখা দেয়, দেশের প্রধান বিরোধী দল নিশ্চিত পরাজয় জেনে কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ক্ষমতাসীনদের পুনরায় পাঁচ বছর ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার সুযোগ দেবে?

বাংলাদেশে এ যাবৎকালে কখনো জাতীয় সরকার গঠিত হয়নি। জাতীয় সরকারের সাথে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পার্থক্য হলো- জাতীয় সরকার রাজনৈতিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত এবং জাতীয় সরকারে ক্ষমতাসীন দলসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকে। অপর দিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার অরাজনৈতিক, সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত। জাতীয় ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার উভয়ই অন্তর্বর্তী সরকার। উভয় সরকারকে সাংবিধানিক বৈধতা দেয়া হলে এর গঠন ও কার্যকলাপ সংবিধানসম্মত হয়। এ ধরনের সাংবিধানিক বৈধতা গঠন-পূর্ববর্তী বা পরবর্তীও যেমন দেয়া যায় অনুরূপ গণভোট আয়োজনের মাধ্যমেও দেয়া যায়। সংবিধান দ্বারা ব্যবস্থাটি অনুমোদিত কি না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো জন-আকাঙ্খা বা জনপ্রত্যাশা কী। আমাদের দেশে জন-আকাক্সক্ষায় বা জনপ্রত্যাশায় ইতঃপূর্বে সাংবিধানিক বিধানের অবর্তমানে অথবা অবসানে নতুন বিধান প্রবর্তনপূর্বক একাধিকবার সংবিধান সংশোধনের নজির রয়েছে।

আগামী সংসদ নির্বাচন ক্ষমতাসীন নাকি অন্তর্বর্তী নির্দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হবে- এ বিষয়টির দ্রুত সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচনটি বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অধীন অনুষ্ঠিত হলে দেশের প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বলতে গেলে অনিশ্চিত। এ বাস্তবতায় দেশের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির স্বার্থে উভয় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠান বাঞ্ছনীয়। অতীতে একাধিকবার যেমন- পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম এ তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন উভয় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থায় অনুষ্ঠান করে সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব হয়েছে। সঙ্কট উত্তরণ-পূর্ববর্তী নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিক নাকি অসাংবিধানিক এ প্রশ্নে বড় দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনো বিতর্ক দেখা দেয়নি। সুতরাং আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অন্তর্বর্তী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠানের বিষয়ে দেশের বড় দু’টি দল সম্মত হলে সঙ্কট উত্তরণ যে সম্ভব তা দেশবাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। দেশবাসীর বিশ্বাসের প্রতি আস্থা রেখে উভয় দল অগ্রসর হলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ও গঠন মোটেও কঠিন কিছু নয়।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail : iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement