১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতীয় নেতৃত্ব ও জাতীয় উন্নয়ন

জাতীয় নেতৃত্ব ও জাতীয় উন্নয়ন - ছবি : নয়া দিগন্ত

(পূর্ব প্রকাশের পর)

আমাদের দেশে প্রশাসন ক্যাডারের চাকরির প্রতি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আকর্ষণ রয়েছে। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর-পূর্ববর্তী প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী কমিশনাররা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করতেন। একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক রায়ের আপিল শোনার এখতিয়ার জেলা ও দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের। ’৯০-এর দশকের প্রথমার্ধে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে কাজ করেছেন এমন একজন কর্মকর্তাকে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের রায় হতে উদ্ভূত শতাধিক মামলার আপিল আদালত হিসেবে রায় দেয়ার পর আক্ষেপ করে বলতে শোনা গেছে ‘দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের শিক্ষার মান এমন একপর্যায়ে অবস্থান করছে যে শতাধিক রায়ের মধ্যে একটি রায়ও পাওয়া গেল না যেখানে বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ ঘটেছে।’

রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের একটি হচ্ছে বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগকে বলা হয় জনগণের শেষ ভরসাস্থল। আমাদের দেশের জনগণের বদ্ধমূল ধারণা যে, তারা অন্য সব স্থান থেকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হলেও বিচার বিভাগ তাদের কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা পূরণ করবে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে রাজনৈতিক আনুগত্য প্রাধান্য পাওয়ায় মেধা, দক্ষতা, সততা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়াবলি উপেক্ষিত হয়ে আসছে। পৃথিবীর বেশির ভাগ রাষ্ট্রে শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের উচ্চতর বিচার বিভাগে ও মধ্যম মেধাবীদের নিম্নতম বিচার বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। আমাদের উচ্চ আদালতের বিচারকদের উল্লেখযোগ্য অংশের বিচারিক রায় পড়ে অনেককেই হতাশা ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের বিচারিক সিদ্ধান্ত পাবলিক ডকুমেন্ট।

পাবলিক ডকুমেন্টের স্থায়িত্ব চিরকাল। উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের কিছু কিছু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পড়লে দেখা যায় তাতে বাক্যের গঠন, শব্দের প্রয়োগ ও ভাষার অভিব্যক্তিতে যথার্থতার অভাব রয়েছে। এসব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যখন আমাদের আগামী প্রজন্ম বা ভিনদেশী কোনো ব্যক্তির হাতে পড়বে, তাতে বিচার বিভাগের চেয়ে দেশ ও জাতি আরো বেশি লজ্জিত হবে। উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমোক্ত আদালতের ক্ষেত্রে সংবিধান নির্দেশিত বিধি-বিধানের অনুসরণে নিয়োগপ্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করতে হবে এবং শেষোক্ত আদালতের ক্ষেত্রে একটি অবিচল নীতিমালার ভিত্তিতে নিয়োগসংক্রান্ত সব কার্যাবলি সম্পন্ন করতে হবে।

বর্তমানে আমাদের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা অথবা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে পাঠগ্রহণের পরও দেখা যায়, প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে প্রতিটি বিষয়ে পড়ালেখা করার জন্য স্কুল সময়ের পর সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত কোচিং সেন্টারে বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্কুলের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের কাছে কোচিং সেন্টারে পড়ালেখা করলে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ব্যতিরেকেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়, অন্যথায় উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।

শিক্ষাব্যবস্থার এ অধঃপতন রোধে দেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পর থেকে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য একাধিক শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এসব কমিশন ব্যাপক গবেষণা ও তথ্যানুসন্ধানের পর গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করলেও প্রতিবেদনগুলো ধুলায় আচ্ছাদিত হয়ে নিষ্ফলতায় আবদ্ধ।

বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলোর একটি হচ্ছে নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকার জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা এবং দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রাষ্ট্র পরিচালনার এ মূলনীতির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার করুণ চিত্রের অবসান হয়তো অনেক আগেই ঘটত।

পরিচ্ছন্ন শহর এবং শহরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত একটি শহরের প্রতিটি নাগরিকের সহনীয় জীবন-যাপনের সহায়ক। আমাদের রাজধানী ঢাকা শহরের অপরিচ্ছন্নতা ও যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঘর থেকে বের হলেই রাস্তায় যত্রতত্র আবর্জনা ছড়ানো ছিটানো দেখা যায়। দিনের বেলায়ও দেখা যায় আবর্জনাবাহী গাড়ি উন্মুক্ত অবস্থায় ধারণক্ষমতার বাইরে আবর্জনা নিয়ে উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে চলাচল করছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত ডাস্টবিনগুলো উন্মুক্ত থাকায় এবং আবর্জনা ফেলা ও অপসারণে নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করায় ডাস্টবিনগুলোতে সারা দিনই আবর্জনা ফেলা ও অপসারণ করা হয়। যেকোনো রাজধানী শহরের মেয়রকে তার রাজনৈতিক অনুসারীরা নগরপিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রতিটি শহরের এরূপ নগরপিতা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও ক্ষমতাসীনদের মনোনীত প্রার্থীরা অনিয়ম ও কারচুপির মাধ্যমে পেশিশক্তি প্রয়োগে নির্বাচিত হওয়ার প্রয়াস পান। নির্বাচনের আগে ভবিষ্যতের এরূপ নগরপিতাকে অনেক আশ্বাস দিতে শোনা যায়; কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর দেখা যায় আশ্বাসের কথা বিস্মৃতিতে বিলীন। আমাদের এরূপ নগরপিতারা তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে নগরের পরিচ্ছন্নতার দিকটি অবহেলিত থাকত না বলে অনেকের বিশ্বাস।

তীব্র যানজটের কারণে বর্তমানে ঢাকা শহরের প্রতিটি নাগরিকের জীবন থেকে প্রতিদিন চলাচলের দূরত্বভেদে এক থেকে ছয় ঘণ্টা সময় হারিয়ে যাচ্ছে। এটি এক ধরনের অনুৎপাদনশীলতা। এ অনুৎপাদনশীলতা সমষ্টিগত অর্থে জাতীয় উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।


বর্তমানে ঢাকা শহরের ইংরেজি মাধ্যমের যেসব অভিজাত স্কুলে উচ্চবিত্তদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে সেসব স্কুলে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর বিপরীতে একটি করে গাড়ির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এসব স্কুলে চতুর্দিকে, ক্লাস শুরু হওয়ার সময় দুই-তিন ঘণ্টা এবং ক্লাস শেষ হওয়ার সময় দুই-তিন ঘণ্টা তীব্র যানজট পরিলক্ষিত হয়। এ ক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্ব-উদ্যোগে মাইক্রোবাস ও মিনিবাসের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করে যানজট নিরসনে অবদান রাখতে পারে।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি শহরে যানবাহনের অবাধ চলাচলের জন্য শহরের আয়তনের ২৫ শতাংশ এলাকা সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া আবশ্যক। এ হিসাবে বর্তমানে আমাদের ঢাকা শহরের মোট আয়তনের ৮ শতাংশ এলাকা সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া যানবাহনের আধিক্য এবং একই সড়কে যন্ত্রচালিত যানবাহন ও মনুষ্যচালিত যানবাহন চলাচল যানজট সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলছে।

ঢাকা শহরে ভূ-ভাগের উপর দিয়ে রেলগাড়ি চলাচল করার কারণে এবং পর্যাপ্ত ফ্লাইওভার বা ওভারপাস না থাকায় প্রতিদিন রেল চলাচলের জন্য এসব লেভেল ক্রসিংয়ে ২০-২৫ বার ৫-১০ মিনিট ব্যাপ্তিকালের জন্য যান চলাচল ব্যাহত হয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে পাতালরেল ও আকাশরেল এবং ফ্লাইওভার বা ওভারপাস নির্মাণ করে যানজট সমস্যার সহজ উত্তরণ সম্ভব। তা ছাড়া ঢাকা শহরের চতুর্দিকের নদীগুলো খনন করে বৃত্তাকার নৌপথের মাধ্যমে মানুষ ও মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করা হলে নগরীর সড়কগুলোর উপর অব্যাহত ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ কিছুটা হলেও হ্র্রাস পাবে। এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা অবশ্যই আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব থেকে আসতে হবে। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে জাতীয় নেতৃত্ব এমনভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে যাতে দেশ সবার জন্য সুন্দরভাবে বসবাসের উপযোগী হয়। আমাদের দেশে সুষ্ঠু ও স্থায়ী পরিকল্পনার অনুপস্থিতিতে, আমরা কতিপয় লোকের জন্য দেশকে সুন্দরভাবে বসবাসযোগ্য করতে গিয়ে সবার জন্য অবসবাসযোগ্য করে ফেলছি। ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকার বেশির ভাগ বাড়ি, ফ্ল্যাট, রেস্টুরেন্ট ও বিপণি পাশ্চাত্যের ও উন্নত দেশের অনুরূপ। পাশ্চাত্যে বা উন্নত দেশে একজন ব্যক্তি স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি, ফ্ল্যাট, রেস্টুরেন্ট ও বিপণিতে যেকোনো সময় যাওয়া-আসা করতে পারে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পাশ্চাত্যের অনুরূপ বাড়ি, ফ্ল্যাট, রেস্টুরেন্ট ও বিপণি থেকে বের হওয়ার পর অস্বস্তিকর ও অসহনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

আমাদের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ও বিচার বিভাগের প্রাণকেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য নিজ নিজ খাসকামরা সংলগ্ন টয়লেট রয়েছে। এ সব টয়লেট সবসময় পরিচ্ছন্নই থাকে। উভয় প্রতিষ্ঠানে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত হলেও উভয় প্রতিষ্ঠানের সাধারণ কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের ব্যবহারের জন্য বেশ কিছু সাধারণ টয়লেট রয়েছে। সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্নতার অভাবে দুপুর ১২টার পর এসব টয়লেট থেকে যে দুর্গন্ধ নির্গত হয়, তাতে একজন রুচিশীল মানুষের পক্ষে এ ধরনের টয়লেটে গিয়ে প্রকৃতির প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয় না। উভয় প্রতিষ্ঠানে সচরাচর বিভিন্ন দূতাবাস ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের আগমন ঘটে। সচিবালয়ের অভ্যন্তরে এ ধরনের টয়লেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দুর্গন্ধের কারণে বমির উদ্রেক হলে একজন বিদেশীকে বলতে শোনা গেল- তোমাদের ক্ষমতার শীর্ষ প্রাণকেন্দ্রে পরিচ্ছন্নতার চিত্র যদি এমন হয়, তাহলে সারা দেশের পরিচ্ছন্নতা কোন পর্যায়ে রয়েছে? বিদেশীদের এ উক্তি থেকে অনুধাবন করতে অসুবিধা হয় না, জাতীয় নেতৃত্বের পরিকল্পনাগুলো যাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা পাবে তারা তাদের নিজ অবস্থানে কতটুকু সার্থক।

আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশে সরকার পরিচালনায় ব্যয়ভার মেটানোর ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ এবং বৈদেশিক সাহায্যের বাইরে বেশির ভাগ আসে বিভিন্ন ধরনের কর থেকে। কর আহরণ যত বেশি হবে সরকার পরিচালনায় তত বেশি অর্থ সরকার জনগণের কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে পারবে। কর ফাঁকি দেয়া আমাদের দেশের একশ্রেণীর জনগণের মজ্জাগত এবং এ বিষয়ে একশ্রেণীর অসাধু সরকারি কর্মকর্তা তাদের সহযোগী। আমাদের সমাজে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তৃতি ঘটেছে তা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) পরপর পাঁচ বছরের প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত। দুর্নীতির কারণে আমাদের উন্নয়ন বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কর্মকর্তাদের পকেটে চলে যাচ্ছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্নীতি নির্মূলে জাতীয় নেতৃত্ব যে আন্তরিক, জনগণের মধ্যে এ বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব জাতীয় নেতৃত্বকে নিতে হবে।

একটি রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলসাধন। জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের বিষয় বিবেচনায় নিলে রাষ্ট্রকে প্রতিটি নাগরিকের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ পাঁচটি মৌলিক চাহিদার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হয়। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের দায়িত্ব ও কর্তব্য সর্বাধিক।

উন্নত বিশ্বের প্রতিটি নাগরিকের জন্য এ পাঁচটি মৌলিক চাহিদার নিশ্চয়তার বিষয়টি সুরক্ষিত। আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় সম্পদ অপ্রতুল এবং এ ছাড়া, আমাদের দেশে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান বিদ্যমান। সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে আমরা প্রতিটি নাগরিকের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং এর পাশাপাশি মানবসম্পদ ও কৃষির উন্নয়ন ব্যতীত একটি দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন সম্ভব নয়। যেকোনো দেশে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জাতীয় নেতারা এ চারটি ক্ষেত্রে উন্নয়নকে মাথায় রেখেই দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকেন।

ওষুধ শিল্প একটি উচ্চতর প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্তে¡ও বাংলাদেশের ওষুধ আজ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশই দেশীয় ওষুধ কারখানা থেকে উৎপাদিত ওষুধে মিটানো হচ্ছে। বাংলাদেশের ওষুধের গুণগতমান বিষয়ে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর উচ্চ ধারণার কারণেই তারা আমাদের ওষুধ আমদানিতে আগ্রহান্বিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পাশ্চাত্যের তুলনায় বাংলাদেশে শ্রম সস্তা ও উৎপাদনখরচ কম হওয়ার কারণে পাশ্চাত্যের অনেক নামী-দামি ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশের প্রথম মানের ওষুধ কোম্পানির মাধ্যমে ওষুধ প্রস্তুত করিয়ে তাদের দেশে বাজারজাত করছে। ওষুধের মতো একটি স্পর্শকাতর পণ্য উৎপাদন ও রফতানিতে উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশের যে আস্থা অর্জন করেছি, সে আস্থাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের অন্যান্য শিল্প যেমন- পাট, বস্ত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, চা, চামড়া, জাহাজ নির্মাণ, মৎস্য, কৃষি, মানবসম্পদ, শিক্ষা, চিকিৎসা, পর্যটন প্রভৃতির ব্যাপক উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধন করতে হবে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী যত সরকার ক্ষমতায় এসেছে প্রত্যেকটি সরকার তাদের সীমিত শাসনকালকে সামনে রেখে পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করেছে। এ কারণে আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামোর ভিত সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। তাই বর্তমান জাতীয় নেতৃত্বকে জাতীয় উন্নয়নের মাধমে দেশ ও জাতিকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন জাতীয় নেতৃত্বের মধ্যে দূরদৃষ্টির পাশাপাশি সততা, একাগ্রতা, ত্যাগ ও দেশপ্রেমের সমন্বয় সাধন। (সমাপ্ত)

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক
ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement