২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শিক্ষক হতে পারেন সমাজের বাতিঘর

শিক্ষক হতে পারেন সমাজের বাতিঘর - ছবি : নয়া দিগন্ত

এ পৃথিবীতে বাস করা দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন কোনো মানুষ যদি বলে আমি কোনো দিন সূর্য দেখিনি তাহলে বলতে হবে ওই লোক নিজেকেই দেখেননি, যদিও বলতে পারতাম এমন কোনো লোকের অস্তিত্বই এ পৃথিবীতে নেই। হ্যাঁ, সূর্য এমনই একটি অস্তিত্ব যা সবাইকে বাধ্য করে তাকে দেখতে। হয়তো বেশি উঁচুতে হয়ে গেল আমার কথাটি। ঠিক আছে, একটু নেমেই আসি। এটা তো বলা যাবে- বোধ হয় শিক্ষিত এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি সক্রেটিস, প্লেটো বা বার্ট্রান্ড রাসেলের কথা শোনেননি। এরা সবাই একেক যুগের একেকটি সূর্যসম আলোকবর্তিকা। কেউ যদি এতেও বিরক্ত হন তাহলে এত দূরের আলোকবর্তিকা ছেড়ে চলে আসি আমাদের এ মাটিতেই। এ দেশের কে না চেনেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন বোস, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, ড. মাহমুদ হোসেন বা অধ্যাপক মুকারোম হোসেন খোন্দকারকে? এরা কেউই উপাচার্য ছিলেন না বটে, তবে ছিলেন আচার্য-শিক্ষার মহাগুরু, শিক্ষক কুলের শিরোমণি।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ছিলেন এক অগ্নিপুরুষ। এ দেশের খুলনার নিরেট পাড়াগাঁয়ের মাটিতে জন্ম নেয়া এ ক্ষণজন্মা পুরুষ খলুনা-যশোর-কলকাতা হয়ে ইংল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করেন। সেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে যখন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এ দেশের মানুষকে অ আ ক খ শেখাচ্ছিলেন তখন পিসি রায় কলকাতায় নিজের প্রতিষ্ঠিত রসায়ন গবেষণাগারে কাজ করে একের পর এক রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ভাবন করেন। ১১৭টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে সারা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছেন, যে কারণে তাকে ভারতবর্ষের ‘রসায়ন বিজ্ঞানের জনক’ বলা হয়। তার প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল’ তখনকার ভারতবর্ষের প্রথম রাসায়নিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সেটি আজ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পদ। আমাদের বাগেরহাটের পিসি কলেজ তারই স্মৃতি বহন করে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে। তারই দুই কৃতী ছাত্র ছিলেন এ দেশের দুই শিক্ষাগুরু নোবেলজয়ী সত্যেন বোস এবং বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইআইটি, খড়গপুরের প্রতিষ্ঠাতা, রসায়নবিদ জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ। এ দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শুরুর যুগের দুই দিকপাল শিক্ষক। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্রের মতো এ মাটির আরেক কীর্তিমান পুরুষ বিক্রমপুরে জন্ম নেয়া আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। ‘গাছের জীবন আছে, কথা বলে’- এ তত্ত্বের আবিষ্কারক অর্থাৎ উদ্ভিদবিজ্ঞানী জেসি বোস যে একাধারে পদার্থবিদ্যা জগতেরও একজন দিকপাল ছিলেন তা ক’জনা জানে। হ্যাঁ, তিনি ছিলেন ‘ঋধঃযবৎ ড়ভ জধফরড়-ঝপরবহপব’ এবং একই সঙ্গে ‘খরমযঃ ঐড়ঁংব ড়ভ ইরড়ঢ়যুংরপং’. আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর? তিনি ছিলেন এ দেশের এ অঞ্চলের শিক্ষার দিশারি। তার দেহ-মন, ধ্যান-জ্ঞান সবকিছু ঘিরে ছিল শুধুই শিক্ষা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত সর্বত্রই ছিল তার সাবলীল বিচরণ। এমনকি পড়িয়েছেন শিক্ষকদেরও। গ্রামে গঞ্জে একাই প্রতিষ্ঠা করেছেন শতাধিক স্কুল। তিনিই ছিলেন এ অঞ্চলে শিক্ষা কারিকুলামের উদ্ভাবক।

এমন সব নিবেদিতপ্রাণ কিংবদন্তি শিক্ষকদের পাশাপাশি আরো অসংখ্য জানা অজানা এমনকি অজপাড়াগাঁয়ের শিক্ষকদের জীবন আর আত্মবিসর্জনের ফসলই আমাদের আজকে দাঁড়িয়ে থাকা এ সমাজ। আমি এ দেশের এ মাটির আরেকজন মহাপ্রাণ শিক্ষকের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে আজ জানাব সবাইকে। কারণ আমার ধারণা অনেকেই হয়তো তার কথা জানেন না। তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না। তবে তার সম্পর্কে জানার পর আমি তাকে দেখতে এক জেলা থেকে আর এক জেলায় গিয়েছিলাম সেই ১৯৬০ সালে যখন আমি মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। তিনি হলেন চাঁদপুরের মতলব হাইস্কুলের সে সময়ের প্রধান শিক্ষক ওয়ালি উল্লাহ পাটোয়ারী। অসাধারণ এক শিক্ষক- এক আলোর দিশারি। তিনি সারা দিন স্কুলে পড়িয়ে এবং স্কুল প্রশাসন চালিয়ে আবার রাতের আঁধারে হারিকেন হাতে গ্রামের পথ মাড়িয়ে এ-বাড়ি ও-বাড়ি গিয়ে দেখতেন তার ছাত্ররা পড়ার টেবিলে আছে কিনা। এমন দরদি-শিক্ষকের তীক্ষ্ণ তদারকির কারণেই তার স্কুলের ছাত্ররা ছিল বৃত্তি পরীক্ষায় বা ম্যাট্রিকের ফলাফলে দেশসেরা। তার স্কুল থেকেই বিভিন্ন বছরে ইস্ট পাকিস্তান শিক্ষা বোর্ডে ফার্স্ট হয়েছিল। এমনই একজন ফার্স্ট হওয়া তার যশস্বী ছাত্র যিনি পরে তার মেয়ের জামাতা এবং বুয়েটের শিক্ষক ও ভিসি হয়েছিলেন তিনি হলেন ড. আব্দুল মতিন পাটোয়ারী। ওয়ালি উল্লাহ পাটোয়ারীকে বলা হয় এ দেশের এ যাবৎকালের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি শতবর্ষী জীবনে ৪০ বছর ছিলেন মতলব হাইস্কুলের হেডমাস্টার, আর ৩০ বছর রেক্টর অর্থাৎ জীবনের ৭০টি বছর একই স্কুলে সেবা দিয়েছেন মনপ্রাণ উজাড় করে। কী অসাধারণ, কী অভাবনীয়! আসলেই সে সময়ে মফস্বলে ছিলেন এমন সব শিক্ষক যারা আমাদের সমাজের একেকটি বাতিঘর। সেদিনের কথা কেন? আজও এমন শিক্ষক আছেন। আমাদের সবার পরিচিত অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এমনই একজন শিক্ষক। কর্মজীবনের শুরুতে কলেজে পড়াতেন। তারপর ফ্রিল্যান্সিং। ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত এ শিক্ষক বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে আজও নিরলসভাবে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছেন। সম্পদ-সম্পত্তির মালিক হয়তো হননি, কিন্তু সবার শ্রদ্ধাসিক্ত হয়ে বেঁচে থাকবেন এ সমাজে। অবশ্য আমার এতক্ষণ ধরে আঁকা উজ্জ্বল তৈলচিত্রের পেছনের ক্যানভাসটি কিন্তু বেশ কালিমালিপ্ত এবং অন্ধকারাচ্ছন্নও বটে। অনেক কষ্টে এ কথাটি বলছি, বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতির একটি অনুভূতিকে উপলক্ষ করে।

রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিছু খাঁটি কথা স্বভাবসুলভ সারল্যে তুলে ধরেন। সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ তার এ সরল উপস্থাপনাকে মানতে না পারলেও অনেকের কাছেই এটি গ্রহণযোগ্য হয়। সাম্প্রতিককালের এমন একটি অত্যন্ত সময়োচিত বিষয়কে তিনি খুবই প্রশংসনীয়ভাবে সবার সামনে তুলে ধরেছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত একাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাবর্তন বক্ততৃায় তার স্পষ্ট উচ্চারণ অনেকের দৃষ্টি কেড়েছিল। নতুন গ্র্যাজুয়েট আর শিক্ষকদের সামনে তিনি নিঃসংকোচে বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ প্রশাসনের পদ-পদবি পাওয়ার লোভে বিভিন্ন লবিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেকে আবার নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেন-দেনে সম্পৃক্ত হন। এটি অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর।’ ছিঃ কী লজ্জার। এ কথা আমার আপনার নয়। স্বয়ং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির। এ উচ্চারণ এমন একজন ‘আবদুল হামিদের’ যিনি অনেক সময় কৌতুকের ভঙ্গিতে নিজের সম্পর্কে বলতেও কুণ্ঠিত হন না। এতে কে কী ভাবল তাতে তিনি খুব একটা পরোয়াও করেন না। বর্তমানে বাংলাদেশে কিছু শিক্ষক নীতি-নৈতিকতার অধঃপতনের কোন পর্যায়ে পৌঁছেছেন তা রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। তার এ বক্তব্যে দ্বিমত করার কোনো অবকাশ নেই। তিনি যা বলেছেন তা কতখানি খাঁটি তা তার চেয়ে আর কে ভালো জানে? কারণ এ তদবির আর লবিংগুলো তার কাছেই করা হয়। তিনিই এসবের নীরব সাক্ষী। আর এখন তিনিই এসবের বিস্ফোরক উপস্থাপকও।

জীবনের ৭৪টি বসন্ত পেরিয়ে এসে আজ যেখানে দাঁড়িয়েছি সেখানে আমার মতো একজন নগণ্য শিক্ষকেরও মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে যায়। আমাদের যুগের অভিজ্ঞতার সঙ্গে এসবের মোটেই কোনো মিল নেই। বড় বড় পদ পাওয়ার জন্য একজন শিক্ষক নামধারী ব্যক্তি যে কী ধরনের নির্লজ্জ কাজ করেন, তা তারা না বুঝলেও সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এসব ধিক্কারের সুরেই উচ্চারিত হয়। এই তো সেদিন, খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে সদম্ভে ঘোষণা দিলেন যে, উপাচার্য পদের পাশাপাশি তিনি একটি রাজনৈতিক দলের যুবসংগঠনের প্রিসিডিয়াম সদস্য। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম আমি এত খবর রাখি অথচ এ খরবটি তো জানতাম না। তিনি জানালেন যে, যুব সংগঠনটিতে বর্তমানে যে সঙ্কট চলছে তা ঘুচানোর জন্য যদি তাকে ওই সংগঠনের সভাপতি পদ দেয়া হয় তবে তিনি সানন্দে উপাচার্যের পদ ছেড়ে ওই পদই গ্রহণ করবেন। তিনি যত সহজে কথাটি বললেন মানুষ ঠিক তত সহজে বিষয়টি গ্রহণ করতে পারেনি। এসব বোঝা গেল টেলিভিশনের চ্যানেলে চ্যানেলে প্রচারিত টকশোগুলোর আলোচনায়।

এতে তার নীতি-নৈতিকতা বোধ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। রাজনৈতিক পদ-পদবি লাভের লালসা এবং উঁচুতে ওঠার জন্য গর্হিত পথ অনুসরণের মানসিকতাই প্রকট হয়ে উঠেছে। অনেকেই মনে করেন তিনি এরপর আর ভিসির মতো মর্যাদাসম্পন্ন পদে থাকার নৈতিক অধিকার রাখেন না। অবশ্য তিনি এখন আর ওই পদে নেই। এরকম মনমানসিকতা আজকাল বেশ বেড়ে গেছে। এমনও দেখা গেছে, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যিনি পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি ওই রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত চত্বরে বিকালবেলা চায়ের আসর আড্ডায় মাতিয়েছেন। এর ফল হলো তিনি পরবর্তীকালে পুরস্কারস্বরূপ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদটি লাভ করেছিলেন। এসব সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এড়ায় না। আর এ থেকেই বুঝা যায়, রাষ্ট্রপতির কথা কত খাঁটি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত কয়েকজন উপাচার্য পদ হারিয়েছেন তাদের সহকর্মীদের আন্দোলনের মুখে। যেমনি তারা পদ পান রাজনৈতিক লবিংয়ে তেমনি পদ হারানও অনৈতিক রাজনৈতিক লোভ-লালসার ফলে।

যেখানে একসময় কিংবদন্তিতুল্য ও হিমালয়সদৃশ ব্যক্তিত্বের অধিকারী অসম্ভব মেধাবী ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-অধ্যাপকরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলোকিত করতেন সেখানে আজকের দৈন্যদশা দেখলে আমাদের মতো সাবেক শিক্ষার্থীদের লজ্জায় মুখ লুকাতে হয়। দেখুন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মতো ঘটনা যা সারা দেশের মানুষ উৎসাহ নিয়ে খুব তীক্ষèভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেখানে যদি প্রশাসন কোনো ছাত্রসংগঠনের প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শন করে তবে আর মর্যাদা থাকে কোথায়? সে ক্ষেত্রে মর্যাদাশীল পদে কারো কারো অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষ তো প্রশ্ন তুলতেই পারেন এবং তুলছেনও। টেলিভিশনের টকশোগুলোর আলোচনা শুনলে লজ্জাই পেতে হয় ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্র হিসেবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রছাত্রী এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ গণমানুষের সব আন্দোলনে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে শুধু যে আকাশচুম্বী প্রশংসা কুড়িয়েছিল তা নয় ইতিহাসে এক অমলিন স্থান করে নিয়েছিল সে বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ছাত্র নামধারীরা শিক্ষক পেটায়, ছাত্রী নিপীড়ন করে, শিক্ষার্থীদের হাতুড়ি পেটা করে তাও আবার আরেক দল শিক্ষকের সমর্থন নিয়ে! এটি ভাবতেও কষ্ট লাগে। শুধু কি তাই? কোথাও কোথাও শিক্ষক আর শিক্ষার্থী যেন একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। কত নিচে নামলে শিক্ষক নামধারী একজন হল প্রভোস্ট শুধু আন্দোলন করার অপরাধে একজন ছাত্রীকে হল থেকে বের করে গভীর রাতে বিপর্যয়কর আবহাওয়ার মধ্যে তাকে নেয়ার জন্য ৫০-৬০ মাইল দূরের গ্রামের বাড়ি থেকে একজন অসহায় পিতাকে আসতে বাধ্য করতে পারেন তা অনেক বুকভরা কষ্ট নিয়ে এ দেশের মানুষ দেখেছে। এসব নজির শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো বটেই, জাতির জন্যও দুর্ভাগ্যজনক।

তবে আশার কথা হলো এর পাশাপাশি আবার অতি সম্প্রতি এর উল্টো চিত্রটিও দেখা গেল। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী নামধারীর অনৈতিক দাবি কঠোরভাবে রুখে দিয়েছিলেন সেখানকার একজন তরুণ অধ্যাপক ও হল প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেন। অবশ্য সেটি করতে গিয়ে খুবই উচ্চ মূল্য দিতে হয়েছে তাকে। নিজের জীবনটাই হারাতে হয়েছে। এ তরুণ অধ্যাপকের এত দুর্ভাগ্য যে তার অবুঝ শিশুকন্যাটি বুঝতেই পারেনি তার বাবা কোথায় হারিয়ে গেল! যেদিন বুঝবে সেদিন বুকভরা গর্ব নিয়ে দেখবে তাদের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করতেই তার বাবা ওই দূর আকাশে তারার মেলায় স্থান করে নিয়েছেন বাতিঘর হিসেবে। হ্যাঁ, এ মহান শিক্ষকের বিরল আত্মবলি বৃথা যেতে পারে না, সব শিক্ষকের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড


আরো সংবাদ



premium cement