২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইসরাইল ও প্রীতি প্যাটেলের হামাসফোবিয়া

-

ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র্মন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভ‚ত প্রীতি প্যাটেল মূলত গুজরাটি। তার পরিবার ষাটের দশকে ইংল্যান্ডে স্থায়ী হয়, সেখানেই প্রীতির জন্ম। পড়াশোনা শেষ করে প্রীতি ২০১০ সালে কনজারভেটিভদের হয়ে প্রথমবার ভোটে অংশ নেন ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

প্রীতি প্যাটেল ১৯ নভেম্বর ২০২১ ঘোষণা করেছেন, সরকার পুরো ফিলিস্তিনি ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্ট, হামাসকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এই দলের প্রতি সমর্থনদান অবৈধ ঘোষণা করছে। ইংল্যান্ডে হামাসকে যেকোনো ধরনের সমর্থনের জন্য ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

প্যাটেল হামাসকে ‘মৌলিক এবং চরমপন্থী সেমিটিকবিরোধী’ বলে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, এই ঘোষণা ব্রিটেনে ইহুদিদের রক্ষা করবে। তিনি আরো বলেন, ‘ইহুদিবিদ্বেষ একটি মন্দ স্বভাব যা আমি কখনোই সহ্য করি না। ইহুদিরা সবসময় অনিরাপদ বোধ করে।’

ফিলিস্তিনে ইসরাইলের নির্মমতা ও সামরিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে হামাস একটি প্রতিরোধ আন্দোলন। প্যাটেলকে এই পদক্ষেপ নিতে কে চাপ দিয়েছে? এই কাজে কে উপকৃত হবে? এর ফলে হামাস তাদের কার্যক্রম বন্ধ করবে নাকি আরো জোরদার করবে তা বোঝা যাবে ইসরাইলি লবির তৎপরতা এবং ইসলামোফোবিক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, প্যাটেলকে কী নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার ওপর। ইসরাইলি সাংবাদিক গিডিওন লেভি মনে করেন, ‘খুব সম্ভব পর্দার আড়ালে কিছু হয়েছে’।

সাংবাদিক বারুচ ইয়েদিদ ব্যাখ্যা করেছেন, ইসরাইল ব্রিটেনের কাছে এমন তথ্য হস্তান্তর করেছে যে, হামাস তহবিল সংগ্রহ এবং অর্থপাচারের জন্য যুক্তরাজ্যকে ব্যবহার করছে। অথচ ইসরাইল অস্ত্র তৈরির জন্য যুক্তরাজ্যে অস্ত্র কারাখানা চালাচ্ছে বহু বছর ধরে। সে বিষয়ে প্যাটেলের কোনো মন্তব্য নেই। এ ধরনের একতরফা অভিমতের জন্য অনেক আগেই মুসলিম বিশ্বে ব্রাইটনদের মূল্য অনেক কমেছে।

ইসরাইলি রাজনীতিবিদরা প্যাটেলের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটও বলেন, ‘হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন’। এ বিষয়ে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তিনি বরিস জনসনকে ধন্যবাদও জানান। ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদও প্যাটেলকে ধন্যবাদ জানান।

আন্তর্জাতিক আইনে সামরিক দখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সম্পূর্ণ বৈধ হলেও ইসরাইল পশ্চিমাদের বোঝাতে সফল হয়েছে যে, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ‘সন্ত্রাসবাদ’ এবং ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন সন্ত্রাসী কার্যক্রম নয়; আর এন্টি-সেমিটিজিম যে অপরাধ তা তো বলবৎ রয়েছেই!

২০০১ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যে হামাসের সামরিক শাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কুড়ি বছর পরে, এই নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক শাখাকেও অন্তর্ভুক্ত করল। তাহলে দুই শাখার মধ্যে আর পার্থক্য রইলো না। একটি বিষয় স্পষ্ট হলো যে, হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি দুই দশক ধরেই ব্রিটিশদের মাথা ছিল।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ ছয়টি ফিলিস্তিনি সুশীল সমাজের এনজিও গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনোনীত করার পরপরই প্যাটেলের প্রস্তাব বাজারে আসে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে সংঘটিত কথিত যুদ্ধাপরাধের পূর্ণ তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্তের পরপর প্যাটেল ঘুঁটি চালিয়ে দেন।

২০১৪ সালের জুলাই মাসে গাজায় হামলার সময় গান্টজ ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান ছিলেন, যুদ্ধে কমপক্ষে ২ হাজার ২৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৪৬২ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৫৫১ জন শিশু ছিল। গান্টজকে এই কাজটি আইসিসির যুদ্ধাপরাধের তদন্তে প্রধান সন্দেহভাজন করে তোলে। হামাস আইসিসি তদন্তে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়; ইসরাইল তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে। ইসরাইলের আবার নিজস্ব এক সন্ত্রাসী তালিকা আছে। ফিলিস্তিনি বিভিন্ন সংগঠন ওখানে তালিকাভুক্ত। ওরা আইসিসি তদন্তে সহযোগিতা করছে জানিয়েছে। এতেও ইসরাইল ক্ষিপ্ত।

প্যাটেল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সাথে মিলে মধ্যপ্রাচ্যের কূটচালের অংশ হিসেবে ইসরাইলকে ‘আলোর শক্তি’ এবং ফিলিস্তিনি হামাসকে ‘অন্ধকারের শক্তি’ মনে করেন। ভাবখানা এরকম অন্ধকার দূরীভূত করা যেন এক পবিত্র দায়িত্ব। প্যাটেল নিজেকে একজন থ্যাচারিস্ট মনে করেন, মার্গারেট থ্যাচার তার পছন্দ। প্যাটেল হিন্দু ধর্ম ছেড়ে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন। যদিও ভারতের মোদি ও হিন্দুত্ববাদ তার প্রিয়।

হামাস বলেছে, প্যাটেলের ঘোষণা ‘ইসরাইলি দখলের প্রতি সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্ব’। ব্রিটিশ ইহুদিদের বোর্ড অব ডেপুটিজ প্যাটেলকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে, আর ইহুদি প্রচার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তকে ইসরাইলি ক‚টনীতির জয় হিসেবে অভিহিত করেছে। জানা যায়, ইসরাইল এবং তার শক্তিশালী লবি এই বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারকে চাপ দিচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট গত ২১ নভেম্বর গ্লাসগোতে জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনে সাক্ষাতের সময় বরিস জনসনকে পুরো হামাসকে অবৈধ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

২০১৭ সালে, মন্ত্রী হিসেবে, প্যাটেল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনকে না জানিয়ে ইসরাইলে ফ্রিল্যান্স সফরে যান। ব্যক্তিগত ছুটিতে থাকার ভান করে, প্যাটেল বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ উচ্চপদস্থ ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সাথে বেশ কয়েকটি গোপন বৈঠক করেন। ইসরাইল তখন প্যাটেলের সম্মানে ১২টি ভোজসভার আয়োজন করে। তার বর্তমান পদে যোগদানেও ইসরাইলের হাত রয়েছে। পত্রপত্রিকায় এসব বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে।

প্যাটেলকে ফিলিস্তিনবিরোধী কোনো কাজে অনুরোধ বা চাপ দেয়ার প্রয়োজন নেই। এমনিতেই তাকে ইসরাইলের ‘চিয়ারলিডার’ বলে ডাকা হয়, ২০১৭ সালে থেরেসা মে সরকারের সময়, ইসরাইলের সাথে গোপন সভা করার কারণে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হন। ব্রিটিশ উন্নয়ন সহায়তা ফান্ডকে ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স, আইডিএফকে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন বিধায় তাকে ‘অযোগ্য’ হিসেবে দায়ী করা হয়।

ওই ঘটনার পর প্যাটেল পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পদত্যাগপত্রে প্যাটেল স্বীকার করেন, তার কাজগুলো মন্ত্রীপর্যায়ের নিয়ম ভঙ্গ করেছিল এবং ‘একজন মন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশিত মানের নিচে নেমে গিয়েছিল।’ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মে নির্দেশ দেন যে, ইসরাইলের সাথে সব লেনদেন ‘আনুষ্ঠানিকভাবে এবং সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে’ করতে হবে।

এটা বিদ্রুপের বিষয় যে, ব্রিটিশ সরকার ইসরাইলকে এত সমর্থন করে। কারণ ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ ম্যান্ডেট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘ইহুদি সন্ত্রাসবাদের’ মধ্য দিয়েই জায়নবাদী রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। হাগানাহ, স্টার্ন গ্যাং এবং ইরগুনের সন্ত্রাসীরা ১৯৪০-এর দশকে হত্যা ও ধ্বংসের একটি প্রচারণা চালিয়েছিল। ১৯৪৬ সালে এই সন্ত্রাসীরা জেরুসালেমের কিং ডেভিড হোটেল উড়িয়ে দেয়, যার ফলে ৯১ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়। হোটেলটি সেই সময় ব্রিটিশ প্রশাসনের সদর দফতর ছিল!
সব জায়নবাদী ইহুদি নয়- প্যাটেল এর বড় উদাহরণ। বিশ্বের অনেক ইহুদি ইসরাইলকে নিঃশর্ত সমর্থন দেয় না। কিছু অর্থোডক্স ইহুদি ইসরাইলি রাষ্ট্রের বিরোধিতাও করে। প্যাটেলের এই পদক্ষেপকে ইহুদি সম্প্রদায়ের সবাই স্বাগত জানাবে না।

হামাস ১৯৮৮ সালে পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপে ইসরাইলের দখলের বিরুদ্ধে প্রথম ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার শুরুতে আবিভর্‚ত হয়। ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে গাজা থেকে ইসরাইলের একতরফা প্রত্যাহারের পর হামাস অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয় যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ওপর আধিপত্য বিস্তারকারী মূলধারার ফাতাহ দলের বিরুদ্ধেও প্রতিদ্ব›িদ্বতা শুরু হয়। তারা রামাল্লা থেকে পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপ উভয়ের ওপর নজরদারি ও শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
১৯৯০-এর দশকে হামাস দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। প্রাথমিকভাবে, এটি ইসরাইলি শহরে রকেট নিক্ষেপ করে বিরোধিতার সূচনা করে। হামাস ইসরাইলের অভ্যন্তরে সংঘটিত আত্মঘাতী বোমা হামলার সাথেও যুক্ত হয়। হামাস গাজার একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে ইসরাইলি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ফেলে দিয়ে ইসরাইলের ভীতিতে পরিণত হয়। ইসরাইলের পুরো গাজা নিয়ন্ত্রণে হামাসই প্রতিবন্ধক। ফাতাহ ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অন্য দিকে হামাসের জনজীবনে সততার পাশাপাশি ইসরাইলি দখলের বিরুদ্ধে প্রকৃত প্রতিরোধী শক্তির রেকর্ড অনেক বেশি।

২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে, হামাস নতুন সরকার গঠন করে। ইসরাইল এ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইসরাইলের অনুগমন করে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ২০০৭ সালের মার্চে হামাস তার চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ফাতাহকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন করে। এই সরকার দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইলের সাথে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেয়। ইসরাইল আলোচনা করতেও অস্বীকার করে, বরং হামাসকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করে সহযোগিতাবাদী ফাতাহ শাসনব্যবস্থা চালু করার ষড়যন্ত্র করে। এই ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত আলজাজিরার ‘ফিলিস্তিন পেপারস’-এ রয়েছে।

২০০৮ সাল থেকে গাজায় চারটি বড় ইসরাইলি হামলা হয়। বেসামরিক জনগণের মৃত্যু এবং সম্পদ ধ্বংসই যুদ্ধের ফলাফল। মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরাইল-হামাস বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিরতিও হয়। হামাস চুক্তিকে সম্মান দেখালেও ইসরাইল প্রতিটি চুক্তি লঙ্ঘন করে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের হামলায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী অনেক যুদ্ধাপরাধ করেছে যা জাতিসঙ্ঘের গোল্ডস্টোন প্রতিবেদনে বিস্তারিত নথিভুক্ত করা আছে।

২০১৭ সালে, হামাস একটি নীতিমূলক পলিসি ডকুমেন্ট প্রচার করে, যেখানে হামাস বলে যে, ইসরাইলি রাষ্ট্রের পাশাপাশি গাজা স্ট্রিপ এবং পশ্চিম তীরে পূর্ব জেরুসালেমের একটি রাজধানী শহরের সাথে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে। অর্থাৎ ইসরাইলি রাষ্ট্রের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ধারণা উপস্থাপন করে। আরো বলে, হামাসের সংগ্রাম ইহুদিদের সাথে নয় বরং ‘দখলকারী জায়নবাদী আক্রমণকারীদের’ সাথে। এই পদক্ষেপ হামাসের রাজনৈতিক পরিপক্বতাকে তুঙ্গে তুলে দেয়।

ইসরাইল তার পশ্চিমা মিত্রদের উৎসাহে নগ্ন সামরিক শক্তি জাহির করে গাজাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করেছে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের তদন্তের বিরোধিতা করছেন বরিস জনসনও। কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব ইসরাইলকে লেখা এক চিঠিতে জনসন বলেছেন, যদিও তার সরকার আদালতের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে, কিন্তু তারা এই বিশেষ তদন্তের বিরোধিতা করে। তিনি লিখেছিলেন, ‘এই তদন্ত যুক্তরাজ্যের একজন বন্ধু এবং মিত্রের ওপর আংশিক এবং অবিচারমূলক আক্রমণের ধারণা দেয়।’

প্যাটেল দাবি করেছেন, পুরো হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনোনীত করার বিষয়টি দেশীয় প্রিজমের মাধ্যমে দেখা উচিত। তথাপি, হামাসের রাজনৈতিক শাখাকে ভয় দেখানো এবং অপরাধ করা ব্রিটিশ ইহুদিদের নিরাপদ করে তুলবে না। হামাসের সাথে বিরোধিতা করে ইহুদিদের নিরাপত্তা জোরদার করা কোনো কৌশল হতে পারে না, ভবিষ্যৎ ঘটনাপ্রবাহ এই সত্য তুলে ধরবে।

প্যাটেলের সর্বশেষ পদক্ষেপ ইসরাইল-ফিলিস্তিনের প্রতি কনজারভেটিভ সরকারের নীতির দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করে। তবুও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার পক্ষে বারবার সংসদীয় ভোট সত্ত্বেও সরকার শুধু নড়েচড়ে বসে। প্রভাবশালী ইউরোপীয় দলগুলো হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে অপসারণের চেষ্টা করছে। তারা আন্দোলনের সাথে সংলাপের চ্যানেল খুলতে চায়। ঠিক এই সময়ে প্যাটেল মোক্ষম তীর ছুড়লেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে বরিস জনসন হাউজ অব কমন্সকে বলেছিলেন, কনজারভেটিভ সরকার সঠিক সময়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। জনসন এখন সরকারের প্রধান। তিনি সে ওয়াদা ভুলে গেছেন। তার জন্য সঠিক সময় কখনো হয়তো আসবে না। এক শতাব্দী আগে বালফোর ঘোষণাপত্রের বিশ্বাসঘাতকতার দীর্ঘ ধারাবাহিকতার কারণে ব্রিটেন ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো নতুন আপদ নয়। ফিলিস্তিনিরা যে ১৯৪৮ সাল থেকে দুর্দশার মধ্যে রয়েছে এবং এর একটি অংশীদার ব্রিটেন- সেটাই প্রীতি প্যাটেল আরো স্পষ্ট করে তুললেন।

জনসন তার ২০১৪ সালের ‘দ্য চার্চিল ফ্যাক্টর’ বইতে লিখেছিলেন, বালফোর ঘোষণাটি ছিল ‘উদ্ভট’, ‘একটি মর্মান্তিক অসংলগ্ন নথি’। এখন ক্ষমতার অবস্থান থেকে, একটি মারাত্মক ঐতিহাসিক ভুল সংশোধন করার অনন্য সুযোগ তার হাতে। কিন্তু তার রাজনৈতিক আচরণ প্রমাণ করে তিনি সেটি করবেন না। হামাসকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা ইসরাইল এবং তার দলের দক্ষিণপন্থীদের খুশি করতে পারে মাত্র। তবে এর মধ্য দিয়ে দেশটি ফিলিস্তিনিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার আরো একটি কালো রেকর্ড সৃষ্টি করল।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি বেøয়ার মধ্যপ্রাচ্যের একসময়ের শান্তি দূত এবং ইসরাইলের একনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি ঘোষণা করেন, হামাসকে বয়কট করা ‘ভুল’। ব্লেয়ার স্বীকার করেছেন, নির্বাচনে জয়ের পর হামাসকে বয়কট ইসরাইলি চাপের কাছে হার মানতে তিনি এবং বিশ্বের অন্য নেতারা ভুল করেছিলেন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement