২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচন কমিশন আইন : মন্দের ভালো নাকি ভালোর মন্দ!

-

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর যেসব দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তা হলো- (ক) রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান; (খ) সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান; (গ) সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ এবং (ঘ) রাষ্ট্রপতির পদের এবং সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ। উল্লিখিত সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ব্যতীত সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে সংবিধান বা অন্য কোনো আইনের অধীন নির্বাচন কমিশনকে অপর কোনো দায়িত্ব প্রদান করা হলে নির্বাচন কমিশন সে দায়িত্বও পালন করবেন। উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচন যেমন : সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ প্রভৃতির নির্বাচন নির্বাচন কমিশন স্ব স্ব আইনের অধীন প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পরিচালনা করে থাকে।

সংবিধান প্রণয়ন পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে উল্লেখ ছিল- প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সময়ে সময়ে নির্ধারিত সংখ্যক কমিশনার সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। পরবর্তীতে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন আইনে নির্বাচন কমিশনারের সংখ্যা অনধিক ৪ (চার) নির্ধারণ করা হয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পরবর্তী ২০১২ সালে একাদশ নির্বাচন কমিশন এবং ২০১৭ সালে দ্বাদশ নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। উভয় নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সংবিধানে নির্ধারিত সংখ্যক ৪ (চার) জন কমিশনার সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল।

সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে নির্বাচন কমিশন বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধানাবলিসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ প্রদান করবেন। বাংলাদেশ বর্তমানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বে সংবিধান অনুযায়ী সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হয়। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির পদটি অলঙ্কারিক। আমাদের এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে অন্য সবার ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করলেও সংবিধান ও আইনের দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যতিরেকে তার পক্ষে অপর কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রয়োগ বা দায়িত্ব পালন বিষয়ে সংবিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা যে, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তার অপর সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। উল্লিখিত দুটি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতির পক্ষে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতি তাকেই প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারেন যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে একক সিদ্ধান্তে নিয়োগ প্রদান করেছেন এমনটি এ যাবৎকাল পর্যন্ত কোনো নজির সৃষ্টি হয়নি। যদিও এ ক্ষমতাটি প্রয়োগ করতে গিয়ে একজন রাষ্ট্রপতিকে নির্ধারিত মেয়াদ পূর্তির পূর্বে প্রায় ৮ মাসকাল দায়িত্ব পালনের পর ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে অসম্মানজনক বিদায়ে বাধ্য করা হয়েছিল।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের অনুপস্থিতিতে একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন কমিশন গঠনকালে নির্বাহী আদেশ দ্বারা রাষ্ট্রপতিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ পরবর্তী সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি পদের বিপরীতে দুটি করে নামের সুপারিশ গ্রহণের দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রথম সার্চ কমিটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান- এ চার জন সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় সার্চ কমিটিতে উপরোক্ত চার জনের অতিরিক্ত আরো দু’জন সদস্য ছিল। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অপর জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আমাদের সংবিধান প্রণয়নকালীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা বিষয়ক অনুচ্ছেদ ১১৮ এ সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এতদবিষয়ে প্রণীত আইনের বিধানাবলিসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অপরাপর নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দান করবেন। দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে এলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। আশার কথা গত ২৯ জানুয়ারি ২০২২ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনটির গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ আইনটি পর্যালোচনায় দেখা যায় এটি ইতোপূর্বে একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রাক্কালে যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল অনেকটা উভয়ের অনুরূপ। প্রণীত আইনের সার্চ কমিটির সাথে প্রথমোক্ত সার্চ কমিটির একমাত্র পার্থক্য হলো এটিতে রাষ্ট্রপতি মনোনীত দু’জন বিশিষ্ট নাগরিক, যাদের একজন নারী অন্তর্ভুক্তির বিধান করা হয়েছে। দ্বিতীয় সার্চ কমিটি প্রণীত আইনের সার্চ কমিটির ন্যায় সমসংখ্যক ছয় সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হলেও এটির অতিরিক্ত দু’জন সদস্যের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অপরজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় সার্চ কমিটিতে যে চারজন সাংবিধানিক পদধারীর সন্নিবেশন ঘটেছিল প্রণীত আইনটিতেও সমরূপ সাংবিধানিক পদধারী অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

প্রত্যেক সাংবিধানিক পদধারীর নির্ধারিত দায়িত্ব রয়েছে এবং একজন সাংবিধানিক পদধারী সংবিধান নির্দেশিত তার নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই তার সততা, আন্তরিকতা, স্বাতন্ত্র্য, সকীয়তা, নিরপেক্ষতা ও শপথের বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন করেন। সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিষয়ে সংবিধানের যে বিধান তা হলো তারা কেবল নিজ নিজ বিভাগে আসন গ্রহণ করবেন। একজন বিচারক কেবলমাত্র বিচার কার্য পরিচালনার জন্যই আসন গ্রহণ করতে পারেন। সুতরাং সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সাংবিধানিক পদধারী একজন কর্মরত বিচারককে বিচার কার্যবহির্ভূত কোনো দায়িত্ব দেয়া হলে তা সংবিধানসম্মত কিনা এমন প্রশ্নের উদয় হয়। তাছাড়া নিয়োগ বিষয়ে উচ্চাদালতে রিট মামলা দায়ের হলে ভ্রাতৃপ্রতিম সহকর্মীদের সিদ্ধান্ত ভ্রাতৃপ্রতিম বিচারক বিচার কার্য পরিচালনাকালীন কোনোরূপ বিব্রতবোধ ব্যতিরেকেই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট এমন নিশ্চয়তা আছে কী? অপর বিষয়টি হলো সুপ্রিম কোর্টের যে উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার রয়েছে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কর্র্তৃক আপিল বিভাগের মতামত চাওয়া হলে সে ক্ষেত্রেও তা সহকর্মী ভ্রাতৃপ্রতিম বিচারক বা প্রধান বিচারপতির জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে যদিও রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ব্যতিরেকে এরূপ মতামত যাচনার জন্য ক্ষমতা প্রাপ্ত নন।

সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করলে তা যে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের বিশুদ্ধতার হানি ঘটিয়ে স্বীয় সাংবিধানিক দায়িত্বকে দোলাচলে নিপতিত করবে এমন ধারণাপোষণ অমূলক নয়।

ইতঃপূর্বেকার সার্চ কমিটি প্রতিটি পদের বিপরীতে দুটি নাম সুপারিশ করতে পারত। প্রণীত আইনটির ক্ষেত্রেও দেখা যায় সার্চ কমিটি প্রতিটি পদের বিপরীতে দুটি নাম সুপারিশের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। সার্চ কমিটি তার দায়িত্ব পালন সম্পন্ন পরবর্তী সুপারিশসমূহ রাষ্ট্রপতির বরাবর প্রেরণের যে বিধান প্রণীত আইনে রয়েছে পূর্বেকার সার্চ কমিটির ক্ষেত্রেও অনুরূপ বিধান ছিল। এখানে যে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন তা হলো সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট দু’টি দায়িত্ব যথা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ব্যতীত অপর দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ব্যতিরেকে কার্য সম্পন্নের কোনো ক্ষমতা প্রদান করেছে কিনা। এক কথায় এর সহজসরল উত্তর- সংবিধান রাষ্ট্রপতি কর্তৃক এককভাবে এরূপ ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে নিশ্চুপ। উপরোক্ত আলোচনা হতে ধারণা পাওয়া যায় পূর্বেকার সার্চ কমিটি কর্তৃক সুপারিশ পরবর্তী নিয়োগের ক্ষেত্রে যেমন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অত্যাবশ্যক ছিল প্রণীত আইনেও এর ব্যত্যয় রাখা হয়নি।

দেশ ও জাতি ইতঃপূর্বে প্রত্যক্ষ করেছে সার্চ কমিটির সুপারিশে গঠিত একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন কমিশন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচনের আয়োজন করে চরমভাবে বিতর্কিত হয়েছে। প্রণীত আইনের সার্চ কমিটি বাস্তবতার নিরিখে পূর্বেকার সার্চ কমিটির চেয়ে অধিকতর গ্রহণযোগ্য সুপারিশ প্রদানে সক্ষম যে নয় এটি সময়ই বলে দিবে।

আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় রাষ্ট্রপতিকে যেকোনো আইনে ক্ষমতা অর্পণ করা হলেও তার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রমের কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং বাস্তবতা হলো সুপারিশ পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর আকাক্সক্ষাই কমিশন গঠিত হবে।

প্রণীত আইনটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতার যে সব বর্ণনা রয়েছে তাতে সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। আইনটিতে পেশার পরিধি বিস্তৃত করায় বেসরকারি যেকোনো পেশায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা কমিশনার হিসেবে নিয়োগের যোগ্যতা রাখেন। সংখ্যা বিবেচনায় বেসরকারি পেশাজীবীদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক খাতের (ফরমাল সেক্টর) মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় তৈরি পোশাকশিল্প খাতে। প্রণীত আইনটির সহনীয় বিধান বিবেচনায় ভোটারের সংখ্যাধিক্যের কারণে এ খাত হতে কমিশনে নিয়োগের দাবি উত্থাপিত হলে সার্চ কমিটির নিকট তা সুপারিশে অন্তর্ভুক্তির অগ্রাহ্যের যুক্তি কী? অনুরূপ দাবি অনানুষ্ঠানিক খাত (ইনফরমাল সেক্টর) কৃষক সংশ্লিষ্ট কৃষি খাত এবং শ্রম সংশ্লিষ্ট রিকশা শ্রমিকদের পক্ষ হতেও উত্থাপিত হলে তার যৌক্তিক নিরসন প্রত্যাশিত নয় কি? বিশেষায়িত পেশাজীবী যেমন- প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক প্রভৃতির পক্ষ হতেও উত্থাপিত হলে এটিরও যৌক্তিক সুরাহা প্রয়োজন।

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগবিষয়ক প্রণীত আইনটির সার্চ কমিটির সাথে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর বাছাই কমিটি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ এর বাছাই কমিটির তুলনা করলে দেখা যায় প্রথমোক্তটিতে প্রণীত আইনের সার্চ কমিটির সাংবিধানিক পদধারী চারজনের অতিরিক্ত অবসরপ্রাপ্ত বা কর্মরত মন্ত্রিপরিষদ সচিব অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অপর দিকে শেষোক্তটির বাছাই কমিটি সম্পূর্ণ ভিন্নতর। এটির সভাপতি ও সদস্য হিসেবে যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তারা হলেন- জাতীয় সংসদের স্পিকার; আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়োজিত মন্ত্রী; চেয়ারম্যান, আইন কমিশন; মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক মনোনীত সরকারি দল ও বিরোধী দলের দু’জন সংসদ সদস্য।

প্রণীত আইনটিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদানের জন্য অনুসন্ধান কমিটির কথা বলা হয়েছে। অপর দিকে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইনে একই উদ্দেশ্যে বাছাই কমিটির কথা বলা হয়েছে। আইনত্রয়ের অনুসন্ধান ও বাছাই কমিটির কাজের পরিধি এক ও অভিন্ন হলেও অনুসন্ধান ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যরা নিজস্ব বিবেকবুদ্ধি ও চিন্তার প্রয়োগ অনুসন্ধানের মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে বের করার চেষ্টায় রত থাকেন। পক্ষান্তরে বাছাই কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি হতে প্রাপ্ত নাম বাছাই করে সুপারিশ প্রণয়ন করেন। শেষোক্ত ক্ষেত্রে বিবেক বুদ্ধি ও চিন্তার প্রয়োগের সুযোগ অবারিত নয়।

নিয়োগবিষয়ক উপরোক্ত তিনটি বাছাই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত পদধারীদের অবস্থান ও দায়িত্ব বিবেচনায় নেয়া হলে প্রতীয়মান হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ এর বাছাই কমিটিতে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তি ব্যতিরেকে অপর দুটি সার্চ বা বাছাই কমিটি হতে ভিন্নতায় জনপ্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত বিধায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ এর বাছাই কমিটিটি গণতান্ত্রিক ও অধিক গ্রহণযোগ্য।

অনেকেই মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও সংবিধান প্রণয়নের প্রায় ৫০ বছর পর এ বিষয়ে আইনটি প্রণীত হওয়ায় এটি মন্দের ভালো বা ভালোর মন্দ কিন্তু যে আইন সুপারিশ প্রদানে ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পূর্বেকার সার্চ কমিটির অবিকল প্রতিচ্ছবি তা জনআকাক্সক্ষায় কমিশনার নিয়োগে আশার আলো দেখাবে এ বিতর্ক অসাড়।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement