২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্র-চীন অর্থনৈতিক যুদ্ধের ফাঁদে ইন্দোনেশিয়া

- ফাইল ছবি

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণের সময় ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশ্বে সমূহ বিপদের সতর্ক বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ কারো উপকারে আসবে না। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বিজয় উদযাপনের কোনো অর্থ নেই। যদি বিভাজন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা অব্যাহত থাকে, তাহলে আমি উদ্বিগ্ন যে এটা স্থিতিশীলতা ও শান্তির টেকসই স্তম্ভগুলো ধ্বংস করে দেবে।’

দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার সাথে সাথে জাকার্তার কূটনৈতিক নিরপেক্ষ অবস্থানও শক্ত চাপের মুখে পড়েছে। উভয় পক্ষের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে ইন্দোনেশিয়ার চেষ্টার কোনো কমতি নেই। দক্ষিণ চীন সাগর দ্রুত ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের ‘প্রক্সি ওয়ার ফিল্ড’ হয়ে ওঠার সাথে সাথে ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান দুই শক্তির কাছেই মূলত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে শুরু করেছে। এর পরিবর্তে, ইন্দোনেশিয়া সামগ্রিকভাবে আসিয়ানের দিকে ফিরে গেলে কূটনীতির অর্থপূর্ণ ফলাফল তৈরি হবে কি না সেটি আরেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়। বেইজিং ও ওয়াশিংটন নিজ বাড়ির উঠানে সার্বিক যুদ্ধ শুরু করবে এতে ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু কিছু রাষ্ট্র প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কেননা, এমন কোনো যুদ্ধ সীমা-পরিসীমা মানবে না। ফলে তা সার্বিক ধ্বংসাত্মক রূপ পরিগ্রহ করবে। এমন যুদ্ধ শুরু হলে আসিয়ানের শান্তির বার্তা ও উদ্যোগ ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। ওয়াশিংটন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোকে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলায় অহরহ চাপ দিচ্ছে, কিন্তু ইন্দোনেশিয়া ও তার প্রতিবেশীরা প্রকাশ্যে সমর্থন ছাড়া চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিপদ সম্পর্কে আস্তে আস্তে সোচ্চার হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি ওয়াশিংটন ও বেইজিংকে বলেছেন, তার দেশ তাদের ‘আঞ্চলিক সংগ্রামে’ জড়াতে চায় না। ‘আমরা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদে পড়তে চাই না’, ‘আসিয়ানকে নিরপেক্ষ রাখতে চাই’। বর্তমানে দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান প্রণালী ও খোদ তাইওয়ান নিয়ে যে গরম আবহাওয়া, তাতে মনে হয় না ইন্দোনেশিয়া কার্যকরীভাবে নিরপেক্ষ থাকতে পারবে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে চীন ও ইন্দোনেশিয়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ লেনদেনে স্থানীয় মুদ্রা চীনা ইউয়ান বা আরএমবি এবং ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ বা আরপি ব্যবহারের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

২০১২ সালে চীনের বিশাল অবকাঠামো প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভস (বিআরআই) শুরু হওয়ার পর থেকে ইউয়ান ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১০ শতাংশ ইউয়ান ব্যবহার করে। ২০১৮ সালে, ইউয়ান মূল্য ২০১.২ বিলিয়ন আরএমবি যা মার্কিন ২৯ বিলিয়ন ডলারের সমমানের বা পুরো ইন্দোনেশিয়ার বাজারের প্রায় ৬৩ শতাংশ। বিশ্বের বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে এই চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। চুক্তিটি দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করেছে অনেকখানি।

এই চুক্তি চীন এবং ইন্দোনেশিয়ার আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিশ্বের প্রধান মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক যুদ্ধে এটি চীনের এক বিজয়। চীন এর আগে ইরানের সাথেও দুই দেশের মুদ্রায় আন্তর্জাতিক লেনদেন শুরু করেছে। মূলত বিভিন্ন দেশের ওপর ওবামা-ট্রাম্পের অহরহ অর্থনৈতিক অবরোধের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে তারা ডলারের বেড়াজাল থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। এই চুক্তি চীনের বাণিজ্য সুরক্ষিত করতে এবং বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করতে সহায়তা করছে। তা ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে যে, এই চুক্তি মার্কিন ডলারের ওঠানামার বিরুদ্ধে দেশটির ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করছে। ইন্দোনেশিয়ার বৈদেশিক লেনদেনের প্রায় ৯০ শতাংশ মার্কিন ডলার। স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার ইন্দোনেশিয়াকে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করছে বলে পণ্ডিতরা মনে করছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে আর্থিক বিরোধ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল করেছে। কারণ, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড হ্রাস বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার উদীয়মান বাজারের জন্য বিষয়টি আরো বিপদের কারণ। মার্কিন ডলারকে আকর্ষণীয় করতে বিনিয়োগকারীদের ইন্দোবাজার থেকে অর্থ টানতে বাধ্য করে। ফলে রুপিয়ার অবমূল্যায়ন ঘটে। গত ২০ বছরে এটি রুপিয়ার বড় পতন। এ দিকে, ইউয়ানের বিপক্ষে রুপিয়া বিনিময় হার ইউয়ানের বিপক্ষে আরপি ১ হাজার ৯০০ থেকে আরপি ২ হাজার ১০০-এর মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। অতএব, ইউয়ান ব্যবহার করে লেনদেন চালানো সস্তা হবে।

চুক্তিটি ইন্দোনেশিয়ার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চীনের সাথে ইন্দোনেশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য- এবং সাধারণভাবে এশিয়ার দেশগুলো থেকে ইন্দোনেশিয়ায় চীনা বিদেশী বিনিয়োগের প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় চীনা বিনিয়োগ গত পাঁচ বছরে রেকর্ড ছুঁয়েছে। চীন ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস, সিঙ্গাপুরের অবস্থান প্রথমে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন প্রায়ই তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে যাতে এটি বাজারে আরো কার্যকর প্রভাব রাখতে পারে। ইউয়ানের অবমূল্যায়ন করলে চীনা পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে সস্তা এবং আরো প্রতিযোগিতামূলক হবে। যদি ইন্দোনেশিয়া ইউয়ান ব্যবহার করে, চীন থেকে ইন্দোনেশিয়ার আমদানি বাড়তে পারে, সেটি অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রভাব ফেলবে।

দুই দেশের মুদ্রা চুক্তি ইন্দোনেশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান অভিযাত্রাকে শক্তিশালী করছে। চীন বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উদ্যোগের মাধ্যমে তার সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টা প্রসারিত করেছে এবং ইন্দোনেশিয়াজুড়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে। এসব কাজকর্ম ওয়াশিংটনকে ভাবিয়ে তুলেছে। অর্থনৈতিক পণ্ডিতরা মনে করেন, এই চুক্তির ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিতে চীনের মুদ্রার হাত আরো প্রসারিত হয়েছে।

এশিয়ার অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ইন্দোনেশিয়াকে ‘গেম প্ল্যান’ নির্ধারণ করতে হবে যাতে ইউয়ানের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার উভয় পক্ষের উপকারে আসে। বৈশ্বিক রাজনীতির খেলায় ভুল হলে অনেক ক্ষেত্রে তা সংশোধনের সুযোগ হারিয়ে যায়। একই সময়ে, ইন্দোনেশিয়াকে নিশ্চিত করতে হবে যে, চীনের অবমূল্যায়ন নীতি ভবিষ্যতে অর্থনীতির ক্ষতি করবে না। একটি কৌশল হলো, চীন ছাড়া অন্য দেশগুলো থেকে আমদানিতে বৈচিত্র্য আনা। আরেকটি হলো- কৃষি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা যা জাকার্তার আমদানি হ্রাসে সহায়তা করবে।

ইন্দোনেশিয়া এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের সমঝোতা স্বাক্ষরিত করেছে। এখন জাকার্তা ইইউ এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সাথে স্থানীয় মুদ্রার বন্দোবস্ত স্থাপন করতে চায়। তবে এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এমন কিছু সম্ভব নয়।

দুই পরাশক্তির বিরোধে জাকার্তা সামরিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রবো সুবিয়ান্তো গত ডিসেম্বরে পুরনো যুদ্ধবিমান প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনীর মূল বিমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৫, এগুলো চার দশক আগের। দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে জাকার্তা দ্রুত সামরিক সরঞ্জাম উন্নীত করতে চায়। দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যৌথ যুদ্ধবিমান উৎপাদনের প্রকল্পও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়ার সুখোই এসইউ-৩৫ জেটগুলোই যেন ভরসা। ২০১৮ সালে আরো অস্ত্র কিনতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র অবরোধের হুমকি দেয়। কিছু দিন আগে সাবমেরিন দুর্ঘটনার জন্য জাকার্তার অনেক সন্দেহ দানা বেঁধেছে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়াকে চতুর্থ প্রজন্মের এফ-১৬ বিক্রি করার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে জাকার্তা পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ চেয়ে আলোচনার টেবিলে তাস ফেলেছে। এগুলো খুবই ব্যয়বহুল। আবার রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনার জন্য পাম তেল, রাবার ও অন্যান্য পণ্য রফতানির বার্টার সিস্টেমে অর্ধেক অর্থ পরিশোধে উভয় দেশ সম্মত।

মার্কিন অস্ত্রশস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার তিক্ত স্মৃতি রয়েছে জার্কাতার। পূর্ব তিমুরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যু তুলে ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মার্কিন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছে দেশটি। নিষেধাজ্ঞার ফলে ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীতে খুচরা যন্ত্রাংশের অভাব দেখা দেয়। অস্ট্রিয়া ও ভিয়েনার অফলোড করা ১৫টি ইউরোফাইটার টাইফুন জেট কেনার চিন্তা করেছিল জার্কাতা। সেকেন্ডহ্যান্ড ইউরোফাইটার ইন্দোনেশিয়াকে কিছু রুপিয়া বাঁচাতে পারলেও লোকজন আবার পুরনো জিনিস কেনার ঘোর বিরোধী। তা ছাড়া এগুলো সংগ্রহে ইউকে, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেনের অনুমোদনও প্রয়োজন হবে। অস্ট্রিয়ার অস্ত্র সংগ্রহ করতে ইসরাইলের অনুমোদন দরকার, কেননা অস্ত্র নির্মাণ ও সরবরাহের পুরোটা ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করে। ইতঃপূর্বে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ প্রশ্নে ইন্দোনেশিয়া কঠিন আপত্তি জানায়। ফলে এই পথে পা বাড়ালে পুরনো জেট পেতে দুই দশক সময়েও শেষ হবে না। ততদিনে অনেক খেলা সাঙ্গ হয়ে যাবে। বর্তমানে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ পাকিস্তান ও তুরস্ক। তাই মন্ত্রী প্রবো সুবিয়ান্তো ফ্রান্স এবং তুরস্কের বন্দরে ভিড়তে চায়। ফ্রান্স থেকে রাফায়েল ও সাবমেরিন সিস্টেম এবং তুরস্ক থেকে মানববিহীন আকাশযান বা ড্রোনসহ বিভিন্ন ধরনের আধুনিক অস্ত্র। অকাস বিরোধে ক্ষিপ্ত ফ্রান্স এবং মুসলিম দেশ হিসেবে তুরস্ক জার্কাতাকে যুদ্ধাস্ত্র দিতে আগ্রহী হয়েছে। খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুটি দেশ অধিক অর্থ দাবি করবে না বলে জানা যায়।

বেইজিংয়ের সাথে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্দোনেশিয়া চীন থেকে স্থানান্তরিত মার্কিন কোম্পানিগুলোকে নিজ দেশে রাখতে যাচ্ছে। বেইজিং জাকার্তার এসব প্রস্তাব অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করেনি। তবে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় নৌ-উপস্থিতি বৃদ্ধি ও টহল বৃদ্ধির মাধ্যমে চীন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার টহল-জাহাজ প্রায়ই চীনের কোস্ট গার্ড বাহিনীর মুখোমুখি হয়, যদিও আজতক কোনো সমস্যা হয়নি। ইন্দোনেশিয়া অবস্থান পরিবর্তন করলে এই ‘মুখোমুখি’ ভিন্ন দিকে মোড় নেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

গত মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, চীন ইন্দোনেশিয়ায় সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে জার্কাতা বলেছে, ‘ইন্দোনেশিয়া কোনো দেশের জন্য সামরিক ঘাঁটি হবে না।’ ইন্দোনেশিয়া রাজি না হলে কোনো দূরবর্তী দ্বীপে চীন ঘাঁটি বানাবে। চীন ‘নাইন ড্যাশ লাইনের’ বাইরের এলাকাও নিজের বলে দাবি করে। বিষয়টি অনেকটা এরকম- চীনের সাথে থাকো নতুবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।

ইন্দোনেশিয়া কি এমন অবস্থানে থাকতে চায়? ইন্দোনেশিয়া বোঝে যে, আমেরিকা ও চীনের দ্ব›দ্ব তার কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য হুমকি তৈরি করছে। ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের উত্তেজনা কমাতে জার্কাতার তেমন কিছু করার নেই। ইন্দোনেশিয়া আসিয়ান পর্যায়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য চাপ দিতে পারে। যদি না দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া একত্র হয়ে এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিক্রিয়া প্রণয়ন করে। তবে তার সম্ভাবনা খুব কম। এ দিকে যুক্তরাষ্ট্র চীন বিরোধী মোর্চা কোয়াড, অকাস এসব করেই চলেছে। ফলে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান আরো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরে পরস্পরবিরোধী ও বিদ্বেষপূর্ণ বাক্যবাণ ছুঁড়ছে এবং সাগরে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। ব্রিটেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য সেখানে চারটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠিয়েছে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উদ্বেগ ও সশস্ত্র সংঘর্ষের ঝুঁকির চাপ বাড়িয়েছে। আসিয়ানের ওপর প্রভাব বিস্তারের জোর প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র।

রেটনো বলেছেন, ‘আসিয়ানকে অবশ্যই দৃঢ়ভাবে নিরপেক্ষ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ ‘আসিয়ান, ইন্দোনেশিয়া, সবাইকে দেখাতে চায় যে, জাকার্তা অংশীদার হতে প্রস্তুত। প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদে পড়তে চাই না।’ চীন, দক্ষিণ চীন সাগরের বেশির ভাগ অংশকে সার্বভৌম অঞ্চল বলে দাবি করে। ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ব্রুনাই সম্পদসমৃদ্ধ এই জলসীমার অংশ দাবি করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বছর চীনের দাবি করা জলসীমায় নৌচলাচলের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে বাণিজ্যিক ও সামরিক নৌচলাচল কার্যক্রম বাড়িয়েছে, ২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো এই অঞ্চলে দু’টি বিমানবাহী রণতরী, পরমাণু সাবমেরিন ও নজরদারি বিমানের টহল বৃদ্ধি করেছে।

চীনের নৌবাহিনীও জলপথে নৌমহড়া বাড়িয়েছে, জাহাজ ঘায়েল করার চারটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে, এগুলোকে ‘এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার কিলার’ বলা হয়।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement