২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

প্রতিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মহানবী সা:-এর শিক্ষাদর্শন

- ফাইল ছবি

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাহায্যে অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে, এ সুন্দর পৃথিবী মানুষের কৃতকর্মের জন্য ক্রমেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। মানবজীবন ও প্রাণিজগতের স্থায়িত্ব, বিকাশ ও নিরাপত্তা, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ওপর নির্ভরশীল। মাটি, পানি, বায়ু, নদ-নদী, সমুদ্র, উদ্ভিদের সাথে মানবজীবনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্যে বিপর্যয় ঘটলে মানবজীবন ও প্রাণিজগতের বংশধারা, সম্পদ, খাদ্য, উন্নয়ন বিপর্যয়ের শিকার হবে। রাসূলুল্লাহ সা: আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব ও ফরজ গোসল করতে নিষেধ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিন স্থানে মলমূত্র ত্যাগে বিরত থাকো; পানির উৎসমূলে, ছায়াযুক্ত স্থানে ও রাস্তার মধ্যস্থলে।’ পরিবেশবিজ্ঞান আবিষ্কৃত হওয়ার শত শত বছর আগে রাসূলুল্লাহ সা: পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন। পানিতে মলমূত্র ত্যাগের ফলে পানি দূষিত হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করলে বিষাক্ত জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, ৭০ শতাংশ রোগের উপসর্গ পানিবাহিত। বলতে গেলে, রাসূলুল্লাহ সা: পরিবেশ সংরক্ষণের পথপ্রদর্শক।

সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসঙ্ঘ স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্বারোপ করে ‘হাত ধোয়া দিবস’ পালনের ব্যবস্থা করে। অথচ শত শত বছর আগে আল্লাহর রাসূল সা: স্বাস্থ্য পরিচর্যার ও পানি দূষণ রোধের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হবে, সে তিনবার হাত ধোয়া ছাড়া পানির পাত্রে হাত ডোবাবে না। পানি পান করার সময় পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলবে না।’ এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, ঘুমন্ত অবস্থায় লজ্জাস্থান চুলকাতে গিয়ে হাত ময়লাযুক্ত হতে পারে। মানুষের নিঃশ্বাসের সাথে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। অন্য দিকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের জন্য হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক।

রাসূলুল্লাহ সা: আল্লাহ প্রদত্ত ওহির মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের সব ধরনের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী হন। উদ্ভিদ জীবনের অস্তিত্ব রক্ষায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। একটি দেশ বা অঞ্চলে ২৫ শতাংশের কম বনায়ন হলে সেখানে বৃষ্টিবাদল হ্রাস পাবে এবং ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হবে। বর্তমানে গাছপালা থেকে হাজার রকমের দ্রব্যসামগ্রী প্রস্তুত হচ্ছে, যার বেশির ভাগই দৈনন্দিন জীবনে মানুষ ব্যবহার করে আসছে। বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগেও মানুষ তার জীবন ধারণের উপকরণ ও বিপুল ভেষজ দ্রব্য বৃক্ষ থেকে পেয়ে থাকে। এ প্রয়োজনীয়তা রাসূলুল্লাহ সা: চৌদ্দ শ’ বছর আগে উপলব্ধি করে বৃক্ষরোপণকে ‘সাদাকায়ে জারিয়া’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘যখনই কোনো মুসলিম গাছ লাগায় বা শস্য বপন করে এবং তা থেকে মানুষ, পাখি বা পশু তাদের আহার্য গ্রহণ করে, তখন এগুলো তার (রোপণকারীর) পক্ষে সাদাকা হিসেবে পরিগণিত হয়। যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে তখনো যদি কারো হাতে কোনো চারা থাকে, তা হলে সে যেন তা রোপণ করে। মানুষের মৃত্যুর পর তার কবরে সাত ধরনের কাজের সওয়াব পৌঁছাতে থাকবে, এর মধ্যে একটি হলো বৃক্ষরোপণ।’

মানবদেহের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রিন হাউজ গ্যাস। এটিকে গাছপালা আলোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য গ্রহণ করে বাতাসকে নির্মল রাখে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। গাছ তাই মানুষের বেঁচে থাকার নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। ভূমির ক্ষয়রোধ এবং জমির আর্দ্রতা ও উর্বরতা বৃদ্ধিতে গাছ সাহায্য করে থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশকে ছায়াশীতল, সুন্দর, মনোরম ও সুস্বাস্থ্যকর রাখতে গাছপালা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি ও অন্যান্য জীবজন্তুর আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে গাছপালা। বর্তমান যুগের চিকিৎসাবিজ্ঞানে গাছের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক। বেশির ভাগ ওষুধ বিশেষত জীবন রক্ষাকারী হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ গাছের শিকড়, ছাল, লতাগুল্ম ও ফুল থেকে তৈরি। বিশ্বজুড়ে মানুষের অন্যতম প্রধান জ্বালানির উৎস হলো কাঠ। বর্তমান শিল্প-কারখানাগুলোর অন্যতম প্রধান কাঁচামাল হলো গাছপালা। খনিজ লবণ, লৌহ, আয়োডিন, ভিটামিন-এ, বি-২ ও সি; যা মানব শরীরের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় উপাদান, তা আমরা পেয়ে থাকি ফলমূল, শাকসবজি, আম, জাম, কাঁঠাল, বেল, বাতাবি লেবু, কামরাঙ্গা, আমলকী এক কথায় উদ্ভিদরাজি থেকে। বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি দ্রব্য এবং তেলও পাওয়া যায় গাছপালা থেকে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে রাসূলুল্লাহ সা:-এর জ্ঞানাভিজ্ঞতা থেকে পৃথিবীবাসীর অনেক কিছু শেখার রয়েছে। তিনি জীবজন্তু ও পশুপাখির সাথে দয়াপূর্ণ আচরণ করার নির্দেশ দেন; কারণ এসব প্রাণী মহান আল্লাহরই সৃষ্টি। প্রতিটি প্রজাতির প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র, আবাস, খাদ্যাভ্যাস, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আলাদা ও বৈচিত্র্যময়। প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে এসব জীবের অস্তিত্ব অত্যন্ত প্রয়োজন; অন্যথায় পৃথিবী নামক এ গ্রহ মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। প্রাচীনকালে আরবে দু’জন বাজি ধরে একটির পর একটি উট জবাই করে দিত। এতে উভয়পক্ষের প্রচুর উট প্রাণ হারাত। জবাইকৃত উট দিয়ে খাবারের মেলা বসত। যে ব্যক্তি যত বেশি উট জবাই করতে পারত, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হতো। এটিকে দানশীলতা ও বদান্যতার নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আরবে একটি জঘন্য প্রথা চালু ছিল যে, কোনো মানুষ মারা গেলে তার বহনকারী পশুকে মালিকের কবরের ওপর বেঁধে রাখা হতো। তাকে খাবার ও পানি দেয়া হতো না। ফলে শুকিয়ে পশুটি নির্মমভাবে প্রাণ হারাত। রাসূলুল্লাহ সা:-এর হিজরতের আগে মদিনায় জীবন্ত উটের কুঁজ ও দুম্বার নিতম্বে বাড়তি গোশতপিণ্ড কেটে খাওয়ার প্রথা চালু ছিল। আল্লাহর রাসূল সা: এ জাতীয় বর্বরোচিত ও অমানবিক প্রথা উচ্ছেদ করে দেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি না-হক চড়–ই কিংবা তার চেয়ে ছোট পাখি বধ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে তা হত্যার জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ জিজ্ঞেস করা হলো- ইয়া রাসূলুল্লাহ! এর হক কী? তিনি বললেন, ‘এটিকে জবাই করে খাবে এবং এর মস্তক বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে না।’ হজরত আয়েশা রা: একটি উটের পিঠে সওয়ার হন। উটটি ছিল কঠোর স্বভাবের, তাই তিনি শক্তভাবে এটিকে চালাচ্ছিলেন। এ দৃশ্য অবলোকনে মহানবী সা: বলেন, ‘তোমার উচিত নম্র ব্যবহার করা। যে ব্যক্তি নম্রতা হতে বঞ্চিত, সে প্রকৃত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।’ জনসাধারণ অনেক সময় মানুষের চেয়ে পশুদের বেশি কষ্ট দেয়, হৃদয়হীন আচরণ করে, সাধ্যের বাইরে তাদের কাছ থেকে শ্রম নেয়। আরবের লোকেরা জানত না যে, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার ও সদাচারের কারণে যেমন সওয়াব পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি নির্বোধ পশুপাখি ও জীবজন্তুর সাথে উত্তম ব্যবহার ও মানবিক আচরণ করলেও অনুরূপ সওয়াব পাওয়া যায়। এক সাহাবি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে এসে বললেন, তিনি নিজের উটদের পানি খাওয়ানোর জন্য একটি জলাধার তৈরি করেন। মাঝে মধ্যে অপরিচিত উট এসে সেখান থেকে পানি পান করে। তিনি জানতে চাইলেন, এসব উটকে পানি খাওয়ালে তার কোনো সওয়াব হবে কি? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘প্রতিটি পিপাসার্ত ও প্রতিটি প্রাণীর সাথে ভালো ব্যবহারে সওয়াব পাওয়া যাবে।’ রাসূলুল্লাহ সা: ছাগল প্রতিপালনকে উৎসাহিত করে বলেন, ‘নম্রতা ও শান্তি ছাগল প্রতিপালকদের মধ্যে রয়েছে’। রাসূলুল্লাহ সা: এক দিন এমন একটি উটের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন প্রচণ্ড ক্ষুধার তাড়নায় পিঠ তার পেটের সাথে মিশে গেছে। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সা: মন্তব্য করেন, ‘বাকশক্তিহীন এসব পশুর ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তাদের ওপর এমন অবস্থায় আরোহণ করো, যখন তারা শারীরিকভাবে সক্ষম থাকে এবং সুস্থ পশু ভক্ষণ করো।’

রাসূলুল্লাহ সা: অকারণে জীবজন্তু, পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু যেসব প্রাণী মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তা হত্যা করতে কোনো বাধা নেই। রাসূলুল্লাহ সা: ব্যাঙ বধ করতে নিষেধ করেন। এক দিন রাসূলুল্লাহ সা: সফরে ছিলেন, তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে দু-একজন পাখির বাসা থেকে দু’টি চড়–ই পাখির বাচ্চা ধরে আনেন। বাচ্চাদের মা ডানা মেলে তাদের মাথার ওপর উড়তে থাকে। ঠিক এ সময় রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘এ চড়–ই পাখির বাচ্চা নিয়ে কে তাকে বিব্রত করেছ? তার বাচ্চা দুটোকে তোমরা ফিরিয়ে দাও।’ রাসূলুল্লাহ সা: চার প্রকার জীবকে বধ করতে বিশেষভাবে নিষেধ করেন, পিঁপড়া, মৌমাছি, হুদহুদ ও ছুরাদ। পিঁপড়া অর্থে এখানে লম্বা লম্বা পা বিশিষ্ট পিঁপড়াগুলোকে বোঝানো হয়েছে, এরা দংশন করে না। মৌমাছি দংশন করলেও তা থেকে মধু ও মোম পাওয়া যায়। কথিত আছে, হুদহুদের গোশত দুর্গন্ধময়। আর ছুরাদ একপ্রকার পাখি, গায়ের বর্ণ অর্ধেক ধবল ও অর্ধেক কৃষ্ণ; অন্যান্য পাখি ধরে খায়। আরবের লোকেরা তাকে ‘অশুভ লক্ষণ’ বলে ধারণা করে, হিন্দিতে এটিকে লটুয়া এবং বাংলায় আঁড়ি কোকিল বলে। ‘মাজমাউল বিহার’ গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে, ছুরাদ পাখি হজরত আদম আ:-কে শ্রীলঙ্কা থেকে জেদ্দা পর্যন্ত পথ দেখিয়ে এনেছে। আর হুদহুদ পাখি ছিল হজরত সুলায়মান আ:-এর দূত। তাই এগুলোকে বধ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্টত বোঝা যায়, মানুষ, জীবজন্তু, পশুপাখি নির্বিশেষে সব সৃষ্টিজগতের জন্য আল্লাহর রাসূলের অন্তর দয়ামায়া, মমতা ও অনুকম্পায় পরিপূর্ণ ছিল। পশুপাখিদের সাথে নির্দয় আচরণের যে পৈশাচিক প্রথা আরবে ও অন্যান্য দেশে প্রচলিত ছিল মহানবী সা:-এর আদর্শ ও বাস্তব শিক্ষার ফলে তা সমাজ থেকে নির্মূল হয়ে যায়।

রাসূলুল্লাহ সা: অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত জীবজন্তু ও পশুপাখি জবাই করতে নিষেধ করেন। এর পেছনে যে বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য লুকিয়ে রয়েছে, তা আবিষ্কার করতে বিজ্ঞানীদের দেড় হাজার বছর সময় লেগেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটেন, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডসহ পৃথিবীর ২২টি দেশে গরু ও নানা জীবের মধ্যে Bovire Spongiform Eneephalopathy (BSE), Variant Creutzfeldt Jakob Disease (VCJD), Transmissible Spongiform Eneephalopathies (TSES) নামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এসব রোগাক্রান্ত পশুর গোশত ভক্ষণ করলে মানুষের দেহে মারাত্মক উপসর্গের সৃষ্টি হয়- ব্রেনে ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়; ক্রমে ক্রমে তা ছিদ্র হয়ে যায় এবং প্রোটিনের পিণ্ড সৃষ্টি হয়ে ব্রেন অকেজো হয়ে পড়ে। ২০০৩ সালে ব্রিটেনে এক লাখ ৮০ হাজার কেস পাওয়া গেছে এবং এক লাখ ৩৬ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আশির দশক থেকে মধ্য নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ১.৯ মিলিয়ন গরু এ রোগের প্রকোপে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

প্রকৃতির ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভর করে মানবসমাজ টিকে রয়েছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার মতো অনেকগুলো মৌলিক বিষয়ে মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের স্থলভাগ, জলভাগ বা যত প্রকার আবাসস্থল রয়েছে, তাদের মধ্যে বিরাজমান জীব ও জীবগুলোর মধ্যে বিদ্যমান প্রকরণ বা বৈচিত্র্য এবং তারা যে প্রতিবেশ ব্যবস্থার অংশ, সে অবস্থানে প্রতিবেশসংক্রান্ত পারস্পরিক কর্মকাণ্ড জীববৈচিত্র্যের অন্তর্ভুক্ত। গাছপালার মতো জীবজন্তু ইকো-সিস্টেমের একটি বায়োটিক ফ্যাক্টর (উপাদান)। ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতিটি জীবের অবদান রয়েছে। প্রকৃতিতে যেকোনো প্রজাতির সংখ্যাধিক্য প্রাকৃতিক নিয়মেই সীমিত থাকে। খাদ্যের অভাব, শিকারি প্রাণীর উপস্থিতি, রোগ বা প্রাকৃতিক দুর্বিপাক প্রভৃতি সমষ্টিগত বা যেকোনো একটি জীবের সংখ্যাধিক্য রোধ করতে যথেষ্ট। যেকোনো প্রজাতি প্রজননের হার ও প্রাকৃতিক প্রতিক‚লতা মিলে সর্বদা একটি সমতা রক্ষা করে চলে। কিন্তু মানুষের হস্তক্ষেপের ফলে সে সমতা নষ্ট হতে শুরু করে। মানুষ খাদ্য, চামড়া, বসতি নির্মাণ, কারখানা স্থাপন প্রভৃতির জন্য অথবা অপকারী ভেবে অনেক জীবজন্তু হত্যা করে। কাজেই মানবসভ্যতা বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রাণী ও জীবজন্তুর সাথে সদাচরণ ও সংরক্ষণের গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত প্রথম ধরিত্রী সম্মেলনে The Convention of Biological Diversity (CBD) প্রণীত হয় ও বিকাশ লাভ করে। প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের উপাদানগুলোর টেকসই ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: দেড় হাজার বছর আগে যে ঘোষণা দেন, এটি তারই প্রতিধ্বনি।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement