২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অনিবার্য ইবনে খালদুন

-

(তৃতীয় কিস্তি)
দিন যতই যাচ্ছিল, ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমা হচ্ছিল আরো অনিবার্য। কারণটি ব্যাখ্যা করেছেন ইতিহাসবিদ আর্নল্ড টয়েনবি কিংবা ফরাসি চিন্তাবিদ এম মৌনিয়ের। এ স্টাডি অব হিস্টোরি গ্রন্থে টয়েনবির স্পষ্ট স্বীকারোক্তি : ‘আল মুকাদ্দিমা নিঃসন্দেহে এটি এখন অবধি যেকোনো কালে বা দেশে কারো দ্বারা রচিত এই ঘরানার শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ।’ মৌনিয়েরের স্বীকারোক্তি : মুকাদ্দিমা গ্রন্থটি হচ্ছে সর্বজনীন সূত্রের এক অনুপম সংমিশ্রণ এবং সে যুগের একটি জ্ঞানকোষ বিশেষ। সমাজবিজ্ঞান বিবিধ বিষয়ের একটি পরিপূর্ণ পাঠ।

মুকাদ্দিমা রচনায় একটি চমৎকার পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছে। কারণ তাতে সঠিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিভাত হয়েছে। যেহেতু তাঁর ধ্যান-ধারণাগুলো ঘটনাবলির বিশ্লেষণাত্মক পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল, ফলে এসবকে ঘটনার দর্পণ হিসেবে গণ্য করা যায়।’

ইবনে খালদুন গবেষক প্রফেসর চার্লস ইসাবি An Arab Philosophy of History, John Murry (London : 1963) গ্রন্থ আল মুকাদ্দিমা নিয়ে করেন বিস্তর আলোকপাত। তিনি দেখান, আল মুকাদ্দিমা সর্বজনীন ইতিহাস ও ইতিহাসতত্ত্বে উল্লেখযোগ্য ব্যাখ্যা দিয়েছে, যাতে এমনকি উনিশ শতকের কার্ল মার্কসসহ আঠারো শতকের ইউরোপীয় লেখকদের ধ্যান-ধারণার পূর্বসূরিতা পাওয়া যায়। ইবনে খালদুন প্রশ্নে ইসাবি উল্লেখ করেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনা। যার মধ্যে রয়েছে জর্জ সার্টনের পর্যবেক্ষণ।

সার্টন স্বীকার করেন, ‘ইবনে খালদুন একজন ঐতিহাসিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ ও মানুষের কর্মকাণ্ডের গভীর অনুসন্ধিৎসু ছাত্র। তিনি মানবজাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উপলব্ধির জন্য এর অতীতের সূ² বিশ্লেষণে বিশেষভাবে ব্রতী হয়েছিলেন। খালদুন কেবল মধ্যযুগের ঐতিহাসিকই ছিলেন না। তিনি মেকিয়াভেলি, বোদে, ভিকো ও সমাজবিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক জনক অগাস্ট কোৎয়েরও ছিলেন অগ্রপথিক। এ ছাড়া যেটি সমভাবে উল্লেখযোগ্য তা হলো, খালদুন সমাজবিজ্ঞানে ব্যবহৃত ঐতিহাসিক গবেষণা পদ্ধতির বিকাশ সাধনে সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।

ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী Robert Flint এর একটি উপসংহার উল্লেখ করেন History the Philosophy of History (London: Gohn Murray, 1969) গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে। তা হলো, ‘প্রাচীন গ্রিক ও রোমান দার্শনিক প্লেটো, এরিস্টটল ও অগাস্টিন এর কেউই খালদুনের সমকালীন ছিলেন না এবং অন্যরা এমনকি তাঁর সাথে উল্লিখিত হওয়ারও অযোগ্য। ইতিহাসের দর্শনচর্চায় খালদুনের মৌলিকত্ব, প্রজ্ঞা, পাণ্ডিত্য ও সামগ্রিকতা তাকে সমভাবে প্রশংসিত করেছে।’

আমাদের জানানো হয়েছে, আধুনিক অর্থনীতির জন্ম স্কটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথের হাতে। তিনি ১৭৭৬ সালে An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations নামক গ্রন্থ লিখে অর্থনীতির মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে ধার দেন, যেটিকে বিবেচনা করা হয় রাজনৈতিক অর্থনীতি চর্চায় প্রথম কোনো রচনা হিসেবে। শাস্ত্রীয় অর্থনীতির মূল হিসেবে ধরে নেয়া হয় একে এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী এ বইয়ের মধ্যে স্থান দেয়া হয়। আমরা যাকে বলি জিডিপি বা গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট, তার প্রস্তাবনা করেন স্মিথ। বলেন, সংরক্ষিত স্বর্ণ বা রুপার পরিমাণ দিয়ে নয়, বরং একটি দেশের সম্পদকে দেশের মোট উৎপাদন ও মোট বাণিজ্যের ভিত্তিতে বোঝা উচিত। শ্রমিকদের অর্থ বণ্টন বিভাজন তত্তে¡র প্রস্তাবনা তিনি করেন। দেখান, এর মাধ্যমে বিশেষভাবে গুণগতমান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। তিনি দেখান একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যার ভিত্তি স্বতন্ত্র স্বার্থ। এ ব্যবস্থা চালিত হয় ‘অদৃশ্য হাত’ দিয়ে পরিচালিত হয় এবং সবার জন্য সবচেয়ে ভালো।

আমরা যখন খালদুনকে পড়ি, দেখি, আফ্রিকার প্রান্ত থেকে বহু শতকের ওপার থেকে যে প্রস্তাবনা তিনি উচ্চারণ করেছিলেন, স্মিথের গ্রন্থ তারই স্বতন্ত্র আবহে প্রতিধ্বনি করেছে সহাসমুদ্রের ও কালান্তরের দীর্ঘ ওপার থেকে। ইবনে খালদুন তার মুকাদ্দিমায় রাজবংশের উত্থান-পতন নিয়ে কথা বলেন। সেখানে দেখেন দারিদ্র্য ও অর্থস্ফীতি। আজকের সম্পদস্ফীতি আগামীকাল ভাটার দিকে যাচ্ছে। জমানো স্বর্ণ, রুপা অর্থনৈতিক সক্ষমতার দীর্ঘমেয়াদি টেকসই কোনো দ্যোতক নয়। তবে স্বর্ণ ও রুপার মূল্য যেহেতু সব দেশে সবার কাছেই নিশ্চিত, অতএব মুদ্রার মান হিসেবে এই দুই ধাতু ব্যবহার করা সমীচীন। এর দ্বারা মুদ্রার মূল্যও সংরক্ষিত হয়। তবে রাষ্ট্রের ধন ও দারিদ্র্য সঞ্চিত অর্থে নয়, উৎপাদন ও বাণিজ্যে আগামীর নিশ্চিতির দিকে সঞ্চালিত হয়। সব দ্রব্যই বাজারে নানা ধরনের ওঠানামার শিকার, কিন্তু মুদ্রা হবে তার ব্যতিক্রম। ফলে এর স্থিতি নিশ্চিত করতে হবে এবং টাকশাল হবে খলিফার অধীনে এক পবিত্র প্রতিষ্ঠান।

ধনস্ফীতি ও দারিদ্র্যের মূলীভূত কারণ নিয়ে তিনি করেন বিশ্লেষণ। বলেন, অতিরিক্ত অপব্যয়ের কারণে একটি বিরাট সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তিনি দেশের অর্থনীতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ নিরুৎসাহিত করেন এবং বাজারকে সুষম বণ্টনের উপায় হিসেবে উল্লেখ করেন। তার আলোচনায় উঠে আসে শ্রমের বিভাজন এবং তার ফলাফল কিভাবে সদর্থ নিশ্চিত করে, সেসব প্রসঙ্গ। মিলিত উৎপাদনই তো সমাজকে অধিকতর দেয়, ব্যক্তিকেও। কারণ অর্থনৈতিক চাহিদা থেকেই মানুষ গড়েছে সমাজ। ‘মানুষ একত্রিত হয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা সমিতি ও সঙ্ঘ তৈরি করেছে, যেন তারা উপার্জন করতে পারে।’ বিচ্ছিন্ন একজনের উৎপাদন বরাবরই সেই একজনের উৎপাদনের সমান হয় না, যে মিলিত উৎপাদনে যুক্ত। সেই ব্যক্তি কিভাবে নিজেকে সহায়তা করবে, যার সহায়তা প্রয়োজন, কিন্তু সে একা? শস্য বপন, সংগ্রহ, প্রস্তুত এবং শেষ অবধি রান্না করার জন্য একটি শ্রমসমবায় ও লেবার ফোর্সের প্রয়োজন। খাওয়ার প্রয়োজন অতএব যতটা প্রয়োজন, সমান প্রয়োজন খাদ্য উৎপাদন এবং শ্রমসমবায়; সমাজ।

সমাজ ও উৎপাদন সংগঠন যা দেবে, তার মধ্যে থাকবে প্রয়োজন পূরণ শেষে উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা। উদ্বৃত্ত উৎপাদনের সামাজিক সংগঠন অর্থব্যবস্থায় আন্তঃচালিকার কাজ করবে। উচ্চহারে উৎপাদন বিশেষিকরণের মাধ্যমেই সম্ভব। সেখানে কাজ করবে মিলিত স্বার্থ, এক অদৃশ্য হাত! বিচিত্র পেশাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর রয়েছে বৃহত্তর উপযোগ। প্রত্যেকের ভ‚মিকাকে বিকশিত হতে দেয়া চাই। সামাজিক প্রয়োজনের জায়গা থেকেই পেশাগত বিভিন্নতার শর্ত তৈরি হয়। এর স্বাভাবিকতা ব্যাহত হলে জীবনে অস্বাভাবিকতা আসে। জনসংখ্যার নানা শ্রেণী আপন আপন নিজস্বতা নিয়ে উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা করবে। ফলে জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরস্পরে নিকটাত্মীয়। মানবীয় শ্রম অর্থনৈতিক সংগঠনের চালিকা। তারা নিশ্চিত করে সহযোগিতা। ফলে সমৃদ্ধি হচ্ছে জনসংখ্যার ঘনত্বের সহগামী।

এখানে পুঁজি থাকবে কিন্তু পুঁজির অতিরিক্ত পুঞ্জীভবন চলবে না। নবীজী বলেছেন, তুমি কেবল সেই সম্পত্তির মালিক, যা খেয়ে শেষ করেছ, যা পরিধানের মাধ্যমে জরাজীর্ণ করেছ, আর যা দান খয়রাতের মাধ্যমে খরচ করেছ।’

আপনার সম্পদে শুধু অন্য মানুষ নয়, প্রকৃতিরও বাঁচার আয়োজন রয়েছে। কিভাবে ধনীদের শস্যভাণ্ডার পিঁপড়া, পোকামাকড় ও ইঁদুরকে আহ্বান করে, তা লক্ষণীয়। এর মধ্যে আল্লাহর যে গোপন উদ্দেশ্য, তাকে সতর্কভাবে অনুসন্ধান করা উচিত।

তিনি তার মুকাদ্দিমায় আলোচনা করেন শ্রমবিভাজন নিয়ে, মূল্য পদ্ধতি নিয়ে, উৎপাদন নিয়ে, সম্পদের বণ্টন নিয়ে। মূলধনের সংগঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন এবং চাহিদা ও জোগান প্রশ্নে বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন। তার আলোচনায় মুদ্রাব্যবস্থা, জনসংখ্যা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্যচক্র, সরকারি অর্থব্যবস্থা ও উন্নয়নের স্তরগুলো বিশ্লেষিত হয়।

ইবনে খালদুনের অর্থনৈতিক দৃষ্টি নগরব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ হতে বলে। উৎপাদনক্ষমতাকে সে বৃদ্ধি করে, কারখানা, শ্রমিক ও শিল্পকে উচ্চ চাহিদা ও উচ্চমূল্য দেয় এমনকি ‘বড় শহরের ভিক্ষুকরাও ছোট শহরের ভিক্ষুকদের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে!’ বাণিজ্য এখানে বিকশিত হয় বেশি। তবে বাণিজ্য প্রয়োজনীয় হলেও দুঃখজনক। সে আবহাওয়া, ঘাটতি, মূল্যবৃদ্ধি এবং এমন অনেক অনিশ্চিত বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যার ফলে তার ভাগ্য একধরনের জুয়ার মতো। তবে বাণিজ্য, শিকার, মৎস্যজীবিতা, পশুপালন, কৃষি, কারিগরি হচ্ছে স্বাভাবিক ও সহজাত পেশা। অস্বাভাবিক পেশার মধ্যে আছেন সৈনিক, শাসক, গভর্নর, চাকর ও গুপ্তধন শিকারিরা! মুনাফা তৈরি হয় জনগণের চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক কর্তৃক উৎপাদিত জিনিসের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষ ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন নয়, ফলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, চাকরি ইত্যাদি ধনী হওয়ার কোনো উপায় নয়।

খালদুনের মতে, কাজি, খতিব, ফকিহ, ইমাম, মুয়াজ্জিনের ওপর সাধারণ মানুষের জীবন নির্ভরশীল নয়! তাদের ছাড়াই তাদের চলে। ফলে এখানে চাহিদা কম, উৎপাদন থাকার কথা নয়। তবে শাসকশ্রেণীর চাহিদা থাকে বিভিন্ন কারণে। তাদের তরফে এখানে বিনিয়োগ স্বাভাবিক। কিন্তু তাও সেনাবাহিনী বা রাজস্ব বিভাগে বিনিয়োগের ধারে-কাছে যাবে না! পুঁজিপতিরাও এখানে বিনিয়োগ করতে পারে বিভিন্ন কারণে। কিন্তু মৌলিকভাবে এ কোনো উপার্জনের খাত নয়। তাহলে ধর্মীয় নানা অঙ্গনে সক্রিয় ব্যক্তিত্ব কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন? তারা নিজেদের কাজের পাশাপাশি সম্ভাব্য উপায়ে সামাজিক অর্থনৈতিক চাহিদার শরিয়াহ নির্দেশিত যেকোনো খাতে শ্রম, মেধা বিনিয়োগ করতে পারেন।

ইবনে খালদুন মুকাদ্দিমার চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায়ে আলোচনা করেন অর্থনৈতিক বিষয়াবলি নিয়ে। কেননা সব সমাজের ভিত্তি হচ্ছে অর্থনীতি। এ বোধের জায়গা থেকে একেবারে শুরুর বিন্দু থেকে তিনি অর্থনীতির ধারণাগুলোকে বিন্যাস দেন। তিনি মূল্যের শ্রমতত্ত¡কে রূপায়িত করেন। শহুরে সমৃদ্ধির চক্রীয় উত্থান-পতনের চিত্র আঁকেন। দেখান শ্রম কিভাবে আয় উৎপাদন করে এবং মুনাফা হচ্ছে শ্রমের ফলে অর্জিত মূল্য। এভাবে তিনি অ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো প্রমুখের অর্থনীতি-বয়ানকে সম্ভবের দরোজায় নিয়ে আসেন। লেবার থিউরি অব ভ্যালু গড়ে দেন, যাকে পরবর্তীতে সম্প্রসারিত করবেন এঙ্গেলস- কার্ল মার্কস!

সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ধারণাগুলো নানাভাবে ইবনে খালদুনকে আমাদের কালের দিশারি হিসেবে দেখায়। রবার্ট আরউইন ঠিকই লিখেছেন, ইবনে খালদুন একমাত্র, যিনি সমাজ ও সভ্যতার বিজ্ঞানের বিস্তৃত পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক অনুশীলন সম্পর্কে তার নৈতিক ও ধর্মভিত্তিক ধারণাগুলোকে উপস্থাপন করতে সফল হয়েছিলেন।

আমেরিকার ৪০তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৮১ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে তার অর্থনৈতিক চিন্তার প্রসঙ্গ টানেন। ১৯৯৩ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসে দেয়া এক বিখ্যাত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,

“আমি কি তোমাদের সামনে ১৪শ শতকের আরব ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুনের উপদেশটি পেশ করতে পারি? যিনি বলেছিলেন, ‘শুরুর দিকে একটা সাম্রাজ্যের করের হার কম থাকে কিন্তু রাজস্ব আয়ের পরিমাণ থাকে বেশি। অন্য দিকে সাম্রাজ্যের পতনকালে করের হার বেশি থাকে কিন্তু রাজস্ব আয়ের পরিমাণ থাকে কম।’

আর, না, ব্যক্তিগতভাবে খালদুনের সাথে আমার পরিচয় নেই। তবে আমাদের নিজেদের পরিচিত কিছু বন্ধুবান্ধব থাকতে পারে।”

রিগ্যানের সেই বন্ধু ছিলেন তার উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ আর্থার লেফার। তিনি খধভভবৎ ঈঁৎাব-এর জন্য বিখ্যাত। এ তত্ত¡ বক্ররেখার করের হার এবং সরকারের করের আয়ের ফলাফলের স্তরের মধ্যে একটি তাত্তি¡ক সম্পর্ক চিত্রিত করে। উচ্চতর হারের কর রাজস্বের পরিমাণ কমিয়ে আনে। কিন্তু ইবনে খালদুন কয়েক শ’ বছর আগে এই ঈটজঠঊ-এর ধারণা দিয়েছিলেন। অৎঃযবৎ খধভভবৎ কোনো সময় বলেননি যে তিনি খধভভবৎ ঈঁৎাব-এর উদ্ভাবক; বরং খধভভবৎ এর কৃতিত্ব ইবনে খালদুনকে দিয়েছেন।

খালদুনের যে উক্তিটি রিগ্যান উল্লেখ করেছেন, তা অসম্পূর্ণ। কেন শুরুর দিকে কর কম থাকে আর কেন পতনকালে বেশি হয়, এর কারণ উল্লেখ করেন ইবনে খালদুন পরের বাক্যেই : “এমনটি হওয়ার কারণ হলো, সাম্রাজ্য যখন শরিয়ার পথ অবলম্বন করে, তখন শুধু সেই ধরনের করই আরোপ করা হয় যা ধর্মীয় আইনের আওতাধীন। যেমন- যাকাত, ভূমিকর, মাথাপিছু ধার্য কর ইত্যাদি। এগুলোর ধার্যের পরিমাণ কমই হয় কারণ, সবাই জানে যে সম্পদের ওপর জাকাতের পরিমাণ খুবই কম।”

এটি স্পষ্ট যে, ইসলামী অর্থনীতি করের বিপুলতাকে গ্রাহ্য করে না। যে জাকাত ধনীদের জন্য বাধ্যতামূলক, সেখানে সঞ্চিত সম্পদের মাত্র ২.৫ শতাংশ দিতে হয় গরিবদের। এ কর নয় এবং রাষ্ট্র এর মালিক হয় না। সংগ্রহ করে এবং যথাপাত্রে বণ্টন করে মাত্র। রাষ্ট্র যেসব কর নেয়, তা হলো ভ‚মি কর, মাথাপিছু ধার্য কর প্রভৃতি। ইসলামী শাসনে এগুলোর পরিমাণ কখনো বেশি ছিল না। ইবনে খালদুনের বক্তব্য হচ্ছে, একটি সরকার তখনই বেশি সফলতার মুখ দেখবে যখন তা ইসলামী নীতিমালা মেনে চলে এবং জনগণের ওপর অতিরিক্ত কর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা থেকে সরে আসবে।

লেখক : কবি, গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement