২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

কৃষি- করোনা সঙ্কটে অর্থনীতির চালিকাশক্তি

- ফাইল ছবি

জীবন ও জীবিকা
মহামারী চলাকালীন, অবশ্যই যেকোনো জাতির জন্য প্রাথমিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, জনগণের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমানো বা তাদের জীবন বাঁচানো। আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া বা অভ্যন্তরীণ চলাচলে বিধিনিষেধের মূল কারণ হলো; জীবন বাঁচানো বা ঝুঁকি কমানো। জীবন বাঁচাতে ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি কমাতে এগুলো যথাযথ পদক্ষেপ বলে বিবেচ্য। তবে এসবের পরিণামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে গেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তাতে উৎপাদন কমে গেছে। আমদানি রফতানি কমে গেছে। বিমান চলাচল একেবারে বন্ধ না হলেও স্থবির হয়ে গেছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ মোটামুটি বন্ধ বলা যায়। সীমিত পরিবহন ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে স্থল, বিমান ও সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রমও সীমিত।

এটি সত্য যে, জীবন বাঁচানোর তাগিদে ক্ষেত্রবিশেষে শিল্প কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এটিও সত্য যে, জীবন বাঁচাতে অনেক ধরনের উপকরণের প্রয়োজনীয়তা আছে। ওই সব উপাদান ও উপকরণের উৎপাদন চালু না রাখলে জীবন বাঁচানো যাবে না। এসব পণ্যের উৎপাদন শুধু স্বাভাবিক পরিমাণে নয়, বরং দেশে দেশে বহুবিধ নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব পণ্যের উৎপাদন আগের চেয়ে আরো বাড়িয়ে দিতে হবে। এসবের মধ্যে প্রাথমিক হলো; ওষুধ, জীবন রক্ষার সরঞ্জাম ও খাদ্যপণ্যের উৎপাদন; অন্যথায় জনগণকে কোভিড-১৯ মহামারী থেকে বাঁচাতে পারলেও ক্ষুধা থেকে বাঁচানো সম্ভব নয়।

খাদ্য উৎপাদন বলতে শুধু চাল নয়, অন্যান্য খাদ্যশস্য ও পণ্য যেমন; ভুট্টা, গম, তৈলবীজ, শাকসবজি, মসলাজাতীয় ফসল, ফলমূল এবং গবাদিপশু, পোলট্রি, ডিম, দুধ ও মৎস্য, এমনকি লবণ অন্তর্ভুক্ত। এগুলো কৃষি খাতের আওতাভুক্ত। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এগুলো হলো মৌলিক। অতএব খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রমের আওতায় সব ধরনের কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে; সেই সাথে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বাড়াতে যেসব উপকরণ প্রয়োজন সেসবের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। এসবের অন্তর্ভুক্ত হলো; বীজ, সার, বালাইনাশক, গবাদি পশুখাদ্য, ওষুধ, এআই কার্যক্রমের সামগ্রী। এরই মধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, জলবায়ুর পরিবর্তন ও মহামারীর কারণে বিশ্বের বহু দেশে খাদ্য উৎপাদন, জাহাজ চলাচল ও কনটেইনারের অভাবে সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক দেশ কিছু কিছু ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রী রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জন্য পরনির্ভরশীলতা হবে প্রকাণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। সুতরাং এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জীবন ও জীবিকার তাগিদে কৃষি খাতে বড় আকারের সহায়তার মাধ্যমে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ানো।

স্বাধীনতার পর দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাত কোটি। বর্তমানে তা ১৭ কোটি ছাড়িয়েছে। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিনিয়ত কমছে আবাদি জমি। কৃষিমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর আবাদকৃত জমি ০.৪ শতাংশ হারে কমে যাচ্ছে। এ কারণে সাধারণ নিয়মেই ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা। বর্ধিত জনসংখ্যা, আবাদকৃত জমি হ্রাস, উৎপাদনশীলতায় স্থবিরতা- এসব কিছু মিলে দেশে প্রয়োজনমতো খাদ্যের জোগান এমনিতেই বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অবশ্য আমাদের রাজনীতিকরা যখন ‘দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ বলে আওয়াজ তোলেন, তারা মাত্র ধান উৎপাদনকে বোঝান। কিন্তু ধানের সাথে অন্যান্য মৌলিক খাদ্যপণ্যের উৎপাদন না বাড়াতে পারলে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। তাই এই বৃহৎ জনসমষ্টির জন্য বছরব্যাপী খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, প্রতি মৌসুমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। আবারো পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে- খাদ্য বলতে শুধু ধান নয়, বরং সব রকমের খাদ্য ফসল, যেমন শাকসবজি, ভোজ্যতেল, ডাল ও মসলাজাতীয় ফসলও এবং সেই সাথে লবণ, দুধ, ডিম, গোশত ও মাছের উৎপাদন বাড়ানো বোঝায়।

খাদ্য উৎপাদনে সুসঙ্গত পরিকল্পনা
ব্যাপকহারে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো তখনই সম্ভব যখন এ উদ্দেশ্য সফল করতে সব ঝুঁকিগ্রাহকদের সাথে আলোচনা করে, সবার মিথস্ক্রিয়ায় একটি সুসঙ্গত ও বলিষ্ঠ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেই পরিকল্পনা নিষ্ঠার সাথে বাস্তবায়ন করা হয়। বিভিন্ন দেশ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। যত দিন পর্যন্ত কোভিড -১৯ মহামারী সংক্রমণ প্রশমিত বা প্রতিরোধ করা না যায় অথবা এর নিরাময়ের ওষুধ আবিষ্কার না হয়, তত দিন কোনো না কোনো উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ও চলাচলের ওপর বিধিনিষেধের নীতি অব্যাহত থাকবে। দেশে দেশে বিধিনিষেধ মাঝে মধ্যে শিথিল করা হলেও তাতে অর্থনীতিতে তাড়াতাড়ি গতি ফিরে আসবে না। এ অবস্থায় যেসব দেশ তাদের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হবে না, ওই সব দেশ তীব্র খাদ্য ঘাটতিতে ভুগবে। সাথে সাথে রাজনৈতিক সঙ্কটেও নিপতিত হবে।

সরকার সব ঝুঁকিগ্রাহকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বয় করে যদি সঠিক কর্মকৌশল গ্রহণ করে এবং সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করে, তা হলে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ প্রসারিত হবে। এ মুহূর্তে খাদ্য ঘাটতি বাজারে দৃশ্যমান না হলেও বাজারে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। টিসিবির খাদ্যপণ্য ট্রাকের পেছনে (দরিদ্র মানুষের ক্রেতা) লাইন লম্বা সৃষ্টি হচ্ছে। বহু দেশ খাদ্যপণ্য রফতানিতে মাঝে মধ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করা শুরু করেছে। সেই সাথে পরিবহনে ঘাটতি ইত্যাদি মিলে সরবরাহ চেইন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে খাদ্যপণ্যের ঘাটতি মোকাবেলা করতে হলে অবশ্যই স্থানীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ বহু খাদ্যপণ্যের জোগান আমদানিনির্ভর; বিশেষভাবে গম, ভুট্টা (পশুখাদ্যের জন্য), ভোজ্যতেল, দুধ, মসলা প্রভৃতি। এসব পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন সম্ভব নয়, সেসব পণ্যের কিয়দংশ আগাম আমদানি করে মজুদ রাখার কৌশলও অবলম্বন করা যায়।

খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা
কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা ও মোট উৎপাদন বাড়াতে হলে প্রান্তিক কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের অবশ্যই পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের খাদ্যসহায়তা দিতে হবে। উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো; ‘উভয় দিকেই সরবরাহ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখা।’ কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজন; বীজ, সার, বালাইনাশক, গবাদিপশু খাদ্য ও ওষুধের মতো উপকরণের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। তেমনিভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের যথাসময়ে যথাযথ বিপণন ও বিতরণের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থাকে চলমান রাখা দরকার। কৃষিপণ্যবাহী যানবাহন ও শ্রমিকরা যখন যাতায়াত করেন, তখন অতি উৎসাহী আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য বা স্থানীয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা যেন কোনো রকম হয়রানির শিকার না হয়। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

উৎপাদিত পণ্যের বিপণনে সহায়তা
কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা হলো বক্তব্যের অর্ধেক। বাকি অংশ হলো প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদিত পণ্যের যথাসময়ে বিপণন। চাষিরা সাধারণত আড়তদারের কাছে পণ্য বিক্রি করে। তার পর আড়তদাররা বা মধ্যস্বত্ব কারবারিরা ওই সব পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে। অতএব, স্থানীয় প্রশাসনকে উৎপাদিত ফসলের বিক্রি ও বিলি-বণ্টনের জন্য জায়গা এবং দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পৌঁছানোর জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি উপজেলা-জেলায় পাইকারি ক্রেতাদের জন্য জায়গা চিহ্নিত করে দিতে হবে, যেখানে তারা পণ্য সংগ্রহ করে পরিষ্কার ও যাচাই-বাছাই করতে পারে। এসব ব্যবস্থা যথাযথভাবে না করা হলে; কৃষক যথাসময়ে তার পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। পণ্য পচে যাবে। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পণ্য থাকবে না। ভোক্তারা ঠিকমতো পণ্য পাবে না। দাম বেড়ে যাবে। তাতে ভোক্তারা পণ্যের অধিক মূল্য দিতে বাধ্য হবে। প্রান্তিক চাষিরা আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরিণতিতে কৃষকরা ভবিষ্যতে অধিকতর উৎপাদনে উৎসাহিত হবে না। তাই স্থানীয় প্রশাসনকে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে খাদ্যপণ্য কোনো বাধাবিঘ্ন ছাড়াই শহরে বা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে।

মিষ্টি কুমড়া বা চাল কুমড়ার মতো যেসব পণ্য কিছু দিনের জন্য গোলাজাত করা যায়, এমন ফসলগুলো সংগ্রহ করে স্থানীয়ভাবে গুদামজাত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের ফসল মন্দা-পর্বে লাভে বিক্রি করা সম্ভব। পেঁপে বা টমেটোর মতো খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেয়া হলে তারা এসব ফসল সংগ্রহের সাথে সাথে চাষিদের থেকে ক্রয় করে নেবে। ভুট্টা, যদিও সংরক্ষণ করা যায়, সাধারণত বেসরকারি খাতের ফিড মিল মালিকরা ক্রয় করে থাকেন। ধানের মতো সরকার ক্রয় করে না। তাই ফসল সংগ্রহ করার সাথে সাথে কৃষকদের থেকে তা ক্রয় করে নিতে মিল মালিকদের উৎসাহ ও প্রণোদনা দেয়া আবশ্যকীয়।

সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ক্রেতা না থাকায় এবং যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে গত মৌসুমে শত শত টন টমেটো মাঠে পচে গেছে। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ক্ষুদ্র চাষিরা দুধ উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু বাজারজাতকরণের অভাবে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মাছের বেলায়ও তাই। কোভিড-১৯ এর কারণে প্রান্তিক চাষিরা নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কোনো জায়গায় শ্রমিকের স্বল্পতা, কোথাও ক্রেতার স্বল্পতা, আবার কোথাও যানবাহনের অভাব, কোথায়ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞার ফলে বিপণনে বিঘ্ন, কোথাও গোলাজাত করার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে। এক কথায় বলতে গেলে ফসল উৎপাদনকারীরা বহুভাবে ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদেরকে সহায়তা দেয়া জরুরি।

পচনশীল পণ্যের বিপণন ও বিতরণ
উৎপাদিত অনেক কৃষিপণ্য পচনশীল। এগুলো দ্রুতগতিতে বিপণন ও বিতরণ করা অত্যাবশ্যক। এসব ফসল সংগ্রহ করতে যেমন বিলম্ব করা যায় না, তেমনি উদ্বৃত্ত রেখে দেয়া যায় না। মাঠেও ফেলে রাখা যাবে না। এমনকি ঘরে গুদামজাত করে রাখাও সম্ভব নয়। এসব ফসল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মাঠ বা গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। বিলম্ব না করে আড়তদার বা কারবারিদের মাধ্যমে যথাসময়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে হবে। পচনশীল ফসলের মধ্যে আছে যেমন; তরমুজ, পেঁপে, আম, কলা, টমেটো এবং অনেক ধরনের সবজি; যেমন- শসা, লাউ, বেগুন, ঢেঁড়স, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সব ধরনের শাক প্রভৃতি।

কিছু সবজি বা মসলা আছে যেমন; মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, পেঁয়াজ- এগুলো সংগৃহীত হওয়ার পর কিছু দিন গোলাজাত করে রাখা যায়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষুদ্র চাষি তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে অবিলম্বে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। তাই যেসব পণ্য পচনশীল বা চাষিরা বিক্রি করে দিতে বাধ্য, সেগুলো চাষিরা যেন যথাসময়ে বাজারজাত করতে পারে সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিতে হবে। যেগুলো গোলাজাত করে রাখা যায় সরকারি (স্থানীয় প্রশাসন) ব্যবস্থাপনায়, সেগুলো সংগ্রহ করে গুদামজাত করা প্রয়োজন। এটি করা হলে প্রান্তিক চাষিরা অর্থসঙ্কট থেকে মুক্ত হবেন।

এমন সঙ্কটময় অবস্থায় প্রান্তিক চাষিরা যদি উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ে বা বিপণন ও বিতরণে সহায়তা পায়, তা হলে ভবিষ্যতে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়াবে। কৃষি উৎপাদন বাড়ালে কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাবে যে খাদ্যসঙ্কটের উদ্ভব হতে পারে, তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। অন্য দিকে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে কৃষি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। একই সাথে শহরে বসবাসরত মানুষের খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না।

চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে সব প্রান্তিক চাষি কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যারা পচনশীল পণ্য যারা তরমুজ, কলা, পেঁপে, আম, টমেটো, সবজি, ফুল ও দুধ উৎপাদন করে। গত ১০ বছরে ফুলের বাজার ও উৎপাদন ব্যাপকহারে বেড়েছে। বিভিন্ন রকমের উৎসব; যেমন বাংলা নববর্ষের মতো দিনগুলোকে সামনে রেখে নানা রকমের ফুল আবাদ করা হয়। গত বছর কোভিড-১৯ এর কারণে এ চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে অনেক জায়গায় আম ও কলা সংগ্রহের সময়। ক্রেতা না থাকায় এবং যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে অনেক জায়গায় কৃষকরা কলার কাঁদি গাছ থেকে নামাচ্ছে না। এসবই পুষ্টি নিরাপত্তায় মানুষের মৌলিক খাদ্য।
(চলবে)

লেখক : এমএসসি, কৃষি অর্থনীতিবিদ। প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন। সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই


আরো সংবাদ



premium cement