১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ম্যাগসেসে বিজয়ী ফেরদৌসি কাদরী ও বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণা

ম্যাগসেসে বিজয়ী ফেরদৌসি কাদরী ও বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণা - ফাইল ছবি

বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসি কাদরী এশিয়ার নোবেলখ্যাত র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পাওয়ায় দেশের মানুষের মন আনন্দে ভরে গেছে। তার কাজে সত্যিই আমরা গর্বিত। বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের জন্য নতুন ধরনের সস্তায় কলেরা টিকা উন্নয়নে তিনি কাজ করেছেন। কলেরার এই টিকা মুখে খাওয়ার টিকা (ওসিভি)। ড. ফেরদৌসি ব্যয়বহুল ‘ডুকোরাল’ টিকার পরিবর্তে ‘শানকোল’ নামক এই টিকা ঢাকায় ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছেন। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে টিকাদানের বিশেষজ্ঞদের একটি দলের নেতৃত্ব দেন। তার এ কাজের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয় শিবিরকে কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। ম্যাগসেসে পুরস্কার কমিটি ঘোষণা করে, লাখো মানুষের উপকারে টিকার উন্নয়নে তার নিবেদিত ভূমিকার জন্য এ পুরস্কার দেয়া হলো।

অতি সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার একজন নারী জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীকে নিয়ে লিখেছিলাম। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিস্ময়কর বিষয় আবিষ্কারে ওই বিজ্ঞানী ড. আদি উতারিনিকে ‘মসকুইটো কমান্ডার’ হিসেবে ভূষিত করেছিল। এডিস ইজিপ্ট মশা কামড়ে ভাইরাসজনিত ডেঙ্গু জ্বর ছড়ায়। প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে সংক্রমিক হয়। এদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। ড. উতারিনি ‘ওলবাকিয়া’ নামের একটি সাধারণ ও নিরীহ ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়াকে এডিস ইজিপ্ট মশার মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে দেন। এতে ‘ওলবাকিয়া’ এডিস মশার প্রজননে থেকে প্রজন্ম পর প্রজন্মে দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং ডেঙ্গুর জীবাণু নিষ্ক্রিয় করে। ফলে এডিস মশা কামড়ালেও ডেঙ্গুর জীবাণু কাজ করে না এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ওলবাকিয়া আক্রান্ত হাজার হাজার এডিস মশা ইন্দোনেশিয়ার একটি শহরে ছেড়ে দিয়ে এ পদ্ধতিতে ওই শহরটিকে ৭৭ শতাংশ ডেঙ্গু জ্বরমুক্ত করা হয়। ‘ওলবাকিয়া’ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ফলের মাছি, মৌমাছি, মথ, প্রজাপতিসহ সব ধরনের পোকামাকড়ে ৬০ শতাংশ পাওয়া যায়। ড. উতারিনির এই চমৎকার গবেষণায় মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলাম। আর এ লেখার কিছু দিন পরই আমাদের নারী বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসি কাদরীর সাফল্যের স্বীকৃতির খবরটিতে আবারো মুগ্ধ হলাম।

এ পুরস্কার পাওয়ার আগে মাইক্রোসফটের কর্ণধার প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব বিল গেটসের একটি লেখা পড়েছিলাম ‘গেটস নোটে’। বিশ্বজুড়ে কলেরা রোধে ড. ফেরদৌসি কাদরীর অসাধারণ ভূমিকার কথা লিখেছিলেন। লেখায় তিনি উল্লেখ করেন, কলেরা মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পুরো বিশ্বে যে কয়েকজন বিজ্ঞানী ভূমিকা রেখেছেন, ড. ফেরদৌসি কাদরী তার অন্যতম। এ ইমিউনোলজিস্ট এবং সংক্রামক রোগ গবেষক তার পুরো জীবন ব্যয় করেছেন কলেরা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে পুরো জনগোষ্ঠীকে কলেরা থেকে রক্ষার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। উনিশ শতকের শেষের দিকে একাধিক কলেরা ভ্যাকসিন চলে এলেও সেগুলো ছিল খুবই দামি, সহজলভ্যও ছিল না। ধনী দেশগুলোর নাগরিকরা গরিব দেশগুলোতে ভ্রমণের সময় এগুলো নিয়ে যেতেন। কিন্তু গরিব দেশের লোকদের জন্য এগুলো অধরাই ছিল। ‘এমন পরিস্থিতিতে আলো দেখান ফেরদৌসি কাদরী ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।’ ড. ফেরদৌসি ও তার টিম আরো কম মূল্যে ও সহজলভ্য একটি ভ্যাকসিনের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। ‘শানকোল’ নামে পরিচিত ভ্যাকসিনটি তৈরি হয়। এটি এরই মধ্যে দরিদ্র ও শহুরে পরিবেশে কলেরার বিস্তার রোধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বিল গেটস মুখে খাওয়ার কলেরার এই ভ্যাকসিন তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকার জন্য ড. ফেরদৌসি কাদরীকে ‘মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নায়ক’ উল্লেখ করে তাকে অভিনন্দন জানান। বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এ প্রকল্পে সহযোগিতা করেছেন।

ড. ফেরদৌসি কাদরী ২৫ বছর ধরে কলেরার টিকা উন্নয়নে কাজ করেছেন। তার গবেষণার প্রধান বিষয় হলো অন্ত্রের রোগ। তিনি নবজাতক, শিশু ও বয়স্কদের টাইফয়েডের টিকার উন্নয়নেও অবদান রাখছেন। করোনা মহামারীর এ সময়ে ড. ফেরদৌসি করোনাভাইরাসের টিকাসংক্রান্ত গবেষণা ও পরীক্ষার কাজেও যুক্ত আছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় ডিগ্রি লাভ করেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে। আশির দশকে একই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণরসায়ন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। এরপর যুক্তরাজ্যের লিভারপুল ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি আইসিডিডিআরবিতে যোগ দেন। কাজ করেন সংক্রামক রোগ, রোগতত্ত্ব, টিকা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ে। বর্তমানে তিনি আইসিডিডিআরবির সেন্টার ফর ভ্যাকসিন সায়েন্সের পরিচালক।

বাংলাদেশের এই নারী বিজ্ঞানীকে এরই মধ্যে জাতিসঙ্ঘের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তায় প্রস্তাবিত ‘প্রযুক্তি ব্যাংক’ গঠন নিয়ে গবেষণার জন্য এ কমিটি কাজ করবে। ২০০৬ সালে ইনফেকশাস ডিজিসেস সোসাইটি অব আমেরিকার (এফআইডিএসএ) নির্বাচিত ফেলো হয়েছেন তিনি। ২০০৫ সালে জীববিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৭ সালে তাকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। তার তিন ছেলেমেয়ে বিদেশে চাকরি ও পড়াশোনায় রয়েছে। স্বামী ড. সালেহীন কাদরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ড. ফেরদৌসি ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভের এক দিন পর তিনি ইন্তেকাল করেন।

ড. ফেরদৌসি কাদরী তার ম্যাগসেসে পুরস্কারটি জন্মভূমি বাংলাদেশ ও কর্মস্থল গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবির প্রতি উৎসর্গ করেছেন। তিনি সম্মানজনক পুরস্কারটি দেয়ায় সম্মানবোধ করছেন উল্লেখ করে র‌্যামন ম্যাগসেসে কমিটিকেও ধন্যবাদ জানান। এক সাক্ষাৎকারে ড. ফেরদৌসি কাদরী বলেন, প্রতিদিন যখন আইসিডিডিআরবির অফিসে ঢুকি, তখন দেখি স্ট্রেচারে করে কত মানুষ আসছে এ হাসপাতালে। শুধু অসচেতনতায় ডায়রিয়ার মতো জটিল রোগ হচ্ছে। আমরা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার দিতে পারছি না বলেই মানুষ রোজ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে। যে দু’টি ব্যাকটেরিয়ার কারণে ডায়রিয়া হয়, অর্থাৎ ভাইব্রিও কলেরা ও এন্টারোটক্সিজেনিক এসচেরিচিয়া কোলাই- মূলত তা নিয়েই কাজ করছেন তিনি। এ ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধই এখন তার ধ্যানজ্ঞান।

বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণা
বিজ্ঞান গবেষণায় সীমিত সুযোগ সুবিধার মধ্যেও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের অবদান কম নয়। আমাদের বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় এরই মধ্যে ভূমিকা রেখেছেন।

উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি প্রতিষ্ঠার ছয় দশক পার করেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবন, চিকিৎসা, রোগী ব্যবস্থাপনা ও রোগ প্রতিরোধে এ প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। ওরস্যালাইন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ডায়রিয়া চিকিৎসায় জিংকের ব্যবহার, শিশুদের অপুষ্টির চিকিৎসা পদ্ধতি, মুখে খাওয়া কলেরার টিকা- এ ধরনের অন্তত ১০টি বড় অর্জন আছে প্রতিষ্ঠানটির।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি শিশু ও বিভিন্ন বয়সের মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে খাবার স্যালাইন ‘ওরস্যালাইন’। ওআরএস নামে পরিচিত ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপির (ওআরটি) প্রথম সফল গবেষণার ফল ১৯৬৮ সালে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ল্যানসেটে’ প্রকাশিত হয়। পরবর্তী এক দশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ইউএনডিপিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা কোটি কোটি প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন, এর তৈরিও ব্যবহারবিধি পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেয়। ২০১২ সালে ‘ল্যানসেট’ খাওয়ার স্যালাইনকে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসংক্রান্ত আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই ওরস্যালাইন আবিষ্কারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা: রফিকুল ইসলাম। তিনি ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও হাইজিন নিয়ে গবেষণা করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এমবিবিএস পাস করার পর আইসিডিডিআরবিতে যোগ দেন। ২০০০ সালে অবসর নেন।

বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আইসিডিডিআরবির চাঁদপুরের মতলব মডেল সফল হলে সরকারিভাবে এ মডেল গ্রহণ করা হয়। এর ফলে দেশের প্রজনন হার ৬ দশমিক ৩ থেকে কমে ২০১৩ সালে ২ দশমিক ১ এ দাঁড়ায়।

সাশ্রয়ী মূল্যে মুখে খাওয়ার কলেরার টিকা (ওসিভি) উদ্ভাবনের নেতৃত্ব দেন ড. ফেরদৌসি কাদরী। ফলে লাখ লাখ মানুষের জীবন বেঁচেছে। ‘শানকোল’ নামক এ টিকায় বৈশ্বিক পর্যায়ে কলেরার সংক্রমণ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে দেশের কৃষকরা ১০০টি উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধান পেয়েছেন। ধানের বাম্পার ফল ব্রি উদ্ভাবিত জাতগুলো চাষ করেই। ১৯৭০ সালে দেশে ধানের উৎপাদন ছিল এক কোটি ১০ লাখ টন। জনসংখ্যা ছিল সোয়া সাত কোটি। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। ধান উৎপাদিত হচ্ছে তিন কোটি ৮৭ লাখ টন। ধানের জাতের মধ্যে রয়েছে ৯৪টি ইনব্রিড, ছয়টি হাইব্রিডসহ উচ্চফলনশীল জাত।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে দেশে মাছ উৎপাদনেও বিপ্লব ঘটে গেছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত মাছের ৫৬ শতাংশ এখন আসছে পুকুর থেকে, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করে। বিজ্ঞানীরা মাছের নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে মাছের পোনা নদ-নদীতে ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি পুকুরে চাষের ব্যবস্থা করেন। ফলে বাংলাদেশ এখন মাছ উৎপাদনে বিশ্বের পঞ্চম দেশ।

বাংলাদেশের বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে একদল গবেষক পাটের জীবনরহস্য বা জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করেন। এর ফলে দেশে পাটের নতুন জাত আসছে। সোনালি আঁশ আবার ফিরে আসছে। তোষা পাটের জীবনরহস্য আগেই উন্মোচিত হয়। নতুন করে দেশী পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করা হয়। এই দুই জাতের মধ্যে সংকর করে উন্নত জাতের পাট উদ্ভাবনই লক্ষ্য বলে বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম দেশবাসীকে সুখবরটি জানান।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীরা চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসোটোপ উৎপাদনে কাজ করেছেন। দেশের ১৫টি নিউক্লিয়ার মেডিসিন সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য অবদান রয়েছে।

বাংলাদেশের নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা: মোহাম্মদ ইব্রাহিমের প্রতিষ্ঠিত বারডেম হাসপাতাল দেশের এক সাকসেস স্টোরির নাম। ঢাকা শহরের শাহবাগে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিজ্ঞানীদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে দেশের বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণে। বড় বড় সেতু, ভবন, রাস্তা, ফ্লাইওভার নির্মাণ এ প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরাই করে আসছেন। এ ছাড়া বন্যা, ভ‚মিকম্প, নদীশাসন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সফল গবেষণাও রয়েছে বুয়েটের। বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশী স্থপতি ও পুরকৌশলী এফ আর খান বুয়েটেরই ছাত্র ছিলেন। তিনি পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ ভবন শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের নকশা করেন। তাকে বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী বলা হয়।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানির (বাপেক্স) বিজ্ঞানীদের দেশের সাতটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে উৎপাদন পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে সক্ষমতা প্রমাণ করেছেন।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) যা সায়েন্স ল্যাবরেটরি হিসেবে পরিচিত, ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর বিজ্ঞানীরা জ্বালানি সাশ্রয়ী সেচপাম্প, পরিবেশবান্ধব চাতাল, বয়লার, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, উন্নত চুলা, জুতার ইনসোল বোর্ড, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জুতায় ফুটবেড, পরিপূরক খাদ্য বা স্পিরুলিনা ট্যাবলো সবজির কীটনাশক দূর করার ভেজিটেবল ওয়াপ ও যানবাহনের লুব্রিক্যান্ট ইত্যাদি কয়েকটি উদ্ভাবন করেছেন। চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত চায়ের উচ্চফলনশীল জাত (বিটি ১ থেকে বিটি-১৬) উদ্ভাবন করেছেন। একে চায়ের গুণগত মানসম্পন্ন ‘ক্লোন’ বলে।

আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা এতো সব অর্জন কররেও বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে গবেষণায় বরাদ্দ খুবই কম। আরঅ্যান্ডডিতে (রিচার্স এ-ডেভেলপমেন্ট) বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি বেশি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হলে আমাদের মেধাবী বিজ্ঞানীরা দেশকে আরো অনেক কিছু দিতে পারতেন। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, এফ আর খান, ড. কুদরত-ই-খুদার মতো বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশেই জন্মেছেন। তেমনি বিজ্ঞানী সত্যেন বোস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক


আরো সংবাদ



premium cement