২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব

-

যুদ্ধ নিয়ে লিখতে কারো ভালো লাগে না। কারণ যুদ্ধ কখনোই কোনো সুফল বয়ে আনে না। যুদ্ধ শুধু আনে ধ্বংস আর মৃত্যু। আনে হাহাকার আর দারিদ্র্য। যুদ্ধে যে দেশ নিজেকে বিজয়ী বলে ঘোষণা দেয়, প্রকৃতপক্ষে সে বিজয় দেশটির কোনো স্থায়ী সাফল্য এনে দেয় না। আপাতত বীরত্বের খেতাবে ভূষিত হলেও বৃহত্তর অর্থে সেটা তার ক্ষতির কারণই হয়। তাই যুদ্ধ এড়িয়ে দু’পক্ষের বিরাজমান সমস্যাগুলো কূটনীতির মাধ্যমে সমাধা করাই বুদ্ধিমানদের কাজ। কিন্তু যারা ক্ষমতার চশমায় মোহগ্রস্ত তারা এটা বুঝতে চান না। তাদের কাছে নিজের মসনদ, প্রতিপত্তি এবং জেদই আসল বিষয়।

বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটা নাকি সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। যদিও একে এক অর্থে যুদ্ধ বলা যায় না। একতরফা যুদ্ধ বলাই ভালো। ইউক্রেন আক্রমণ করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রুশ বাহিনীর হতাহতের কিছু দাবির কথা শোনা গেলেও রাশিয়ান বাহিনীকে মোকাবেলায় তেমন কোনো আক্রমণ এখন পর্যন্ত চোখে পড়ছে না। বরং আক্রমণ যতটা দেখা যাচ্ছে; তা রুশ বাহিনীকে চালাতেই দেখা যাচ্ছে। সোমবার এ লেখা যখন লিখছি, তখন সেটা যুদ্ধের পঞ্চম দিন। রুশ বাহিনী ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে ঢুকে পড়েছে। এ লেখা যেদিন ছাপা হবে, যুদ্ধের ষষ্ঠ দিন হবে। তখন হয়তো আরো কোনো শহর রাশিয়া দখল করে নেবে কিংবা ইউক্রেনের বর্তমান সরকারের পতন ঘটবে। যুদ্ধের কথা নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায় না। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, ইউরোপীয় বা পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনে যত অস্ত্র সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিই দিক না কেন যুদ্ধবিরতি হবে কিংবা ইউক্রেন বড় কোনো সাফল্য লাভ করবে এ মুহূর্তে এমন কিছু ঘটার লক্ষণ নেই।

তবে এটা ঠিক, করোনা মহামারীর এ দুর্যোগকালীন পৃথিবীতে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধটি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব বিপর্যয়ের মধ্যে ডুবে আছে। করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্বের ২২৫টি দেশকে আক্রান্ত করেছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সাড়ে ৪৩ কোটি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রায় ৬০ লাখ মানুষ মারা গেছে। বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলছে। এর মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আক্রমণ অস্থিরতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব হবে ভয়াবহ। ইতোমধ্যে যুদ্ধের প্রভাব পড়তেও শুরু করেছে। সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। রুশ আক্রমণের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অবরোধের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল এবং গমসহ নানা ভোগ্যপণ্য এবং সেবার দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্যও ভয়ের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশকে সঙ্কট মোকাবেলা করতে হতে পারে। তেমনি আরব দেশগুলো মোকাবেলা করবে খাদ্যসঙ্কট। এ যুদ্ধ বড় একটি পারমাণবিক ঝুঁকিরও সৃষ্টি করতে পারে। রুশ সৈন্যরা ইতোমধ্যে চেরনোবিল পারমাণবিক চুল্লির নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছে। যুদ্ধে কোনো কারণে এ চুল্লি আক্রান্ত হলে কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হলে তেজষ্ক্রিয়তার ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে বিভিন্ন দেশ। এ যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী হয় এবং এটা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন এ যুদ্ধে জড়াবে না। এটা একটা ভালো দিক। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। কারণ যুদ্ধে জড়িয়ে কতটা লাভ হয়েছে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি কেউ জানে না। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিজ্ঞ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ, আফগান যুদ্ধ - যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও এখন যুদ্ধ চায় না। ফলে জো বাইডেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে না জড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তাই বলে যুক্তরাষ্ট্র হাত গুটিয়ে বসেও থাকবে না। প্রত্যক্ষ অংশ না নিলেও পরোক্ষ যুদ্ধের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি অবশ্যই থাকবে। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো যেমন ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও আছে এর সঙ্গে। এর অর্থ হলো ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যদি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তির অস্ত্র সহযোগিতা নিয়ে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায় তাহলে দীর্ঘস্থায়ী হবে এ যুদ্ধ। আর যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে সেটাই হবে আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য বিপদের কারণ। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, প্রাণ যায় আমাদের মতো ‘উলুখাগড়ার’।

পুতিন কেন যুদ্ধে জড়ালেন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ক্ষমতায় আছেন। কখনো প্রধানমন্ত্রী, কখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ক্ষমতার একেকটি মেয়াদ পার করছেন। ইতোমধ্যে তার ক্ষমতার ২২ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। রাশিয়ার ক্ষমতার সিংহাসনে তিনি আজীবন কাটাবেন এটা এখন সবাই মনে করেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে, তার তো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবু তিনি যুদ্ধের মতো ঝুঁকিতে গেলেন কেন? যুদ্ধ তার জন্য বিপর্যয়ও তো ডেকে আনতে পারে! প্রেসিডেন্ট পুতিন বিষয়টিকে এমন সরলভাবে দেখেন না। একসময় আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন দুই পরাশক্তিতে বিভক্ত ছিল গোটা বিশ্ব। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পরাশক্তি বলতে এখন একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া পূর্বের সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো শক্তিধর এমনটা কেউ মনে করে না। পুতিনের মনের যন্ত্রণাটা সেখানেই। একসময়ের কেজিবি প্রধান ছিলেন পুতিন। একজন সাহসী এবং বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। পূর্ববর্তী নেতাদের ভুলের কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে সেটা তিনি উপলব্ধি করেন। ক্ষমতায় এসে নিজেকে লৌহমানব হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এখন তিনি রাশিয়াকেও সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সোভিয়েত বলয়ভুক্ত সামরিক জোট ওয়ারশও ভেঙে যায়। কিন্তু এর বিপরীত ন্যাটো জোট অক্ষুণ্ণই শুধু থাকেনি, আরো সম্প্রসারিত এবং শক্তিশালী হয়েছে। রাশিয়া ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত হতে চাইলে নেয়া হয়নি। অথচ পূর্বের সোভিয়েত বলয়ের এবং ওয়ারশতে ছিল এমন অনেক দেশকে ন্যাটোর সদস্য করা হয়েছে। তাছাড়া পুতিন মনে করেন, পশ্চিমা শক্তি আসলে ন্যাটো জোটকে ব্যবহার করে চারদিক থেকে মস্কোকে ঘিরে ফেলছে। ১৯৯৯ সালে চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেয়। ২০০৪ সালে তাদের পথ অনুসরণ করে বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়া। ২০০৯ সালে যোগ দেয় আলবেনিয়া। এ দেশগুলো একসময় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ এবং ওয়ারশ সামরিক জোটের সদস্য। জর্জিয়া, মলদোভা এবং ইউক্রেনও চাচ্ছে ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে। কিন্তু রাশিয়া এ ব্যাপারে কঠোর থাকায় দেশগুলোর যোগ দেয়া হয়নি। এ দেশগুলোর যেকোনো একটা যদি ন্যাটোতে যোগ দেয় তা রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করতে পারে। এটা কোনোমতেই ঘটতে দেবেন না পুতিন। প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়াকে দেখেন একটি পরাশক্তি হিসেবে। তিনি বিশ্বে তার সেই সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি অটুট রাখতেই আগে ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছেন এবং বর্তমানে ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়েছেন। হয়তো তিনি ইউক্রেন পুরোপুরি দখল করে নেবেন নতুবা ইউক্রেন শাসন করবে রাশিয়া বা পুতিনপন্থী কোনো সরকার।

রাশিয়া বহু দিন ধরেই চেষ্টা করছে ইউক্রেন যাতে কোনোভাবেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে না যায়। ন্যাটোর ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট পুতিনের এলার্জি আছে। ন্যাটো জোটকে পূর্বদিকে সম্প্রসারণের ব্যাপারে রাশিয়া বরাবরই বিরোধিতা করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯০ সালে ন্যাটোকে পূর্বদিকে সম্প্রসারিত করা হবে না বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটা রাখেনি। ন্যাটো জোটের মাত্র অল্প কয়েকটি দেশের সাথে রাশিয়ার সীমান্ত রয়েছে। ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হলে এটা রাশিয়ার নিরাপত্তায় নতুন হুমকি সৃষ্টি করবে। এটাই রাশিয়া এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের উদ্বেগের কারণ।

১৯৯০-এর দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনকে প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার জন্য এক ভ‚-রাজনৈতিক বিপর্যয় বলে মনে করেন। এর পর থেকেই রাশিয়া উদ্বেগের সাথে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ দেখছে। ন্যাটো যাতে রাশিয়ার নিরাপত্তায় আর হুমকি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্যই ইউক্রেনে সামরিক আক্রমণ চালিয়েছেন পুতিন। রাশিয়াকে পরাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি নিজের নিরাপত্তা সংহত করার ব্যাপারে খুব সতর্ক তিনি। ব্রিটিশ সাংবাদিক টিম মার্শালের ‘প্রিজনার্স অব জিওগ্রাফি’ বইতে এর একটা বিশ্লেষণ উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, কেউ হয়তো ভাবতে পারেন রাশিয়ার মতো একটি সামরিক ক্ষমতাধর দেশকে কে আক্রমণ করবে। কিন্তু রাশিয়া নিজে বিষয়টি সেভাবে দেখে না। গত ৫০০ বছরে রাশিয়া বহু বিদেশী শক্তির আক্রমণের মুখে পড়েছে। সব আক্রমণ এসেছে উত্তর ইউরোপের সমতল ভ‚মি দিয়ে। ১৬০৫ সালে পোলিশদের আক্রমণ, ১৮১২ সালে নেপোলিয়নের নেতৃত্বে ফরাসিদের আক্রমণ, জার্মানরা দু’বার ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তাই নিরাপত্তা হুমকি থাকলে সে পথেই আছে। এটা নিরাপদ রাখতে চায় রাশিয়া।

রাশিয়ার হাতে এখন সবচেয়ে বড় অস্ত্র জ্বালানি। ইউরোপের মোট তেল-গ্যাসের ২৫ শতাংশ সরবরাহ হয় রাশিয়া থেকে। লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া, ফিনল্যান্ড ও এস্তোনিয়ার মতো দেশগুলোর জ্বালানির শতভাগই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। জার্মানির অর্ধেক গ্যাস যায় রাশিয়া থেকে। আর ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের প্রবেশদ্বার হচ্ছে ইউক্রেন। রাশিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রধান গ্যাস পাইপলাইনগুলো গেছে ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে। রাশিয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহ যায় এ পাইপলাইন দিয়ে। কাজেই ইউক্রেনকে কোনোভাবেই রাশিয়ার প্রভাববলয়ের বাইরে যেতে দেবেন না প্রেসিডেন্ট পুতিন। ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই এ যুদ্ধ।

এ যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকেই যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দের ঘোষণা দেয় ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডা। নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়ার ব্যাংক থেকে অর্থ তোলার হিড়িক পড়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউরোপে রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে বিদ্রোহীদের দ্ইু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ‘দোনেৎসু’ ও ‘লুহাস্কু’কে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা দিয়ে সেখানে শান্তিরক্ষায় রুশ সৈন্য পাঠানো হয়। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়ার পর রাশিয়া ইউক্রেনের এ গুরুত্বপূর্ণ শহরে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতা দিয়ে আসছিল। এ দুই এলাকায় রুশ সেনা পাঠানোর পর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন পুতিন। বর্তমানে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের শহরগুলোতে হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট পুতিন সৈন্যদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে তাদের প্রশংসা করছেন তার ভাষণে। যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় চার লাখ মানুষ ইতোমধ্যে পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। ইউক্রেন একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯১ সালে এটি স্বাধীনতা লাভ করে এবং ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র হিসেবে আবিভূর্ত হয়। ইউক্রেনে দু’টি রাজনৈতিক ধারা প্রবল। একটি ধারা পশ্চিম ইউরোপের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চায়। ইইউতে যোগ দেয়ার পাশাপাশি ন্যাটোর সদস্য হতে চায়। অপর ধারাটি রুশপন্থী। এটি রুশ বলয়ে থাকতে চায়। দেশটি জনসংখ্যার একটি অংশ রুশভাষী। তারা জাতিগতভাবে রুশ। রাশিয়ার সাথে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ঘনিষ্ঠতা আছে। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নেতৃত্বাধীন সরকার ইইউপন্থী। তার বিভিন্ন পদক্ষেপে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্ষুব্ধ। তিনি জেলেনস্কি সরকারকে উৎখাত করে সেখানে রুশপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। কারণ বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (রূপপুর) এবং অন্যান্য প্রকল্পে কাজ করছে রাশিয়া। সেই সাথে বাংলাদেশ সামরিক সরঞ্জাম, খাদ্যপণ্য ইত্যাদি আমদানি করে রাশিয়া থেকে। তাছাড়া তৈরী পোশাকের নতুন বাজার হিসেবেও রাশিয়া বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় যুদ্ধ বেশি দিন স্থায়ী হলে তা আমাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেন গম উৎপাদনের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ যেমন তেমনি মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলো গমের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। যুদ্ধের কারণে গমেরও সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তাই বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং এক দেশ অপর দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মানার্থে এ যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। করোনা মহামারীর দুঃসময়ে যে মৃত্যুর মিছিল আমরা দেখেছি, যুদ্ধের কারণে আরো লোকের মৃত্যু হোক তা কারো কাম্য নয়।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব
ই-মেইল : abdal62@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement