২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলন : পৃথিবীকে কতটা বাঁচাবে

-

জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের দিকেই এখন বিশ্বের দৃষ্টি। ব্রিটেনের আয়োজনে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ দিনের ‘কপ-২৬’ নামের এ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে ইতালি। ২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনের পর এটি সবচেয়ে বড় জলবায়ু সম্মেলন। গত বছর হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে এক বছর পিছিয়ে এ বছর সম্মেলন হচ্ছে। এতে ২০০ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। বলা হচ্ছে, এ সম্মেলনে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেবে। এর মধ্যে বিশ্বনেতারা ছাড়াও বিজ্ঞানী, পরিবেশবাদী কর্মী, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীরাও থাকবেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে বলেছেন, এ দুর্যোগ করোনাভাইরাস মহামারীর চেয়েও ভয়াবহ। কোভিড-১৯ ভয়ানক, তার চেয়েও ভয়ানক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সঙ্কট। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিত্ব বিল গেটস বলেছেন, ২০৬০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তন ঠিক কোভিড-১৯-এর মতোই প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। আর ২১০০ সাল নাগাদ এটি হবে পাঁচগুণ বেশি ভয়াবহ। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় রুখতে না পারলে পৃথিবীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

গ্লাসগো সম্মেলনে আলোচনার জন্য জাতিসঙ্ঘের একদল বিজ্ঞানী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার উপায় খুঁজে বের করতে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত জাতিসঙ্ঘের আন্তঃসরকার কমিটি বা আইপিসিসি নামে কমিটিতে বিজ্ঞানী দলটি কাজ করে। তারা প্রতি ছয়-সাত বছর পরপর জলবায়ু পরিবর্তনের নানা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে এ ধরনের রিপোর্ট তৈরি করেন। এবারের রিপোর্টে বিশ্বে কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার ওপর সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষ করে কয়লার ব্যবহার বন্ধের ব্যাপারেই জোরালো সুপারিশ করা হয়েছে। গ্লাসগো সম্মেলনের অন্যতম প্রধান একটি লক্ষ্য কয়লার ব্যবহারের অবসান ঘটানো।
তবে সম্মেলনে উপস্থাপনের আগেই একাধিক দেশ ও সংস্থা তা ফাঁস করে রিপোর্টটি বদলে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার, কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট আরো কিছু পক্ষ রিপোর্টের সুপারিশকৃত কিছু বিষয়ের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ৩২ হাজারের বেশি প্রস্তাব পেশ করেছে জাতিসঙ্ঘে। উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, সৌদি আরব, জাপান, তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক, নরওয়ে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা।

অস্ট্রেলিয়া ও ভারত অন্যতম বৃহৎ কয়লা ব্যবহারকারী ও রফতানিকারক দেশ। তাই তারা এখনই কয়লার ব্যবহার অবসানের বিপক্ষে। বিজ্ঞানীদের রিপোর্টে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন বলে উপসংহারে যে কথা বলা হয়েছে তা প্রত্যাখান করে অস্ট্রেলিয়া সরকারের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনো আসেনি। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরো কয়েক দশক কয়লার ওপর নির্ভর করতে হবে। সবার কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া ভারতের জন্য এখনো কঠিন চ্যালেঞ্জ। তাই কয়লার ব্যবহার বন্ধ না করে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়ার প্রযুক্তির ব্যবহার করা হোক। এ প্রযুক্তি ‘কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ’ বা ‘সিসিএস’ নামে পরিচিত। ভারত হলো কয়লা ব্যবহারের দিক দিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। এ দিকে সৌদি আরবসহ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোও বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শুষে নিয়ে মজুদ করে রাখার দাবি জানিয়ে বলেছে, সিসিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্গত কার্বনের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমানো যায়। আর্জেন্টিনা, নরওয়ে ও ওপেকের মন্তব্যও একই। রিপোর্টে গোশত খাওয়া কমানোর যে সুপারিশ করা হয়েছে তার বিরোধিতা করেছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উদ্ভিদভিত্তিক ডায়েট বা খাবার-দাবার পশ্চিমা ডায়েটের চেয়ে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন ৫১ শতাংশ কমাতে পারে। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বলেছে এ তথ্য ঠিক নয়। তাই রেড মিট বা লাল গোশতের ওপর করারোপ বা ‘গোশতবিহীন সোমবার’ এ ধরনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করা হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের নানা আলামত
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এখন দৃশ্যমান। কানাডার ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপদাহে এবার প্রায় শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিম ইউরোপে নজিরবিহীন বন্যা হয়েছে। বিশেষ করে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতজনিত বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা শতাধিক। বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গেও বন্যা ভয়াবহ ছিল। কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপে এমন বন্যা ছিল ভয়াবহ। ২০২০ সালে বিশ্বের ১৯ শতাংশ এলাকা তীব্র খরার সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বের ১৩৪টি দেশের মানুষ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন দাবানলের বড় হুমকির মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, উত্তর আমেরিকার কিছু অঞ্চল, সাইবেরিয়া, ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দাবানলে পুড়ে ছাই হয়েছে। গ্রিস ও আলজেরিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে অসংখ্য মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে। আলজেরিয়ার ১৮টি প্রদেশের ৭০টির বেশি জায়গায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ে।

জলবায়ু পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে জাতিসঙ্ঘের বিজ্ঞানীরা গত আগস্টে আইপিসিসির যে রিপোর্ট প্রকাশ করে তাতেও বলা হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখন যে চরম তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা, অনাবৃষ্টি, খরা, সাইক্লোন ও দাবানল হতে দেখা যাচ্ছে তাতে জলবায়ু পরিবর্তনের সুস্পষ্ট আলামতই ফুটে উঠেছে। পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা শিল্পযুগের আগে যা ছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে সেই তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য আগে যতটা সময় লাগবে বলে বলা হয়েছিল, এখন বলা হচ্ছে- ১০ বছর আগেই তা ঘটে যাবে। এর ফলে বিশ্ব চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির তৈরি হবে। একমাত্র কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়েই এ অবস্থার গতি কমানো যায়। রিপোর্টে বলা হয়, ২০১১-২০ এই এক দশক সময়কালে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১৮৫০-১৯০০ সময়কালের চেয়ে ১.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ১৮৫০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত থাকা রেকর্ড অনুযায়ী গত পাঁচ বছর ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম সময়। ১৯০১-১৯৭১ এ সময়কালের সাথে তুলনায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সাম্প্রতিক হার প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। ১৯৯১-এর দশক থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী হিমবাহগুলো গলে যাওয়া ও আর্কটিক সামুদ্রিক বরফস্তর কমে যাওয়ার পেছনে মানুষের কর্মকাণ্ডই দায়ী। এটি এখন প্রায় নিশ্চিত যে, ১৯৫০-এর দশকের পর গরম পড়া এবং তাপপ্রবাহ অনেক বেশি ঘন ঘন ঘটছে। এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রের পানির স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই মিটারের কাছাকাছি চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বড় আকারে কমাতে পারলে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে হয়তো স্থিতিশীল রাখা যেতে পারে।

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটের ‘ল্যানসেট কাউন্টডাউন’ গবেষণায় বলা হয়, জলবায়ু সঙ্কট খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দেখা দেবে। এর ফলে বিশ্বের ২০০ কোটির বেশি মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ২০১৫ সালের পর থেকে গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি অঞ্চল তীব্র খরার সম্মুখীন হয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পানিচক্রেও পরিবর্তন এসেছে। জলবায়ু সঙ্কটে ফসলের ফলনও কমে যাচ্ছে। ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরের চেয়ে বর্তমানে ভুট্টার উৎপাদন ৬ শতাংশ, গমের উৎপাদন ৩ শতাংশ ও ধানের উৎপাদন ১.৮ শতাংশ কমেছে। ১৫ বছর আগের চেয়ে বর্তমানে সাগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা সাগরের উষ্ণতা ৭০ শতাংশ বেড়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক গবেষণায় বলা হয়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি জনস্বাস্থ্যকেও সঙ্কটে ফেলছে। এটি কিডনি মহামারী সৃষ্টি করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।

গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ-২৬’কে সামনে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৮২ পৃষ্ঠার রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবসভ্যতার সবেচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সঙ্কট হিসেবে উল্লেখ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপদাহ, ঝড়, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় আঘাত, রোগ বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্যে সমস্যা বাড়ছে। রিপোর্টে ১০টি সুপারিশও করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পরিবহন ও স্বাস্থ্যসম্মত নগরায়ন।
ড্রাইভিং ছেড়ে সাইকেল চালাতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হাঁটার অভ্যাসও গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এতে কার্বন নিঃসরণ কমবে। রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কোনোভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না। সংস্থাটি বলেছে, বায়ুদূষণের মতো পরিবেশগত ঝুঁকি প্রতি বছর এক কোটি ৩৭ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।

বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বলা হয়, ‘স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশে পরিচালিত বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়, শুষ্ক মৌসুমে বিষাদ ও উদ্বেগ বাড়ছে। বর্ষাকালে এখানে দীর্ঘ হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি কমছে। ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ভারী বৃষ্টি হয়েছিল। এ বৃষ্টি আগের ৪৫ বছরে হয়নি। তার পরেরও মাসগুলোতে বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া ডেঙ্গুর বাহক মশার বংশবিস্তারে সহায়ক ছিল। বাংলাদেশের পাঁচ শহরের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাংক রিপোর্টে বলা হয়, উষ্ণায়নের উচ্চমাত্রা জলবায়ু পরিবর্তনে খুব বড় ভূমিকা রয়েছে। ইউনিসেফ বলেছে, বাংলাদেশের শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি শিশু অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ৩৩টি দেশে বসবাস করে। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ রয়েছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

কার্বন নিঃসরণে দায়ী দেশ
বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণে শিল্পোন্নত দেশগুলোই দায়ী। গবেষণায় উঠে এসেছে, বড় দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মিলে ৪০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করছে বায়ুমণ্ডলে। এর মধ্যে চীন করছে ২৮ শতাংশ। দেশটি প্রতি বছর ১১ হাজার ২৫৬ মেগা টন (প্রতি মেগা টনে ১০ লাখ টন) কার্বন নিঃসরণ করছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র পাঁচ হাজার ৪৫৭ মেগা টন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিলিতভাবে তিন হাজার ৪০৭ মেগাটন, ভারত দুই হাজার ৬২২ মেগাটন, রাশিয়া এক হাজার ৪৭৮ মেগা টন, জাপান এক হাজার ১৯৯ মেগা টন, রাশিয়া এক হাজার ৪৭৮ মেগা টন, জাপান এক হাজার ১৯১ মেগা টন, জার্মানি ৭৫৩ মেগা টন, ইরান ৭২৮ মেগা টন, সৌদি আরব ৬২৫ মেগা টন, কানাডা ৫৯৪ মেগা টন ও ইন্দোনেশিয়া ৫৫৮ মেগা টন।
১৮৫০ সালে শিল্পবিপ্লবের পর বায়ুমণ্ডলে বেড়ে যাওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড বৈশ্বিক উষ্ণতা লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে বড় কারণ বেশি পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ। মিথেন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে কম যোগ হলেও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তা কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি শক্তিশালী । বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী অন্যান্য গ্রিন হাউজ গ্যাস হচ্ছে ওজোন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন বা সিএফসি, নাইট্রিক অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প।

গ্লাসগো সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ
জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ কপের প্রথম সম্মেলন অর্থাৎ কপ-১ হয় ১৯৯৫ সালে। এবার হচ্ছে কপ-২৬। ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিতে কপের জলবায়ু সম্মেলনটি প্রথম বিশ্বকে জলবায়ু নিয়ে ভাবতে সাড়া জাগিয়েছিল। ২০১৩ সালে বিশ্বের তাপমাত্রা কমাতে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে ‘প্যারিস চুক্তি’ নয়। প্রথমবারের মতো সব দেশ এ চুক্তিতে একমত হয় যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি শিল্পবিপ্লব পূর্ব সময়ের দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমিত রাখা হবে। সম্ভব হলে তা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা হবে। প্যারিস সম্মেলনে ১৯৫টি দেশ অংশ নিয়েছিল। প্রতি বছর উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে, পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া। সম্মেলনে নেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা অর্থাৎ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে যাতে রাখা যায়; সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের গৃহীত পরিকল্পনাও তুলে ধরবেন।

গ্লাসগো সম্মেলন কতটা ফলপ্রসূ হবে
গ্লাসাগো জলবায়ু সম্মেলন কতটা সফল হবে এ নিয়ে এরই মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। চীন কপ-২৬ সম্মেলনে কী কী প্রতিশ্রুতি দেয় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ মুহূর্তে চীনই বিশ্বের এক নম্বর কার্বন নিঃসরণকারী দেশ। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানিয়েছেন, তিনি সম্মেলনে অংশ নেবেন না। এটি হতাশার সৃষ্টি করেছে। তবে চীন ইতোমধ্যে বলেছে, দেশের বাইরে তারা আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বানাবে না। নিজের দেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও জানিয়েছেন করোনা মহামারীর কারণে তিনি গ্লাসগো সম্মেলনে যাবেন না। তবে কার্বন নিঃসরণ বন্ধে তিনি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী তার সিদ্ধান্ত বদল করে জানিয়েছেন, তিনি সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ আন্দোলনে লাখো মানুষকে সমবেত করে বিশ্বব্যাপী নজর কেড়েছিল কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ। ২০১৮ সালের আগস্টে সুইডেনে নিজের মতো করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন তিনি। সুইডেন পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’ আন্দোলনে অনেক স্কুলশিক্ষার্থী অনুপ্রাণিত হয়। দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলন। সুইডেনের জলবায়ুবিষয়ক আন্দোলনের সাড়াজাগানো এ অধিকারকর্মী থুনবার্গ বলেন, গ্লাসগো সম্মেলন নিয়ে তিনি আশাবাদী হতে পারছেন না। বৈশ্বিক উচ্চতা মোকাবেলায় এ সম্মেলন শেষ সুযোগ বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের চাপ দিয়ে যেতে হবে। ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, নেতারা শুধু বড় বড় কথা বলে যাচ্ছেন, কাজ করছেন কম। কার্যকর কিছু করতে হবে।

আয়োজক দেশ হিসেবে ব্রিটেন চাইবে গ্লাসগো সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমাতে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনতে সব দেশ যেন অঙ্গীকার করে। উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় মোকাবেলায় উন্নত দেশের প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার নিশ্চিতেও ভূমিকা রাখবে ব্রিটেন, এখন ধারণাই দিয়েছেন সম্মেলনের সভাপতি অলক শর্মা এমপি। বাস্তবে সম্মেলনে কী হয় শেষটাই দেখার বিষয়।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক


আরো সংবাদ



premium cement
কুলাউড়ায় জঙ্গল থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধার ঈদগাঁওতে মাদককারবারি গ্রেফতার শিক্ষায় ব্যাঘাত : ফেসবুক-টিকটক-ইনস্টাগ্রাম-স্ন্যাপচ্যাটের বিরুদ্ধে ২৯০ কোটি ডলারের মামলা আমতলীতে কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর

সকল