২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাংলায় অন্ধকার যুগ : মিথ বনাম বাস্তবতা

-

(তৃতীয় কিস্তি)
বখতিয়ার খিলজির বঙ্গজয়ের পরে মন্দির-মঠ ও শিক্ষাগার ধ্বংস করা হয় বলে সরোষে দাবি উচ্চারিত হয়। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কেন গৃহীত হবে, যখন এর পক্ষে অনুমান করা যাচ্ছে একমাত্র উদন্তপুরীর ঘটনা। যেখানে বখতিয়ারের আক্রমণ ইচ্ছাকৃত ছিল না। ভুলের ওপর দাঁড়িয়ে দাবি করা হয়, নালন্দা বিহার ধ্বংস করেছিলেন বখতিয়ার। কিন্তু তিনি নালন্দায় কখনো যাননি।

বৌদ্ধবিহার নালন্দার উপর একের পর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ব্রাক্ষণ্যবাদীরা। স্কন্দগুপ্তের সময়ে (৪৫৫-৪৬৭ খ্রি.) মিহিরাকুলার নেতৃত্বে মধ্য এশিয়ার যুদ্ধবাজ হানরা নালন্দা আক্রমণ করে। তারা বৌদ্ধ ছাত্র ও ধর্মগুরুদের হত্যা করে। স্কন্দগুপ্ত ও তার পরের বংশধররা নালন্দাকে পুনর্গঠন করেছিলেন।

প্রায় দেড় শতাব্দী পর আবার নালন্দা ধ্বংসের মুখে পড়ে। এবার আক্রমণ করেন বাংলার শাসক শশাঙ্ক। প্রতাপশালী শাসক শশাঙ্ক বৌদ্ধ রাজা হর্ষবর্ধনের সাথে বিরোধে লিপ্ত হন। ফলে রাজা শশাঙ্ক মগধে ঢুকে বৌদ্ধদের পবিত্র স্থানগুলো ধ্বংস করেন। বুদ্ধের ‘পদচিহ্ন’ খণ্ড-বিখণ্ড করেন। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাংয়ের বর্ণনায় শশাঙ্কের আক্রমণ ও নালন্দা ধ্বংসের ইতিহাস ফুটে উঠেছে। নালন্দা অগ্নিদগ্ধ হয় এবং বুদ্ধ প্রকাশ তার ‘আসপেক্টস অব ইন্ডিয়ান হিস্টোরি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন’ গ্রন্থে (আগ্রা, ১৯৬৫) নালন্দায় আগুন জ্বালানোর জন্য হিন্দুদেরই দায়ী করেছেন।

তিব্বতি লেখক পি আল জরের দোহাই দিয়ে ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেন, “নালন্দার লাইব্রেরি কয়েকবার বিধ্বস্ত হয়। ধর্র্মসগন্ধ অর্থাৎ নালন্দার বৃহৎ লাইব্রেরি তিনটি মন্দিরে রক্ষিত ছিল। তীর্থিক (ব্রাহ্মণ) ভিক্ষুরা অগ্নিসংযোগে তা ধ্বংস করে। মগধের রাজমন্ত্রী কুকুতসিদ্ধ নালন্দায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেখানে ধর্মোপদেশ প্রদানকালে জনকতক ভিক্ষু দু’জন তীর্থিক ভিক্ষুর গায়ে অপবিত্র জল নিক্ষেপ করে। তার ফলে তারা ক্রুদ্ধ হয়ে ‘রত্নসাগর’, ‘রত্নধনুক’ আর নয় তলাযুক্ত ‘রত্নদধি’ নামক তিনটি মন্দির অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করে। ওই তিনটি মন্দিরই সমষ্টিগতভাবে ধর্মগ্রন্থ বা গ্রন্থাগার ছিল।”

‘পঞ্চম শতাব্দীতে ব্রাহ্মণরা যজ্ঞাগ্নি নিয়ে নালন্দার প্রসিদ্ধ গ্রন্থাগারে এবং বৌদ্ধ বিহারগুলোতে অগ্নিসংযোগ করেন। ফলে নালন্দা অগ্নিসাৎ হয়ে যায়।’

তবে তিব্বতীয় শাস্ত্র ‘পাগসাম ইয়ান জাং’-ও ‘উগ্র হিন্দুদের হাতে নালন্দার গ্রন্থাগার পোড়ানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।
ডি আর পাতিল অবশ্য খুব পরিষ্কার করে বলেছেন, ওটা ধ্বংস করেছিল শৈবরা।

মুসলিম আক্রমণের সম্মুখীন হয়নি নালন্দা এবং এমন আক্রমণের পক্ষে কোনো প্রামাণ্য সূত্র নেই। বখতিয়ারের বিহার জয়ের পরে দীর্ঘসময় ধরে নালন্দা টিকে থেকেছে। তার বিজয়ের ৩১ বছর পর ১২৩৪-৩৬ সালে; তিব্বতি সাধু ধর্মস্বামী নালন্দায় আসেন। মঠটি তিনি চালু অবস্থায় দেখেন। অধ্যক্ষ রাহুল শ্রীভদ্রের তত্ত্বাবধানে ৭০ জন সাধু সেখানে ছিলেন। ধর্মস্বামী সেখানে থাকেন প্রায় ছয় মাস।

ধর্মস্বামী উদন্তপুরিতে দেখেন তুর্কি ঘাঁটি। নালন্দা মহাবিহার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মগধে এর অবস্থান। সেখানে বখতিয়ারের অভিযান হয়েছিল এক ভুল তথ্যের ভিত্তিতে। এ আক্রমণ যে হয়েছিল, তার ভিত্তি মিনহাজুস সিরাজ জুরজানির একটি গল্প। খিলজির জয়ের ৫০ বছর পরে, ১৩৫৯ সালে মিনহাজুস সিরাজ জুরজানি এর উল্লেখ করেন। তাবাকাতে নাসিরির ২০তম অধ্যায়ে এর বিবরণ হাজির করেন শামসামুদ্দীনের কাছে শোনা গল্প অবলম্বনে। যে গল্প তিনি শুনেছিলেন ১২৪৩ সালে, লাখনৌতি অবস্থানকালে। তাবাকাতের ভাষ্য হলো, ২০০ সেনা নিয়ে বখতিয়ার বিহার দুর্গ আক্রমণ করেন। ‘দুর্গদ্বারে উপস্থিত হওয়ার পরে প্রবল আক্রমণ শুরু হলো। স্বীয় শক্তি ও সাহসের বলে এই দুর্গদ্বার ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করলে বখতিয়ারের সেনারা দুর্গ অধিকার করেন। অনেক দ্রব্য লুণ্ঠন ও হস্তগত করেন। এখানকার বেশির ভাগ অধিবাসী মাথা মুণ্ডানো ব্রাক্ষণ ছিলেন, তারা নিহত হন। (আসলে তারা হয়ে থাকবেন বৌদ্ধ ভিক্ষু) দুর্গে দেখা গেল ছড়ানো ছিটানো অনেক বইপত্র। এসব গ্রন্থ যখন মুসলিমদের নজরে পড়ল, বুঝা গেল এটি ছিল এক শিক্ষাগার। বিহার।

খিলজি ভুল করেছিলেন, উদন্তপুরি বিহারকে সেনাশিবির ভেবেছিলেন। কারণ উদন্তপুরি মূলত সেনাশিবিরের মতোই ছিল। এর চার দিকে ছিল বেষ্টনী প্রাচীর। বিখ্যাত তিব্বতি ঐতিহাসিক লামা তারানাথ (১৫৭৫-১৬৩৪) লিখেছেন, সেন আমলে তুর্কি অভিযানের ভয়ে বৌদ্ধবিহারগুলোতে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হতো। তবকাতের অনুবাদক আবুল কালাম জাকারিয়ার (১৯১৮-২০১৬) মতে, লড়াই সম্ভবত একপক্ষীয় ছিল না, এখানে প্রচণ্ড প্রতিরোধ হয়েছিল, এমন সম্ভাবনা রয়েছে। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ও (১৮৮৫-১৯৩০) দিয়েছেন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং সেনাদের যৌথ প্রতিরোধের বিবরণ। বখতিয়ারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সেনারা চার দিক থেকে কোণঠাসা হয়ে এখানে এসে আশ্রয় নিয়ে থাকবে। ড. সুশীলা মণ্ডলের মতে, ‘ওদন্তপুর ছিল দুর্গম, সুরক্ষিত, শিখরস্থিত আশ্রম। এখানে স্বয়ং বিহার রাজা গোবিন্দপাল নিজের সেনাদের নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফলে বিহার জয়ের জন্য খিলজি রাজধানীর পরে এখানে আক্রমণ করেন। ফলে সেনাদের পাশাপাশি বৌদ্ধভিক্ষুরাও অস্ত্র ধারণ করেন। যুদ্ধে তারা পরাজিত হন এবং গোবিন্দ পাল দেব নিহত হন।’

পণ্ডিতদের অনেকেই লিখেন, উদন্তপুরি আক্রমণে বখতিয়ারকে আমন্ত্রণ করে ও পথপ্রদর্শন করে স্থানীয়দের একটি দল। তিব্বতি ধর্মগুরু, পণ্ডিত কুলাচার্য জ্ঞানানশ্রী তার ‘ভাদ্র কল্পদ্রুম’ (Bhadra Kalpadrum)-এ লিখেন, সে সময় বৌদ্ধদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন মত ও ধারা। বৌদ্ধভিক্ষু ও পণ্ডিতদের মধ্যে কলহ ও বিবাদ উত্তেজনার আগুন জ্বালাচ্ছিল। তা এমনই তীব্র ছিল যে, তাদের এক পক্ষ (ব্রাহ্মণ রাজা লক্ষণ সেনের রাজত্বকালে) তুর্কি মুসলিম আক্রমণকারীদেরকে তাদের ওখানে আক্রমণ চালানোর অনুরোধ জানাতে প্রতিনিধি পাঠায়।

বখতিয়ার খিলজিকে আমন্ত্রণকারীরা পথ দেখায় এবং তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি অভিযান চালিয়ে থাকবেন। এ অভিযান প্রতিহত করতে যারাই বাধা দিয়েছে, সেনারা তাদেরকে হত্যা করেছে। মিনহাজের বিবরণে স্পষ্ট হয় বখতিয়ার জানতেন না যে উদন্তপুরি ছিল বুদ্ধদের একটি শিক্ষাপীঠ। কিন্তু সেখানে সারিবদ্ধ পুস্তক দেখে অনুসন্ধান করে জানেন যে, সেটি কোনো সেনাদুর্গ নয়।
মিনহাজ উস সিরাজ বর্ণিত গল্পটি প্রশ্নবিদ্ধ হয় নানাসূত্রে। কারণ বহু তথ্য-উপাত্ত দাবি করে, উদন্তপুরি মঠ ধ্বংস হয়ে যায় বখতিয়ারের বঙ্গজয়ের আগেই।

ড. দীনেশচন্দ্র সরকার (১৯০৭-১৯৮৪) দেখিয়েছেন, উদন্তপুরি বৌদ্ধবিহার ধ্বংস হয় ১১৯৩ সালে। বিভিন্ন গবেষকের মতে ১১৯১-৯৩ সময়কালে। উদন্তপুরি ও নালন্দা সম্পর্কে প্রাচীন প্রামাণ্য সূত্রের মধ্যে রয়েছে শাক্য শীভদ্রের বিবরণ, শরৎচন্দ্র দাশের রচনায় তার ভাষ্য উঠে এসেছে। শরৎচন্দ্র জানান, ১২০০ সালে মগধে গিয়ে শাক্য শীভদ্র দেখেন, বিক্রমশীলা ও উদন্তপুরি ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুর্কিদের ভয়ে শ্রীভদ্র ও ওই বিহার দু’টির ভিক্ষুরা বগুড়া জেলার জগদ্দল বিহারে আশ্রয় নেন।

তাহলে শ্রীভদ্র ও শরৎচন্দ্রের বিবরণ ১২০০ সালের আগেই উদন্তপুরি ধ্বংসের কথা জানাচ্ছে। ফলে শাক্য শ্রীভদ্র জগদ্দল বিহারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর মানে পরিষ্কার। বখতিয়ারের বিহার অভিযানের আগেই উদন্তপুরি ধ্বংস ও পরিত্যক্ত হয়। তিনি বিহার অভিযান করেন ১২০৩ সালে ।

এই যে নালন্দা ও উদন্তপুরির গল্প, এটাই হলো সেই বুনিয়াদ, যার উপর দাঁড়িয়ে মুসলিম বিজয়ের ওপর বর্বরতা, পাশবিকতা, সভ্যতা ধ্বংস, মঠ-মন্দির বিনাশ এবং জ্ঞানের জন্য সর্বনাশের যত সব অভিযোগ আরোপ করা হয়। এ অভিযোগের প্রবর্তকরা বেমালুম ভুলে যান বৌদ্ধদের গ্রন্থ ও নিদর্শনগুলোর ওপর ইতঃপূর্বকার ব্রাহ্মণ্যবাদী বিনাশের কথা। যার জানান দিয়েছেন দীনেশচন্দ্র সেন।

লিখেছেন, ‘বৌদ্ধধর্মকে পরাভূত করে হিন্দুরা যেভাবে বৌদ্ধ-ইতিহাস লোপ করেছিলেন, তা অকথ্য অত্যাচার-লাঞ্ছিত। হিন্দুরা বৌদ্ধকীর্তি একেবারে লোপ করানোর জন্য যেখানে-সেখানে তাদের প্রাচীন কীর্তি ছিল, তা মহাভারতোক্ত পঞ্চ-পাণ্ডব অথবা আর কোনো হিন্দু রাজ-রাজড়ার সম্পর্কিত এরূপ পরিকল্পনার দ্বারা বৌদ্ধাধিকারের চিহ্নমাত্র লোপ করবার চেষ্টা পেয়েছিলেন।’

ভারতের ইতিহাসে হিন্দু-বৌদ্ধ সঙ্ঘাত এক রক্তাক্ত ধারাবাহিকতা। বাংলায়ও শত শত বছর ধরে এ সঙ্ঘাত জারি থেকেছে। বৌদ্ধরা হয়েছে নিষ্ঠুরতার শিকার। কিন্তু বৌদ্ধদের সাথে মুসলিমদের সঙ্ঘাত একান্তই নজিরবিহীন। ব্যতিক্রম হচ্ছে বখতিয়ারের এই ভ্রমপূর্ণ অভিযান। যার সত্যতা নির্ভর করছে মিনহাজুস সিরাজের বর্ণনার উপর। ঘটনার প্রায় ৫০ বছর পরে লোকমুখে শোনা গল্পই তিনি লিখেছেন। বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় মিনহাজুস সিরাজকে বিশ্বাস করেন না, কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, ‘মিনহাজ উদ্দীন বাঙলা জয়ের ষাট বছর পরে এই এক উপকথা লিখে গেছেন। আমি যদি আজ বলি, কাল রাতে ভূত দেখিয়াছি, তোমরা তা কেউ বিশ্বাস কর না। কেন না, অসম্ভব কথা। আর মিনহাজ উদ্দীন তা অপেক্ষাও অসম্ভব কথা লিখিয়া গিয়াছেন, তোমরা অহ্বানবদনে বিশ্বাস করো। আমি জীবিত লোক, তোমাদের কাছে পরিচিত, আমার কথা বিশ্বাস করো না, কিন্তু সে সাত শত বছর মরে গেছে সে বিশ্বাসী কি অবিশ্বাসী কিছুই জান না, তবুও তুমি তার কথায় বিশ্বাস করো। আমি বলছি, আমি নিজে ভূত দেখেছি, আমার কথায় বিশ্বাস করবে না, অথচ ভূত আমার প্রত্যক্ষদৃষ্ট বলিয়া বলিতেছি! আর মিন্হাজ্ উদ্দীনের প্রত্যক্ষদৃষ্ট নহে, জনশ্রুতি মাত্র। জনশ্রæতি কি স্বকপোলকল্পিত, তাতেও অনেক সন্দেহ। আমার প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে তোমার বিশ্বাস নেই, কিন্তু সেই গোহত্যাকারী, ক্ষৌরিতচিকুর, মুসলমানের স্বকপোলকল্পনের ওপর তোমার বিশ্বাস। এ বিশ্বাসের আর কোনো কারণ নেই।’ গোহত্যাকারী, ক্ষৌরিতচিকুর ইত্যাদি সাম্প্রদায়িক আক্রমণসহকারে বঙ্কিম খারিজ করেন মিনহাজকে, যখন তিনি ১৭ অশ্বারোহীর মাধ্যমে বখতিয়ার কর্তৃক লক্ষণ সেনের পরাজয়ের বর্ণনা শোনান। কিন্তু সেই মিনহাজই বিশ্বস্ত ও আদরণীয় হয়ে যান, যখন তার বিবরণের ওপর ভর করে বখতিয়ারকে মঠ ধ্বংসকারী সাব্যস্ত করার সুযোগ মিলছে। বঙ্কিম অনুসারীরা বিদ্যাবিনাশ ও মঠ ধ্বংসের জন্য যে ডঙ্কানিনাদে মুসলিম বিজয়কে দায়ী করেন, ভুল করে দাবি করেন নালন্দা বিহার ধ্বংস করেছেন বখতিয়ার, এর ভিত্তি মিনহাজের এই বিবরণের ওপর নির্ভরশীল।

কিন্তু মুসলিম শাসন কি মঠ-মন্দির ধ্বংস করেনি? এর জবাব আমরা শুনতে পারি রিচার্ড এম ইটনের কাছে। তিনি ১২ শতক থেকে ১৮ শতক অবধি গোটা মুসলিম শাসনামলে ভাঙনের শিকার মঠ-মন্দিরসমূহ নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করেন। তার গবেষণার ফলাফল হলো- পুরো মুসলিম শাসনামলে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম শাসকদের হাতে ভাঙা হয়েছিল ৮০টি মন্দির। সেগুলো ভাঙনের কবলে পড়ে রাজনৈতিক কারণে। শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা এসব মন্দিরকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল ।

গোটা মুসলিম আমলের এই যখন বাস্তবতা, তখন কেবল ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গায় হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ধ্বংস হয় ৫০০ মসজিদ, যেসব মসজিদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২০০২ এর ২ এপ্রিল, নয়াদিল্লির মিল্লি’ গেজেটে। পুরো ভারতের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম-গঞ্জে গণনাতীত মসজিদ ধ্বংস হয়েছে ও হচ্ছে ১৯৪৭ সালের আগ থেকেই। যেসব বাবু বুদ্ধিজীবী বহু শতাব্দীর এপার থেকে নালন্দার মঠ দেখেন, তারা যখন ইতিহাসের বয়ানকে সযতনে উপেক্ষা করেন এবং নিজেদের চোখের সামনে জ্বলন্ত বাস্তবতা দেখতে পান না, তখন প্রশ্ন জাগে, নালন্দাকে আসলেই কি তারা দেখেন? যদি দেখতেন, তাহলে দেখতেন, মুসলিম বিজয়ের পরও নালন্দার মঠে চলছে শিক্ষা-দীক্ষা। ১৩০০ সাল অবধি বিদ্যার্থীরা মুখর করে রেখেছেন এ মঠকে। এর বিনাশ ঘটে তীরহুতের রাজা অর্জুনের সময়ে, একদল ব্রাক্ষণ আক্রমণকারীর হাতে। উদন্তপুরিকে সেনানিবাস ভেবে ভুল অভিযান করলেও বখতিয়ারের হাতের দাগ লাগেনি নালন্দার একটি ইটেও।
লেখক : কবি, গবেষক
71.alhafij@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement