২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতীয় নেতৃত্ব ও জাতীয় উন্নয়ন

-

জাতীয় নেতৃত্ব ও জাতীয় উন্নয়ন বলতে সাধারণ অর্থে আমরা বুঝি সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন। জাতীয় নেতৃত্ব ও জাতীয় উন্নয়ন একটি অপরটির পরিপূরক। একজন ব্যক্তির নীতি ও আদর্শের প্রতি অন্যের আনুগত্য তাকে নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করে। একজন ব্যক্তি যখন নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলি অর্জন করেন তখন তাকে ‘নেতা’ বলা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার ও বিরোধী দলের শীর্ষনেতারা জাতীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃত। জাতীয় নেতাদের মধ্যে মোহিনী শক্তি দ্বারা অপরকে আকৃষ্ট ও প্রভাবিত করার গুণাবলি লক্ষণীয়। দীর্ঘাকৃতি, মনোহর মুখাবয়ব ও বাকপটুতা একজন জাতীয় নেতার বাড়তি আকর্ষণ।

বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর একটি হচ্ছে উন্নত দেশ আর অপর দু’টির একটি উন্নয়নশীল দেশ, আরেকটি স্বল্পোন্নত দেশ। আমাদের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত। যেসব দেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ডলারের অধিক সেসব রাষ্ট্র ‘উন্নয়নশীল’ দেশের অন্তর্ভুক্ত। সার্কভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা উন্নয়নশীল দেশ। অপর দিকে নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান স্বল্পোন্নত দেশ।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম ১৯৭১ সালে। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও পাকিস্তানের সামরিক গোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানালে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয় এবং দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

১৯৪৭ সালে এ উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হলে ভারত ও পাকিস্তান নামক দু’টি নতুন রাষ্ট্র জন্মলাভ করেছিল। উপমহাদেশের পশ্চিম অঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের দু’টি পৃথক ভূ-খণ্ডের সমন্বয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের সৃষ্টিলগ্নে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি ছিল সম্পূর্ণ কৃষিনির্ভর। উপমহাদেশ বিভাগের আগে পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম বাংলা উভয়কে একত্রে বেঙ্গল নামে অভিহিত করা হতো। বেঙ্গল চিন্তচেতনার দিক থেকে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অগ্রগামী ছিল। এ কারণেই ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতিবিদ গোখলে যথার্থই বলেছিলেন, ‘What Bengal thinks today rest of India thinks it tomorrow’-যার অর্থ, বেঙ্গল আজ যেটি নিয়ে ভাবে ভারতের বাকি অংশের সেটি আগামীকালের ভাবনার বিষয়। বিভাগ পূর্ববর্তী বেঙ্গলের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। বেঙ্গল বিভাজনের মাধ্যমে আসামের অন্তর্ভুক্তি ব্যতীত পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় হবে না’ সে দৃষ্টিকোণ থেকে সোহরাওয়ার্দী পূর্ব বাংলার সমন্বয়ে পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টিকে মেনে নিতে দ্বিধান্বিত ছিলেন।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগ পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো সরকারই মেয়াদপূর্ণ করতে পারেনি। সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন; কিন্তু মাত্র ১৩ মাসের মাথায় তার সরকারকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে সামরিক শাসকদের দ্বারা গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সে দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। পাকিস্তানের অনুকরণে বাংলাদেশেও সামরিক শাসকদের দ্বারা গণতন্ত্র একাধিকবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখনো পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কার্যাবলিতে সেনাবাহিনীর ব্যাপক প্রভাব বিদ্যমান বলে পরিলক্ষিত হয়।

বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় একটি উল্লেখযোগ্য সময়ে সরকারের ওপর সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ ছিল। সেনা শাসকরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর দেশের উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন এবং সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ও সামর্থ্য উন্নয়নে অধিক মনোযোগী ছিলেন। এ কারণে আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক সামর্থ্যকে বিবেচনায় নিয়ে সেনাবাহিনীর জনবল ও শক্তি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত বিজয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছালে ভারত ও পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধে পুঁজিবাদী পরাশক্তি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে। অপর দিকে, সমাজতন্ত্রী পরাশক্তি ভারতের পক্ষাবলম্বনের পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে তৎকালীন পুঁজিবাদী পরাশক্তি সহজভাবে মেনে নেয়নি এবং এর পরিণতিতে স্বাধীনতার পর থেকে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী সরকারকে জনগণের কাছে অপ্রিয় করার জন্য নানামুখী অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়। এসব অপতৎপরতার একটি ছিল ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যসাহায্য গুটিয়ে নেয়া। এ ছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও এই দূতাবাসের অপর কিছু কর্মকর্তার কার্যকলাপ রহস্যজনক ছিল।

১৯৭৫ সালের বিয়োগান্তক ঘটনা সংগঠনকালে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল এবং অর্থনীতির সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। পুঁজিবাদী পরাশক্তি কখনো চায় না, তাদের মতাদর্শের পরিপন্থী কোনো রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ম্ভর হয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। বর্তমানে পৃথিবীতে এমন কিছু রাষ্ট্র আছে যে সব রাষ্ট্র সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে মানবসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্ররূপে আবিভর্র্‚ত হয়েছে। আবার এমন অনেক রাষ্ট্র আছে যে সব রাষ্ট্র নেতৃত্বের গুণাবলির কারণে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। আলোচ্য বিষয়ে জাপান এবং মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর এ তিনটি রাষ্ট্রকে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা যেতে পারে।

জাপান রাষ্ট্রটি কোনো ধরনের খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ নয়। জাপানের অর্থনীতিকে বলা হয় ‘আমদানিমুখী অর্থনীতি’। এ রাষ্ট্রটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি করে এগুলোকে সমাপ্ত পণ্যে (Finished goods) রূপান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে রফতানি করে দীর্ঘ দিন দ্বিতীয় অবস্থান থেকে আজ বিশ্বের তৃতীয় শক্তিধর অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এ প্রক্রিয়াটিকে সুসম্পন্ন করতে তারা যে সম্পদের ব্যবহার করছে সেটি হচ্ছে মানবসম্পদ। সময়ের সদ্ব্যবহার, দায়িত্ববোধ, নিয়মানুবর্তিতা ও স্বাস্থ্যসচেতনতা এ চারটি বিষয়ের প্রতিফলন জাপানের প্রতিটি নাগরিকের চরিত্রেই পরিলক্ষিত হয়। ‘সময় ক্ষেপণের কারণে’ জাপানিদের ক্রিকেট খেলার প্রতি অনীহা দেখা যায়। জাপানের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেখা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে উপস্থিত হচ্ছেন। কিন্তু ওই দিনের কাজ শেষ না করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অফিস ত্যাগ করেছেন, এমন নজির দেখা যায় না। একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী থেকে ভালো কাজ তখনই আশা করা যায় যখন তিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। জাপানিরা শরীরে বাড়তি মেদের উপস্থিতিকে সুন্দর ও সাবলীলভাবে জীবনযাপনের অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করে এবং প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে তারা নিজেদের দেহ ও মনকে সবল এবং সতেজ রাখে। এ স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে জাপানের গড় আয়ু ৯০-এর কোঠা অতিক্রমের দ্বারপ্রান্তে। জাপানিদের চরিত্রে এসব গুণাবলির সৃজনে তাদের জাতীয় নেতৃত্বের বলিষ্ঠ অবদান ছিল।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মলগ্নের প্রাক্কালে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে বেশি ছিল। আজ এ দু’টি রাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামোর দিক থেকে পৃথিবীর যেকোনো উন্নত রাষ্ট্রের সমকক্ষ। মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করেছে দূরদর্শী নেতৃত্ব। দূরদর্শী নেতৃত্বের অনন্য বৈশিষ্ট্য এ দু’টি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।

একজন জাতীয় নেতার মধ্যে কী ধরনের গুণাবলির সমন্বয় হলে তার পক্ষে জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতাদ্বৈধতা থাকলেও একটি বিষয়ে সবাই একমত; আর সেটি হচ্ছে যখন একজন জাতীয় নেতার মধ্যে দূরদৃষ্টির পাশাপাশি সততা, একাগ্রতা, ত্যাগ ও দেশপ্রেম এ চারটি গুণের সমন্বয় ঘটবে, তখন তার পক্ষে একটি জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পূর্ববর্তী বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি যারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা স্বাধীনতা-পরবর্তী নেতৃত্বে আসীন দু’জন জাতীয় নেতার মধ্যে দূরদৃষ্টিসহ সততা, একাগ্রতা, ত্যাগ ও দেশপ্রেমের অনন্য গুণাবলির সমন্বয় প্রত্যক্ষ করেছেন। তা ছাড়া তাদের প্রতি দেশের জনমানুষের আস্থা ও সমর্থন তাদের নেতৃত্বকে সুদৃঢ় করেছিল। একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের সাফল্য ও ব্যর্থতাগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে স্বাধীনতার প্রথম দশকের ঘটনাবলি বিবেচনায় নিলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, উভয় নেতা বেঁচে থাকলে ’৮০-এর দশকের মধ্যেই তারা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারতেন।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি যখন সৃষ্টি হয় তখন এর জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। বর্তমানে জনসংখ্যা ১৬ কোটির উপরে এবং আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে এটি ১৮ কোটি অতিক্রম করবে। বাংলাদেশ একটি সীমিত আয়তনের দেশ এবং জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র। আমাদের এ সীমিত ভূ-খণ্ড এ বিপুল জনগোষ্ঠীর চাপ সহ্য করতে যে সক্ষম নয় তা স্পষ্টত দৃশ্যমান।

’৭০-এর দশকে আমাদের যে খাদ্য উৎপাদন ছিল তা বর্তমানে প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ’৭০-এর দশকে আমাদের খাদ্য আমদানি করতে হতো । ’৭০-এর দশক থেকে জনসংখ্যা দ্বিগুণ হওয়া সত্তে¡ও বর্তমানে অনেক দিক থেকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা যায়। বাংলাদেশের এক কোটির অধিক লোক প্রবাসী হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণ করছে। প্রবাসীদের প্রেরিত সহজলভ্য বৈদেশিক মুদ্রার কারণে বৈদেশিক ঋণের দায়শোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আস্থাশীল অবস্থানে রয়েছে।

শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা মানুষের জ্ঞানকে প্রসারিত করে। শিক্ষা অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে আলোকিত করে। একটি জাতির মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে পারলে এমন অনেক সমস্যা আছে, যা সমাধানে আর কোনো অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ পরিবার পরিকল্পনার কথা বলা যেতে পারে। পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে বর্তমানে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেও জন্মহারকে সহনীয় পর্যায়ে এনে দেশের জনসংখ্যাকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। একটি শিক্ষিত জাতির সব জনগোষ্ঠী আত্মসচেতনতা থেকেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে থাকে। আমরা আমাদের শিক্ষার হারের উন্নতি ঘটিয়ে এটিকে শতভাগে নিয়ে আসতে পারলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে কোনো ধরনের প্রচারণার আবশ্যকতা দেখা দেবে না।

ব্রিটিশ শাসনামলে ও স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী আমাদের শিক্ষার যে মান ছিল তা স্বাধীনতার পর ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একদা ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো। কালের বিবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সে গৌরব হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ত্রæটির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পরও বর্তমানে অনেক ছাত্রকে দেখা যায় শুদ্ধভাবে ইংরেজি দূরের কথা, বাংলা পর্যন্ত লিখতে পারছে না। বর্তমানে বেশির ভাগ ছাত্র প্রথম শ্রেণী থেকে স্নাতক পর্যন্ত ১৪ বছর একাদিক্রমে ইংরেজি অধ্যয়ন করার পরও ইংরেজি বলতে ও লিখতে সামর্থ্য অর্জন করছে না। অন্য দিকে দেখা যায়, আমাদের দেশের ছাত্ররা উচ্চশিক্ষার জন্য রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে প্রভৃতি দেশে যাওয়ার পর ছয় মাসের অধ্যয়নেই ওই সব দেশের ভাষা বলতে ও লিখতে সমর্থ হচ্ছে। এ থেকেই অনুধাবন করা যায়, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী নয় এবং এর আমূল সংস্কার প্রয়োজন।

’৬০-এর দশকেও দেখা গেছে মালয়েশিয়া থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য ছাত্রছাত্রীরা এ দেশে আসত; কিন্তু এখন এর উল্টোটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মালয়েশিয়া যাচ্ছে। এর মূল কারণ মালয়েশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা পাশ্চাত্যের অনুরূপ, বাস্তবভিত্তিক ও যুগোপযোগী। (চলবে)
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement