২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নির্বাচন কমিশন নিয়ে আস্থার সঙ্কট

নির্বাচন কমিশন নিয়ে আস্থার সঙ্কট - প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম ভাগ নির্বাচন কমিশনবিষয়ক। এ ভাগটি অনুচ্ছেদ নম্বর ১১৮-১২৬ অবধি ৯টি অনুচ্ছেদ সমন্বয়ে গঠিত। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ এবং রাষ্ট্রপতি পদের ও সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া সংবিধানে বলা হয়েছে- উল্লিখিত দায়িত্বগুলোর অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব সংবিধান বা অন্য কোনো আইনের অধীন নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হলে নির্বাচন কমিশন সে দায়িত্বও পালন করবে।

সংবিধান প্রণয়নকালীন নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে বলা ছিল- প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক কমিশনার সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে প্রণীত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা কমিশনারের সংখ্যা নির্ধারিত করে বলা হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন কমিশনার সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। পঞ্চদশ সংশোধনী পূর্ববর্তী গঠিত দশটি নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং এক থেকে অনধিক পাঁচজন কমিশনার সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল। এ সময়কালের বেশির ভাগ নির্বাচন কমিশনে কমিশনারের সংখ্যা এক বা দুইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। শুধু নবম নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পাঁচজন কমিশনার সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনী পরবর্তী একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন কমিশনার সমন্বয়ে গঠিত হয়।

সংবিধানে সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ রয়েছে- প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অপরাপর কমিশনাররা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ লাভ করবেন এবং তাদের পদের মেয়াদ হবে কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে কর্মাবসানের পর একজন ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের অযোগ্য যদিও নির্বাচন কমিশনার পদে কর্মাবসানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হলেও প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মে নিয়োগ লাভের জন্য প্রধান নির্বাচন কশিনারের ন্যায় অযোগ্য। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অপরাপর কমিশনাররা সাংবিধানিক শপথের অধীন বিধায় তারা নিয়োগ লাভ পরবর্তী শপথ গ্রহণ ব্যতিরেকে পদে আসীন হন না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অপরাপর কমিশনারদের শপথ পাঠ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক পরিচালিত হয়। শপথ পাঠকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত করতে হয় যে, তারা আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সাথে তাদের পদের কর্তব্য পালন করবেন; তারা বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করবেন; তারা সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করবেন এবং তাদের সরকারি কার্য ও সরকারি সিদ্ধান্তকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হতে দেবেন না।

একাধিক নির্বাচন কমিশনার সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে কমিশনের কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা বিষয়ে সংবিধানে বলা আছে- সংবিধান ও আইনের অধীন নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে এর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগও কর্মের শর্তাবলি এতদবিষয়ে সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের বিধানাবলিসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে নির্ধারণের কথা বলা হলেও সংবিধান প্রণয়ন পরবর্তী প্রায় ৫০ বছর অতিবাহিত হতে চললেও অদ্যাবধি কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ লাভ করলেও রাষ্ট্রপতি তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে এ নিয়োগ কার্য সম্পন্ন করতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতি তার অপর সব দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী সম্পন্ন করে থাকেন।

বাংলাদেশে এ যাবৎকাল ১২টি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ নির্বাচন কমিশন গঠনকালীন আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা কার্যকর ছিল। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত ছিল এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেন। নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও দ্বিতীয় নির্বাচন কমিশন প্রায় আট বছরকাল দায়িত্ব পালন করে। চতুর্থ নির্বাচন কমিশন গঠনের অব্যবহিত পর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হলে তদকর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনও এগারো মাসের মাথায় পদত্যাগে বাধ্য হয়। ষষ্ঠ নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে দেখা যায় সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিধানাবলির আলোকে গঠিত অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন দেশের প্রথম নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যভার গ্রহণের পর ষষ্ঠ নির্বাচন কমিশনকে চতুর্থ নির্বাচন কমিশনের মতো মেয়াদ পূর্তির আগে এক বছর পূর্ণ করার প্রাক্কালে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

চতুর্থ ও ষষ্ঠ নির্বাচন কমিশনের মতো দশম নির্বাচন কমিশনও নির্ধারিত মেয়াদ পূর্তির আগে প্রায় এক বছর আট মাসকাল দায়িত্ব পালনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত গভর্নরের নেতৃত্বাধীন অসাংবিধানিক সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা আরোহণে পদত্যাগে বাধ্য হয়। সপ্তম নির্বাচন কমিশন প্রথম নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক গঠিত হলেও এর প্রধানের বিষয়ে তৎকালীন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে অনাস্থা ব্যক্ত করা হতে থাকলে মেয়াদ পূর্তির ১১ মাস আগে আত্মসম্মান রক্ষার্থে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক গঠিত দশম নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ করলেও এর মাধ্যমে পরিচালিত নবম সংসদ নির্বাচন দেশের তৎকালীন বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় এ নির্বাচন কমিশনটির গঠন ও দায়িত্ব পালন তাদের কাছে যথার্থ ছিল না।

একাদশ নির্বাচন কমিশন গঠন পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে সাংবিধানিক পদধারী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের সভাপতি এ চারজন সমন্বয়ে একটি সার্চ বা বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক এ বাছাই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দলীয় সরকারের অধীন গঠিত একাদশ নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত মেয়াদ অবধি দায়িত্ব পালনের পর একই দলীয় সরকার কর্তৃক অনুরূপ বাছাই কমিটির মাধ্যমে দ্বাদশ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগের সার্চ কমিটির সাথে এ সার্চ কমিটির পার্থক্য হলো এটিতে সদস্য হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদমর্যাদার দু’জন শিক্ষক অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আপিল বিভাগের যে বিচারক আগের সার্চ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তাকেই পুনঃ এ সার্চ কমিটির প্রধান করা হয়। উভয় সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি পদের বিপরীতে দু’টি করে নাম প্রস্তাব করেন। তাদের প্রস্তাবকৃত নাম থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী একটি করে নাম গ্রহণ করে কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

বাংলাদেশে এর আগের ১২টি নির্বাচন কমিশনের কর্মতৎপরতা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় দলীয় সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে একমাত্র অষ্টম নির্বাচন কমিশন ছাড়া প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, একাদশ ও দ্বাদশ এ পাঁচটি নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল দলীয় সরকারের অনুক‚লে যায়। কর্মরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকার, সাংবিধানিকভাবে গঠিত প্রথম নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং অসাংবিধানিকভাবে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত গভর্নরের নেতৃত্বাধীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালে গঠিত পঞ্চম, সপ্তম ও দশম এ তিনটি নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে দেখা যায় কমিশন কর্তৃক ঘোষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল কমিশন গঠন অব্যবহিত আগের ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতিক‚লে যায়। উল্লেখ্য, অষ্টম নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকার কর্তৃক গঠিত হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন সাংবিধানিকভাবে গঠিত দ্বিতীয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্বে ছিল অপর দিকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, একাদশ ও দ্বাদশ এ পাঁচটি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন যে দলীয় সরকার কর্তৃক কমিশনগুলো নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিল সেসব সরকার ক্ষমতাসীন ছিল। চতুর্থ, ষষ্ঠ ও নবম এ তিনটি নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ও জনআকাক্সক্ষার কারণে মেয়াদ পূর্তির আগে অপরিপক্ব বিদায় নিতে হওয়ায় এ কমিশনগুলোর পক্ষে কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অবকাশ সৃষ্টি হয়নি।

দ্বাদশ নির্বাচন কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে পূর্ণ হবে। সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর অব্যবহিত আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশন পালন করবে এমনটি প্রত্যাশিত কিন্তু প্রশ্ন, এ নির্বাচন কমিশনটি একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন কমিশনের মতো দলীয় সরকার কর্তৃক সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দ্বারা প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে গঠিত হলে তা দেশের মূল বিরোধী দল ও দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না?

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ এ পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত দশম ও একাদশ এ দু’টি নির্বাচনের প্রথমোক্তটিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এ সংসদটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ নম্বর ৬৫(২) এর আলোকে সিদ্ধ কি না আগত দিনে অনুকূল পরিবেশে এর সূরাহা বিষয়ে দেশবাসী প্রত্যাশী। একাদশ সংসদ নির্বাচনটির ভোট গ্রহণ বিষয়ে সংবিধান ও নির্বাচনী আইন যে উপেক্ষিত এটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত বিধায় পূর্বোক্ত নির্বাচনটির মতো এটিও সময়ের পরীক্ষায় সিদ্ধতা ও অসিদ্ধতার দোলাচলে দোদুল্যমান।

আমাদের দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় কোন দল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল সে সম্পর্কে দেশবাসী সম্যক অবহিত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে দলটির জোরালো দাবি ও আন্দোলনের ফসল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সে দলটির হাতেই এ নির্দলীয় সরকারব্যবস্থাটির বিলোপ সাধিত হয়। অতঃপর এ দলটির শাসনামলে গঠিত একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন কমিশন এবং অনুষ্ঠিত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কী রূপ ছিল, তা দেশবাসীর বিস্মৃতিতে যাওয়ার নয়।

এর আগে আমাদের দেশে দলীয় সরকার কর্তৃক গঠিত নির্বাচন কমিশন ও দলীয় সরকারের শাসনামলে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচন দেশের মূল বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল উভয়ই ক্ষমতাসীনদলীয় সরকার হিসেবে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেছে যদিও ক্ষমতাসীন দলীয় সরকার কর্তৃক নির্বাচন কমিশন গঠন এবং ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে বড় দু’টি দলের অবস্থান ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় ভিন্নতর।

দ্বাদশ নির্বাচন কমিশনের বিদায় অত্যাসন্ন বিধায় ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া এটির বিদায়ের প্রাক্কালেই সম্পন্ন হবে। এ বিষয়ে দেশের মূল বিরোধী দলসহ অপর কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্য থেকে জানা যায় দলীয় সরকার কর্তৃক আগের আদলে গঠিত নির্বাচন কমিশন তাদের কাছে গ্রহণীয় নয়। এ দলগুলো দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়েও এরই মধ্যে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছে।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনুসৃত হয় পৃথিবীর এমন সব দেশে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচনে বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল লাভ করে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত হলেও এমন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সহায়ক এবং অনুক‚ল পরিস্থিতি ও পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব নির্বাচনকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের। আমাদের দেশে এর আগে নির্বাচনকালীন কোনো ক্ষমতাসীন সরকার এ দায়িত্বটি সুচারুরূপে ও যথাযথভাবে পালন করেছে দেশবাসীর মধ্যে এমন আস্থার ভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দলীয় সরকার কর্তৃক গঠিত নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ আস্থার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। উভয় ক্ষেত্রে যে অনাস্থা বিরাজমান তা নিরসনের দায়িত্ব ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের। আর এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকার ও জাতি যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্তত এ বিষয়টি অনুধাবন করে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন দেশবাসী এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করে।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement