১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্ধকি মগজে সাম্প্রদায়িকতা

-

একটি প্রধান পত্রিকায় ভারতের আসাম সরকার কর্তৃক মুসলমান নিধনের খবরটি দেখুন। বোঝা যাবে, সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে আমাদের অবস্থান কতটা অস্পষ্ট। এই অবুঝ অবস্থানের কারণে হিন্দুত্ববাদের একধরনের সমর্থক হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের প্রগতিশীল সংবাদমাধ্যম। আসামের উগ্র মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা প্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করছেন। এ ধরনের একটি উচ্ছেদ অভিযানে নিজেদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন যারা তাদের মধ্যে দু’জনকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। একজনের বুকে সরাসরি গুলি করা হয়েছে। মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর মানুষটি যখন ছটফট করছিলেন, তার বুকের ওপর বুটসহ লাফাতে থাকেন পুলিশের সঙ্গী এক ফটোসাংবাদিক। তিনি যেভাবে অন্তিম শয্যায় থাকা মানুষটির ওপর লাফালেন সেটি এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক ঘৃণার প্রকাশ। পুলিশের সদস্যকেও দেখা গেল একই কাজ করতে। তারা প্রতিযোগিতা করে একজন নাগরিককে নৃশংস কায়দায় হত্যা করলেন। এ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন হিমন্তের ভাই যিনি এক পুলিশ কর্মকর্তা। ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করার অভিযান যে বিজেপি সরকারের পরিকল্পিত অ্যাজেন্ডা এতে সন্দেহ করার কিছু নেই; অর্থাৎ রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা মুসলমানদের উৎখাতে প্রকাশ্যে মানুষ মেরে চলেছেন। সেখানে তারা মন্দির নির্মাণ করবেন।

দেখুন, বাংলাদেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল পত্রিকা খবরটি কিভাবে ছেপেছে। খবরটি দেয়া হয়েছে ভেতরের পাতায় এক কলাম। ছেপেছে কলকাতা সংবাদদাতার বরাতে। ঘটনায় পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে যত্নের সাথে। পুলিশি উচ্ছেদ অভিযানের যে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া মানুষের অসহায়ত্ব। বেঁচে থাকার জন্য সামান্য আশ্রয়টুকু রক্ষার শেষ প্রচেষ্টা। অন্য দিকে ছিল পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের চার্জের মাত্রা ছাড়া প্রয়োগের পর সরাসরি বুকে গুলি করা। ফটোসাংবাদিক বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন আমাদের এই পত্রিকার প্রতিবেদনে তার উল্লেখ নেই। পত্রিকাটিকে এখন বহু ডেস্ক রিপোর্ট করতে দেখা যায়। সচেতন মানুষ এসব রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে; বিশেষ করে উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে এগুলো যখন সার্ভ করে। ওই সব রিপোর্টের সোর্স বা সংবাদসূত্র নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে; অথচ আসামের ঘটনাটি নিয়ে তারা উৎখাত হওয়া মানুষের খবরটি শুধু ভিডিওচিত্র দেখে তৈরি করতে পারতেন। ভিডিওগুলো এতটাই স্পষ্ট, সেখানে সুপার এডিট হওয়ার কোনো সন্দেহ নেই। তার পরও আমাদের প্রাজ্ঞ সাংবাদিকরা কলকাতায় তাদের সংবাদদাতার ওপর নির্ভর করছেন।

একই পত্রিকা পাশের সংবাদটি দুই কলাম করে পাতায় লিড করেছে। এটি ডেস্ক রিপোর্ট। এর শিরোনাম ‘শাস্তি হিসেবে অঙ্গচ্ছেদ ফেরাচ্ছে তালেবান’। এ খবরের মর্ম কথা হচ্ছে, আফগান তালেবান শরিয়াহ আইনের বিধান ফেরাতে পারে। এ ধরনের আইনের ফলে সবচেয়ে বেশি আশঙ্কায় পড়ে যাবে চোর-ডাকাতরা। কখনো এটি ব্যভিচারের বিরুদ্ধেও প্রয়োগ করা হবে। এ ধরনের আইনের ‘বীভৎসতা’ রয়েছে। অপপ্রয়োগ রয়েছে। সেগুলোকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তবে আমরা বহু সভ্য দেশে দেখে চলেছি নামমাত্র বিচারে লোকদের ফাঁসি হয়ে গেছে। অপরাধ সন্দেহাতীত প্রমাণ তো দূরের কথা আলু চুরি, মুলা চুরি করেছে কি না তাও সন্দেহ ছিল এসব লোকের ব্যাপারে। তার পরও এ ধরনের বহু অবিচারের ঘটনা ঘটে চলেছে। মূল ব্যাপার হচ্ছে, আমরা খুন, গুম ও মানুষের উচ্ছেদের উপস্থিত খবর দেবো, না আমরা কোনো একটি অপরাধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তার খবর দেবো। সংবাদ প্রতিষ্ঠানের কাজ কি উপস্থিত খুন হওয়ার খবরটি আড়াল করে দিয়ে দুই বছর পর একটি অপরাধ হতে পারে, সেটি নিয়ে ঢাউস করে আনুমানিক কিছু টেবিল প্রতিবেদন তৈরি করা? আমরা যদি আসামের মানুষ খুন, তার ওপর বীভৎস নৃত্য, তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার খবরের পাশাপাশি তালেবানের খবরটির উপস্থাপনা লক্ষ করি তা হলে এ কাজটি আমাদের সংবাদমাধ্যম যে অন্যায়ভাবে করে চলেছে সেটি বুঝতে পারব।

সাথী একটি প্রধান ইংরেজি পত্রিকার অবস্থা দেখুন। একই পাতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি ২৬ সেপ্টেম্বর দু’বার ছাপিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়ায় মানুষের জানার আগ্রহের কিংবা সংবাদ মূল্যের ভিত্তিতে খবর জায়গা পায় না। বিশেষ করে প্রসঙ্গ যদি ভারত হয় তা হলে প্রায়ই সাধারণ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়। সে দেশে থাকা বাংলাদেশী মিডিয়ার প্রতিনিধিরা ফ্রি হ্যান্ড লিখে থাকেন। সেগুলো সরাসরি আমরা প্রকাশ করে থাকি। এর মধ্যে দেশটির সাথে যখন চীন ও পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতি কিংবা বিরোধ বাধে আমরা এসব প্রতিনিধির পাঠানো উত্তেজনাপূর্ণ খবর প্রকাশ করে ফেলি। নিরপেক্ষ সংবাদসূত্রে সেগুলো যাচাইয়ের প্রয়োজন অনুভব করি না। এ ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে যেসব শস্তা জনতুষ্টিবাদী কথাবার্তা বলেন সেগুলোও থাকে।

চীনের সাথে নিকটাতীতে সীমান্ত যুদ্ধের পরের সময় দেখা গেল, মোদি সীমান্তবর্তী সামরিক ঘাঁটিগুলো পরিদর্শন করছেন। সেখানে তিনি উত্তেজনাকর বক্তৃতা দিচ্ছেন। সেগুলো হুবহু চলে আসছে আমাদের মিডিয়ায়। মোদির ওই সব বক্তৃতায় সাম্প্রদায়িকতা ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের জয়গান থাকে। অন্য দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট কিংবা তাদের সামরিক কর্তৃপক্ষ তাদের জাতির জন্য প্রেরণামূলক কিছু করছেন কি না তা জানার জন্য চীনে এ দেশের সংবাদমাধ্যমের কোনো প্রতিনিধি নেই। একই ধরনের ঘটনা পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও ঘটে চলেছে। পাকিস্তানকে সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে পরাস্ত করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। দেশটিতে বাংলাদেশের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলোরও কোনো প্রতিনিধি নেই। এসব দেশের খবর প্রকাশের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে যখন সংবাদ সংগ্রহ করি, তখন আমরা সাধারণত পক্ষপাতমুক্ত থাকতে পারি না। একটি বিষয় লক্ষণীয়, ভারতে থাকা প্রতিনিধি সবসময় ভারতীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদকে পূর্ণ আস্থায় নিয়ে বাংলাদেশের জন্য খবর পাঠান। তাদের খবর নির্বাচন ও তা লেখার যে ‘টোন’ আসলে ভারতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকে তুষ্ট করে। এ জন্য এসব সাংবাদিককে ‘ভারতের প্রতিনিধি’ বলা যায় শতভাগ যদিও তারা মর্যাদা পান বাংলাদেশের মিডিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে। এ জন্য তারা উপযুক্ত সম্মানীও নিশ্চয়ই পান।
একটি বা দু’টি মাত্র সংবাদমাধ্যম নয়; মূলত আমাদের বৃহত্তর গণমাধ্যম একই ধরনের একচক্ষু নীতি প্রয়োগ করে চলেছে। আসামে উচ্ছেদ অভিযানে হিমন্ত শর্মার লক্ষ্য বাংলাভাষী মুসলিম; অর্থাৎ এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উৎখাত অভিযানে যদি কোনো দেশকে উদ্বিগ্ন হতে হয়, সেটি বাংলাদেশ। তালেবান কখনো আফগানিস্তানের লোকজনকে উৎখাত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে না। আমাদের সংবাদমাধ্যমের চোখটি জায়গা মতো নেই, তা প্রমাণিত। এভাবে আমরা যদি আমাদের জন্য অপ্রয়োজনীয় ইস্যুকে বেশি হাইলাইট করি একসময় আমাদের পেছন দিক দিয়ে নিরাপত্তা চৌহদ্দি ভেঙে পড়তে পারে। আমাদের কথিত স্বাধীন মিডিয়াকেও সে জন্য মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে।

সাম্প্রতিক আরো কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ দিলে আমরা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা ও আমাদের সংবাদমাধ্যমের প্রবণতা ভালো করে বুঝতে পারব। রিদওয়ান হাসান রাকিন নামের এক বাংলাদেশী ছাত্রকে বিমানবন্দর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো। এক সহপাঠীসহ তিনি মিসরের কায়রো থেকে দেশে আসছিলেন। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পরপরই বন্দরের সুরক্ষিত এলাকা থেকে তাদের দু’জনকে চোখ বেঁধে তুলে নেয়া হলো। কয়েক ঘণ্টা পর সাথীকে যাত্রাবাড়ীতে ছেড়ে দেয়া হলেও এর পর থেকে রাকিনকে কোথাও আর পাওয়া যাচ্ছে না। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাকিনের মা হাউমাউ করে কাঁদছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লক্ষ করে বলছেন, আমার ছেলে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। সারাজীবনে তার কোনো ধরনের অপরাধের রেকর্ড নেই। সে অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্র হিসেবে রেকর্ড রয়েছে।’ এর পরও চার দিকে নীরবতা। তার কোনো খোঁজ নেই। রাকিনের মা আরো জানিয়েছিলেন, আমাদের জীবন এখন দুর্বিষহ। তিনি নাম উল্লেখ করে বলেন, তার পরিবারের সদস্যরাও রাকিনের নানা-নানীসহ সবাই এখন দিশেহারা। কেউ কিছু ভাবতে পারছেন না, কিছু করতে পারছেন না।

এভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা সাংঘাতিক ব্যাপার। বাংলাদেশে এক দশক ধরে ‘গুমের সংস্কৃতি’ চলছে। যারা উধাও হয়ে যান তাদের অনেকের লাশ পাওয়া গেছে। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তাদের পাওয়া গেছে রাস্তাঘাট, নদীনালা, খাল-বিলে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বিগত ১০ বছরের ছয় শতাধিক মানুষ গুম হয়ে যাওয়ার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে ৮৩ জন ব্যক্তির উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ধরনের একটি অবস্থায় যখন কোনো একজন মানুষ উধাও হয়ে যায় সেখানে বিষয়টি কতটা উদ্বেগের তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গতকারণে তার পরিবার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা খুবই দুঃখকষ্টের মধ্যে আছেন। আমরা দেখলাম, ঘটনাটি ৪ আগস্ট ঘটার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান সংবাদমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো সংবাদ প্রকাশ হয়নি। রাকিন মিসরের বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য মেধাবী একজন ছাত্র। তার পরনে লম্বা পাঞ্জাবি ও পায়জামা, মাথায় টুপি রয়েছে। এসব চিহ্ন কি তার মানবাধিকার প্রাপ্তির অধিকার খর্ব করে? এসব থাকলে কি তার গুম হয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনো কিছু দোষের থাকতে পারে না? তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুরক্ষিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাধীন এলাকা থেকে। এ ধরনের একটি ঘটনাই সংবাদমাধ্যমের দিনের পর দিন লিড হতে পারে, যাতে জীবন শঙ্কার মুখে পড়া মানুষটি বাঁচতে পারে। কারণ বিমানবন্দর যদি একজন রাকিনের জন্য অনিরাপদ হয়ে যায়, সেটি অন্য নাগরিকের জন্যও যে অনিরাপদ হবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কোনটি প্রকৃত সংবাদ আমাদের সংবাদমাধ্যম কি সেটি বোঝে না? না এখানে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে?

সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাশের জামিন পাওয়ার জন্য আমাদের আন্তরিকতা রয়েছে। তিনি হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেন। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ১৬ মার্চ তাকে আটক করা হয়। তিনি দীর্ঘ ছয় মাস বন্দী ছিলেন। এর মধ্যে তাকে জামিনে মুক্ত করার জন্য আমাদের নাগরিক সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা বিবৃতি দিয়েছেন। তার মামলাটি সর্বশেষ যখন আদালতে উঠবে তখন তার মুক্তির দাবিতে একটি আন্দোলন গড়ে তোলা হলো। আমরা প্রথমে যে পত্রিকাটির কথা বললাম সে পত্রিকাটি অনবরত শাল্লায় তার মুক্তির জন্য আন্দোলনের খবর গুরুত্বের সাথে দিয়ে গেছে। ২৩ অক্টোবর ঠিক যে দিন আদালত তার জামিন দেবেন তার আগের কয়েক দিনের পত্রিকাটি দেখুন।

মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো একজন নেতার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ একজন ক্ষুব্ধ হতে পারেন। সে জন্য তিনি সেটি ফেসবুকে পোস্ট করতে পারেন। কিন্তু সেটি যদি মারাত্মক কিছু না হয় তাকে গ্রেফতার করার কিছু নেই। সমাজের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদ ক্ষোভ ও হিংসা কিছু মাত্রায় থেকে যায়। সেটি অগ্রহণযোগ্য কিছু নয়। ঝুমন দাশের জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এমনকি তিনি ফেসবুক পোস্টে যে ঘৃণা প্রদর্শন করেছেন, সেটিও উদারতার সাথে মাফ করে দেয়া যায়। দেখার বিষয় হচ্ছে, একটি টোটাল সমাজের প্রবণতা। সেটি যদি এক দিকে হেলে পড়ে তা হলে অনেক মানুষের নিরাপত্তা ও বেঁচে থাকার অধিকার লুণ্ঠিত হয়ে যায়।

আসামের মুসলমান যুবকটি নিজের ভিটেমাটি রক্ষার চেষ্টা করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। এ উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে স্বয়ং সরকারি কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে রাকিনরা গুম হয়ে যাচ্ছেন। ঝুমন দাশের জামিন পাওয়ার অধিকারের চেয়ে আগের দুটো ঘটনার গুরুত্ব ও এর ভবিষ্যৎ সুদূরপ্রসারী প্রভাব অনেক বেশি নয় কি? এগুলো মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের সাথে সরাসরি জড়িত। ঝুমনের জামিনের চেষ্টা চালানোর বেগের চেয়ে কয়েক শ’ গুণ বেগে আসামের ঘরবাড়ি হারানো মানুষটি এবং বাংলাদেশে গুম হওয়া মানুষটির পক্ষে বেশি চেষ্টা চালানো বাস্তবতার দাবি রাখে। দেখা গেল ঝুমনের জন্য নাগরিক সমাজ ও বুদ্ধিজীবী এক হলো। মিডিয়া প্রয়োজনীয় কাভারেজ দিলো। কিন্তু আসামের মানুষটি আর রাকিনের জন্য সবাই মিলে নীরবতা পালন করলাম। এটি বুদ্ধিমানের কাজ কিংবা ভারসাম্য নয়। হিসাব মতে, আমরা নিজেদের ভুলে গেলাম। আমরা এক আত্মভোলা প্রজাতি। আসামের মানুষটি মুসলমান হওয়ার কারণে তাকে মেরে ফেলা হলেও তা গুরুত্ব পাচ্ছে না। দাড়ি রাখা আল-আজহারের মেধাবী ছাত্রের বেঁচে থাকারও বুঝি দরকার নেই। দরকার থাকলে তো ওই মাকে অনানুষ্ঠানিক বিকল্প মাধ্যমে কেঁদে বেড়াতে হতো না; তাকে প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যম লিড নিউজ করত।
jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement