২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তালেবানের আরেক সঙ্কট আইএসকেপি

- ফাইল ছবি

খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য বিগত কয়েক বছর ধরে আইএসকেপি উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন রিক্রুট করেছে। আইএসকেপি অর্থ ইসলামিক স্টেট-খোরাসান প্রভিন্স, সংক্ষেপে আইএসকে বা কখনো আইএস। দলটিকে ব্যাপকভাবে দায়েশ বা আইএসআইএলও বলা হয়। আশরাফ গনি তার সরকারের সময়কালে এই আইএসদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেনি। এরা বিভিন্ন স্থানে প্রচুর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে, অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে মহিলা ও শিশুরাও আছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশে আইএস জঙ্গিরা তৎপরতা চালায়, আক্রমণ পরিচালনা করে। কাবুল পতনের পর, যখন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সেনা প্রত্যাহার শেষ করতে মাত্র এক দিন বাকি; তখন আইএসকেপি প্রচণ্ড হামলা চালায়। তালেবানের অগ্রযাত্রা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার ইস্যুর কারণে আইএসকেপির কথা সাধারণ লোকজন যখন প্রায় ভুলতে বসেছিল, সেই মোক্ষম সময়ে তারা কাবুলে হামলা চালাল।

হামলার কথা আইএসকেপি স্বীকার করে। তাদের ভাষায়, ‘অনুবাদক ও আমেরিকার দালালদের’ হত্যা করতে এ হামলা। অথচ হামলায় ২৮ জন তালেবানও নিহত হয়। সাধারণ আফগানি তো ছিলই। বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএসকেপি অনেক বছর ধরে ভারতীয়দেরও সদস্য হিসেবে রিক্রুট করেছে। তারা ইনস্টাগ্রাম চ্যানেল ‘ক্রনিকেল ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক ও আফ্রিকার অপারেটরদের সাথে নিয়মিত সংযোগ রেখেছে। এই চ্যানেলে সদস্য সংখ্যা পাঁচ হাজার, বেশির ভাগ আফগানিস্তানের। এসব যোগাযোগ রাখতে তারা ২০১৯ থেকে ইরানের একটি গোপন যোগাযোগ কেন্দ্র ব্যবহার করে বলে এএফপি জানায়। একই সূত্র থেকে এক কাউন্টার টেররিজম বিশেষজ্ঞ দাবি করেন যে, ভারতীয় আইএসরা মূলত কর্নাটক ও কেরালায় অবস্থান করে এবং মোহাম্মদ আমিন ছদ্মনামের একজন নেতৃত্ব দেন। তিনিও কেরালার মালাপ্পুরমের লোক। সদস্যরা অন্যান্য সামাজিক মিডিয়া যেমন হুপ ও টেলিগ্রামও ব্যবহার করে, কোডে সংবাদ পাঠায়; যা সাধারণ লোকজন বুঝতে পারে না। আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশে ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করলে অনেক ভারতীয় আইএস সেখানে সমবেত হয়। এই দলের ১৩ সদস্য ও দু’জন কমান্ডার ট্রাম্পের আমলে ২০১৭ সালে নিক্ষিপ্ত ‘মাদার অব অল বোম্ব’ হামলায় মৃত্যুবরণ করে। বোমার আক্রমণে আইএসের মাটির তলার টানেল ও গুহার নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আফগান নিউজ এজেন্সি আরো জানায়, ৮৬ জন উগ্রবাদী ওই হামলায় নিহত হয়েছিল।

আইএসকেপি ‘গুরুদোয়ারা রায় সাহেব’ আক্রমণের দায়ও স্বীকার করে। পুরনো কাবুলের সোর বাজারে এ গুরুদোয়ারা অবস্থিত। ২৫ মার্চ ২০২০ এই আক্রমণের সময় আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আক্রমণে মোহসিন নামে কেরালার এক ব্যক্তি নিহত হয়। কাবুল পতনের প্রাক্কালে আশরাফ গনি বাগরাম জেলখানার দরজা খুলে দিয়েছিলেন এবং এর মধ্যে ১৪ জন কেরালার সন্ত্রাসী ছিল, যারা আইএসকেপির সাথে কাজ করায় গ্রেফতার হয়েছিল। এরাই ক’দিন পর কাবুল বিমানবন্দরে মারাত্মক হামলা চালায়। তালেবান গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ১৪ জনের একজন জেল থেকে বের হয়েই বাড়ির লোকজনদের সাথে যোগাযোগ করে, হামলায় এদের সাথে আরো অনেক সদস্য জড়িত ছিল। মালাপপুরম, কাসারাগুদ ও কান্নুর জেলার লোকেরা আইএসে যোগ দিতে সুদূর মধ্যপ্রাচ্যেও যায়। ২০১৪ সালে এই দলের লোকজন মসুল দখল করে নিয়েছিল।

২০২০ সালের আগস্টে, কেরালার আরেক ভারতীয় জিহাদি আবু রাওয়াহা আল মুহাজির, নানগারহার প্রদেশের জালালাবাদ কারাগারের যানবাহনে আত্মঘাতী হামলা চালায়। আইএসকেপির মুখপাত্র সুলতান আজিজ আজমের মতে, ভারতীয় আইএসরা এসব হামলায় জড়িত ছিল।

আইএসকেপির প্রধান কে, তা এখনো রহস্যজনক ও গোপনীয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের এক আরব, শাহাব আল মুহাজির। তিনি আগে আফগানিস্তানের আলকায়েদার সাথে জড়িত ছিলেন, মুহাজির একজন আধুনিক যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ। বিভিন্ন অভিযানের নির্দেশ ও কৌশল তিনি তৈরি করেন। আক্রমণ বাস্তবায়ন করেন। তার অর্থবিত্ত ও অস্ত্রের জোগানে কোনো সমস্যা নেই।

মার্কিন ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন উল্লেখ করে যে, ‘আন্তর্জাতিক আক্রমণ পরিচালনায় মধ্য এশীয় ও ভারতীয়দের উপস্থিতি ছিল ইসলামিক স্টেটের সাথে যুক্ত একটি জিহাদি ফর্ম।’ ম্যাগাজিনটি ২০১৯ সালের শ্রীলঙ্কা ইস্টার হামলা ও উপরে উল্লিখিত কাবুলের গুরুদোয়ারা হামলার সংযোগ ও লিংকগুলোর বিবরণ দিয়েছে।

জো বাইডেন দু’বার ড্রোন হামলার মাধ্যমে কাবুল বিমানবন্দরে হামলার প্রতিশোধ নেন। প্রথম আক্রমণে নানগারহারে সিনিয়র দু’জন আইএসকেপির মৃত্যু হয়, অন্যটি কাবুল বিমানবন্দরে যাওয়া একটি বিস্ফোরকবাহী গাড়িতে আক্রমণ। বাইডেন বলেন, ‘তাদের সাথে আমাদের বোঝাপড়া এখনো শেষ হয়নি, আরো কাজ বাকি আছে। আমরা প্রত্যেককে খুঁজে বের করব।’ পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘মার্কিন গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে হামলা চালানো হয়েছে, তালেবানের কাছ থেকে কোনো সমর্থন ও তথ্য পাওয়া যায়নি।’

আমরা দেখেছি ইরাক ও সিরিয়া নিয়ে বৈশ্বিক খেলাফত বানাতে চায় আইএস। এই ধারায় আইএসকেপি একটি শাখা মাত্র। মূল কাজের চেয়ে প্রচারমূলক যুদ্ধ চালাতে বেশি পছন্দ করে এই আইএস গোষ্ঠী। এরাও আফগানিস্তানে খেলাফত প্রতিষ্ঠা ও আমিরুল মুমেনিনের নেতৃত্বে পথচলার শপথে উজ্জীবিত। আইএসকেপি খোরাসান অঞ্চলের প্রাচীন খেলাফত থেকেও অনুপ্রেরণা নিয়েছে মর্মে পাকিস্তানের ইতিহাস পরিষদ মনে করে। তখনকার এই বিশাল ইসলামী খেলাফতে আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে দলটি আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়ার সব দেশ, ইরানের উত্তর-পূর্বাংশ, কাশ্মির, লাদাখ ও পাকিস্তানের বাল্টিস্থানসহ প্রায় অর্ধেক উত্তরাংশ নিয়ে সেই খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। ফলে আইএসকেপি ভারত, পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়ায় বিরোধী শক্তি ও শত্রু হিসেবে বিবেচিত।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে তাহরিকে তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি, আফগান তালেবান ও সিরিয়ার আলকায়েদার ভগ্নাংশ মিলে আইএসকেপি অস্তিত্ব লাভ করে। এরা মরহুম আবু বকর আল বাগদাদির প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিল। পূর্ব আফগানিস্তানে তাদের শক্ত ঘাঁটি আছে। এখানে আক্রমণ চালানো খুবই কঠিন, অনেকটা পাঞ্জশিরের মতো। বিভিন্ন এলাকায় ও দেশে তাদের প্রচুর ‘স্লিপার সেল’ রয়েছে।

আইএসকেপি যোদ্ধারা পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সাথে ইরাক ও সিরিয়ায়ও এরা যুদ্ধ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ, পাবলিক স্কয়ার, অন্য ধর্মের উপাসনালয়, হাসপাতালেও মানুষ হত্যা করেছে। ২০২০ সালের মে মাসে কাবুলে প্রসূতি ওয়ার্ডে হামলা চালিয়ে অনেক হতাহত করে। তারা কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার দায়ও স্বীকার করে। এখানে কমপক্ষে ২২ শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিহত হয়েছিলেন। সিএনএন সংবাদদাতা ক্লারিসা ওয়ার্ড, কাবুলে একটি হোটেলে আইএসকেপি কমান্ডারের সাথে কথা বলেছেন। তিনি আবদুল মনির ছদ্মনাম নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন এবং তার অধীনে ৬০০ আইএস কাজ করছে বলে জানান। মনির তালেবানদের সমালোচনা করে অভিযোগ করেন, ‘বাইরের শক্তির প্রভাবে তালেবানরা শরিয়াহ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করছে না।’ মনির আরো জানান, তাদের দুর্ধর্ষ যোদ্ধার প্রয়োজন বিধায় বাছবিচার ও পরীক্ষা করে রিক্রুট করা হচ্ছে। জনবল ও অস্ত্র ‘হিট’ করার অবস্থায় এলে বিশ্ববাসী তা প্রত্যক্ষ করবে।

জাতিসঙ্ঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও এসব কথা উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে; যেমন- আইএসকেপি মূল জায়গা ছেড়ে এখন নুরিস্থান, বাগদিস, সারিপুল, বাঘলান, কুন্দুজ, কাবুল ও অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে গেছে। কাবুলে আক্রমণকারী অ্যাডভান্স দল এখনো কাজ করছে। তালেবানরা বিভিন্ন স্থানে তাদের পরাজিত করে অনেক শহর ও প্রদেশ দখল করেছে। অনেক স্থানে আশরাফ গনি বাহিনী ও তালেবান বাহিনীর মিলিত আক্রমণে আইএস দিশেহারা হয়েছে।
তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গনি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কিছু লোক আইএসকেপির সমর্থন লাভের চেষ্টা চালায়। শেষ দিকে গনির কোনো নীতিকৌশল ছিল না। তিনি সবসময় দুরবস্থার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বলেছেন, এখন পাকিস্তান গনি ও তার দোসরদের সহায়তার পথ বলতে গেলে বন্ধ করে রেখেছে। তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আমরুল্লাহ সালেহ দায়েশের মাধ্যমে মিসাইল পাচার করতে চেয়েছিলেন। কাবুলকে ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন, তিনি মনে করতেন গনির চেয়ে তার নিজের পরিচিতি জনগণের ভেতর বেশি। আইএসকেপি মার্কিন বাহিনী ও তালেবানের বিরাগভাজন হওয়া সত্ত্বেও বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতির খাপখাইয়ে চলতে থাকে। আইএস শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য পাকিস্তানে আইএসপিপি বা ‘ইসলামিক স্টেট পাকিস্তান প্রদেশ প্রকল্প’ শুরু করেছে। এখানে বালুচ-বাল্টিস্থান এলাকার লোকজন বেশি কাজ করছে। পাকিস্তানে টেররিস্ট আক্রমণের অনেক ঘটনা এদের হাতে হয়েছে। পাকিস্তানবিরোধী দেশগুলো এই দলকে সহায়তা করছে। পাকিস্তান ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ ও ব্ল্যাকক্যাটদের অপারেশনের বিষয়ে অবহিত করে। ভারত প্রতিবাদ করে জানায় যে, বরং পাকিস্তান আন্তর্জাতিকভাবে টেররিস্ট সরবরাহের ঘাঁটি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আরেক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায় যে, দায়েশ-আইএসকেপি ভারতীয় সহায়তায় আফগানিস্তানে বেড়ে উঠছে। তাই ভারত আফগান সরকারের আস্থা হারায়, এখন তালেবানের আস্থাও হারিয়েছে। তালেবানরা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে, এসব আইএসপিপি সন্ত্রাসীকে খুঁজে পৃথক করার জন্য তালেবানরা কমিশন গঠন করে পাকিস্তানি আইএসআই গোয়েন্দাদের সাথে কাজ করবে।

সীমান্তে ও অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করতে করতে পাকিস্তান অনেকটা ক্লান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের ৮০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত হয়েছে, ক্ষতি ১৫০ বিলিয়ন ডলার!

সিনেটর রহমান মালিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বইতে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় দায়েশবাদ প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণে ভারত রিজিমের ভ‚মিকা’ দাবি করেন যে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ২০১৪ সালে ইরাক সফর করেন এবং কাজের সম্পর্ক তৈরি করার জন্য দায়েশপ্রধানের সাথে দেখা করেন।’ সমালোচকরা বলেন, আরএসএস ও দায়েশের যোগসূত্র ‘র’ ও ব্ল্যাকক্যাটের সহযোগিতায় উদ্ভূত হচ্ছে। বিষয়টি দিল্লিতে মধ্যপ্রাচ্যের এক রাষ্ট্রদূত রেকর্ড করে প্রকাশ করেন। তিনি কুর্দিস্তানে আইএসআইএল কর্তৃক অনেক ভারতীয়ের প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গোয়েন্দাদের নির্দেশে আরএসএস ও দায়েশ কাশ্মিরি মুসলমানদের ‘শুদ্ধাচার’ এখনো শেষ হয়নি। এ দিকে লাদাখের লোকজনও স্বায়ত্তশাসনের ডাক দিয়েছে। এ অবস্থায় কাশ্মির পরিস্থিতি, তালেবানের উত্থান, তল্পিবাহক গনির প্রস্থান, যুক্তরাষ্ট্রের আইএসকেপি আক্রমণ, চীনের আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ার আয়োজন ভারতের জন্য সুখকর অনুভ‚ত হচ্ছে না।

পুরো আফগানিস্তান এ মুহূর্তে তালেবানদের হাতে। তালেবানদের পক্ষে পরিস্থিতি কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তার একটি বড় দৃষ্টান্ত হলো শত্রুভাবাপন্ন তাজিক অধ্যুষিত প্রদেশগুলোতে কোনো প্রতিরোধের সম্মুখীন না হওয়া। এসব অঞ্চলে একসময় তালেবান নেতারা বড় ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করত। মনে করা হচ্ছে, তালেবানরা যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গড়ছে, সেখানে হয়তো তাজিকরা অংশ পাবে।

তালেবানরা এবার কঠোর আচরণ ও নির্মমতা দূর করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করতে চায়। এখন জানা যাচ্ছে, ইরানের মতো গণতান্ত্রিক সরকার তাদের পছন্দ। আহমাদিনেজাদকে ওয়াশিংটনে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনাদের ওখানে কি মোল্লাতন্ত্র কাজ করে? তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘আপনাদের আছে গণতন্ত্র, আমাদের হলো ইসলামী গণতন্ত্র’, ‘আপনারা শুরু থেকেই আয়াতুল্লাহ নিয়ে ঠাট্টা করতেন এখন বলছেন মোল্লা, মোল্লা কী তা আমরাও জানি না, তবে আয়াতুল্লাহ কী তা জানার জন্য একজনকে স্কলার হতে হবে। এমন এক দিন আসবে যখন আপনারা আয়াতুল্লাহ উপাধির কাউকে দেখলে উঠে দাঁড়াবেন।’

তালেবানরা প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধ চায় না। তবে ভারত ও পাকিস্তানকে তারা বলে দিয়েছে, আফগান মাটিতে কোনো গেম খেলতে দেয়া হবে না। ইরান ও পাকিস্তান চায় তারা যেন হাজারো-লাখো উদ্বাস্তুর বন্যায় প্রবাহিত না হয় এ জন্য আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা আসুক এবং তালেবান সরকার সুষ্ঠুভাবে কাজ করুক।

ইরান চাইবে আফগানিস্তানের শিয়ারা নিরাপদে থাকুক। এ জন্য তারা তালেবানদের প্রতিশ্রুতি চায়। তালেবানদের ভেতর প্রায় সবাই সুন্নি। ইরান তালেবানদের প্রয়োজনীয় তেলের জোগান দিয়ে যাচ্ছে। 


বিগত সময়ে ১৯৮০ দশকে সোভিয়েত প্রভাব মোকাবেলায় সৌদি ও মার্কিনিরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে জিহাদি ভাবধারায় গড়ে তুলেছিল; ফলে আফগানিস্তানে একটি জিহাদি সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। পরিহাস, যুক্তরাষ্ট্রকে আজ সেই ‘জিহাদি সংস্কৃতির’ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তালেবানদের দর্শন পাকিস্তানি, কাশ্মিরি, মধ্য এশিয়ার বিশাল এলাকায় বসবাসরতদের কাছে অপ্রিয় নয়। ধর্মের ছায়াতলে সবাই শান্তি পেতে চায়।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement