২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজনীতি ও অপরাজনীতি

-

রাজনীতি হলো দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণবিষয়ক কর্মকাণ্ডের সমষ্টি। রাজনীতি একটি বহুমুখী শব্দ। এটি আপসের ও অহিংস রাজনৈতিক সমাধান প্রসঙ্গে ইতিবাচক অর্থে, আবার সরকার-বিষয়ক বিজ্ঞান বা কলা হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রেক্ষাপটভেদে তা নেতিবাচক অর্থও বহন করে। বিশেষত, আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে।

রাজনীতিতে নানাবিধ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। নিজস্ব রাজনৈতিক অভিমত প্রচার, অপরাপর রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময়, আইন প্রণয়ন, বলপ্রয়োগের চর্চা এবং একে অপরের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করার মতো অনুষঙ্গও এতে বিদ্যমান।

সমাজের বিভিন্ন স্তরে ও বিস্তৃত পরিসরে রাজনীতির চর্চা করা হয়। ঐতিহ্যবাহী সমাজব্যবস্থায় গোত্র ও গোষ্ঠী থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার, ব্যবসায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত তা বিস্তৃত। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় মানুষ প্রায়ই নিজস্ব মতবাদ তুলে ধরতে রাজনৈতিক দল গঠন করে। রাজনৈতিক দলের সদস্যরা প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে সহাবস্থানের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করে এবং আইনের পরিবর্তন ও একই নেতার প্রতি সমর্থনে একমত হয়। এক্ষেত্রে নির্বাচন হলো সাধারণত বিভিন্ন দলের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা।

রাজনৈতিক ব্যবস্থা হলো এমন একটি কাঠামো, যা কোনো সমাজের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিগুলোকে সংজ্ঞায়িত করে। রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় প্রাক-প্রাচীন যুগে যেখানে প্লেটোর রিপাবলিক, অ্যারিস্টটলের রাজনীতি, চাণক্যের অর্থশাস্ত্র ও চাণক্য নীতি (খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী) এবং কনফুসিয়াসের লেখার মতো দিগন্ত উন্মোচনকারী রচনাগুলো পাওয়া যায়। মূলত, রাজনৈতিক চর্চাটা সর্বসাম্প্রতিক নয়, বরং এর শেকড় অনেক গভীরে।

মূলত, গণমানুষের কল্যাণ ও সঙ্ঘবদ্ধ জীবনের ধারণা থেকেই ‘রাষ্ট্র’ নামক সঙ্ঘের ব্যুৎপত্তি। রাষ্ট্রকে সফল ও সার্থক করে তোলার জন্যই রাজনীতির পথচলা। তাই রাষ্ট্রীয় ধারণার সূচনালগ্ন থেকেই লক্ষ করা গেছে, নিবেদিতপ্রাণ একশ্রেণীর মানুষ রাজনৈতিক সঙ্ঘ গড়ে তোলার জন্য প্রয়াসী হয়েছেন। এই কল্যাণপ্রক্রিয়া রাজনীতি নামে আখ্যা পেয়েছে যা গণমানুষের কল্যাণের জন্যই নিবেদিত। কিন্তু এই কল্যাণকামিতা যখন আত্মকেন্দ্রিক, গোষ্ঠীকেন্দ্রিক ও শ্রেণিকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে বা সর্বজনীনতা হারায় তখন তা আর রাজনৈতিক বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ থাকে না, বরং অপরাজনীতির রূপ ধারণ করে। ফলে রাজনীতি হারিয়ে ফেলে গণমুখী চরিত্র। আর এমন অভিযোগ জোরালো ভিত্তি পেয়েছে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যা আমাদের জাতিসত্তার অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করেছে।

রাজনীতি কোনো ব্যবসায়িক পণ্য নয়, বরং সেবামূলক কাজ। কিন্তু শ্রেণিবিশেষের কারণেই প্রচলিত রাজনীতির কক্ষচ্যুতি ঘটেছে। ফলে রাজনীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যেই বিতৃষ্ণ হতে শুরু করেছেন। শেষ করে নতুন প্রজন্ম এখন অনেকটাই রাজনীতির ওপর বীতশ্রদ্ধ। অতীতে তরুণরা রাজনীতি নিয়ে যেভাবে আগ্রহী ছিলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সে ধারায় ছন্দপতন ঘটেছে। সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয়, রাজনীতিতে আসা দূরে থাক, তরুণদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ রাজনীতিকে রীতিমতো ঘৃণা করতে শুরু করেছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করছেন না যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য মোটেই সুখবর নয়।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার পরিবর্তে অরাজনৈতিক পন্থা অবলম্বন করার অভিযোগের কারণেই আমাদের দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। চলমান রাজনীতি সঙ্ঘাতপূর্ণ হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ প্রচলিত দলীয় রাজনীতির প্রতি বিমুখ হয়ে উঠতে শুরু করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের রাজনীতিতে বর্তমানে অনুকরণীয় বা অনুসরণীয় তেমন কোনো উপাদানের উপস্থিতি নেই। এমতাবস্থায় রাজনীতির নামে অপরাজনীতির কারণেই দেশ নেতৃত্বশূন্যতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে যা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং নেতৃত্বসহ রাজনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও অনেক নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অনেক অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতাকে জনগণ মেনে নিলেও তাদের হতাশাও নিতান্ত কম নয়। লক্ষণীয়, নব্বইয়ে স্বৈরাচার উৎখাতের পর দেশে গণতান্ত্রিক চেতনা ও সংস্কৃতি বিকাশের সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেও একশ্রেণীর রাজনীতিকের কারণেই সে অর্জন ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে বেশির ভাগ মানুষ আমাদের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। আত্মপ্রচারের সংস্কৃতি, রাজনৈতিক বিভাজন, ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা, অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারী মানসিকতা, আদর্শহীনতা, দুর্বৃত্তায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতি এই শঙ্কার পেছনে কারণ বলে মনে করা হয়।

এ কথা সত্য যে, নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও নব্বইয়ের পর (এক-এগারো বাদে) প্রতি পাঁচ বছর পরপর দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং সবগুলোতেই বড় দলগুলো (২০১৪ বাদে) অংশ নিচ্ছে। কিন্তু এসব নির্বাচন নিয়েও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না, যতটা আগ্রহ থাকে বহুদূরের দুই অপরিচিত দেশের ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে! বিষয়টি নিয়ে, তরুণ সমাজকে ঢালাওভাবে দোষারোপ না করে এর গভীরে যাওয়া আবশ্যক। কারণ, তরুণরা ধরেই নিয়েছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনমানের তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না, হবে শুধু ক্ষমতার পালাবদল। আবার নির্বাচনপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও রয়েছে বড় প্রশ্ন। ফলে নতুন প্রজন্মের চলমান রাজনীতি, নির্বাচন, সরকার ও শাসনপদ্ধতি নিয়ে আগ্রহটা একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এ ছাড়া নির্বাচনকেন্দ্রিক বা সাধারণ সময়ে অনুষ্ঠিত অনেক আন্দোলনের তিক্ত অভিজ্ঞতাও তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিবিমুখ করে তুলতে সহায়ক হয়েছে। ‘এক-এগারো’র আগের লগি-বৈঠা আন্দোলন, সে সময় সব বড় রাজনৈতিক দলের বাঘা বাঘা নেতাদের জেলে যাওয়া, ২০১৩ সালে শাহবাগে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে সমাবেশ এবং শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক জটিলতা এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন অস্থিতিশীলতা দেখেও তরুণদের অনেকে ভীত বা বীতশ্রদ্ধ হয়ে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

নতুন প্রজন্ম দেখতে পাচ্ছে, আজ যাকে রাজনৈতিক দলগুলো হিরো বানাচ্ছে, প্রয়োজন শেষে তাকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। কাল যে ছিল তার কাছে রোলমডেল, আজ সে বড় মাপের ভিলেন! আজ যে নেতা অমুক দলের আদর্শের কাছে ‘মাথা নত’ করে সেই দলে যোগ দিয়েছেন, কালই সে ওই দল থেকে বেরিয়ে তাকে গালমন্দ করছেন। নির্বাচনে আগে যে দল বড় কোনো দলের সাথে জোট বেঁধেছে, নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগেই সেই দল তাকে খারাপ বলছে। সকালে যে নেতা নির্বাচনে ‘যাব’ বলছেন, বিকেলে তিনি ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না’ এবং রাতেই আবার নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গাইছেন। এ অবস্থায় একশ্রেণীর রাজনীতিবিদের স্ববিরোধী বক্তব্যে তরুণ প্রজন্ম তিক্ত ও বিরক্ত।

রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের ওপর তরুণদের বিরক্তির পেছনে আরেকটি কারণ একশ্রেণীর রাজনীতিবিদের অযাচিত ও অশালীন কথাবার্তা। কেবল নিজ দলের শীর্ষ নেতাকে খুশি করার জন্য কিংবা কেবল ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে বা আত্মপ্রচারের জন্য অনেক রাজনীতিবিদ ঢালাওভাবে অসত্য কথা বলেন। এমনকি তারা অমার্জিত ও অশালীন কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে সত্য কারো কাছেই অপ্রকাশিত থাকছে না। নিজ মুখে মনগড়া ইতিহাস রচনা করে দিলেই যে, সাধারণ মানুষ তা মেনে নেবে- সে সুযোগ অন্তত এখন আর নেই।

অনেকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে হঠাৎ সৃষ্ট কোনো সঙ্কট বলে মনে করছেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ এবং এরপর ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার কারণে যেসব অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে সেসব ইস্যুর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই সঙ্কট থাকবে বলেই তারা মনে করেন। আসলে এসব বিষয় নিয়ে দেশের শুধু রাজনীতিবিদ নন, সাধারণ মানুষের মধ্যেও দু’টি ধারা রয়েছে। কিন্তু রাজনীতিবিদরা এসব ইস্যু নিয়ে খুব একটা আন্তরিক নন। তাদের কারো কারো অবস্থান যেমন অস্পষ্ট, তেমনি কেউ কেউ নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে এসব ইস্যুকে ব্যবহার করছেন দিনের পর দিন। ফলে সঙ্কট দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আর সে কারণে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ রাজনীতিবিমুখ। রাজনীতিকে তারা এখন অপাঙক্তেয় মনে করছেন। তাদের মধ্যে এ ধারণা বদ্ধমূল যে, রাজনীতি হলো ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা মাত্র। এখানে সাধারণ মানুষের কোনো স্বার্থ নেই। নির্বাচন হলেও তাতে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের বদলের সম্ভাবনা খুবই কম। হবে শুধু ক্ষমতার পালাবদল। কারণ একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতার মধ্যে চিন্তার যে বন্ধ্যত্ব, তাদের মধ্যে ক্ষমতার যে মোহ এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক যে রাজনীতি তাতে আশাবাদী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

মূলত, রাজনৈতিক চিন্তার বন্ধ্যত্বের কারণে দেশ আজ গভীর সঙ্কটে নিপতিত। খুব সহজেই বা সহসাই এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সে জন্য দেশের রাজনীতিতে যেমন প্রয়োজন গুণগত পরিবর্তন, তেমনি প্রয়োজন সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব। দেশের রাজনীতির বর্তমান অবস্থা, তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিবিমুখতার কারণ এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের নেতারাও মুখ খুলেছেন। কিন্তু রাজনীতিতে গুণগত কোনো পরিবর্তন আসেনি।

বিষয়টি রাজনীতিবিদদের একাংশ হলেও বোধ হয় উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। এ বিষয়ে একজন বর্ষীয়ান বিরোধীদলীয় রাজনীতিকের বক্তব্য বেশ চমকপ্রদ। তার ভাষায়, ‘আজ দেশপ্রেমের যে অভাব, প্রতিবাদ করার যে শক্তি আমরা হারিয়ে ফেলেছি- এর চেয়ে চরম দুর্ভাগ্য একটি স্বাধীন দেশের জন্য হতে পারে না। আজ যে জাতীয় সঙ্কট- সৎ মানুষের অভাবের সঙ্কট; সৎ রাজনীতিবিদের সঙ্কট। মিথ্যাচার এখন স্বাভাবিক পরিণত হয়েছে। মিথ্যাচারের সংস্কৃতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রকট আকারে ধারণ করেছে।’

বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীনদের কিছুটা হলেও আত্মোপলব্ধি শুরু হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর বক্তব্যে সে কথার প্রতিধ্বনি পাওয়া গেছে। তার ভাষায়, ‘রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্তি এখন চরমে, যা রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য অশুভ। রাজনীতির সৌজন্যে বিল বোর্ড-পোস্টার-ফেস্টুন থাকলেও সৌজন্যবোধ হারিয়ে গেছে। রাজনীতিতে খুবই খারাপ সময় চলছে, ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতি ক্রমেই পক্ষপাতিত্ব হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। ... এটি রাজনীতি এবং গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।’

২০১৭ সালে একটি অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে সততার অভাব রয়েছে। সততার ঘাটতি পূরণ করতে হলে সৎ মানুষদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে। ভালো মানুষ রাজনীতিতে এলেই রাজনীতি ভালো হয়ে যাবে। ভালো মানুষ রাজনীতি না করে দূরে সরে গেলে খারাপ লোকেরা রাজনীতির মঞ্চ দখল করবে, এমপি-মন্ত্রী হবে। তারা দেশ চালাবে কিন্তু তাতে দেশের ভালো হবে না। রাজনীতিতে যত ভালো মানুষ আসবে, এমপি-মন্ত্রী হবে, তখন রাজনীতি জনগণের কাছে আকর্ষণীয় হবে।’

সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতাদের এমন উপলব্ধি বেশ ইতিবাচক বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু দেশের চলমান রাজনীতি যে অপরাজনীতির অশুভ বৃত্তে আটকা পড়েছে তা থেকে উত্তরণের কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তারা জাতিকে দিচ্ছেন না। ফলে সমস্যা যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়েছে। তারা শুধু অমৃতবচন শুনিয়েই দায়িত্ব শেষ করছেন।

মূলত, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তনে রাজনীতিবিদদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি নাগরিকদেরও রয়েছে করণীয়। তাছাড়া দেশের সঙ্কট উত্তরণের জন্য মানুষ এখনো রাজনীতিবিদদের ওপরই বেশি আস্থাশীল । তাই রাজনীতির প্রভাববলয়ের মধ্য থেকেই অপরাজনীতির এই অশুভ বৃত্ত ভাঙার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। রাজনীতিকদের আগামী নির্বাচন নিয়ে নয়; বরং আগামী প্রজন্মের জন্যই বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

জেমস ফ্রিমেন ক্লার্কের ভাষায়, ‘একজন রাজনীতিচর্চাকারী পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে চিন্তা করেন, আর রাজনীতিজ্ঞ ব্যক্তি পরবর্তী জাতি সম্বন্ধে’। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনীতিবিদরা রাজনীতিজ্ঞ হয়ে উঠুন, জাতি মুক্তি লাভ করুক আগামী দিনের অনিশ্চয়তা থেকে। দেশের সব সচেতন মানুষ তা-ই প্রত্যাশা করে।

smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement