১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আফগানরা পশ্চিমা আধিপত্যের পতন ঘটাবে?

-

তালেবানের হাতে আফগানিস্তানে কাবুল সরকারের নিয়ন্ত্রণ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার পর অনেকের মধ্যে শঙ্কা জাগছে, এটি কি পশ্চিমা সভ্যতার ক্ষয় হওয়ার চূড়ান্ত পর্বের সূচনা ঘটাবে? আফগানিস্তানের সামরিক নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে গেলেও এখনো পর্যন্ত তারা সরকার গঠন করতে পারেনি। ৩১ আগস্টের মধ্যে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের যে ডেডলাইন রয়েছে তার অবসানের পর তালেবানের সরকার গঠনের চূড়ান্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। তবে তাদের প্রাথমিক কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তালেবানরা আফগানিস্তানে ‘সত্যিকারের কিছু পরিবর্তন’ নিয়ে আসবে। এখন পাশ্চাত্যের মিডিয়াও বলছে, ২০০১ সালের তালেবান আর ২০২১ সালের তালেবান এক নয়। তাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন-পরিপক্বতা ও মানিয়ে নেয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো সামরিক বিজয়ের পথ ধরে কি তালেবানরা পারবে দেশকে অর্থনৈতিক স্থিতি বা সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে যেখানে এর মধ্যে আফগানিস্তানের সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশী রিজার্ভ আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র? তার পথ ধরে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক গ্রুপও দেশটির জন্য অর্থ ছাড় স্থগিত করেছে। অন্য পশ্চিমা দেশগুলোও যে এর পথ ধরবে তাতে সংশয়ের কোনো কারণ নেই। কিন্তু যারা তালেবানের নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানের চলার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে বলে মনে হয়, তাদের হাত থেকে নিয়ন্ত্রণের টুলসগুলো সম্ভবত এক এক করে হাত ফসকে চলে যাচ্ছে। আফগানিস্তানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যে এই অস্ত্রের বহুল প্রয়োগে এর বিরুদ্ধে শক্তিমান জোট তৈরি হয়েছে, যার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমা দেশগুলো অনেকখানি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠনের আগেই পাশ্চাত্যে মূল্যায়ন করা শুরু হয়েছে ২০ বছর ধরে সেখানে ২.২৩ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কী অর্জন করতে পেরেছে? রাজনৈতিকভাবে দুই দলে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রে কোনো এক দলের সময় সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার এই চিত্র অঙ্কিত হলে তা নিয়ে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিরোধ সমালোচনা যতটা চাঙ্গা হওয়ার কথা, ততটা এখন হচ্ছে না। রিপাবলিকানরা যতই আফগানিস্তানে আমেরিকান স্বার্থ বিপন্ন করে যুক্তরাষ্ট্র চলে এসেছে বলে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করুন না কেন, মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নেয়ার এই চুক্তি তালেবানের সাথে করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। আর বাইডেন ক্ষমতায় এসে সেটিকে মে থেকে পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে নিয়ে গেছেন।

জর্জ জুনিয়র বুশের মতো যেসব আমেরিকান নেতা আফগনিস্তান থেকে এভাবে সেনা প্রত্যাহারের সমালোচনা করছেন তাদের বাইডেন পাল্টা প্রশ্ন করছেন, আরো পাঁচ বা ১০ বছর থাকলে কি যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে জয়ী হতে পারত? এই প্রশ্নের আসলে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কোনো জবাব নেই। বরং আরো তিক্ত বিষয়টা সামনে চলে এসেছে যে, আমেরিকানদের ভবিষ্যতে আর কোনো দেশে এভাবে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে যাওয়া ঠিক হবে কি না। একই সাথে সঙ্গত কারণেই এই প্রশ্নও চলে আসে, আমেরিকানরা তাদের প্রত্যক্ষ সামরিক ছায়ায় ক্ষমতায় থাকা সরকারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম কি না। আর সেটি যদি না হয় তাহলে পাশ্চাত্য আধিপত্য বৈশ্বিকভাবে কতদিন টেকানো সম্ভব হবে?

এ কথা এখন বহুল প্রচলিত যে, আফগানিস্তান হলো সাম্রাজ্যলিপ্সুদের জন্য কবরস্থান। আফগানিস্তান দখল করতে গিয়ে একসময় বিপর্যয়ে পড়েছিলেন ব্রিটিশ সামাজ্যের অধিপতিরা। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হওয়ার পেছনে আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপের প্রত্যক্ষ ভ‚মিকা রয়েছে। বলা হয়, সে সময় সামনে আফগান মুজাহিদ গ্রুপগুলো থাকলেও পেছনে ভ‚মিকা রেখেছে আমেরিকা। একই যুক্তি বর্তমান আমেরিকান পরাজয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। চীন রাশিয়ার মতো পরাশক্তির সমর্থন না পেলে আমেরিকানদের এতটা দ্রুত আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিতে হতো, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।

এখন প্রশ্ন হলো, আফগানিস্তানে পরাজয়ের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন তো ভৌগোলিকভাবে খণ্ড বিখণ্ড হয়ে গেছে, তবে আমেরিকার পতন হবে কিভাবে? আমেরিকার পতন সম্ভবত ভৌগোলিক বিভাজনের মাধ্যমে হবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র তার একক পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বব্যাপী নিজ দাপট রক্ষা করতে পারবে না। আমেরিকার নিরাপত্তা ছায়ার দেশগুলো নিরাপত্তার জন্য এখন থেকে নিজস্ব জাতিগত সমীকরণ নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে চাইবে। আর এর অনিবার্য ফল হবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ শিথিল হতে থাকা। বৈশ্বিক অর্র্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণে ‘ব্রেটন উড’ ব্যবস্থা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্যের প্রভাব বিস্তারের প্রধান অবলম্বন। আমেরিকার প্রতিপক্ষ চীন, রাশিয়া এই ব্যবস্থায় তাদের যৌক্তিক অংশীদারিত্বের জন্য দাবি জানিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চাপ প্রয়োগ করছে। সংস্কার বাস্তবে রূপ লাভের পরিবর্তে রাশিয়াসহ প্রতিপক্ষ দেশগুলোতে একের পর এক অর্থনৈতিক অবরোধ চাপানো হয়েছে। এমনকি এই অবরোধের হাত থেকে ন্যাটো মিত্র তুরস্কও বাদ পড়েনি।

এর ফলে যেটি দাঁড়িয়েছে তা হলো, বিকল্প বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির প্রক্রিয়া দ্রুত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়া। গত মার্চে রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ ঘোষণা করেছেন যে, তারা বিকল্প মুদ্রাব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে চলেছেন। একসময় বৈশ্বিক পুঁজি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ছিল একতরফা আধিপত্য। এখন সেই অবস্থা আর নেই। বৈশ্বিক পর্যায়ে বিনিয়োগযোগ্য সবচেয়ে বড় অঙ্কের তহবিল রয়েছে চীনের হাতে। বিশ্বের বৃহৎ ১০ ব্যাংকের অর্র্ধেকের কাছাকাছি মালিকানা রয়েছে হংকংসহ চীনা কোম্পানির হাতে। বিকল্প বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রক্রিয়া যে অনেক দূর এগিয়েছে তা এখন অনেকটাই অনুমান করা যায়। বিভিন্ন রাষ্ট্র আমেরিকান ডলার পরিহার করে দ্বিপক্ষীয় মুদ্রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মডেল তৈরি করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভার্চুয়াল মুদ্রা চালু করা সময়ের ব্যাপার বলে মনে করা হচ্ছে। সবশেষে, চীন ও রাশিয়ার নেতাদের কথায় অনুমান করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রিজার্ভ সংরক্ষণের যে ব্যবস্থা তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খোঁজা হচ্ছে, যাতে কথায় কথায় অবরোধ আরোপ এবং সম্পদ আটকে দেয়ার আমেরিকান অস্ত্রের প্রয়োগ আর করা সম্ভব না হয়।

বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানে পরাজয়ে তিনটি বড় বার্তা আমেরিকানদের সামনে গেছে, যা পাশ্চাত্যে তার প্রভাব ক্ষয় হবার সিগন্যালকে হলুদ পর্যন্ত নিয়ে গেছে। আরো কিছু ব্যর্থতা এর সাথে যুক্ত হলে তখন পাশ্চাত্যের নিয়ন্ত্রক প্রভাবের সামনে লালবাতি জ্বলে উঠবে। এর মধ্যে প্রথম বার্তাটি হলো, আমেরিকানরা সোয়া দুই ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় করে আফগানিস্তানকে দারিদ্র্য থেকে উত্তরণ এবং কথিত মানবাধিকারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার পরিবর্তে দেশটিকে তলাহীন ঝুড়ি আর দুর্নীতি ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। এর পাশাপাশি, অব্যাহত রক্তক্ষয়ের এক জনপদে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তান। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনের পাশাপাশি যখন আফগানিস্তানের তরতাজা উদাহরণ সামনে রাখা হয় তখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার আর একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমেরিকান আওয়াজ সেভাবে হালে পানি পায় না। অর্থাৎ আদর্শগত দেউলিয়াত্বের ঘণ্টা ধ্বনি বেজে উঠেছে পশ্চিমা সভ্যতার।

দ্বিতীয় বার্তাটি হলো, পাশ্চাত্যের সামরিক ও প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব এখন আর নির্ণায়ক কোনো বিষয় নয়। আমেরিকান বোমারু বিমানগুলো অব্যাহতভাবে বোমা ফেলার মধ্যেই দু’সপ্তাহে পুরো আফগানিস্তান তালেবানরা দখল করেছে অনেকটা বিনা যুদ্ধেই। বরং আমেরিকান বাহিনীর নিরাপত্তার জন্য কাতার ও পাকিস্তানের সহায়তা চাওয়ার প্রয়োজন হয়েছে, যাতে তালেবানরা তাদের ব্যাপারে ‘আগ্রাসী’ না হয়।

সর্বশেষ বার্তাটি হলো, আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদের লোভ আর আলকায়েদা দমনের অজুহাতে অভিযান চালিয়ে বিপুল অর্থ খরচ করার পরও যুক্তরাষ্ট্র সেখানে বিপর্যয়কর এক অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার রেখে গেছে। এরপর আমেরিকা ও তার মিত্রদের অসহযোগিতার পরও যদি তালেবানরা চ্যালেঞ্জ উত্তরণ করতে পারে তাহলে দেশ, জাতি ও মানবতা উদ্ধারে ভ‚মিকা নেয়ার শেষ যুক্তিটিও আমেরিকানদের হারিয়ে যাবে।

এ অবস্থায় তালেবান তথা ইসলামী আমিরাতের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, তারা আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে যে সরকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে তা সাফল্যের সাথে শেষ করা। এই লক্ষ্য অর্জনে তারা ২০ বছর যাদের সাথে লড়াই করেছে তাদেরও ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট করতে উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের ক্ষমার ক্যানভাসটা যে কত বড় তা তিনটি নাম উল্লেখ করলেই স্পষ্ট হয়। হামিদ কারজাই এবং আবদুল্লাহ আবদুল্লাহকে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় মুখ্য ভ‚মিকা দিয়েছে, তাদের একজন হলেন তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গঠিত প্রথম সরকারের প্রেসিডেন্ট আর দ্বিতীয়জন হলেন ক্ষমতাচ্যুত আশরাফ গনি সরকারের দুই নাম্বার ব্যক্তিত্ব। তারা হেরাতের সাবেক গভর্নর ইসমাইল খানকে ক্ষমা করে দিয়ে তালেবানে যোগ দিতে অনুমোদনই করেনি তাকে ভবিষ্যৎ আফগান সরকারের অংশ করতে যাচ্ছে। অথচ এই খান শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তালেবানের বিরুদ্ধে হেরাতে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আর ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহকেও ক্ষমা করে দিয়ে তাদের প্রতি দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। আশরাফ গনির ভাই তো তালেবানে যোগ দিয়েছে। আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তালেবানের নেতৃত্বে সরকার গঠন করা হলে এটি আরো স্পষ্ট হবে।

তালেবানের সামনে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি হলো, গৃহবিবাদের অবসান ঘটানো। ২০০১-পূর্ববর্তী তালেবান আন্দোলন ছিল দেশটির জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ পশতুন প্রধান একটি আন্দোলন। এখনকার তালেবান হলো পুরো আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বশীল তালেবান আন্দোলন। তাজিক উজবেক হাজারা তুর্কমেন তথা সব আফগান জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃস্থানীয়রা তালেবান আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। গত ২০ বছরের আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট সরকারের সময় নারী শিক্ষা থেকে শুরু করে সমাজ উন্নয়নমূলক যেসব কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল তার কোনোটাই তালেবান বন্ধ করেনি। আফগানিস্তানের হাজার হাজার মানুষ আমেরিকা যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে ভিড় করছে। তালেবানের বক্তব্য হলো, যে অর্থনৈতিক দুর্গতি ও দারিদ্র্য বিগত দশকগুলোতে তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে উন্নত দেশে অভিবাসনের জন্য লোকজন এভাবে ভিড় করছে। এর সাথে তালেবানের সরকার গঠনের সম্পর্ক নেই ততটা। এর মধ্য দিয়ে এটাই বলা হচ্ছে যে, আমেরিকানরাই দেশ ছেড়ে যাওয়ার দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে আফগানিস্তানে। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা আফগানিস্তানের কেন্দ্র ও প্রাদেশিক পর্যায়ে চালু করতে পারলে ‘ইসলামী আমিরাত’ দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ জয় করতে পারবে।

তালেবানের সামনে তৃতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জটি হলো, আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে সামাল দেয়া এবং সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য একটি গতি তৈরি করা। আমাদের বিবেচনায় চ্যালেঞ্জটি তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড়। আর এই চ্যালেঞ্জ জয় করে দেশটিতে স্থিতি এনে দিতে পারলে পশ্চিমা সভ্যতার দাপুটে অবস্থানে এটি শেষ পেরেকের মতো হবে।

আফগানিস্তানের অর্থনীতির আকার এখন ২২ বিলিয়ন ডলারের। প্রশ্ন হলো, দেশটিতে আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গতিশীল কার্যক্রম চালু করতে কতটা সক্ষম হবে নতুন সরকার? তারা কি পারবে উন্নয়ন সহায়তাকারীদের আস্থা অর্জন করতে এবং রাষ্ট্রের খনিজ সম্পদে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে সেটিকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে কাজে লাগাতে?

দুই দশক আগে আফগানিস্তানে যখন তালেবানরা শাসন করত তখন অর্থনীতির আকার ছিল এখনকার এক-তৃতীয়াংশের মতো। সরকার চালানোর জন্য আশরাফ গনি প্রশাসনের যত টাকা প্রয়োজন হতো তার চেয়ে অনেক কম অর্র্থে তালেবানরা রাষ্ট্র চালাতে পারবে দু’টি কারণে। প্রথমত, বিদায় হওয়া কাবুল সরকারের যে বিপুল অর্থ অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে ‘নেই’ হয়ে যেত, সে অবস্থা হবে না তালেবান প্রশাসনে। তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে সেটি দেখা গেছে। অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করা গেলে প্রতিরক্ষা খাতের ব্যয় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। আফগান সেনাদের যে বেতন দেয়া হতো তার অর্ধেক পায় তালেবান মিলিশিয়ারা। ফলে ধারণা করা হয়, তিন বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করা গেলে অর্থনৈতিকভাবে তালেবান সরকার টিকে যাবে। তালেবানরা রাষ্ট্রের পূর্ণ দখল নেয়ার আগেই তাদের হাতে এক বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আয় হতো। এখন যদি শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তাদের পক্ষে তিন থেকে চার বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করা কঠিন হবে না। তালেবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আগে ঘাটে ঘাটে ‘ওয়ারলর্ড’দের চাঁদা দিতে হতো। এটি বন্ধ হওয়ার কারণে ব্যবসার খরচ অনেক কমে গেছে এবং আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্য ও ভোগ্যপণ্যের দাম কমে গেছে। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের ভেতরে ‘রোড অ্যান্ড বেল্ট’ প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ যদি শুরু করা যায় এবং সেই সাথে বিপুল খনিজসম্পদের উন্নয়ন ও আহরণ যদি আরম্ভ করা যায়, তাহলে অর্থনৈতিক সঙ্কট তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয়। তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের শেষ সময়ের পরামর্শ ছিল, আফগানিস্তান থেকে নিষিদ্ধ আফিম চাষের বিলুপ্তি ঘটানো। তালেবান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে আফিম চাষ আগেই কমে গিয়েছিল। এটি তালেবান পুরোপুরি বন্ধ করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো একটি বড় উৎকণ্ঠা থেকে বেঁচে যাবে। ফলে তারা অর্থনৈতিক অবরোধ চাপিয়ে রাখার মতো চূড়ান্ত ব্যবস্থা থেকে তাদের স্বার্থেই বিরত হতে পারে।

এর পরও সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ আটকে রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হলে বিকল্প বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা তৈরির যে উদ্যোগ চীন, রাশিয়া নিচ্ছে তা পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে। আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা এখন দেশটির সব প্রতিবেশীর কাম্য। চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান এবং মধ্য এশীয় দেশগুলো তাদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থেই শান্তি চাচ্ছে। ফলে এই পথে না এসে ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো তালেবান বৈরী শক্তিগুলোর খুব বেশি কিছু করার সুযোগ থাকবে বলে মনে হয় না। আর এর মধ্যে চীন আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করার জন্য মুখিয়ে আছে। বেইজিং এই অঞ্চলে বাণিজ্য উন্নয়নের যে ‘হাব’ রুট অ্যান্ড বেল্ট উদ্যোগের মাধ্যমে তৈরি করতে চাইছে তার জন্য আফগানিস্তান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে মনে হয়, আফগানিস্তানে রক্তক্ষয় অধ্যায়ের হয়তোবা পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে। তালেবানরা মোল্লা ওমরের একটি ভবিষ্যৎ কথার প্রতি দৃঢ়ভাবে আস্থা রাখে, সেটি হলো, দখলদারিত্বে ২০ বছর পূর্তির আগেই দখলদাররা বিদায় নিতে শুরু করবে আফগানিস্তান থেকে। এরপর শত বছরব্যাপী আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ আফগানদের হাতে থাকবে।

mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আইসিসি! ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইসফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’

সকল