২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অস্ত্র চলচ্চিত্র, ফের খুন হলেন গান্ধী

- ছবি : সংগৃহীত

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও কখনো হয়ে উঠতে পারে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত, হত্যা ও খুনোখুনির হাতিয়ার। হতে পারে জিঘাংসা চরিতার্থ করার এক অমোঘ ও ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র। সংস্কৃতির সেই অস্ত্রটি বাস্তব রূপ নিয়ে আসতে পারে কবিতা, সঙ্গীত, নাটক বা চলচ্চিত্রের মতো যেকোনো মাধ্যমে।

বঙ্কিমচন্দ্রের কল্প-ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসগুলো, বিশেষ করে ‘আনন্দমঠ’ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ উপন্যাসে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ‘হিন্দুরা যদি কখনো দেশের শাসন ক্ষমতা পায় তাহলে সেই রাজত্বে মুসলমানের কোনো জায়গা হবে না।’ আজকের ভারত সেই পথেই আগুয়ান। কিন্তু একই সাথে দেশটি নিজেদের গর্বের সামান্য যা কিছু ছিল, শান্তি, অহিংসার প্রতীক সেগুলোও বিসর্জন দিচ্ছে। তার আগে একটু ভূমিকা দিয়ে নিতে চাই।

গত ৩০ জানুয়ারি ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর মৃত্যু দিবস। তারই দেহরক্ষী নাথুরাম গডসে সাত-বোরের স্বয়ংক্রিয় পিস্তল বেরেটা এম ১৯৩৪ দিয়ে বব্লঙ্ক রেঞ্জে তিনটি গুলি করে তাকে হত্যা করেছিল ১৯৪৮ সালের এই দিনে। এর মাত্র সাড়ে চার মাস আগে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে। ভারতীয়রা তাকে ‘মহাত্মা’ অভিধা দেয় আরো আগে। স্বাধীনতার পর তাকে ‘জাতির পিতার’ সম্মান ও মর্যাদা দেয়া হয়। তাকে মনে করা হয় সতথ্য, শান্তি এবং অহিংসার এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব। সমগ্র বিশ্বের সামনে উপস্থাপনের মতো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যদি ভারতে থেকে থাকে, তিনি এই সবেধন নীলমণি গান্ধী। এই দিনে তাকে স্মরণ করেন অনেকে। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গত ৭৫ বছর ধরে তার জন্ম ও মৃত্যু দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়ে এসেছে। তবে গত কয়েক বছরে সে উৎসাহে ভাটার টান পড়ে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শাসনকালে উল্টোটাই ঘটছে। এখন স্মরণ করা হচ্ছে মি. গান্ধীর হত্যাকারীকে।

চলতি ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি মৃত্যু দিবসে গান্ধী পেলেন এক নতুন ধরনের উপহার। তার হত্যার দিনটিতেই ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে নির্মিত একটি শর্টফিল্ম প্রকাশ করা হলো ইন্টারনেটে নাটক সিনেমা দেখার প্লাটফর্মে (ওটিটি)। ছবিটির নাম ‘হোয়াই আই কিল্ড গান্ধী’ (কেন আমি গান্ধীকে খুন করেছি)।

নাথুরাম ছিলেন মহারাষ্ট্রের পুনে বা পুনা শহরের একজন আইনজীবী ও রাজনৈতিক কর্মী। শুরুতে গান্ধীর ভক্ত, পরে তার প্রতি হতাশ। ‘অগ্রণী’ নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন। তিনি নয়াদিল্লিতে খুব কাছ থেকে গান্ধীর বুকে তিনবার গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করেন। এই হত্যা ছিল পূর্ব-পরিকল্পিত। কারণ খুনিরা বিশ্বাস করত, গান্ধী ভারত বিভাগের সময় সে দেশের মুসলমানদের রাজনৈতিক দাবির পক্ষে অর্থাৎ আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। তিনি সব সময়ই মুসলমানদের অনুকূলে কাজ করেছেন। অর্থাৎ হিন্দুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। পরে বিচার করে গডসেকে ১৯৪৯ সালের ৮ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

ওটিটিতে মুক্তির আগে ছবিটি চার বছর ধরে আটকে ছিল। কারণ সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দেয়নি। এখন সেটি দেয়া হলো। মুক্তির আগে এটি ভারতে বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করে। সে রাজ্যে ক্ষমতায় আছে তিন দলের জোট সরকার। জোটের প্রধান শরিক কট্টরপন্থী দল ভারতীয় শিবসেনা। সঙ্গে আছে জাতীয়তাবাদী ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) এবং ভারতীয় কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে হলেন শিবসেনার নেতা। মি. গান্ধীর অবমাননার সম্ভাবনায় বিচলিত, বিব্রত কংগ্রেস। তাই মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের নেতা নানা পাটোলে ছবিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রীকে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয় যেন ছবির মুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। আবেদনে বলা হয়, গান্ধীর হত্যাকারী ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কর্মী নাথুরাম গডসেকে এ ছবিতে মহিমান্বিত করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে চলচ্চিত্র শিল্পী কলাকুশলীদের একটি সংগঠনও ছবিটির মুক্তির বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছে। বলেছে, এ ছবিতে নাথুরাম গডসের ভূমিকায় যিনি অভিনয় করছেন, তিনি ভারতের লোকসভার এমপি। তিনি ভারতের সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। এমপি অভিনীত এ ছবি যদি মুক্তি পায়, তাহলে গোটা জাতি ভেঙে পড়বে। এতে স্পষ্ট করেই বলা হয়, মহাত্মা গান্ধী জাতির পিতা। তিনি ভালোবাসা, ত্যাগের প্রতিভূ। তার হত্যাকারী দেশবাসীর চোখে বিশ্বাসঘাতক ছাড়া কিছু নয়। সেই বিশ্বাসঘাতকের পক্ষ নিয়ে ছবি মুক্তি পেলে তা সাধারণ জনগণের আবেগ আহত করবে। বিশেষত ৩০ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে এক শোকের দিন।

নাথুরাম গডসের প্রতি ঘৃণা বর্ষণের দিন। এমন দিনে ওই ডকুমেন্টারি প্রকাশ্যে এলে দেশবাসীর মনে আরো বেশি ক্ষোভের সঞ্চার হবে। তাই ছবিটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হোক। এটা গোটা জাতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের আবেদন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ করার মতো ঘটনা যে, গান্ধীর খুনির ভূমিকায় অভিনয় করছেন মহারাষ্ট্র জোট সরকারের শরিক দল এনসিপির এমপি অমল কোহলে। তিনি একজন চিকিৎসক, অভিনেতা এবং রাজনীতিক। বর্তমানে লোকসভার সদস্য। নাথুরাম গডসের ভূমিকায় তার অভিনয়ের ঘটনা আলোড়ন তুলেছে। মুখ্যমন্ত্রী কান পাতেননি কংগ্রেসের আহবানে। সুপ্রিম কোর্ট ৩১ তারিখে এসে বলেছে, তারা ছবিটির মুক্তি স্থগিত করতে সম্মত নন। কংগ্রেসকে ‘হাইকোর্ট’ দেখিয়ে দিয়েছেন আদালত। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের আহবানে সাড়া দেননি। ছবিটি ওটিটিতে মুক্তি পেয়ে গেছে।

এখন এই ইস্যুতে জোটের শরিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধে গেছে। জোট ভেঙে যাবারও সমূহ সম্ভাবনা। আর তাতে সুবিধা পাবে রাজ্যে বিরোধী দল বিজেপি। কারণ, ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল তারাই। নতুন নির্বাচন হলে বিজেপির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। রাজ্যে তিন দলের জোট ব্যর্থ হলে জাতীয় পর্যায়েও তার প্রভাব পড়বে। আর তাতে কার্যত বিজেপিরই পোয়াবারো।

ছবিটি সম্পর্কে সামান্য তথ্য জেনে নিতে পারি। নাথুরাম গডসে খুনের মামলায় আদালতে দাঁড়িয়ে যে জবানবন্দী দিয়েছিলেন সেটিকেই মূলত এ ছবিতে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্তে একজন বিচারপতির রিপোর্টও গুরুত্ব পেয়েছে ছবিতে। গান্ধীর হত্যাকাণ্ড যে যুক্তিসঙ্গত ছিল, এটি যে একটি বীরত্বপূর্ণ কাজ, সেটিই প্রমাণ করা হয়েছে ২০১৭ সালে নির্মিত ৪৫ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রে। গান্ধীর হত্যাকারীকে বানানো হয়েছে ‘জাতীয় বীর’।

আর গান্ধীকে ‘জাতীয় বেইমান, বিশ্বাসঘাতক’ যেহেতু গান্ধী মুসলমানদের সঙ্গে সমঝোতায় গেছেন; তাদের আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবির পক্ষে ছিলেন। ছবির প্রথম ১০ মিনিট একটি ভাষ্য দেয়া হয়েছে যাতে ওই হত্যা মামলা নিয়ে বিচারপতি জেএল কাপুরের দেয়া তদন্ত রিপোর্টের ১২’শ অধ্যায়ের বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। পরের ৩৫ মিনিটে নাথুরাম গডসের জবানবন্দীর বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এসব বক্তব্য কখনো সামনে আসেনি। কারণ অন্তরে যত গোঁড়ামিই থাকুক ওই সময়ের কংগ্রেস সদ্য স্বাধীন দেশটিকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবেই সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এখন ভারতের বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের প্রচলিত ইতিহাসের বাইরে গিয়ে বিকল্প ইতিহাস তুলে আনা হচ্ছে। এই প্রামাণ্য চিত্র সেটাই করেছে।

আর ছবিটি দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হলো ঠিক গান্ধীর হত্যার দিনে। শান্তি ও অহিংসার ধ্বজাধারী গান্ধীর জন্য আদর্শিকভাবে এর চেয়ে বড় পরাজয় আর কী হতে পারে? এই চলচ্চিত্র মুক্তির মধ্য দিয়ে গান্ধী দ্বিতীয়বার খুন হলেন। ঘটনার বিস্তার ৭৫ বছর পর হলেও আততায়ী সেই একই, নাথুরাম। এজন্যই বলেছি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হয়ে উঠতে পারে খুনোখুনির হাতিয়ার। চলচ্চিত্র একটি অত্যন্ত সৃজনশীল কাজ। আর সেটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ উদ্দেশ্যে। অপারেশন থিয়েটারের ছুরি দিয়ে মানুষ খুন করা যাবে না এমন তো নয়!

ভারতে অহিংসার পথ সযত্মে পরিত্যক্ত। গান্ধীর মৃত্যুর দিনে মুম্বাইয়ের গান্ধী গবেষণা কেন্দ্রের এক অনুষ্ঠানে গান্ধীর নাতির ঘরের ছেলে তুষার গান্ধী গভীর হতাশার সঙ্গে বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ যারা লালন করতেন, দেশে তাদের প্রভাব কমছে। উল্টো গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের নীতির বিস্তার ঘটছে।’

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন উপলক্ষে ‘আজাদি কা অমৃৎ মহোৎসব’ উদযাপন করছে, তখন সমাজে ‘ঘৃণার বিষ’ ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। ‘অমৃত এখন ঘৃণার বিষে পরিণত হয়েছে এবং এটা বাড়ছে, ছড়িয়ে পড়ছে,’ বলেন গান্ধীর পুতি। এটা সত্যি যে, সম্প্রতি ভারতে গান্ধীর বিরোধিতা বেড়েছে। বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গান্ধীর হত্যার ঘটনা সমর্থন করছে। পাশাপাশি চলছে নাথুরাম গডসেকে ‘ন্যাশনাল হিরো’ বানানোর চেষ্টা। হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রনায়কদের মানুষের সামনে নিয়ে আসতে। এতক্ষণ যে চলচ্চিত্রের কথা বললাম, সেটি এই চেষ্টারই অংশ। এমন লক্ষ্য নিয়েই বিপুল অর্থ ব্যয়ে বল্লভ ভাই প্যাটেলের গগনচুম্বী ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ওখানেও গান্ধীকে খর্ব করে ফেলার খুব সচেতন একটি প্রয়াস কাজ করেছে। কিন্তু গান্ধী হত্যার ঘটনা নাথুরামের নিজের কোনো পরিকল্পনা নয়। এর পেছনে আরো বড় কুশীলব সক্রিয় ছিল। সেই কুশীলবদের আসল মাস্টারমাইন্ড বিনায়ক দামোদর সাভারকার যিনি ‘হিন্দুত্ব’ নামে বই লিখে প্রথম ভারতবাসীকে শোনান সেই বিভেদের বাণী যা হিন্দু ও মুসলমানদের আলাদা জাতি হিসাবে চিহ্নিত করে এবং মুসলমান নিধনের উসকানি দেয়।

এই কর্মকাণ্ডটি সাভারকার শুরু করেছিলেন ১৯২০ সাল বা তারও আগে। ‘হিন্দুত্ব’ বই আকারে প্রকাশ পায় ১৯২২ সালে। এর ঠিক ১০০ বছর পর এখন উত্তর ভারতে প্রকাশ্যে মুসলিমদের গণহত্যার ডাক দেয়া হচ্ছে। আর তার বিরুদ্ধে দেশটিতে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কোনো কণ্ঠস্বর উচ্চকিত হয়েছে এমনটা দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ একটি কবিতায় লিখেছিলেন :
‘এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু মুসলমান।
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ,
এসো এসো খৃষ্টান।
এসো ব্রাহ্মণ, শুচি করি মন
ধরো হাত সবাকার,
এসো হে পতিত করো অপনীত
সব অপমানভার।’

সেই মিলনের বাণী আজ আন্দামানে নির্বাসিত। আর আন্দামানের সেই অন্ধ কারা প্রকোষ্ঠ থেকে সগৌরবে উঠে এসেছেন গান্ধীর আজন্ম প্রতিদ্বন্দ্বী, হিংসার বাণীবাহক বিনায়ক দামোদর সাভারকার। আগের বার গান্ধী জিতে গিয়েছিলেন, ‘জাতির পিতা’র আসন পেয়েছিলেন। এখন পাশা উল্টে যাচ্ছে। তারই স্বজাতি আরেক গুজরাটির হাতে রঙ্গমঞ্চ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। গান্ধীর নির্বাসন ও সাভারকারের পুনর্বাসন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভারতের ঘটনাবলি থেকে আমরা চোখ ফিরিয়ে রাখতে পারি না। কারণ তার ঢেউ আমাদের গায়ে এসে পড়ে।
mujta42@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement