২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আলজেরিয়ায় নির্বাচন পরিবর্তন আনেনি

-

আলজেরিয়ায় চলতি বছর ১২ জুন যে নির্বাচন হয়েছে, সেটি হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালে। গত মার্চে প্রেসিডেন্ট আবদুল মজিদ তেব্বুন সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন, যাতে কিছু রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশে অশান্ত পরিস্থিতি দূর করা যায়। মজিদ তেব্বুন হিরক মুভমেন্টের কারণে আগেভাগে নির্বাচন দিয়ে বিষয়টি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছেন। হিরক মুভমেন্ট শুরু হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন পঞ্চমবারের মতো বুতাফ্লেকা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা দেন। জনবিক্ষোভের ফলে তিনি ২০১৯ এপ্রিল পদত্যাগে বাধ্য হন। বিক্ষোভকারীরা রাজনৈতিক সিস্টেমের পরিবর্তন চেয়েছেন, যেখানে রাজনীতি ও সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব পৃথকভাবে কাজ করবে।

কোভিডের আগ্রাসন বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির পাঁজর ভেঙে দিয়েছে। আলজেরিয়ার তেল ও গ্যাস ইন্ডাস্ট্রিতেও হানা দেয় কোভিড। ফলে আলজেরিয়ানদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়, বেকারত্ব বেড়ে যায়। তখন বিক্ষোভের মাত্রাও বাড়ে। সমালোচকরা বলেন, সামরিক নেতৃত্ব বেসামরিক ও গণতান্ত্রিক আলজেরিয়া পছন্দ করে না। গত বছর, ২০২০ সালে, সংবিধানের ধারা পরিবর্তন ও সংযোজন করে তাড়াহুড়ার এক নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়। ধারণা করা হয়েছিল, এতে বিক্ষোভ প্রশমিত হবে। হিরক মুভমেন্ট ও রাজনৈতিক নেতারা দেখানো-পাতানো নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ থাকার বার্তা দিলেও বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দলকে সমর্থন দেয়। আলজেরিয়ায় এটি খুবই কঠিন যে, সেনাবাহিনীর বিরাগভাজন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাবে। ফলে ১২ জুনের নির্বাচনও কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি ও অর্থবহ হয়নি। ৫৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নেয়।

আলজেরিয়া অনেক আগে থেকেই অর্থনৈতিক চাপে বিদ্ধ। তার ওপর রয়েছে পাহাড়ছোঁয়া দুর্নীতি ও পারস্পরিক অবিশ্বাস। ‘ইসলামিস্ট গ্রোথ অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি’ মনে করে, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক নয়। দলটি আরো বলেছে, সরকার জনগণের ওপর অসময়ে নির্বাচন চাপিয়ে দিয়েছে। এটি যেকোনো সময় ‘ব্যাকফায়ার’ করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান শরাফি সাফাই দিয়েছেন, ‘বিগত নির্বাচনের মতো কোনো জালিয়াতি করা হয়নি। এবারের ভোটে ভোটাররা জানতে পেরেছে, কে কোন নীতি নিয়ে দাঁড়িয়েছে এবং জনগণ কাকে পছন্দ করছে, মানে ভোট অবাধ হয়েছে।’

এ দিকে রিজিম লক্ষ করেছে, বেশির ভাগ সদস্য হিরক মুভমেন্টের, যারা এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং যাদের কারণে অর্থনৈতিক দুঃখ মানুষকে নিঃশেষ করছে। সরকার মনে করে এরা মূলত ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল র‌্যালি, রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়েছে। রিজিমের দৃষ্টি পড়ায় এরা অনেক কম ভোট পেয়েছে, যা ২০১৭ সালের প্রাপ্ত ভোটের চেয়েও কম। তাই অন্যান্য দলের সমর্থন তাদের দরকার। আলজেরিয়ার ইসলামিস্ট পার্টিগুলো এখন আগের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে।

ইসলামিস্ট দলগুলো বহু বছর ধরে আলজেরিয়ার মাটি ও মানুষের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৯২ সালে ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট ভোটে জিতে যাবে এই ভয়ে সেনাবাহিনী তাদের ‘হাড্ডিভাঙা’ অবস্থায় নিয়ে যায়। ফলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, ২০০২ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ চলে ও দুই লাখ ধর্মপ্রাণ আলজেরিয়াবাসী নিহত হন। এত মানুষের মৃত্যু আলজেরিয়ায় ইসলামী রাজনীতির মঞ্চকে এক কিনারে ঠেলে নিয়ে যায়। ফলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ও আলজেরিয়াকে ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। বলতে গেলে ১০ বছরে ইসলামী দলকে নিঃশেষ করে দেয়া হয়েছে। কিছু ইসলামী দল সরকারের সাথে কাজ করারও ইচ্ছা জানিয়েছে। সরকার খুশি এ জন্য যে, অন্তত নির্বাচন বয়কটের দলে এসব ইসলামপন্থী কোনো ভ‚মিকা রাখেনি। উদাহরণস্বরূপ, মুভমেন্ট অব সোসাইটি অ্যান্ড পিস যারা মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক রেখেছে, তাদের নেতা আবদুর রাজ্জাক মাকরি সরকারের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি মনে করেন, ব্রাদারহুড মিসরে নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হয়েছে একই অবস্থা আলজেরিয়ায় শুরু হলে ব্রাদারহুডের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে এবং আরব বিশ্বে ইসলামী আন্দোলন পিছিয়ে পড়বে। তার চেয়ে এখন সরকারি দলের সাথে আঁতাত করে নিজেদের অস্তিত্ব¡ টিকিয়ে রাখা জরুরি। আল বিন্না পার্টি প্রধান, আবদুল কাদির বেনগ্রিনা যিনি প্রেসিডেন্ট তেব্বুনের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন; তিনি ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। এসব ইসলামী দল সংসদের নিম্নকক্ষে এবারো অনেক ভোট পেয়েছে। তবে হিরক মুভমেন্টের দাবি বা অ্যাজেন্ডার অনেক কিছুতে এই দল একমত নয়, ফলে শাসকশ্রেণীর জন্য কোনো ভীতিও সৃষ্টি করেনি। প্রেসিডেন্ট তেব্বুনও তাদের সাথে কাজ করতে কোনো দ্বিধাবোধ করছেন না। এটি অনেকটা মরক্কোর জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির মতো, যারা সরকারের সাথে মিলে কাজ করছে। তবে মনে রাখতে হবে, আলজেরিয়ায় ১০ বছরে ইসলামিস্টদের লাখ লাখ সদস্যকে হত্যা এবং মিসরের রাফা গণহত্যা পুরো অঞ্চলে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। এখন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা আলজেরিয়ায় এমন কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না।

শাসকশ্রেণী চায় নির্বাচন বৈধতার স্বীকৃতি পাক, তবে নিম্ন ভোটার উপস্থিতি সেটিকে আহত করেছে। সমাজে দানা বেঁধেছে অবিশ্বাস। শুধু এবারের সংসদীয় নির্বাচন নয়, ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ২০২০ সালের রেফারেন্ডাম সবখানেই ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম ছিল। রিজিমের ওপর জনগণের আস্থার পারদ তলানিতে নেমেছে।

আলজিয়ার্সের মিডিয়া রিপোর্ট জানায়, সেনা সদস্যরা সাধারণ মানুষের বেশ ধরে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়ে গত জুনের ভোটদানে অংশ নিয়েছে। আলজেরিয়া হেরাল্ড বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট ক্রসচেক করে এই প্রতিবেদন ছাপায়। তাদের অভিযোগ প্রেসিডেন্ট আবদুল মজিদ তেব্বুন মূলত সেনাবাহিনীরই অসামরিক ব্যক্তিত্ব। দেশে এমন আইন করা হয়েছে যে, নির্বাচনের বিরোধিতা করলে ২০ বছর পর্যন্ত জেল-সাজা হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই নেতারা ভয় পেয়েছেন। আলজেরিয়ার সেনাবাহিনী বেশ শক্তিশালী, তাদের রয়েছে উচ্চ প্রশিক্ষণ ও আধুনিক অস্ত্র। তবে জনগণের জন্য রয়েছে উন্নত ডাণ্ডা-লাঠি ও বালতাগুইয়ার দল।

‘বালতাগুইয়া’ হলো দুর্বৃত্ত ধরনের যুবক শ্রেণী, যারা অর্থের বিনিময়ে বিক্ষোভ-মিছিল করে ব্যাপক তাণ্ডব ও ধ্বংস করে। প্রচুর অর্থবিত্ত ও ড্রাগসের বিনিময়ে তাদের কাজে লাগানো হয়। প্রায় সময় এরা কোনো ঘটনা ঘটিয়ে এলাকা ছেড়ে উধাও হয়ে যায়।

গোয়েন্দারাও বালতাগুইয়াদের জনরোষ বা বিপ্লব ঠেকাতে ব্যবহার করে এবং তাদের কিছু কিছু কৌশল শিখিয়ে দেয়। কোনো কোনো সময় বালতাগুইয়াদের সাথে ছদ্মবেশে যুবক, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করে। এদের প্রথম কাজ হলো জনমনে ভীতি ছড়ানো। কোনো নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করা হলে ৫০০ থেকে ৮০০ পাউন্ড সমপরিমাণ পুরস্কার পেয়ে থাকে এবং ‘সোসিয়াল হাউজিং’-এ বাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে নয়া দিগন্তে প্রকাশিত আমার লেখা ‘আলজেরিয়ায় বালতাগুইয়া ও রাশিয়া’ নিবন্ধে।

বিদ্যমান পরিস্থিতি আরো একটি ভীতির সৃষ্টি করেছে। সেটি হলো হিরক মুভমেন্টে জনগণের অংশগ্রহণ ও সেনাশাসনের বিরোধিতা। ‘বিরোধিতা’ হয়তো ভবিষ্যতে পুরোপুরি সামরিক শাসন এনে দিতে পারে, আবার একটি ‘কালো দশকেরও’ সৃষ্টি হতে পারে। হিরক আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এখন কোনো সমঝোতায় আসতে চায় না। তারা চায় পুরোপুরি পরিবর্তন যেখানে অসামরিক লোকজন সব কিছু পরিচালনা করবে, একটি ইন্টেরিম সরকার হবে, সেনারা ব্যারাকে ফিরে যাবে। নতুবা বিক্ষোভ চলতে থাকবে, এই হলো এখনকার অবস্থা।

এক ব্রিটিশ ক‚টনীতিক সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘জনগণের ইচ্ছা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। পুরো দেশকে জিম্মি করতে পারেন না।’ জার্মান ক‚টনীতিক জোনাস বলেন, ‘আলজেরিয়ার জনগণের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে জান্তা যা করছে, তাতে জার্মানরা উদ্বিগ্ন।’

নির্বাচন হয়েছে দুই মাস হলো, বিক্ষোভ তবু থেমে নেই। হিরক মুভমেন্ট যেন আবারো রাজপথ দখল করতে না পারে, সে জন্য এরই মধ্যে দুই প্রদেশে হাজার হাজার পুলিশ নামানো হয়েছে। এ দুই প্রদেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব ও অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য অন্যান্য স্থান থেকে অবস্থা বেশি খারাপ হয়েছে। বেকারত্বের কারণে অনেক পরিবার খাবারের জোগান দিতেও ব্যর্থ হচ্ছিল। সেখানে কয়েকটি কোম্পানিতে জনবল নিয়োগ করা হলেও ‘চেনামুখ, আত্মীয়স্বজন ও বালতাগুইয়ারা’ চাকরির বাজার দখল করে রেখেছে। সব নিয়োগে অসৎ পন্থা ও দুর্নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। সব সমস্যার জন্য শাসকশ্রেণী ‘টেররিস্টদের’ অর্থাৎ হিরক সদস্যদের দোষ দিচ্ছে। শুধু আলজিয়ার্সে ৬৫ হাজার পুলিশ দাঙ্গার জন্য ডাণ্ডা হাতে প্রস্তুত। আল হারিচ প্রদেশে পুলিশের চাপ থাকা সত্তে¡ও বিক্ষোভ হয়েছে। আলজিয়ার্স শহরে যখন-তখন তল্লাশি চলছে হিরক মুভমেন্টের সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য। একজন সমালোচক লিখেছেন, ফরাসি কলোনি থাকার সময় ফরাসিরা যেমন তল্লাশি চালাত, এখন সে রকম তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট মজিদ তেব্বুন সংসদীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলতেন, ‘এক নতুন আলজেরিয়ার’ উদ্ভব হবে। কিন্তু নির্বাচনের দুই মাস হয়ে গেলেও পুরনো সমস্যাগুলো প্লেগের মতো জনসাধারণকে আরো আঁকড়ে ধরছে। হিরক আন্দোলনে জড়িতদের ওপর বিবিধ সন্ত্রাসী হামলার মামলা দেয়া হয়েছে। নেতারা গণবিরোধী কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছেন মর্মে প্রচার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সরকারের এ পদক্ষেপকে ‘নির্যাতনের ভীতিকর পন্থা’ বলে অভিহিত করেছে।

দুই বছরের বিপ্লব-অগ্নিশিখা নির্বাপিত হয়ে যাবে নাকি আবার স্ফুলিঙ্গ হবে, তা সরকার হিসাব-নিকাশ করতে পারছে না। আলজেরিয়ান লিগ অব ডিফেন্স অব হিউম্যান রাইটস হিসাব দিয়েছে যে, ডজনখানেক শীর্ষ নেতাকে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া জেলে পুরে রাখা হয়েছে এবং বাইরের কারো সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না। নামকরা অ্যাক্টিভিস্ট করিম তাবৌ, বিশিষ্ট সাংবাদিক খালিদ দারেনি ও ইহসান আল কাজী অনেক দিন ধরে অবরুদ্ধ। তা ছাড়া হিরক সমর্থকদের অনেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ বিষয়টি বুলেটিনে প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার কর্মী কাদের চৌচা, জামিলা লোকিল, সাঈদ বাউদোর, আইনজীবী আবদুর রউফ আরসালানসহ আরো ডজনখানেক হিরক নেতাকর্মীকে সন্ত্রাসী দলের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে।

আলজেরিয়ায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মিলিটারি রিজিমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলে আসছে। তাদের দাবির মধ্যে ছিল সেনাবাহিনী নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং করছে এবং তাদের উপস্থিতিতে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তা ছাড়া বর্তমান সময়ে তাড়াহুড়া করে সময়ের আগে নির্বাচন দিয়ে জনগণের আস্থা ফিরে আনা সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীর দুর্নীতিকে জনগণ আর সহ্য করছে না।

বুতাফ্লেকার সময়ও সেনা দফতর থেকে নির্দেশ আসত, আস্তে আস্তে পর্দার আড়ালের সব নটনটির আচরণ জনগণের সামনে চলে আসতে থাকে এবং জনগণ সেনাবাহিনী ও সেনাসমর্থিত সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। ভোটের দিনই নির্বাচনবিধি ভঙ্গের দায়ে ৯০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকানো হয়। অন্যান্য আরো অনেককে তাৎক্ষণিক ৬ থেকে ১৮ মাসের সাজা দেয়া হয়। আর প্রেসিডেন্ট বারবার বলছেন, এসবই করা হচ্ছে রাজনৈতিক সিস্টেমকে সঠিক পথে আনার জন্য। হিরক সদস্যরা যা করেছিল ও এখন করছে, সেগুলো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ।

ধরপাকড় শুরুর সময় প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, আসলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্নীতি, ঘুষ ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, তার ব্যবস্থা করা।

জননেতারা বলছেন, এসব অপরাধ সরকারের লোকজনদের ও সেনাধ্যক্ষদের বিরুদ্ধে আনা উচিত। একটি উদাহরণ দেয়া যায়, দণ্ডবিধিতে টেররিজমের সংজ্ঞায় যোগ করা হয়েছে, ‘অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা লাভের চেষ্টা বা সরকারের কোনো সিস্টেম পরিবর্তনের চেষ্টা রজমের অন্তর্ভুক্ত’ মূলত হিরক কর্মীদের নাজেহাল করার জন্য উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে এটি করা হয়েছে, জনগণ ‘নতুন আলজেরিয়ার’ এ পরিবর্তনের জন্য খুশি নয়।

বিক্ষোভের সময় একটি স্লোগান বেশি উচ্চরিত হতো। ‘দেশের ধন বিদেশের ব্যাংকে কেন?’ আসলে হিরক আন্দোলনে জনগণ কী বলেছে সেগুলোর কোনো হিসাব-নিকাশ হচ্ছে না। তেব্বুন এখন তার কথিত ‘নতুন আলজেরিয়া’ গঠনে ব্যস্ত।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement