২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর মাদক ‘ক্রিস্টাল মেথ’

- ছবি : সংগৃহীত

স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিপজ্জনক মাদক ‘ক্রিস্টাল মেথ’। এটি একটি শক্তিশালী মাদক, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। ক্রিস্টাল মেথ অনেক দিন ধরেই নেশার জগতে পরিচিতি পেয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী নারী-পুরুষদের কাছে মারিজুয়ানার পরে এর চাহিদা ব্যাপক। সেবনকারীর মনে এই মাদক ক্ষণিকের মিথ্যা সুখের শিহরণ সৃষ্টি করে। ইন্দ্রিয় অনুভ‚তি, সাহস ও শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌন উত্তেজনা বাড়াতে মাদক বেশ পরিচিত। যৌনতার সময় বর্ণ, শব্দ ও স্পর্শ সম্পর্কে সেবনকারীর উপলব্ধি আরো বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়াবহ। এর বৈজ্ঞানিক নাম মেথামফেটামাইন, যা অত্যন্ত আসক্তি উদ্দীপক। রাসায়নিক এন-মিথাইল-১, ফেনাইল-প্রোপান-২, অ্যামিনকে মেথামফেটামিন, মেথিলামফেটামিন বা ডেসোক্সেফিড্রিন বলে। সংক্ষিপ্ত নাম কেবল ‘মেথ’। এটি যখন স্ফটিক আকারে থাকে তখন ড্রাগটিকে ‘ক্রিস্টাল মেথ’ বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্ক ল্যাবের বিজ্ঞানী অ্যান্টন ক্যালিশ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কয়েকটি ওষুধ একত্রে মিশ্রিত করে এই মারণ নেশা তৈরি করেন। আগে এটির বাণিজ্যিক নাম ছিল ‘পারভিটিন’। বর্তমানে বিভিন্ন নামে একে অভিহিত করা হয়; যেমন- আইস, এক্সথেসি, ফান ট্যাবলেট, ভালোবাসার বড়ি, আলিঙ্গন ড্রাগ, ক্যান্ডি, মলি, এমডিএমএ ও গøাস। এটি দেখতে স্বচ্ছ পাথরের মতো এবং বর্ণ নীলাভ সাদা। ইয়াবার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর এ মাদক। ক্রিস্টাল মেথ পাউডার করে নাক দিয়ে টানা হয়, মুখে খাওয়া হয়, সিগারেটের মতো ধূমপান করা হয় কিংবা সিরিঞ্জ দিয়ে মাংসপেশি বা মলদ্বার অথবা মূত্রনালীতে ঢোকানো হয়। ইনজেকশন হিসেবে নিলে এটি ৪০-৫০ সেকেন্ডের মধ্যে কার্যকারিতা শুরু হয়ে যায়। ট্যাবলেট পানি দিয়ে খেলে ৩০-৪০ মিনিট পর কাজ শুরু হয়। পাউডারের গুঁড়ো ধোঁয়ার মাধ্যমে সেবন করলে প্রায় পাঁচ মিনিটের মধ্যে কাজ শুরু করে। এর প্রভাব তিন থেকে ছয় ঘণ্টা থাকে। তরুণ ও যুবকরাই ক্রিস্টাল মেথে আসক্ত হয়ে পড়ছে। প্রতি গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আট গ্রাম ক্রিস্টাল মেথসহ তিন জনকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এরপর ওই বছরের ২৭ জুন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ক্রিস্টাল মেথসহ নাইজেরীয় একজন নাগরিককে আটক করা হয়। তার কাছে ৫২২ গ্রাম এ ধরনের মাদক পাওয়া যায়। এ মাদক আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছিল। ২০১৯ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা ক্রিস্টাল মেথের অত্যাধুনিক ল্যাবের সন্ধান পান রাজধানীর জিগাতলায়। হাসিব নামের এক যুবক মালয়েশিয়া থেকে ট্রিপল-ই বিষয়ে পড়াশোনা শেষে এই ল্যাব স্থাপন করে এবং বাংলাদেশে ক্রিস্টাল মেথের বাজার সৃষ্টি করাই ছিল তার লক্ষ্য। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, একটি ইয়াবা ট্যাবলেটে অ্যামফিটামিন থাকে পাঁচ ভাগ আর একটি ইয়াবা সমান ক্রিস্টাল মেথে শতভাগই অ্যামফিটামিন বিদ্যমান থাকে। বিগত ৭ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের সাতকানিয়ার কেওচিয়ার তেমুহনী এলাকার ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি মিনি ট্রাক থেকে দুই কেজি ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ। এ মাদকের মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। রোহিঙ্গাসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয় এ জন্য। টেকনাফ থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এসব মাদক। মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে ক্রিস্টাল মেথ বাংলাদেশে ঢুকছে। কেনাবেচা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাইভেট গ্রুপে। রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রুপ বাংলাদেশী মাদক কারবারিদের সাথে মিলে এ কারবার চালাচ্ছে স্থল, নৌ ও আকাশপথে।
১৮৮৭ সালে জার্মানিতে সর্বপ্রথম এই ক্রিস্টাল মেথের ওপর গবেষণা ও প্রয়োগ চলে। যুদ্ধবিমানের পাইলটদের সারাক্ষণ নির্ঘুম, নির্ভয় ও উত্তেজিত রাখতে তারা নিজেদের সেনাদের এই মাদক ব্যবহারে উৎসাহিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এর বিস্তৃতি লক্ষ করা যায়। রাতে দায়িত্ব পালনরত জাপানি ট্যাংক কম্যান্ডার ও পাইলটরা এই মাদক সেবন করতেন। অত্যধিক ক্লান্তির মাঝে জাগিয়ে রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো এই মাদক। পঞ্চাশের দশকে মার্কিন সরকার মানসিক জিজ্ঞাসাবাদ ও যুদ্ধের পরীক্ষার জন্য ড্রাগটি ব্যবহার করেছিল। ১৯৬০ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও উত্তর আমেরিকায় এবং ১৯৯০ সালে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের যুবকদের হাতে পৌঁছে যায়। বর্তমানে মূলত হল্যান্ড, ওশেনিয়া ও বেলজিয়ামে এটি বেশির ভাগ উৎপাদিত হয়। ১৯৯০ সালে মেক্সিকোর মাদক কারবারিরা মাদক হিসেবে এটি ছড়িয়ে দেয় আমেরিকা, ইউরোপ, চেক রিপাবলিক ও এশিয়াসহ গোটা দুনিয়ায়। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়া হয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে ক্রিস্টাল ড্রাগের ব্যবহার শুরু হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭০ সালে এটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে; কারণ ছিল উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা দ্রুত এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়াশোনায় ফাঁকি দিতে শুরু করে এবং মা-বাবার অর্থ ধ্বংস করতে থাকে। খুব দ্রুত শতগুণ বেশি উত্তেজনা তৈরি করায় সেবনকারীদের চেহারা বিকৃত হয়ে জঘন্য রূপ ধারণ করতে থাকে (ড. মো: ফখরুল ইসলাম, ডিন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, যুগান্তর, ১৬ মার্চ ২০২১)। জার্মানিতে ক্রিস্টাল মেথ মূলত পার্টি মাদক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই মাদক নিলে তরুণ-তরুণীরা দীর্ঘ সময়ের জন্য সতেজ থাকে এবং নৃত্য উন্মাদনা বজায় রাখতে পারে। চেক প্রজাতন্ত্রে একধরনের ‘ল্যাবরেটরিতে’ সস্তায় তৈরি করা হয় এই ড্রাগ। এরপর অল্প অর্থের বিনিময়ে জার্মানিতে পাঠানো হয়। মিয়ানমারের জঙ্গলে রয়েছে ক্রিস্টাল মেথের গোডাউন। সেখান থেকে পুরো এশিয়ায় এই মাদক ছড়ানো হয়। আন্তঃদেশীয় বিশাল এক সিন্ডিকেট এর সাথে যুক্ত। আলজাজিরা জানায়, ২০২০ সালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর নিকটবর্তী একটি পোতাশ্রয় থেকে দুই বিদেশী ট্রলার ও শ্রীলঙ্কান জেলেনৌকায় ৩৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ৪০০ কেজি হেরোইন ও ১০০ কেজি ক্রিস্টাল মেথ জব্দ করেছে দেশটির নৌবাহিনী।
ক্রিস্টাল মেথের সাইকোঅ্যাকটিভ প্রভাব সাংঘাতিক। এই মাদক সেবনে শরীরে উত্তেজনা বেড়ে যায়। মানুষকে জাগিয়ে রাখে। দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। আবার এই মাদক ছেড়ে দিলে উল্টো ব্যাপার লক্ষ করা যায়। আসক্তরা এটি ছাড়া ঘুমাতে পারেন না, যদিও ক্লান্তি তাদের ঘিরে থাকে। কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। এসব কারণে অনেক দেশে ক্রিস্টাল মেথ উৎপাদন, বিতরণ, বিক্রয় ও নিজের কাছে রাখা নিয়ন্ত্রিত বা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ড্রাগ অ্যাবিউজের তথ্য অনুসারে, এ মাদকের ব্যবহার স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, দন্তক্ষয়, স্থায়ী হ্যালুসিনেশনসহ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। স্নায়ুকোষ ধ্বংস হয় এবং মানুষকে আক্রমণাত্মক ও সহিংস করে তোলে। দীর্ঘমেয়াদি ক্রিস্টাল মেথ অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়ে থাকে। মস্তিষ্কে সেরিব্রাল প্যালসির কারণে স্ট্রোক হয়। মস্তিষ্কে স্থায়ী সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। এর ফলে স্মৃতিশক্তি হ্র্রাস পায় এবং সেবনকারী চিরতরে পাগল হয়ে যেতে পারে। ফলে সাময়িক সুখ অনুভ‚ত হলেও শরীরে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেবনের পর হঠাৎ মন থেকে দুঃখ, উদ্বেগ, চাপ ও হতাশা হারিয়ে যায়, নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয় আর নেশার প্রভাব থাকা পর্যন্ত হাসতে চায়। নেশার প্রভাব কেটে গেলে নেশাকারী বাস্তবের সাথে পূর্ব অভিজ্ঞতার মিল খুঁজে পায় না। ফলে আরো বেশি হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এ হতাশায় অনেকে আত্মহত্যা করে। এটি গ্রহণ করার পর দেহের অঙ্গগুলো তিন-চার ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করে মস্তিষ্কের উত্তেজনার কারণে; কিন্তু নেশার প্রভাব কেটে গেলে অঙ্গগুলো অসাড় হয়ে আসে। ক্রিস্টাল মেথ সেবনের পর মস্তিষ্কে সেরাটোনিন ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে সুখের অনুভ‚তি সৃষ্টি হয় কিন্তু অতিরিক্ত সেরাটোনিন ক্ষরণ হতে হতে একসময় এর ঘাটতি সৃষ্টি হয়। ফলে সেবনকারীর ঘুম কমে যায়। কার্ডিওজেনিক শক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, রক্তচাপ বৃদ্ধি, শরীরের অতি উচ্চ তাপমাত্রা, ফুসফুসের উচ্চ রক্তচাপ, বৃক্কবিকলাঙ্গতা, দ্রæত পেশি ভাঙন, অবিচ্ছিন্ন বিভ্রান্তি, মারাত্মক হতাশা, উদ্বেগ, কিডনি ফেইলিওর ও হার্ট অ্যাটাক দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত নেশার ফলে মৃত্যুর ঘটনা হরহামেশাই দেখা যায়।

আমেরিকায় এটিকে মনোযোগহীনতা ও স্থূলতার ওষুধ হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে এর ব্যবহার এমনভাবে করতে হবে, যাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি না হয়ে যায়। ষাটের দশকে মানসিক সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য জনগণ চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে ক্রিস্টাল মেথ ব্যবহার শুরু করে। চিকিৎসকের পরামর্শে স্বল্প থেকে মাঝারি মাত্রায় এর প্রয়োগ মনের ভাব পরিবর্তন করতে পারে, সক্রিয়তা বাড়াতে পারে, ক্ষুধা কমাতে পারে, ওজন হ্রাস করতে পারে, দৈহিক শক্তি বাড়াতে পারে এবং যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। সত্তরের দশকে এটি পার্টি ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে একটি বিনোদনমূলক ড্রাগ হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার করা হতো। ইদানীং মাদক গবেষকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রিস্টাল মেথ। দীর্ঘ দিন ধরে এই মাদক সেবন করলে প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়। নেশার দ্রব্য হিসেবে এটিকে অনেকে ক্রয় করে এবং খায়। নেশা হিসেবে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপে।

জাতিসঙ্ঘের পরিসংখ্যান মতে, গোটা বিশ্বে প্রতি বছর ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয় মাদকের। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেটের চেয়ে বেশি। যেহেতু এ কারবার অবৈধ, তাই মাদক কারবারিদের কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না। ফলে তারা তাদের বিনিয়োগকৃত পুঁজির পাঁচ থেকে ২০ হাজার শতাংশ মুনাফা লাভ করে। বাংলাদেশ এখন মাদক ভোক্তার চাহিদার বিরাট চারণভ‚মি। সরকারি হিসাবে দেশে ৩৬ লাখ মাদক ব্যবহারকারী থাকলেও বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ৭০ লাখের উপরে। সবচেয়ে বেশি মাদক ব্যবহারকারী আছে ঢাকা বিভাগে। এত বড় মাদকের বাজারে বিশ্বের ‘নামীদামি’ মাফিয়াদের নজরদারি রয়েছে এ দেশে। আছে অবৈধ অস্ত্র ও স্বর্ণের ব্যবসায়। সহযোগিতায় আছে দেশীয় অনৈতিক ব্যবসায়ী ও অসৎ কর্মচারীর বিরাট চক্র। এদের অসৎ তৎপরতায় অকালেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের নবীন প্রজন্মের মেধা এবং বিষিয়ে উঠছে মনন। ইয়াবার আগ্রাসন রুখতে ২০১৮ সাল থেকে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রায় ৪০০ মাদক কারবারি নিহত হয় (ইত্তেফাক, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ড. মো: ফখরুল ইসলাম, যুগান্তর, ১৬ মার্চ ২০২১)। ক্রিস্টাল মেথ ও ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের অভ্যন্তরীণ চাহিদা যদি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা না যায়, তা হলে সীমান্তে যত কড়াকড়ি আরোপ করা হোক না কেন মাদক চোরাচালান বন্ধ হবে না।

সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে হলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমাতে হবে। কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। এর জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। অভিভাবক, রাজনীতিক, সমাজসেবক, শিক্ষাবিদ, ইমাম, খতিব, সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। ১৯৯০ সালে প্রণীত মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধনপূর্বক আরো কঠিন করতে হবে। এ আইনের ৯(১) ধারায় বলা হয়েছে- ‘অ্যালকোহল ব্যতীত অন্য কোনো মাদকদ্রব্যের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, আমদানি, রফতানি, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয়, ধারণ, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, প্রয়োগ ও ব্যবহার করা যাবে না, অথবা এতদুদ্দেশ্যে কোনো প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ গ্রহণ, অর্থবিনিয়োগ কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পরিচালনা বা এর পৃষ্ঠপোষকতা করা যাবে না।’ ২০ ধারায় বলা হয়েছে- ‘এ আইনের অধীন প্রদত্ত লাইসেন্সপ্রাপ্ত নন এরূপ কোনো ব্যক্তির কাছে বা তার দখলকৃত কোনো স্থানে যদি মাদকদ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহারযোগ্য কোনো যন্ত্রপাতি, সাজ-সরঞ্জামসহ অন্যান্য উপকরণ পাওয়া যায়, তা হলে তিনি অন্যূন দুই বছর এবং অনূর্ধ্ব ১৫ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।’ মাদকাসক্তকে জেলে না দিয়ে সংশোধনাগারে পাঠাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং ও চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। মাদকসেবীরা তো সমাজের অংশ। আমাদেরই আপন, স্বজন ও প্রতিবেশী। এদেরকে সংশোধনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে না পারলে ধর্ষণ, খুন, ছিনতাই, গ্যাং কালচার ও অপরাধবৃত্তি রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে সবাইকে ভাবতে হবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত

সকল