২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতীয় না কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার!

-

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনুসৃত হয় এমন সব দেশে সংসদীয় পদ্ধতি ও রাষ্ট্রপতি শাসিত দুই ধরনের সরকারব্যবস্থা রয়েছে। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান নির্বাহী অপর দিকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সরকারের প্রধান নির্বাহী। আমাদের বাংলাদেশের সংসদীয় পদ্ধতি ও রাষ্ট্রপতি শাসিত উভয় ধরনের সরকারব্যবস্থা দ্বারা শাসিত হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যুদ্বয় পরবর্তী সংবিধান প্রণয়ন অবধি সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা দ্বারা দেশ পরিচালিত হয়। অতঃপর সংবিধান প্রণয়ন-পরবর্তী সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার বিধান রাখা হয়।

বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭০ সালে পাকিস্তান শাসনামলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণের সমন্বয়ে গঠিত গণপরিষদ ভেঙে দিয়ে দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা ছিল বিরোধী দলের সাকুল্যে ৭টির বিপরীতে ২৯৩টি। নির্বাচনটিতে বিরোধীদের পক্ষ হতে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ উত্থাপিত হলেও সে সময়কার প্রচণ্ড প্রতাপশালী সরকার ও অনুগত নির্বাচন কমিশন তা গ্রাহ্য করেনি। প্রথম জাতীয় সংসদ বহাল থাকাবস্থায় দুই বছর অতিক্রান্তের পূর্বে সংসদে আকস্মিক সংক্ষিপ্ত ১৫ মিনিটের আলোচনায় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহু দলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তে একদলীয় শাসনব্যবস্থার বিধান করে সংসদীয় পদ্ধতি হতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়।

একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের ছয় মাসের মাথায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান দু’কন্যা ব্যতীত সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে নিহত হলে দেশ সামরিক শাসনের কবলে পড়ে। এরপর নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত করে পুনঃবহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন পরবর্তী ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে নবগঠিত ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০৭টি এবং সম্মিলিতভাবে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র ৯৩টি আসনে বিজয়ী হয়।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ বহাল থাকাবস্থায় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিহত হলে তার গঠিত দলে নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দেয় এবং যথারীতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সামরিক শাসক এরশাদের হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হন। সামরিক শাসক এরশাদ ৯ বছর ক্ষমতাসীন ছিলেন। তার শাসনামলে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ দু’টি নির্বাচনের প্রথমটি বিএনপির বর্জন এবং দ্বিতীয়টি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ দু’টি সংসদের কোনোটিই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি এবং সম্মিলিতভাবে বিরোধী দল স্বতন্ত্রসহ ১৪৭টি আসনে বিজয়ী হয়। চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১টি এবং সম্মিলিতভাবে গৃহপালিত বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র ৪৯টি আসনে বিজয়ী হয়।

গণঅভ্যুত্থানে সামরিক শাসক এরশাদ ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হলে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী কর্মরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকারের আগমন ঘটে। এ অস্থায়ী সরকারের অধীন ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারবহির্ভূত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটিতে বড় দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনোটিই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৫১ আসনে বিজয়ী হতে পারেনি। এ নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসনে বিজয়ী হয়ে ১৮টি আসনপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। নির্বাচনটিতে সম্মিলিতভাবে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্রের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা ছিল ১৪২টি। পঞ্চম জাতীয় সংসদে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার বিলোপসাধন করে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করা হয় যা এখনো অব্যাহত আছে।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ বহাল থাকাকালীন অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে সংসদ হতে পদত্যাগ করলে একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবলিত বিল পাস পরবর্তী এ সংসদটি অবলুপ্ত করা হলে সাংবিধানিক কাঠামোয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান কার্যকর হয়। সাংবিধানিক কাঠামোয় গঠিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন প্রাপ্ত হয়ে জাতীয় পার্টি ও জাসদের (রব) সমর্থনে সরকার গঠন করে। এ নির্বাচনটিতে বিএনপির প্রাপ্ত আসন ছিল ১১৬ এবং জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রাপ্ত আসন যথাক্রমে ৩২ ও ৩। এ নির্বাচনটিতে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠনে উদ্যোগী হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।

বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পরবর্তী সর্বপ্রথম সপ্তম সংসদ তার নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ করলে সাংবিধানিক কাঠামোয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৯৩ ও ৬২। এ নির্বাচনটিতে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির আসনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৭ ও ৪ এবং অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র ২৪টি আসন প্রাপ্ত হয়। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে সরকারের অংশীদার হয়। অষ্টম জাতীয় সংসদে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসরের বয়স ৬৫ হতে ৬৭তে উন্নীত করা হলে রাজনৈতিক অঙ্গন ও জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয় তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার মানসে এ অযাচিত ও অনাকাক্সিক্ষত সংশোধনী। সংশোধনী পরবর্তী অষ্টম জাতীয় সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করলে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত না হলে জন অসন্তোষে সে সরকারটি পদত্যাগে বাধ্য হলে অসাংবিধানিক সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবির্ভাব ঘটে। অসাংবিধানিক সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে দুই-তৃতীয়াংশের অধিক ২৩০টি আসন প্রাপ্ত হয়। এ নির্বাচনটিতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ও স্বতন্ত্রের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩০, ২৭, ২ ও ১১টি।

এ দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় যে আওয়ামী লীগের অগ্রণী ভূমিকা ও অনন্য অবদান ছিল সে দলটি নবম জাতীয় সংসদে নিরেট সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জনমতকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষাপূর্বক একতরফাভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপ সাধন করে সংসদ বহাল থাকাবস্থায় ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তন করে। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি সংসদ কর্তৃক বৈধতা প্রাপ্ত না হলেও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বৈধতাবিষয়ক রিট মামলার আপিল নিষ্পত্তিকালে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনার অবতারণায় এ সরকারটিকে বৈধতা দেয়ার প্রয়াস নেয়া হয়।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পরবর্তী সংসদ বহাল থাকাবস্থায় ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটিতে ১৫৩টি আসনের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এ সংসদটি সংবিধান সম্মতভাবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫(২) অনুযায়ী গঠিত হয়েছে কিনা সে প্রশ্নটির সুরাহা অনাগত দিনে অনুকূল পরিবেশে হবে এমনটিই দেশের সচেতন জনমানুষের প্রত্যাশা।

দশম সংসদের মেয়াদ অবসানের প্রাক্কালে নবম সংসদ বহাল থাকাকালীন অনুরূপ ব্যবস্থায় একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটিতে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও সংবিধান ও নির্বাচনী আইনের ব্যত্যয়ে অধিকাংশ আসনের ভোটগ্রহণ আনুষ্ঠানিক ভোটগ্রহণের তারিখ ও সময়ের পরিবর্তে পূর্ববর্তী রাতে নজিরবিহীনভাবে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় জোরপূর্বক ব্যালটে সিল মেরে ভোটের বাক্স পূর্ণ করলে দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নির্বাচনটির গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়ে। এ নির্বাচনটির বৈধতাও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণের দাবি রাখে।

বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় এযাবৎকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, দশম ও একাদশ এ সাতটি ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয় এবং এ সাতটি নির্বাচনেই ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। অপর দিকে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এ চারটি নির্বাচনের মধ্যে প্রথমটি কর্মরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকারের অধীন, দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি সাংবিধানিক কাঠামোর অধীন গঠিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন এবং চতুর্থটি অসাংবিধানিকভাবে গঠিত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। এ চারটি নির্বাচনে নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্বের ক্ষমতায় আসীন দল পরাভূত হয়।

বাংলাদেশে এ যাবৎকাল পর্যন্ত কখনো জাতীয় সরকার গঠিত হয়নি। জাতীয় সরকারের সাথে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পার্থক্য হলো জাতীয় সরকার রাজনৈতিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত এবং জাতীয় সরকারে ক্ষমতাসীন দলসহ বিরোধীদলগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকে। অপর দিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার অরাজনৈতিক, সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত। জাতীয় ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার উভয়ই অন্তর্বর্তী সরকার। উভয় সরকারকে সাংবিধানিক বৈধতা দেয়া হলে এর গঠন ও কার্যকলাপ সংবিধান সম্মত হয়। এ ধরনের সাংবিধানিক বৈধতা গঠন পূর্ববর্তী বা পরবর্তীও যেমন দেয়া যায় অনুরূপ গণভোট আয়োজনের মাধ্যমেও দেয়া যায়। সংবিধান দ্বারা ব্যবস্থাটি অনুমোদিত কি না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো জন আকাক্সক্ষা বা জনপ্রত্যাশা কী। আমাদের দেশে জন আকাক্সক্ষায় বা জনপ্রত্যাশায় ইতঃপূর্বে সাংবিধানিক বিধানের অবর্তমানে অথবা অবসানে নতুন বিধান প্রবর্তনপূর্বক একাধিকবার সংবিধান সংশোধনের নজির রয়েছে।

আমাদের দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল উভয়ই সাংবিধানিকভাবে গঠিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। অস্থায়ী সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে সরকার গঠন করে। অসাংবিধানিক সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এককভাবে সরকার গঠন করে। দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অস্থায়ী সরকার বা সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলের সুবিধাভোগী। এ চারটি নির্বাচনের মধ্যে প্রথমোক্ত দুটি অর্থাৎ পঞ্চম ও সপ্তম সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল অপরদিকে অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথমটিতে বিএনপি এবং শেষেরটিতে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় হয়। সার্বিক পর্যালোচনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের বড় এ দুটি দল নিজেরা ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হওয়ায় এবং অস্থায়ী ও প্রথম নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সফল হওয়ায় দেশ ও জাতিকে সম্ভাব্য বিপর্যয় হতে রক্ষার মানসে পঞ্চম অথবা সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে ধরনের ব্যক্তি ও ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুরূপ যেকোনো একটি ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হওয়া প্রত্যাশিত; তবে প্রশ্ন থাকে অনুরূপ গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি সময়ের পরিক্রমায় জনগণের শেষ ভরসাস্থল খ্যাত বিভাগটিতে অতীতের মতো সর্বজনীনভাবে না থাকায় এর সন্ধান অবারিত হওয়া কাম্য।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement