২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জিপিআই বনাম জিডিপি এবং ইলহান ওমর

জিপিআই বনাম জিডিপি এবং ইলহান ওমর - ছবি- সংগৃহীত

ইলহান আবদুল্লাহি ওমর। আমেরিকার আলোচিত এক রাজনীতিবিদ। তিনি ২০১৯ সাল থেকে মিনেসোটার পঞ্চম কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। মিনেসোটার প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা। কংগ্রেসের সদস্য হওয়া প্রথম দুই মুসলিম মহিলার মধ্যে তিনি একজন। অপরজন রাশিদা তালিব। ইলহান ওমর ডেমোক্র্যাটিক-ফার্মার-লেবার পার্টির সদস্য। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি ২০১৭-১৯ সময়ে ছিলেন মিনিয়াপোলিসের অংশবিশেষের প্রতিনিধি হিসেবে মিনেসোটা প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। তিনি বর্তমানে কংগ্রেসনাল প্রগ্রেসিভ ককাসের হুইপ। মূলত সর্বনিম্ন ১৫ ডলার মজুরি, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, ছাত্রঋণ মওকুফ, ‘ডেফার্ড অ্যাকশন অব অ্যারাইভালস’-এর সুরক্ষা, ‘ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ বাতিলসহ আরো অনেক বিষয়ের আন্দোলনে সরব ভ‚মিকা রেখেই তিনি আলোচিত রাজনীতিক। সমর্থন করেন ইসরাইলবিরোধী আন্তর্জাতিক ‘বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশনস’ (বিডিএস) আন্দোলন। তিনি প্রবল বিরোধী অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইহুদিদের ‘বসতি নীতি’ ও সামরিক অভিযানের। তার মতে, ইসরাইল-সমর্থক লবির সমর্থন নিয়েই ইসরাইল এই বসতি নীতি বাস্তবায়ন করছে ও সামরিক অভিযান অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য তারাও সমভাবে দায়ী। সোমালিয়ান-আমেরিকান ইলহান ওমর শরণার্থী থেকে হয়ে ওঠা আমেরিকান এই আলোচিত রাজনীতিবিদকে সে দেশে নানা ধরনের হয়রানি মাথায় নিয়ে রাজনীতি করতে হচ্ছে। মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন বেশ কয়েকবার। তাকে নিয়ে রচিত হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। এর পরও তিনি তার রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন যা বলার বলে চলেছেন, যখন যা করার করে চলেছেন।

সম্প্রতি তিনি আবার আলোচনায় এসেছেন আমেরিকান কংগ্রেসে দুটি বিল উত্থাপন করে। এর একটি অর্থনৈতিক সূচক ‘জিডিপি’ নিয়ে। এ পর্যন্ত বিশ্বের সব দেশে অর্থনীতির সাফল্য পরিমাপের বহুচর্চিত মানদণ্ড বা অর্থনৈতিক সূচক হচ্ছে জিডিপি। এর দুর্বলতা মেরামতের উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি এই বিলটি উত্থাপন করেন গত ১০ জুলাই। এর মাধ্যমে তিনি সূচনা করেন ‘জেনুইন প্রগ্রেস ইন্ডিকেটর (জিপিআই) বিল।

একই দিনে ইলহান ওমর কংগ্রেসে উত্থাপন করেছেন ‘সেন্ডিং আনকন্ডিশনাল পেমেন্ট টু পিপল ওভারকামিং রেজিস্ট্যান্স টু ট্রুইম্প’ অ্যাক্ট শীর্ষক বিল। তার এই বিলের লক্ষ্য একুশ শতকের অর্থনীতিকে এমনভাবে বিনির্মাণ, যাতে অর্থনীতিতে আমেরিকার প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়। এই বিলটির প্রস্তাব হচ্ছে একটি নিশ্চিত মঞ্জুরি কর্মসূচি সৃষ্টি, যার মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য থাকবে তহবিল সহায়তা। সাপোর্ট অ্যাক্ট পাস হলে স্বল্প আয়ের আমেরিকান পরিবারের প্রাপ্তবয়স্করা পাবে মাথাপিছু প্রতি মাসে ১২০০ ডলার, আর শিশুরা পাবে মাথাপিছু ৬০০ ডলার করে।

অপর বিলটির প্রস্তাব হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতি পরিমাপের ‘জিপিআই’ নামের এক নতুন সূচক চালু করা, যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে জনগণের কল্যাণের বিষয়টিও। সন্দেহ নেই, এই বিলটি পাস হলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে আর্থসামাজিক ব্যবস্থার বঙ্কিম পথে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সাফল্যের পরিমাপে জিডিপির কার্যকারিতা নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে। এ প্রেক্ষাপটে জিডিপির বিকল্প নিয়েও চলছে নানা কথা। আলোচনায় এসেছে জিডিপির বিকল্প সূচকের প্রবর্তন নিয়ে। এসেছে জিপিআই প্রসঙ্গ। এমনি প্রেক্ষাপটে ইলহান ওমরের এই বিল এ ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন এক ভিন্ন মাত্রা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে বারবার ঘুরেফিরে আলোচিত হচ্ছে একটি প্রশ্ন- একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা আজো কেন আমাদের অর্থনীতি পরিমাপ করছি মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাকশন) নামের এমন একটি মেট্রিক (পারিসংখ্যানিক পরিমিতি) দিয়ে, যার উদ্ভাবন করা হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুতে? এরই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন আসে- আমরা কী করে সংজ্ঞায়িত করতে পারি জিডিপির চেয়ে আরো ব্যাপকভিত্তিক, বহুমাত্রিক ও আমাদের যাপিত জীবনের অধিকতর জটিল বিষয়গুলোর ওপর প্রতিফলনকর একটি মেট্রিক বা পরিমিতির সূচকের, যাতে প্রতিফলন থাকবে জনকল্যাণ, পরিবেশ ও অন্যান্য পরিস্থিতির ওপর।

জিডিপির একটি দুর্বলতা হচ্ছে- এর মাধ্যমে জাতীয় কল্যাণ পরিমাপের কোনো উপায় নেই। এর আরেকটি বড় মাপের দুর্বলতা হচ্ছে- চলতি শতাব্দীতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, পরিবেশসঙ্কট ও কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে দ্রুত যে অর্থনৈতিক রূপান্তর পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার কোনো প্রতিফলন খুঁজে পাওয়া যায় না জিডিপি সূচকে। জিডিপির আড়ালে থাকা জাতীয় কল্যাণ পরিমাপের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে, যার কোনো সদুত্তর মেলেনি। এমনকি জিডিপি সূচকটির উদ্ভাবক আমেরিকান অর্থনীতিবিদ সাইমন কুজনেটস নিজেও এই প্রশ্ন তুলেছেন। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ও। অর্থনৈতিক ফোরামের নতুন এক রিপোর্টে প্রস্তাব করা হয়েছে চার মাত্রানির্ভর একটি স্কোরকার্ড। এই স্কোরকার্ডে প্রস্তাব করা হয়েছে- প্রসপারিটি (সমৃদ্ধি), দ্য প্ল্যানেট (পৃথিবী), পিপল (জনতা) ও রোল অব ইনস্টিটিউশন্সের (প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ‚মিকা) মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করার জন্য। সে যা-ই হোক, এমনি একটি প্রেক্ষাপটেই এসেছে ইলহান ওমরের এই জিপিআই বিল।

জিপিআই হচ্ছে একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পরিমাপের নতুন এক উপায়। এটিকে বিবেচনা করা হয় সুপরিচিত অর্থনৈতিক সূচক জিডিপির বিকল্প হিসেবে। জিডিপিতে যেসব বিষয় হিসাব বিবেচনায় আনা হয়, জিপিআইয়ে সেগুলোর সাথে যোগ করা হয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট ক্ষতির হিসাবগুলোরও। যেমন- অপরাধকর্ম, ওজোন স্তর ক্ষয়, বনভ‚মি ধ্বংস, জলাভ‚মি ও নদী বিলুপ্তি, পরিবেশ ধ্বংস, নানা দূষণ ইত্যাদি ধরনের নানা কারণে অর্থনৈতিক সম্পদের ক্ষতির হিসাব। মোট কথা, জিপিআইয়ে আমলে নেয়া হয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফলাফল। জিপিই হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির সূচক। জিপিআই সমর্থকদের যথার্থ দাবি- সবুজ ও সামাজিক অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে জিপিআই প্রবৃদ্ধি পরিমাপের উন্নততর এক উপায়। জিপিআইয়ের মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনৈতিক সুষ্ঠুতার পরিপূর্ণ চিত্রটা জানা যায়। এর বিরোধীদের দাবি- জিপিআই অতিমাত্রিক আত্মবাদী তথা সাবজেক্টিভ, ফলে এটি পরিণত হয়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পরিমাপের একটি কম কার্যকর উপায়ে।

আসলে জিপিআই সূচক তৈরি হয়েছে ‘গ্রিন ইকোনমিকস’-এর ওপর ভিত্তি করে। এই অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক বাজারকে বিবেচনা করা হয় ইকোসিস্টেম তথা বাস্তুব্যবস্থার এক অংশ হিসেবে। এর সমর্থকদের মতে, জিপিআই অর্থনেতিক স্থিতিশীলতা পরিমাপ করে জিডিপির তুলনায় অধিকতর উন্নত উপায়ে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে জিপিআই সূচকের খ্যাতি ক্রমেই বাড়ছে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে এই সূচক ব্যবহার করা হয়। তা সত্তে¡ও এই দেশ দুটি এখনো অর্থনৈতিক তথ্যের জন্য জিডিপি সূচক প্রকাশ করার ব্যাপকভিত্তিক অনুশীলনেই থেকে গেছে। বাস্তবে দেখা যায়- কোনো দেশে জিডিপি দ্বিগুণ বাড়লেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দূষণ সৃষ্টি হয়। আবার দূষণমুক্ত পরিবেশেও জিডিপি বাড়ে। কিন্তু জিপিআইয়ে দূষণকে ধরা হয় ‘প্রাথমিক খরচ’ হিসেবে। সাধারণত, এই খরচ দূষণ দূর করার পেছনের খরচ ও এর নেতিবাচক প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষতির যোগফলের সমান। জিপিআই পরিমাপে একটি সূত্র ব্যবহার হয়। সূত্রটি হচ্ছে- GPI=Cadj+G+W-D-S-E– N, যেখানে Cadj=personal consumption with income distribution adjustments, G=capital growth, W=unconventional contributions to welfare, such as volunteerism, D=defensive private spending, S=activities that negatively impact social capital, E=costs associated with the deterioration of the environment, N=activities that negatively impact natural capital.

কিন্তু কংগ্রেসে এই আইন পাস হওয়ার ওপর নির্ভর করছে, এটি কি প্রতিস্থাপন করবে সব গুরুত্বপূর্ণ ‘অল সাইজ ম্যাটারস’ সিনড্রোম, যা জিডিপির ভিত্তিকে দুর্বল করে। জিডিপির বিপরীতে, জিপিআই উপস্থাপন করে অর্থনৈতিক সাফল্য পরিমাপের এক নতুন উপায় হিসেবে উল্লেøখযোগ্য কিছু বিষয়, যার সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে এই পৃথিবী ও এর অধিবাসী মানবজাতির কল্যাণের সাথে। আজকের দিনে আমরা লক্ষ করছি, অনেক বড় ধরনের টার্নিং পয়েন্ট বা যুগসন্ধিক্ষণ; যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ইলহান ওমরের মাধ্যমে। তার উপস্থাপিত বিলের প্রস্তাবের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বের আর্থ-সামাজিক বঙ্কিম পথকে বিভিন্ন উপায়ে পাল্টে দেয়ার। এই প্রস্তাব আয়-বণ্টন, অবকাঠামো উন্নয়ন, ন্যায়ভিত্তিক শ্রমচর্চা, বাস্তুতান্ত্রিক স্থায়িত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে এক সমতল ক্ষেত্র (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) সৃষ্টি করতে পারে। অথচ এসবের একটিরও স্বীকৃতি নেই জিডিপিতে। জিডিপি পরিমাপ করে শুধু ‘অর্থনীতির আকার’ (সাইজ অব দ্য ইকোনমি)। অপর দিকে, জিপিআই পরিমাপ করে অর্থনীতির পুরো পরিসরে সত্যিকারের উপকার ও লোকসান। যেমন- মূল্য-অপরিশোধিত শ্রম, টেকসই কর্মদক্ষতা, অবকাঠামো, বাস্তুতান্ত্রিক সেবা এবং সেই সাথে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনের ব্যয় ও এর সহগামী (কোলেটারেল) সমস্যাগুলো- ক. সম্পদ-উৎস ক্ষয়; খ. গ্রিন হাউজ গ্যাস; গ. আয়বৈষম্য; ঘ. অভ্যন্তরীণ অপব্যবহার। জিডিপি উপরোল্লিখিত সবগুলো বিষয়ই এড়িয়ে চলে।

জিপিআই হতে পারে জীবনদায়ী বাস্তুব্যবস্থার সমস্যা দূর করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে সবার মনোযাগ একীভ‚ত করার একমাত্র উপায়। এগুলো ছাড়া আমাদের এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ধ্বংস ঠেকাতে জিডিপি সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট প্রশ্নগুলোরও সমাধান প্রয়োজন। এসব প্রশ্নের মধ্যে আছে- প্রবৃদ্ধি কার স্বার্থে এবং কিসের বিনিময়ে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন? জিডিপি টেকসই জীবনের সম্পদ-উৎসের (রিসোর্সের) কথা ভাবে না, এটি ভোগ করে একই সম্পদ-উৎস। সৃষ্টি করে শুধু সম্পদবৈষম্য- যা একটি সভ্যতার প্রবাদতুল্য খরগোশের গর্তে পথ হারানোরই প্রকাশমাত্র। এর অর্থ হচ্ছে- এমন একটি পরিস্থিতিতে ঢুকে পড়া কিংবা একটি প্রক্রিয়া বা অভিযাত্রা শুরু করা, যা সত্যিই অদ্ভুত, সমস্যাকর, জটিল ও ঝামেলাপূর্ণ।
ইলহান ওমরের প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে- কমার্স সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিট উপকার, অপকার ও অন্যান্য বিষয় পরিমাপের জন্য একটি বিকল্প মেট্রিক তথা পরিমিতি প্রতিষ্ঠার জন্য। নির্দেশ দিতে হবে জিপিআই (জেনুইন প্রগ্রেস ইন্ডিকেটর) তৈরির, যা পরিমাপ করবে প্রতিটি পরিবারের অর্থনৈতিক কল্যাণের দিকটি। তা হিসাব-নিকাশ করা হবে জিডিপির সাথে সাযুজ্য রেখে। এই জিপিআই পরিমাপ করবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট পরিবেশিক ও সামাজিক ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়গুলোও। এই জিপিআই বিল উত্থাপন সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবি রাখে, বিশেষ করে এই বৈষম্যের দুনিয়ায়।
জিপিআইয়ের মধ্যে যেসব ক্ষতির তালিকা রয়েছে, সেগুলো আসলে সংজ্ঞায়িত করে পুরো পৃথিবীর আসন্ন বিলুপ্তি ঝুঁকিকে। জিডিপিতে যেসব ব্যয়ের উল্লেখ নেই সেগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জিপিআই-এ : ১. বাড়িঘর ও জাতীয় পর্যায়ের পানি, বায়ু ও শব্দদূষণ; ২. মাটির গুণমান কমে যাওয়াসহ কৃষিজমি ও উৎপাদনযোগ্য জমি কমে যাওয়া; ৩. প্রাকৃতিক জলাভ‚মি ও প্রাথমিক বনভ‚মি বিলুপ্তি, ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তুব্যবস্থা; ৪. উচ্চমাত্রার কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ; ৫, ওজোন স্তরের ক্ষয় এবং ৬. অনবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্রমেই কমে যাওয়া।
দুর্ভাগ্য, বেশ কিছু সহজবোধ্য কারণে জিপিআই প্রতিনিধি পরিষদের কমিটির বাইরে কখনোই আসবে না। জিপিআইয়ের যে ‘কস্ট’-তালিকা রয়েছে সেগুলো জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হলে সত্যিকারের রিপোর্টেড জিডিপি হবে সবসময়ই মাইনাস : মাইনাস ৫ শতাংশ থেকে মাইনাস ২৫ শতংশ; কখনোই প্লাস ২ শতাংশ থেকে প্লাস ৬ শতাংশও নয়।

জিডিপির দুর্বলতা কাটিয়ে জিপিআইয়ের মতো বিকল্প সূচক চালু না করলে খুব সম্ভবত, আমাদের পৃথিবী অচিরেই হয়ে পড়বে পুরোপুরি বিশৃঙ্খল, দিকনির্দেশনাহীন, নিয়ন্ত্রণহীন, যেমনটি এরই মধ্যে অনেক বাস্তুব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণীন হয়ে পড়েছে। যেমন- আমাজন রেইন ফরেস্ট কার্বনগ্রহীর বদলে হয়ে উঠছে কার্বন-নিঃসরক; গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ৫০ শতাংশ প্রবাল নিঃশেষ হয়ে গেছে পাঁচ বছরে; সাইবেরিয়ান পার্মাফ্রস্টে (ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চল) সবচেয়ে বড় ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটেছে; দুঃখজনক পর্যায়ে হারিয়ে যাচ্ছে সৌর বিকিরণের সবচেয়ে বড় প্রতিফলক উত্তর মেরু; গ্রিনল্যান্ডে চলছে বরফ গলার ‘সুপার মেল্টডাউন’ প্রক্রিয়া; অ্যান্টার্কটিকায় অপ্রতাশিতভাবে বাড়ছে বরফের হিমবাহ প্রবাহ এবং ৫০ বছরের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মেরুদণ্ডী প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। এমনি আরো ঘটনার কথাই বলা যায় জিডিপি বাড়ানোর প্রতিযোগিতার পরিণতি হিসেবে।

এসব বিবেচনায় ইলহান ওমরের জিপিআই বিল একটি চমৎকার ধারণা। কিন্তু এর পরও তার এই বিল পাস না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, আমেরিকার কাছে ‘অর্থনীতির আকারটাই’ শুধু গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপি পরিমাণ বাড়ানোই তাদের মুখ্য কর্ম। আমেরিকার জিডিপির অর্থ বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। আমেরিকান জিডিপির অর্থ- দূষণের ক্ষতি এড়িয়ে চলা, কৃষিজমি হারানো আমলে না নেয়া, কীটনাশক দিয়ে মাটিকে দূষিত করে তোলা, কৃত্রিম সার ব্যবহার করে কৃষিজমির মান কমানো, ‘পৃথিবীর কিডনি’ হিসেবে বিবেচিত জলাভ‚মি ধ্বংসের পথ খোলা, অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ৫ শতাংশ মানুষের দেশ হলেও বিশ্বে ২৮ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী। দেশটি অনবায়নযোগ্য জ্বালানিসম্পদে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। জিডিপি বাড়িয়ে তোলার প্রতিযোগিতার কারণে আমাদেরকে যে ক্ষতি বহন করে চলতে হচ্ছে, তা হিসাব-নিকাশের বাইরে রাখা হচ্ছে। কারণ, এগুলোর হিসাব ধরলে জিডিপির মান ঋণাত্মক হবে প্রতি বছর।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক; কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement
শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ

সকল