২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘বিরোধী দল নেই’ : বিরোধীদের বক্তব্য

‘বিরোধী দল নেই’ : বিরোধীদের বক্তব্য - ছবি : নয়া দিগন্ত

দেশে ‘শক্তিশালী বিরোধী দল নেই’ এমন মন্তব্যের পর গণমাধ্যমে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে। এসব বক্তব্যের মাধ্যমে আসল সত্যটি বেরিয়ে আসছে। মনীষী সক্রেটিস এরূপভাবে বক্তব্যের পর বক্তব্য, সংলাপের পর সংলাপ দিয়ে সত্য উদঘাটন করতে চাইতেন। যুক্তিবিদ্যাবিশারদরা এর নাম দিয়েছেন ‘সক্রেটিসের শ্লেষ’। একে সক্রেটিস ম্যাথডও বলা যায়। আমরা আজকে নিজেরা কোনো কথা না বলে বিতর্কটি সম্পর্কে উভয় পক্ষের বক্তব্য তুলে ধরতে চাই। বিতর্কটি শুরু গত সপ্তাহের ১১ এপ্রিল ২০২২ প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে। সংবাদটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শক্তিশালী বিরোধী দল আমরা পাচ্ছি না। অপজিশন বলতে যারা আছে, তার মধ্যে দু’টিই হচ্ছে মিলিটারি ডিক্টেটর, একেবারে সংবিধান লঙ্ঘন করে, আর্মি রুলস ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তাদের হাতে গড়া। কাজেই তাদের ঠিক ওই মাটি ও মানুষের সাথে যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্কটা তাদের মাঝে নেই। তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল একটা ভোগের জায়গা। সেই ক্ষেত্রে আসলে অপজিশন তাহলে কোথায়? এখানে একটা পলিটিক্যাল সমস্যা কিন্তু আছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড থেকে যখন শোনায় যে এখানে ডেমোক্র্যাসি, পার্টিসিপেটরি ডেমোক্র্যাসি, ইলেকশন, হেনতেন; কিন্তু আসলে এখানে করবেটা কী, সেটাও তারা চিন্তা করে না। গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে অনেক দল দরকার। উন্নত বিশ্বে দেখলে আপনারা দেখবেন, সেখানে কিন্তু মাত্র দুই দল হয়ে গেছে এখন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই দলের বেশি শক্তিশালী দল নেই। আমি তো জানি, আমেরিকার প্রায় ২৫ শতাংশ সংগঠন ইলেকশনই করে না। ইলেকশন করার বিষয়ে একটা অনীহা চলে আসে মানুষের। এটাও কিন্তু অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশটা ধীরে ধীরে ওরকম হয়ে যাচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে যে বিএনপিকে দেখা হয়, তাদের শাসনকালও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ‘পেছনে থেকে তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে একবার ক্ষমতায় আনতে পারে, যেটা ২০০১ সালে এনেছিল। কিন্তু তার পরিণতি কী ছিল? বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, ৫০০ জায়গায় এক দিনে বোমা হামলা, আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা, অপজিশনের অনেক নেতাকর্মীর ওপর হামলা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ওপর গ্রেনেড হামলা, কামরান মারা গেছে, তার ওপর দুইবার গ্রেনেড হামলা হলো, হেলালের মিটিংয়ের ওপর হামলা, সেখানে ৯ জন মারা গেল। এ রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সেই সময় সারা দেশজুড়ে। যার জন্য ইমার্জেন্সি।’

আওয়ামী লীগ ‘মাটি ও মানুষের দল’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগ একটা দল, যে দলটা সেই ১৯৪৯ সালে তৈরি। বিরোধী দল থেকে একেবারে সাধারণ মানুষকে নিয়ে এই দলটা গড়ে তোলা। এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারে এলে এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়। কেন হয়? এই জন্য হয়, আমরা তো মাটি ও মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসা, মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই এই সংগঠনটা তৈরি। কাজেই আমাদের চিন্তাচেতনাটা ওখানেই থাকে। রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাটা যদি মানুষকে ঘিরে হয়, মানুষের কল্যাণমুখী হয়, সেই রাজনীতি কিন্তু টিকে থাকে, সেটাই চলে।’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ময়দানের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এগুলোর উত্তর দেয়ার রুচি তো আমাদের নেই। এগুলো আসলে মূল বিষয়গুলো এড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছু নয়। শক্তিশালী বিরোধী দল আছে বলেই তো আমরা কথা বলছি। কিন্তু সংসদে বিরোধী দল নেই তাদের কার্যকলাপের কারণে। তারা এ দেশের কোনো গণতান্ত্রিক স্পেসই রাখেনি। সেই স্পেস না থাকলে একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে উনি (প্রধানমন্ত্রী) কোন ধরনের শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে চাচ্ছেন, সেটা আমরা ঠিক বুঝি না। কিন্তু উনি যেহেতু চাচ্ছেন দেখতে, সেটা অতি অল্প সময়ে মধ্যে দেখতে পারবেন।’

বিএনপির মুখপাত্র বলে পরিচিত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, ‘দেশের মানুষ ভয়ঙ্কর দুঃসময়ের মধ্যে বসবাস করছে। তাদের কথা বলা ও লেখার স্বাধীনতা নেই। অথচ সংবিধান আমাদের কথা বলা ও লেখার স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু তা শেখ হাসিনার অদৃশ্য ইশারায় বন্ধ। দেশের গণতন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড নেই। কিন্তু তারা গণতন্ত্রকে ভয় পায়। গণতন্ত্রের মানে তো বিরোধী দল আপনাদের সমালোচনা করে আপনাদের ভুল ধরিয়ে দেবে। কিন্তু আপনারা সেটা সহ্য করতে পারেন না।’ ‘দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী আরো বলেন, ‘আসলে বনের নেকড়ে সব প্রাণী খেয়ে ফেলার পর বলছে যে, আর প্রাণী নেই। আরে, বিরোধী দল শক্তিশালী বলেই তো তাদেরকে আপনি কারাগারের ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় আছেন। তাদেরকে গোরস্তানে পাঠিয়েছেন।

আসলে বিএনপি ও বিরোধী দল আপনি ভয় পান বলেই তো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তরুণ নেতা ইশরাককে বন্দী করেছেন। শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, রফিকুল আলম মজনু ও সুমন ভূঁইয়াকে বন্দী করেছেন। আসলে প্রধানমন্ত্রী ভীতু। সরকার পাতানো সংসদ করেছে। যেখানে বিরোধী দল নেই। সেখানে মমতাজের গান হয় কিন্তু বিরোধী দলের বিতর্ক নেই। আর বলেন দেশে বিরোধী দল নেই। অন্য দিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছেন, কারাগারে বন্দী করেছেন। বিরোধী দল দমনের সমস্ত ব্যবস্থা আপনি করেছেন। এভাবে পৃথিবীর কেউ গদি রক্ষা করতে পারেনি। আসলে আপনি আতঙ্কের মধ্যে আছেন আর রাতের অন্ধকারে ফাঁকা বুলি দিচ্ছেন। আপনার সাহস থাকলে খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীকে মুক্তি দেন। দেখবেন প্রবল স্রোত কিভাবে আপনার সিংহাসনের দিকে ধেয়ে যায়! শত নিপীড়ন নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণ কাতারবন্দী হয়ে আপনার সিংহাসন থেকে টেনে রাজপথে ধুলার মধ্যে নামানোর সাহস জোগাড় করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী বাম ধারার প্রতিনিধিত্বশীল ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’-এর নেতারা বলেন, দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিকাশের পথে প্রধান বাধা সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক ও চরম কর্তৃত্ববাদী শাসন। সরকার ও সরকারি দল দমন করে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে বিরোধী রাজনীতিকে প্রবল ঝুঁঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। যে সরকার বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ভয় পেয়ে হামলা-আক্রমণ চালায়, যে সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল ও ছত্রভঙ্গ করতে নির্যাতন-নিপীড়ন অব্যাহত রাখে, বিরোধী রাজনৈতিক দল নিয়ে সেই দলের হা-হুতাশ একধরনের রসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সরকার ও সরকারি দলের ন্যূনতম কোনো অঙ্গীকার থাকলে তারা যে গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করেন, বিরোধী রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের জন্যও একই অধিকার নিশ্চিত করতেন।’

এই বিতর্কে অংশগ্রহণ করে সরকারের করতলগত মহাজোটের অন্যতম শরিক রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমি এবং আমরা দুই দলেই ছিলাম। সাম্প্রতিক সময়ে যেহেতু আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছি, এখনো আমরা সেই জোটে আছি। বিরোধী দল হিসেবে আমাদের অভিজ্ঞতা খুব সকরুণ। বাংলাদেশে কখনোই বিরোধী দল স্পেস পায়নি। সেটা বঙ্গবন্ধুর আমলেও না। বঙ্গবন্ধুর আমলে একটা কথা ছিলÑ তিনি সবাইকে তার মনে করতেন। সেখানে শক্তিশালী একটা বিরোধী দল গড়ে উঠবে, সেটা হয়তো তার ধারণার মধ্যে ছিল না। তিনি অবশ্য সারা জীবন বিরোধী দলের রাজনীতি করেই এ জায়গায় এসেছেন। বিরোধী দলে তার রাজনীতির অভিজ্ঞতাগুলো অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন। কিন্তু সেই সময়ে বিরোধী দলকে বেড়ে উঠতে দেয়া হয়নি।’

মহাদলীয় জোটের সিকি-আধুলির দাবিদার হাসানুল হক ইনু শক্তিশালী বিরোধী দল নেই প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে বলেন, ‘বিরোধী দলের যতটুকু সোচ্চার স্থিতি দরকার, ততটুকু নেই। এ কথা কিছুটা সঠিকই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। জনগণের যাপিত জীবনের সমস্যার ব্যাপারে যতটুকু প্রতিধ্বনি দরকার, রাজপথ কিংবা সংসদে, সংসদের বাইরে আমরা সেভাবে দেখছি না। এ জন্য আনুষ্ঠানিক বিরোধী দল, জাতীয় পার্টি বা বিএনপি- তারা সরব উপস্থিতি জানান দিতে ব্যর্থ। তারা দলীয় স্বার্থের বাইরে বেশি সোচ্চার নয়। বিএনপি তাদের নেতা-নেত্রীদের মামলা, অপরাধের থেকে বাঁচাতে বেশি সক্রিয়। জনসমস্যা নিয়ে খুব একটা সক্রিয় না। এ কারণে রাজপথে এবং জাতীয় সংসদে তাদের সরব উপস্থিতি না দেখতে পেয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেছেন। আনুষ্ঠানিক বিরোধী দলের সরব উপস্থিতি না থাকলেও শক্তিশালী সরব জনগণ বাংলাদেশে আছে। শক্তিশালী সরব গণমাধ্যম আছে।’

এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ যে শক্তির কথা বলছেন, সেটা আর্মি, গুণ্ডাবাহিনী এবং পুলিশের শক্তি। নিশ্চিতভাবে সেটা ওনার আছে। আমাদের নেই। কিন্তু জনগণের সমর্থন আমাদের আছে। সেই দিক হিসাব করলে অনেকগুলো শক্তিশালী বিরোধী দল আছে। তাদের মধ্যে গণ অধিকার পরিষদ অন্যতম।’

বাম ধারার উজ্জ্বল মুখ জোনায়েদ সাকি এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, ‘বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে গণতান্ত্রিক সরকার নেই। যেহেতু বাংলাদেশের পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাটাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে ফলে এখানে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার নেই। এটি একটি ফ্যাসিস্ট সরকার। যারা নানা ধরনের বিদেশী আনুকূল্য নিয়ে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করে জবরদস্তির মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে, গুম-খুনসহ নানা ধরনের ত্রাস সৃষ্টি করে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। যখন একটা দেশে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার থাকে না, সেখানে বিরোধী দলের জন্য যথাযথ গণতান্ত্রিক ভূমিকায় থাকা কঠিন হয়ে যায়।’

সিভিল সোসাইটির শক্তিশালী প্রবক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের খ্যাতিমান অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বিষয়টির ওপর নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এভাবে- ‘এই বক্তব্য আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে। এই দেশে আদৌ কোনো নির্বাচন হয়েছে কি না, এটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিরোধী দলকে আদৌ কোনোরকম রাজনীতি করতে দেয়া হয় কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা দেখেছি এমনকি এরশাদ আমলেও বিরোধী দল যে পরিমাণ সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পেত, যেভাবে বক্তব্য পেশ করার সুযোগ পেত তা কোনোভাবেই দেয়া হচ্ছে না। শক্তিশালী বিরোধী দল দূরের কথা, ছোট ছোট বাম দল সমাবেশ করলে, রাস্তায় নামলে পুলিশ পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আর আওয়ামী লীগ এবং তাদের সংগঠনগুলো দিনে-রাতে রাস্তা দখল করে প্রোগ্রাম করছে। এ রকম অবস্থায় উনি এ কথা বলেন কিভাবে। আপনি বিরোধী দলকে স্পেস দেবেন না, নির্বাচন করতে দেবেন না, আপনি বিরোধী দলকে কোনো কথা বলতে দেবেন না, লাখ-লাখ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকবে, শত শত গায়েবি মামলা করবেন- আমি যদি আমার বিরোধী দলকে দমন-নীপিড়ন করে বলি- শক্তিশালী বিরোধী দল নেই, তাহলে এটা তো খুব অদ্ভুত একটা কথা হলো। ওনার যদি মনে হয়, সত্যি শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন তাহলে আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, মিটিং-মিছিল করার অন্তত সেটুক দিয়ে দেখতে পারেন বিরোধী দল আছে কি না। বিরোধী দলের ওপর দিয়ে নির্যাতনের যে রোলার চালানো হয়, সেগুলো বন্ধ করে উনি দেখতে পারেন।’

বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠা পুরুষ সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মন্তব্য করেন, ‘আমাদের রাজনীতিতে অতীতে একটা ভারসাম্য ছিল। শক্তিশালী সরকারি দল এবং বিরোধী দল ছিল। গত কয়েক যুগে দু’টি দল পালাক্রমে ক্ষমতায় গেছে, বিরোধী দলে থেকেছে। ২০১৪ সালের পর ভারসাম্য ভেঙে যায়। এই ভারসাম্য ভেঙে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ। একটি বড় কারণ হলো নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতি। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালীন নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতির চর্চা করেছে। তারা সফল হয়নি। এরপর বর্তমান ক্ষমতাসীনরা একই রাজনীতি শুরু করে এবং বহুলাংশে তারা সফল। এর ফলে একটা অকার্যকর বিরোধী দল দেখছি। এখন নামকাওয়াস্তে একটা বিরোধী দল আছে। সংসদে যারা বিরোধী দল, তারা একসময় সরকারের অংশ হিসেবে নির্বাচন করেছে। মাঠে যারা বিরোধী দল তারা কোমরভাঙা বিরোধী দল। বিভিন্ন রকম মামলা-হামলা অর্থাৎ নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতির অংশ হিসেবে এটা ঘটেছে। এর পরিণতি প্রধানমন্ত্রী সঠিকভাবে বলেছেন। আমাদের রাজনীতিতে যদি ভারসাম্য না থাকে, সরকারকে যদি দায়বদ্ধ করা না যায় তাহলে সরকার বেসামাল হয়ে যেতে পারে। যেটা আমরা আশপাশের দেশগুলোতে দেখছি।’

বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্রের অভিভাবকসম ব্যক্তিত্ব ড. আকবর আলী খানের মন্তব্য দিয়ে বিতর্ক সভার উপসংহার টানতে চাই। জনাব খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সাহসী বক্তব্যের জন্য আমার অভিনন্দন। তিনি স্বীকার করেছেন নিয়মানুযায়ী সংসদে একটা বিরোধী দল থাকলেও প্রকৃতপক্ষে অকার্যকর। এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে কেন বিরোধী দল অনুপস্থিত। যদি সরকারপক্ষকে প্রশ্ন করেন, তাহলে তারা বিরোধী দলকে দোষ দেবে। আর বিরোধী দল দেয় সরকার পক্ষের দোষ। আসলে দোষ সবার। শুধু দলগুলোরই দোষ নয়, দেশের জনগণেরও দোষ। এই যে দেশে বিরোধী দল নেই, এতে গণতান্ত্রিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। এই ব্যর্থতার জন্য আমি, আপনি আমরা সবাই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সমভাবে দায়ী।’

আপনারা উভয়পক্ষের বক্তব্য দেখলেন। মন্তব্য নিষ্প্র্রয়োজন। অতএব ‘বুঝো হে সুজন’!
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement