১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা ও শিক্ষা

-

করোনার ‘প্রথম স্রোত’ খানিকটা স্তিমিত হয়ে আসার সাথে সাথেই দ্বিতীয় তরঙ্গ বিশ্বকেই বিপর্যস্ত করে তোলে। দ্বিতীয় পর্যায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ নিয়ে আশঙ্কা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আর এ শঙ্কার মধ্যেই ‘ওমিক্রন’ উদ্বেগ প্রকাশ পায় এবং তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা শনাক্তও হয়। সে উদ্বেগের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হয়েছে।
জিম্বাবুয়েতে খেলা শেষে ফেরত আসা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের দুই সদস্যের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা জনমনে নতুন করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘হাতে চার কোটি টিকা আছে। এ অবস্থায় ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ তিনি বলেছেন, ‘প্রতিনিয়ত কোভিডের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট আসছে। তবে আমরা তৃতীয় ওয়েভ চাচ্ছি না। দ্বিতীয় ওয়েভেই সমাপ্ত করতে চাচ্ছি;’ যা রীতিমতো আশাবাদী হওয়ার মতো ও অনেকটা স্বস্তিদায়ক বলা যায়। কিন্তু করোনার কারণে বৈশ্বিক শিক্ষার ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, তা শিগগিরই পূরণ হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

মূলত করোনার নেতিবাচক প্রভাবে পুরো বিশ্বই এখন বিপর্যস্ত। বিষয়টি নিয়ে ধনী দেশগুলোতে খানিকটা স্বস্তি ফিরে এলেও পিছিয়ে রয়েছে গরিব ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো; কারণ বিশ্বের সচ্ছল দেশগুলো কোভিড ভ্যাকসিন কার্যক্রমে অন্যদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করছে, আগামী তিন বছরের মধ্যেই এসব দেশে কোভিডের প্রভাব একেবারে কমে যাবে। কিন্তু দরিদ্র দেশগুলো; যারা এখনো বেশির ভাগ নাগরিকের মধ্যে ভ্যাকসিন দিতে পারেনি, তাদেরকে আরো কয়েক বছর কোভিডের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। সঙ্গতকারণেই ধনী ও দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অসমতা আরো বৃদ্ধি পাবে। গেটস ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ৯০ শতাংশ উন্নত রাষ্ট্রই মহামারীর আগের গড় আয়ে ফিরে যেতে সক্ষম হবে। কিন্তু মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলো এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বে কোভিড পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে এসেছে; কারণ ২০২১ সালের শেষের দিকে ভ্যাকসিনের সরবরাহ আশাব্যঞ্জকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনো বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন সরবরাহের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা সম্ভব হয়নি। ফলে ২০২২ সালেও অনেক দেশেই পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় সেসব দেশে কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার উচ্চপর্যায়েই থাকবে। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ২০২২ সালে উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে ব্যাপক মাত্রায় টিকার বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হবে। ভ্যাকসিনের উন্নত ভার্সনও তত দিনে চলে আসার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। সে ধারাবাহিকতায় আগামী বছরগুলোতে শিশুদের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রদানের হার বৃদ্ধি পাবে। অনেক দেশে ৬ মাস বয়সী শিশুকেও ভ্যাকসিন প্রদান অনুমোদনের সম্ভাবনাও রয়েছে।

একই সাথে ২০২২ সালের মাঝামাঝি বিশ্বের অনেক দেশ ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া কোভিডের চিকিৎসা আরো সহজ হয়ে উঠবে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টির সম্ভাবনাও কমে যাবে। এ বিষয়ে মডার্নার প্রধান জানিয়েছেন, তার কোম্পানি একটি মাল্টিভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই ভ্যাকসিন হবে এমআরএনআর প্রযুক্তিতে তৈরি, যা কোভিডের একাধিক ভ্যারিয়েন্টকে মোকাবেলার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হবে। একই সাথে তারা এমন একটি ভ্যাকসিন তৈরির কথা ভাবছেন, যা করোনাভাইরাসসহ ফুসফুসের নানা রোগের থেকে সুরক্ষা দেবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সামনের বছরগুলোতে ধনী দেশগুলো অ্যান্টিবডি চিকিৎসার মাধ্যমে করোনা আক্রান্তদের সুস্থ করে তোলায় মনোযোগী হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো দেশগুলোতে রেজেনেরন ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ককটেলগুলোর ব্যাপক ব্যবহার করা শুরু হবে। তবে সব থেকে বেশি আশা জাগাচ্ছে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলো। এরই মধ্যে ব্রিটেন মলনুপিরাভির নামের মুখে খাওয়ার ওষুধকে কোভিড চিকিৎসার জন্য অনুমোদন লাভ করেছে। এই ওষুধ কোভিড আক্রান্তদের মৃত্যুর হার অর্ধেকে নিয়ে এসেছে। অন্য দিকে ফাইজারও একই রকম একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ তৈরি করেছে যেটি মৃত্যুর হার কমিয়ে দিয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। সামনের বছরগুলোতে এসব ওষুধ ব্যাপক মাত্রায় ব্যবহার শুরু হবে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে মলনুপিরাভিরের ১.২ বিলিয়ন কোর্স ক্রয়ের অর্ডার দিয়ে রেখেছে।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবায় যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তা দেরিতে হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তবে করোনা নেতিবাচক প্রভাবে বৈশ্বিক শিক্ষায় যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করা মোটেই সহজসাধ্য হবে না। প্রাপ্ত তথ্য মতে, করোনা মহামারীর কারণে পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় শুধু বাংলাদেশেই তিন কোটি ৭০ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়েছে। ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো প্রকাশিত এশিয়ায় শিক্ষা খাতের ওপর ‘কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও মোকাবেলা কার্যক্রমবিষয়ক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ’ (সিটএন রিপোর্ট) শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রথম দিকে কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে তিন কোটি ৭০ লাখ শিশু এবং দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়াসহ এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটি শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে শিশুদের পড়াশোনার ওপর মহামারীর অব্যাহত প্রভাব এবং তা মোকাবেলায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারের গৃহীত কর্মসূচি ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যখন সাধারণত শিশুদের বার্ষিক ছুটি থেকে স্কুলে ফেরার কথা, সেই সময়ে এই প্রতিবেদনে ‘নিরাপদ’ হওয়ামাত্রই স্কুলগুলো খুলে দেয়ার জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যা খুবই বাস্তবসম্মত।

কারণ কিছু সংখ্যক দেশে, মহামারীর পুরো সময়ে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সে কারণে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থী সশরীরে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের দেশে গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার খুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত মহামারীর পুরোটা সময় স্কুলগুলো বন্ধ ছিল। এমনকি বর্তমান সময়ে, যখন পৃথিবী ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে প্রবেশ করেছে, তখনো এ অঞ্চলজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ায় দ্বিতীয় বছরের মতো স্কুল বন্ধ থাকছে। এভাবে ক্রমাগত স্কুল বন্ধ থাকার সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর পরিণতি অত্যন্ত গুরুতর, যার মধ্যে রয়েছে পড়াশোনার ক্ষতি; মানসিক দুর্দশা; স্কুলের খাবার ও টিকা নিয়মিত না পাওয়া; কাঠামোগত শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি; এবং শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি। এই ভয়াবহ পরিণতিগুলোর মধ্যে অনেকগুলো এরই মধ্যে অসংখ্য শিশুকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং অনেকগুলো আগামী বছরগুলোতে অনুভ‚ত হতে থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যদিও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ শিক্ষার্থীদের দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের পদক্ষেপ নিচ্ছে, ইউনিসেফের সহায়তায় ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন (সিএএমপিই) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মহামারীর কারণে স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতি তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দু’জনের কাছে দূরশিক্ষণ সেবা পৌঁছানো যায়নি। বস্তুগত সম্পদ ও প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তার অভাব ছাড়াও এই কঠিন সময়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং অনেক কন্যাশিশুর দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণে উল্লেখযোগ্য আরো যেসব বিষয় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশের অভাব, গৃহস্থালির কাজ করার চাপ বৃদ্ধি এবং বাড়ির বাইরে কাজ করতে বাধ্য হওয়া।

সঙ্গতকারণেই শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে সব শিশুর কাছে প্রয়োজনীয় সমতাভিত্তিক ও অংশগ্রহণমূলক দূরশিক্ষণ সেবা পৌঁছানোর ওপর প্রতিবেদনে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। একই সাথে শিক্ষার বর্তমান নিম্নহারের বিষয়টির সমাধান ও শিক্ষার বিভাজন কমিয়ে আনার জন্য সাহায্য করতে এবং শিক্ষা তহবিল রক্ষা ও সংরক্ষণে শিক্ষা এবং শিক্ষকদের জন্য সহায়তা জোরদার করতে প্রতিবেদনে সরকার ও অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যা খুবই কাক্সিক্ষত ও যৌক্তিক।

ইউনিসেফের পক্ষে বলা হয়েছে, ‘১৮ মাস বন্ধ রাখার পর বাংলাদেশে এখন যখন স্কুলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে, তখন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ রেখে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিশুদের সাহায্য করার জন্য দ্রæততার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রচেষ্টায় কোনো ঘাটতি রাখা উচিত নয়। শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে বিনিয়োগ করার এখনই সময়।’ কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের তেমন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) হিসাব অনুযায়ী, সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে এশিয়া অঞ্চলে ১ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, যা এ অঞ্চলের ২০২০ সালের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫.৪ শতাংশের সমান। বিদ্যমান তথ্যপ্রমাণ বলছে, একটি সঙ্কটের মুহূর্তে পড়াশোনার ক্ষতি সামাল দিতে শুরুতেই ব্যবস্থা নেয়া হলে তা অনেক সাশ্রয়ী ও কার্যকর হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার পেছনে বিনিয়োগ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিকে সহায়তা করবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক জর্জ লারিয়া-আদজেই বলেছেন, ‘শিক্ষাসঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার, অংশীদার এবং বেসরকারি খাতকে একসাথে কাজ করতে হবে। শুধু সঠিক কৌশল ও সঠিক মাত্রায় বিনিয়োগ পাওয়ার জন্যই নয়, বরং স্কুল খোলা বা বন্ধ যাই থাকুক না কেন, সব শিশুর জন্য একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে শিক্ষার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সক্ষম আরো টেকসই, কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।

মহামারীজনিত কারণে স্কুল থেকে শিশুদের, বিশেষ করে মেয়ে শিশু এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের, ঝরে পড়ার বর্ধিত ঝুঁকি সাম্প্রতিক দশকগুলোতে স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতিকে উল্টে দিতে পারে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া যদি আগামী ৯ বছরে জাতিসঙ্ঘের ২০৩০ সালের অ্যাজেন্ডার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার শিক্ষাবিষয়ক লক্ষ্য অর্জন করতে চায় তা হলে এ ধরনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা বাজেট গড়ে ১০ শতাংশ বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে ইউনেস্কোর বক্তব্য হলো, ‘স্কুলে ফিরে আসা শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বড় ধরনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে, এশিয়ার ১২ কোটি ৮০ লাখ শিশু মহামারী শুরুর আগে থেকেই স্কুলের বাইরে ছিল, যা বিশ্বব্যাপী স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের সংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এটি শিক্ষাজনিত একটি সঙ্কট, যা নিরসন করা প্রয়োজন।’

করোনার নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুললেও সার্বিক পরিস্থিতির দ্রæত উন্নতি হচ্ছে যদিও নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নতুন করে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই তা এখন সীমিত পরিসরে ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের দেশেও দুই নারী ক্রিকেটারের মধ্যে ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনা মহামারীর প্রভাব অনেকটাই স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে পৌঁছেছে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা করা হচ্ছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও এ বিষয়ে বেশ তৎপর বলেই মনে হচ্ছে।

স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশগুলো সে ক্ষেত্রে খানিকটা পিছিয়ে। তবে এসব দেশ দেরিতে হলেও সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি শিক্ষা ক্ষেত্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে, তা সহজে পূরণীয় নয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ সমস্যা খুবই প্রকট।

আমাদের দেশও তা থেকে মোটেও আলাদা নয়। তাই বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি শিক্ষাসঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি উদার হওয়া দরকার। অন্যথায় স্বল্প আয়ের দেশগুলোর শিক্ষা বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।
smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement