২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পদে বহাল থেকে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন

-

আমাদের আইনসভা ‘জাতীয় সংসদ’ নামে অভিহিত। জাতীয় সংসদ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ৩০০ সদস্য এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত ৫০ জন মহিলা সদস্যসহ সর্বমোট ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। জাতীয় সংসদের সদস্যদের বলা হয় সংসদ সদস্য।

রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা এককভাবে সংসদের ওপর ন্যস্ত। তবে আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন প্রভৃতি প্রণয়ন বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা অর্পণ সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত।

একজন ব্যক্তি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে যেসব যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে তা হলো- তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং তার বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হতে হবে। উপরোক্ত দু’টি যোগ্যতার পাশাপাশি একজন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার এবং সংসদ সদস্য হিসেবে থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি-(ক) কোনো উপযুক্ত আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেন; (খ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হবার পর দায় হতে অব্যাহতি লাভ না করে থাকেন; (গ) তিনি কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন ২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তি লাভের পর ৫ বছরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে; (ঙ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন যেকোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন; (চ) আইনের দ্বারা পদধারীকে অযোগ্য ঘোষণা করতেছে না এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন অথবা (ছ) তিনি কোনো আইনের দ্বারা বা অধীন কোনোরূপ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হন।

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের দফা (৩) এ বলা হয়েছে এ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে কোনো ব্যক্তি কেবল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হবার কারণে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবেন না। এ বিষয়টির আক্ষরিক অর্থ হলো- উপরোক্ত পদধারীগণ প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও এ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে তারা প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত আছেন বলে গণ্য হবেন না অর্থাৎ এ সকল পদধারীকে পদে বহাল থাকাবস্থায় সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন বা সংসদের কোনো সদস্য পদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য যোগ্য করা হয়েছে।

সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা হতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করা হলে ৬৬ অনুচ্ছেদের উপদফা (চ) ও দফা (৩) অবলুপ্ত করা হয়। অতঃপর ৫ম সংশোধনী প্রণয়নকালে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বহাল রাখা হলেও ৬৬ অনুচ্ছেদের উপদফা (চ) ও দফা (৩) পুনঃ ৭২’র সংবিধানে যেরূপ ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে এনে উপদফা (চ) ও দফা (৩) এর পরিবর্তে উপদফা (ঘঘ) ও দফা (২ক) হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করে (২ক) দফায় প্রধানমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী এ দু’টি পদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বিপথগামী সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা নিহত হওয়ার পর তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার নির্বাচন অনুষ্ঠান সাপেক্ষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিরূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। তিনি উপ-রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট মামলা দায়েরপূর্বক তার উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সে সময় সংসদে ক্ষমতাসীন বিএনপির দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার সুবাদে সংবিধানে ষষ্ঠ সংশোধনীর মাধ্যমে দফা (২ক) তে রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি পদ অন্তর্ভুক্ত করে প্রশ্নটির সুরাহা করা হয়।

উল্লেখ্য যে, একজন রাষ্ট্রপতিকে অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হতে হয়। পরবর্তীতে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পুনঃসংসদীয় সরকারব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করা হলে দফা (২ক) হতে উপ-রাষ্ট্রপতি ও উপ-প্রধানমন্ত্রী পদ দু’টি বিলুপ্ত করা হয়। অতঃপর পঞ্চদশ সংশোধনী প্রণয়নকালে পুনঃ (ঘঘ) উপদফা ও দফা (২ক) কে উপদফা (চ) ও দফা (৩) এ স্থলাভিষিক্ত করে (৩) দফায় স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার এ দু’টি পদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনুচ্ছেদ ৬৬ এর দফা (৩) এ স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদ দুটি অন্তর্ভুক্ত করায় এ বিষয়টি বর্তমানে স্বীকৃত যে, উভয় পদ প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ। উভয় পদের প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ হিসেবে স্বীকৃতি নতুনভাবে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে পূর্বে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে বহাল থাকাকালীন যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছিলেন তাদের সে অংশগ্রহণ বৈধ ছিল কি না এবং সংসদ সদস্য হিসেবে তারা যে সব সুযোগ-সুবিধা ও বেতন-ভাতা গ্রহণ করেছেন তার বৈধতা কতটুকু? আর অবৈধ হয়ে থাকলে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত প্রদান আবশ্যক নয় কি?

আমাদের সংবিধানের কোথাও লাভজনক পদের ব্যাখ্যা দেয়া না হলেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ২০০৮ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধনী এনে অনুচ্ছেদ ১২তে লাভজনক পদ বিষয়ে বলা হয় ‘লাভজনক’ পদ অর্থ প্রজাতন্ত্র বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা সরকারি শতকরা ৫০ ভাগ বা তদূর্ধ্ব শেয়ার রয়েছে এরূপ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক বেতনভুক্ত পদ বা অবস্থান।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯; স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এবং স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এ লাভজনক পদের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুরূপ। কিন্তু স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ, ২০০৮ এর লাভজনক পদের ব্যাখ্যায় ভিন্নতা দেখা যায়। এখানে বলা হয়েছে ‘লাভজনক’ পদ অর্থ প্রজাতন্ত্র কিংবা সরকারি সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ কিংবা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে বেতন, সম্মানী কিংবা আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত লাভজনক পদ বা অবস্থান। স্পষ্টত শেষোক্ত ব্যাখ্যায় বেতন ব্যতিরেকে সম্মানী বা আর্থিক অথবা অন্য কোনোভাবে সুবিধাপ্রাপ্তিকে লাভজনক বলা হয়েছে। যদিও সাধারণ অর্থে প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ বলতে এমন সব পদধারীদের বুঝায় যারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে বেতন-ভাতা ও সম্মানী গ্রহণ করে থাকেন। এ অর্থে সব গণকর্মচারী (Public Servant) প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত মর্মে গণ্য। উল্লেখ্য যে, আমাদের সংসদ সদস্যগণ ভ্রমণভাতা, আবাসনসুবিধা, করযুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ প্রভৃতি ছাড়াও প্রতি মাসে অন্যান্য যেসব বেতনভাতা ও সম্মানী পেয়ে থাকেন তার পরিমাণ লক্ষাধিক টাকা।

আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্ম’ অর্থ অসামরিক বা সামরিক ক্ষমতায় বাংলাদেশ সরকার সংক্রান্ত যেকোনো কর্ম, চাকরি বা পদ এবং আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্ম বলে ঘোষিত হতে পারে, এরূপ অন্য কোনো কর্ম। অপর দিকে ‘সরকারি কর্মচারী’ অর্থ প্রজাতন্ত্রের কর্মে বেতনযুক্ত পদে অধিষ্ঠিত বা কর্মরত ব্যক্তি। সংবিধানে উল্লিখিত সরকারি কর্মচারীকে ইংরেজিতে বলা হয়েছে Public Officer. সংবিধানে উল্লিখিত Public Officer এবং দণ্ডবিধির ২১ ধারায় উল্লিখিত Public Servant একটি অপরটির সমার্থক কি না সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।

দণ্ডবিধিতে উল্লিখিত Public Servant ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। দণ্ডবিধিতে অপরাধ হিসেবে উল্লিখিত উৎকোচ গ্রহণ, অসাধুভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের জন্য একজন সরকারি কর্মচারীর মতো স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের অপরাধ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭, ফৌজদারি সংশোধন আইন, ১৯৫৮ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ সহ দণ্ডবিধির অধীন শাস্তিযোগ্য হওয়ায় স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের Public Servant অর্থাৎ গণকর্মচারীবহির্ভূত বিবেচনার অবকাশ আছে কি না সে প্রশ্নটি এসে যায়।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে মূল ’৭২-এর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩(৩) (ক) এবং (খ) তে বর্ণিত বিধানাবলি পুনঃপ্রবর্তন করে বলা হয় (৩) সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাবার ক্ষেত্রে, ভেঙে যাবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাবার ক্ষেত্রে ভেঙে যাবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে সংশোধনী এনে বিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল যে, মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বর্তমান ১০ম সংসদে যাদের অবস্থান সংসদ সদস্য হিসেবে তারা সংবিধানের ১২৩(৩) (ক) এ বর্ণিত বিধানের আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে অযোগ্য প্রতীয়মান হয়। সে ক্ষেত্রে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য করতে হলে ৬৬ অনুচ্ছেদের (৩) উপদফায় অপরাপর পদধারীদের সাথে তাদের অন্তর্ভুক্তকরত সংশোধনী আনা আবশ্যক।

দশম সংসদ নির্বাচনটি সংসদ বহাল থাকাবস্থায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে নবম সংসদে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ পদে বহাল থাকাকালীন অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন- এ যুক্তিতে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষের অনেকে বলতে চান বিষয়টি নজির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ নেই। কিন্তু এ বিষয়ে এ দেশের সচেতন জনমানুষসহ বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের অভিমত দশম সংসদ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত ৩০০টি আসনের ১৫৩টি আসনের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এবং অবশিষ্ট ১৪৭টি আসনে ভোটার উপস্থিতি পাঁচ ভাগের নিম্নে হওয়ায় এটিকে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে আখ্যা দেয়ার অবকাশ নেই।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে এ নির্বাচনটিও দশম সংসদের মতো ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে এমন প্রতিশ্রুতির অবতারণায় দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচনটিতে অংশগ্রহণে প্রলুব্ধ করা হয়। এ নির্বাচনটিতে আনুষ্ঠানিক ভোট গ্রহণের পূর্বে মধ্যরাতে সংবিধান ও নির্বাচনী আইনের চরম লঙ্ঘন এবং অবজ্ঞা ও উপেক্ষায় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর সহযোগিতায় ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে এক নজিরবিহীন বিভীষিকাময় ও কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূত্রপাত ঘটানো হয়। এ বিষয়টি দেশের সাধারণ জনমানুষসহ আন্তর্জাতিক মহল সম্যক অবহিত।

অতীতে দু’বার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদসমূহ যে প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ সে প্রশ্নের মীমাংসা করা হয়েছে। সংবিধান ও অপরাপর আনুষঙ্গিক আইনসমূহের বিধানাবলি পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় সংসদ সদস্যের পদ প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ। তাই সংসদ সদস্যরা সংবিধানের বর্তমান বিধানাবলির আলোকে স্বপদে বহাল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সাংবিধানিক ও আইনগত প্রশ্ন ব্যতীত অন্য যে সব প্রশ্ন দেখা দেবে তা হলো- প্রথমত বিদ্যমান সংসদ সদস্য নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পারলে দেখা যাবে একই সময়ে একই আসন হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ২ জন; দ্বিতীয়ত: ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে তারা নির্বিঘ্নে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কিনা সে বিষয়ে অনেকেরই আশঙ্কা রয়েছে; তৃতীয়ত: নির্বাচনে পরাভূত ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে কিভাবে এর সমাধান করা হবে; চতুর্থত: রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে থাকলে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যেকোনো বিবদমান পরিস্থিতিতে তার পক্ষে ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ কতটুকু সম্ভব; পঞ্চমত: ক্ষমতাসীন দল কর্র্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন যে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে সে নিশ্চয়তা কোথায়; ষষ্ঠত: ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন বাহিনীপ্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ তত্ত্বাবধায়ক ও থানা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা কিরূপে নিশ্চিত করা হবে; সপ্তমত: মন্ত্রিসভার যেসব সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কী কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে এবং কী পদ্ধতি অবলম্বনে বড় দু’টি দলসহ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী অপরাপর দলের জন্য সমসুযোগ সংবলিত মাঠের ব্যবস্থা করা হবে।

যতক্ষণ পর্যন্ত উপরোক্ত জটিলতাসমূহ নিরসন করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হলে তা একদিকে যেমন সর্বজনীনভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত করবে না অপর দিকে বিদ্যমান সংসদ সদস্যদের সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়ার পথ রুদ্ধ হবে।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement