২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনের সীমাবদ্ধতা

-

জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ এবং এ জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার সমন্বয়ে গঠিত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সরাসরি নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে। অপর সব কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তাকে সম্পন্ন করতে হয়। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো অবকাশ নেই।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সংসদ ভেঙে গেলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মচারীর সেবাগ্রহণের আবশ্যকতা দেখা দেয়। নির্বাচন কমিশনের কমিশন ও মাঠ পর্যায়ে জনবল সীমিত। এ সীমিত জনবল দিয়ে সুষ্ঠুভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান কিছুতেই সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যে সংখ্যক কর্মচারীর প্রয়োজন হয় নির্বাচন কমিশন থেকে অনুরোধ পেয়ে রাষ্ট্রপতি তা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। এ ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতিকে সরকারের প্রধান নির্বাহী অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য সমাধা করতে হয়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনপ্রাপ্ত দলের নেতাকে রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ করেন। আমাদের দেশে সাংবিধানিকভাবে একমাত্র জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণ পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কমিশনের মেয়াদ পূর্তির পূর্বেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ নিয়োগ কার্যটি ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের শাসনামলে সম্পন্ন হয়ে থাকলে ক্ষমতাসীনরা নিজ মতাদর্শের প্রতি অনুগতদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে বদ্ধপরিকর থাকে। আর এ কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় একটি ব্যতিক্রম ব্যতীত ক্ষমতাসীনদের শাসনামলে নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনের অধীন অনুষ্ঠিত অপর সব নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়েছেন। সাবেক আমলা আবু সাঈদের নেতৃত্বাধীন অষ্টম নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া পরবর্তী ক্ষমতাসীন থাকাকালীন গঠিত হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন ছিল। এ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি সাংবিধানিক কাঠামোয় গঠিত দ্বিতীয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

কর্মরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকার, সাংবিধানিক কাঠামোয় গঠিত প্রথম নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগমন পরবর্তী ইতঃপূর্বে দলীয় সরকারের অধীন গঠিত বিচারক সুলতান হোসেন খান নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন, বিচারক মো: সাদেক নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও বিচারক আব্দুল আজিজ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন জন আকাক্সক্ষায় পদত্যাগে বাধ্য হলে যথাক্রমে বিচারক আব্দুর রউফ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন, সাবেক আমলা আবু হেনা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও সাবেক আমলা শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। এ তিনটি নির্বাচন কমিশনের অধীন অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনে নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্বের ক্ষমতাসীন দল পরাভূত হয় অপর দিকে দলীয় সরকারের অধীন গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীন দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় অনুষ্ঠিত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, দশম ও একাদশ এ সাতটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকার বিজয় লাভ করে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ে মুখ্য দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার। সচরাচর একটি জেলার জন্য একজন রিটার্নিং অফিসার ও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার জন্য একজন সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ পান। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শৃঙ্খলা বাহিনীর জনবল নিয়োগ, নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ভোটগ্রহণের জন্য প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগ এবং এদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারগণ পালন করে থাকেন। ভোটগ্রহণ পরবর্তী ভোট গণনার কাজ পোলিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও প্রিজাইডিং অফিসারগণ সম্পন্ন করে ফলাফল বিবরণী প্রস্তুত করে থাকেন। রিটার্নিং অফিসার নির্বাচনী ফলাফল নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করেন। নির্বাচন কমিশন বিজয়ী প্রার্থীর গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করা পর্যন্ত তিনি সংসদ সদস্য নন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন নির্বাচনী দায়িত্ব পালনরত ব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশনের অধীন প্রেষণে চাকরিরত মর্মে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী গণ্য হন। এ আইনটিতে কমিশনকে নির্বাচনবিষয়ক অসদাচরণের জন্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালনরত ব্যক্তিকে সাময়িক বরখাস্তের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ সংশোধনপূর্বক ব্যালটের পাশাপাশি ইভিএমের মাধ্যমে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইভিএম বিষয়ে আমাদের দেশের সাধারণ জনমানুষের ধারণা স্পষ্ট ও স্বচ্ছ নয়। আমাদের দেশে এ যাবৎকাল পর্যন্ত ব্যবহৃত ইভিএমে ভোট প্রদানের ফলাফল সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অনিয়মবিষয়ক অভিযোগ কমিশন বা আদালত কর্তৃক পর্যালোচনা বা পরীক্ষার সুযোগ বারিত বিধায় জনগণের করের অর্থের অপচয়ে এ ব্যয়বহুল ব্যবস্থা থেকে দূরে থাকা সমীচীন এমনটি সচেতন জনমানুষের অভিমত।

নির্বাচনবিষয়ক গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এ রিটার্নিং অফিসারের যোগ্যতা ও পদবি বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেখা যায় জেলায় কর্মরত জেলা প্রশাসক এবং উপজেলায় কর্মরত উপজেলা নির্বাহী অফিসার যথাক্রমে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। নির্বাচন কমিশনের ন্যায় দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় দেখা যায় রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারগণের পক্ষে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সর্বোচ্চ নির্বাচনী ব্যয়সীমা ১৫ লাখ টাকা। প্রতিদ্বন্ধিদ্বতাপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন প্রার্থী নির্ধারিত ব্যয়সীমার অনেক অধিক অর্থ ব্যয় করে থাকেন। এ অধিক অর্থ ব্যয়ের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এবং কমিশনের পক্ষে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারগণের কার্যকরী ও ফলপ্রসূ কর্মতৎপরতা লক্ষণীয় নয়।

নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অধীন প্রণীত আচরণবিধি মেনে চলতে হয়। নির্বাচনী সভা, শোভাযাত্রা, প্রচারাভিযান, পোস্টার, লিফলেট ও মাইক ব্যবহার, দেয়ালে লিখন, তোরণ নির্মাণ, প্যান্ডেল স্থাপন, আলোকসজ্জা, নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন, ভোটারদের আপ্যায়ন ও উপহার সামগ্রী প্রদান প্রচারণার সময় প্রভৃতি বিষয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে। বিধিনিষেধের ব্যত্যয় নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এগুলো দেখাশুনার জন্য প্রাক-নির্বাচনী তদন্ত কমিটি রয়েছে।

দেয়ালে লিখন ও পোস্টার লাগানো বিষয়ে প্রণীত দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন এর গেজেট বিজ্ঞপ্তি ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। আইনটি কার্যকর হওয়া বিষয়ে আইনটিতে উল্লেখ রয়েছে যে, সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে তারিখ নির্ধারণ করবে সে তারিখ হতে আইনটি কার্যকর হবে। আইনটি প্রণয়ন পরবর্তী ১০ বছরের অধিককাল অতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত আইনটি কার্যকর করার বিষয়ে তারিখ নির্ধারণ করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি।

যেকোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্ধিদ্বতাপূর্ণ হলে পোস্টার ও দেয়ালে লিখনের ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। নির্বাচনকালীন যত্রতত্র পোস্টার লাগানো ও দেয়ালে লিখনের কারণে জনজীবন ও পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়। জনজীবনে স্বস্তি আনয়ন এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার আবশ্যকতায় নির্বাচনী আচরণবিধি এবং দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২ এ যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে তা প্রতিপালন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কালবিলম্ব না করে দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইনটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির তারিখ নির্ধারণ করে তা কার্যকর করা আবশ্যক।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস হতে স্পষ্ট প্রতিভাত যে, ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা তাদের পুনঃজয়ের বিষয়ে বদ্ধপরিকর থাকায় নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ যেন তাদের আকাক্সক্ষার বাইরে কোনো কাজ না করে সে বিষয়ে তারা সদাসর্বদা সচেষ্ট থাকে। এর বিপরীতে অস্থায়ী বা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা দলীয় পরিচয়বিহীন হওয়ার কারণে তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলনে বিজয়ী দল কর্তৃক সরকার গঠন যেন কোনোভাবে ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিতে সর্বাত্মক প্রয়াস নেন। আর এ কারণেই দেখা যায় তাদের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে নির্বিঘেœ ও স্বাচ্ছন্দ্যে দায়িত্ব পালন করে প্রকৃত অর্থেই অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে অশেষ অবদান রাখেন।

দলীয় সরকার হিসেবে যারা বা যে দল যখন অধিষ্ঠিত ছিল দেখা গেছে সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিরোধীদের দাবি না মানার প্রয়াস নিয়েছে। এতে যে দলীয় সরকার সবসময় সফল হয়েছে তা নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি দলীয় সরকারকে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় অপর দিকে বিরোধী দলে থাকাবস্থায় দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণে অপারগ। দলীয় সরকার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্ধিদ্বতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফলতা দেখাতে পারলে আজ দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিরোধীদের যে অনাস্থা তা পরিলক্ষিত হতো না। সংবিধানের দোহাই একটি খোঁড়া যুক্তি। সংবিধান আসমানি কিতাব বা বেদবাক্য নয় যে এটি সংশোধন অযোগ্য। দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণ ও মঙ্গলে যেকোনো সময় সংবিধান সংশোধন হতে পারে এবং ইতঃপূর্বে এ ধরনের সংবিধান সংশোধনের নজির রয়েছে। প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করে সমস্যার উত্তরণ সম্ভব।

বর্ণিত আলোচনা হতে ধারণা পাওয়া যায় দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতা থাকলেও অস্থায়ী বা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন দায়িত্ব পালনে সে সীমাবদ্ধতা একেবারেই লক্ষণীয় নয়।

সংবিধান ও বিভিন্ন নির্বাচনী আইনে নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত কিন্তু নির্বাচন কমিশনের জন্য যা প্রয়োজন তা হলো ক্ষমতা প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ। এ অনুকূল পরিবেশ প্রদানে দলীয় সরকার যে সর্বদাই ব্যর্থ হয়েছে তা দেশবাসী বিস্মৃত হয়নি। নির্বাচন যে সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হোক না কেন এটিকে অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ একটি ক্যাডারের ভিতর সীমাবদ্ধ না রেখে বহুমাত্রিক হওয়া আবশ্যক। নির্বাচনী ব্যয় ১৫ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে অবশ্যই জনসভা, পথসভা ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে প্রজেকশন মিটিংয়ের মাধ্যমে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বক্তব্য উপস্থাপনের বিধান প্রবর্তন আবশ্যক। পোস্টার ও দেয়াল লিখন দ্বারা জনদুর্ভোগ ও পরিবেশ যেন বিঘ্নিত না হয় তা নিশ্চিতে এ বিষয়ে প্রণীত আচরণবিধি ও আইন কার্যকরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। যেকোনো আসনের নির্বাচনে অনিয়ম হলে কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে বিজয়ী প্রার্থীর গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ স্থগিতকরণ আবশ্যক। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনরত ব্যক্তিদের যেকোনো ধরনের পক্ষপাতদুষ্টতা অবসানে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ আবশ্যক।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল