২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

তালেবান ইস্যু ও তিন মিটিং

তালেবান ইস্যু ও তিন মিটিং - ছবি : নয়া দিগন্ত

আফগানিস্তানকে ঘিরে এশিয়ায় কূটনৈতিক দৌড়াদৌড়ি চরমে উঠেছে। গ্লোবাল পাওয়ারগুলোর সবাই তো বটেই, যারা মুরোদ না থাকলেও আকাক্সক্ষী, তারাও এতে শামিল হয়ে যাচ্ছে। কারণ একটাই তালেবান ইস্যু। আরেকটু ভেঙে বললে, গত ২০ বছর হিতাহিত ভুলে আমেরিকার এই আফগানিস্তানে চালানো আক্রমণ ও দখলদারির দিন সম্ভবত আপাতত শেষ হবে। কিন্তু শেষ ‘কাফফারা’ দিতে এবার সে এক নয়া জমানায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

গ্লোবাল নেতৃত্বের পালাবদলের কথা যা আজকাল খুব শোনা যায়, আমেরিকার বদলে সে জায়গায় চীনের উঠে বসার কথা বা লক্ষণ-ইঙ্গিতও ফুটে উঠছে। আমেরিকার এই শাস্তির কারণও আফগানিস্তান। মূলত এই যুদ্ধের খরচ জোগাতে গিয়েই, এতদিন সামলে চলা আমেরিকার অর্থনীতি, ২০০৭ সাল থেকেই বেসামাল হয়ে যায়। এই খরচ বেহিসাবি কারণ এই যুদ্ধ অন্তহীন ও অপরিকল্পনা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এই খরচের কোনো রিটার্ন নেই, এর কিছুই ফেরত আসবে না এটা ক্রমান্বয়ে নিশ্চিত হয়ে যাওয়াতে ২০০৮ সাল থেকেই গ্লোবাল মহামন্দা নেমে আসে। আর তাতেই প্রথম সুবিধাটা যায় চীনের ঘরে যে তখন নিজ অর্থনীতির কেবল ডাবল ডিজিট জিডিপির ২০ বছরে পৌঁছাতে যাচ্ছিল।

তাই ২০১৪ সালেই শেষ। কারণ আমেরিকান অর্থনীতির খরচ জোগানোর অপারগতা প্রকাশের শেষ সময় ছিল সেটা। তাই যে প্রথম প্রধান সেনা প্রত্যাহার (আমেরিকাসহ ‘ন্যাটো’ ও তার বন্ধুদের সেনা) শুরু হয়েছিল তা এবার ২০২১ সালে বাদবাকি সমূলে প্রত্যাহার শেষ হতে প্রতিশ্রুত হয়েছে, যার টার্গেট আগস্টের শেষে। অর্থাৎ এ মাসের মধ্যেই।

এতে আফগানিস্তানে আমেরিকার যা অর্থসম্পদ ক্ষতি হয়েছে তা তো হয়েছেই; কিন্তু সেটাই শেষ নয়। এক বিরাট সম্ভাব্য ওলটপালট সামনে অপেক্ষায়। আর তাতে আমেরিকার এর চেয়েও বড় ক্ষতির সম্ভাবনা থাকছে। গ্লোবাল ক্ষমতার নতুন কোনো ভারসাম্য, অন্তত এশিয়ার ভারসাম্য এখান থেকেই পুনর্লিখিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। কারণ মূল সে ঘটনা হলো তালেবান- মানে ১৯৯৬ থেকে আমেরিকার ২০০১ সালে দখলের আগে পর্যন্ত যারা কাবুলের সরকারের ক্ষমতায় ছিল, সেই তালেবানরা। নিঃসন্দেহে সেই আর এই- তালেবানের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা এবার আকাশ-পাতাল ফারাক দেখব বলে আশা করতে পারি। তালেবানরা এবার ‘আগের মতো একই তালেবান কি না’ (ভারত যেভাবে আগেই প্রপাগান্ডা শুরু করছে)- সেটা বড় ফ্যাক্টর নয়।
কারণ মনে রাখতে হবে, ২০০১ সালে আমেরিকায় নাইন-ইলেভেনের হামলার পর পাল্টা আমেরিকা আফগানিস্তানে হামলা ও দখল করে ৭ অক্টোবর ২০০১ সালে। আর এর পরই জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৫ আসনে সর্বসম্মতিক্রমে তালেবান শাসন ও সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে তারা ভোট দিয়েছিল ১৪ নভেম্বর ২০০১। অথচ আজকের অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। আমেরিকান কোনো প্রস্তাবের বিপক্ষে অন্তত দু’টি ভেটো পড়বে আর বিভক্তি ভোট হয়ে যাবে।
এর ওপরে মূল কথা, যে গ্লোবাল পালাবদলের কথা তুলেছি, আফগানিস্তান-তালেবান ইস্যুর ওপর এরই ছাপ আছে পুরোদস্তুর। যেমন- গ্লোবাল নেতৃত্বের পালাবদলে ইতোমধ্যেই ‘আমেরিকা বনাম চীন’ এমন দুটো পক্ষের মধ্যে অন্য দেশগুলো কে কোন দিকে সেই পক্ষ-বিপক্ষ প্রতিদিনই আরো চোখা হয়ে উঠছে। গ্লোবাল পালাবদলে ‘আমেরিকা বনাম চীন’ এই পক্ষ-বিপক্ষের ছাপটাই আফগানিস্তানের পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও একই পক্ষ-বিপক্ষ হয়ে পেছনে কাজ করছে। যেমন- কে কে আমেরিকার ফেলে যাওয়া পুতুল সরকারের পক্ষে আর কে কে তালেবানের (শর্ত সাপেক্ষে) প্রতি সহানুভূতিশীল- এই দুই ভাগেই প্রতিফলিত হচ্ছে প্রথমটা আমেরিকার পক্ষে আর পরেরটা ‘চীনের পক্ষ’।

তবে আফগানিস্তানের এখনকার সব ঘটনার শুরু যে আমেরিকান হামলা থেকে সে আমেরিকার এখন প্রধান টার্গেটও স্বার্থ হলো- আফগানিস্তানে আমেরিকার সব অর্থব্যয় বন্ধ করা যা ড্রেনে পড়ছে, এরপর এ দেশ ফেলে পালিয়ে যাওয়া। তাই, এরপরে কাবুলের সরকার টিকে থাকতে পারবে কি না সেটা আমেরিকার কাছে সেকেন্ডারি, পেরে গেলে ভালো- এ রকম।

তিনটা আলাদা মিটিং কিন্তু প্রায় সমান্তরালে
আমেরিকান সেনা আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের সময় আর বেশি নেই, মাত্র আগস্ট মাসটাই। তাই আমরা অস্থির কূটনৈতিক ব্যস্ততা দেখছি যার মধ্য থেকে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহের তিনটা মিটিংয়ের কথা এখানে তুলে ধরব।

এক.
সময়ের হিসাবে ধরলে তিন মিটিংয়ের সবশেষেরটা হলো ২৮ জুলাইয়ে, ৯ সদস্যের তালেবান প্রতিনিধির চীন সফর ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ওয়াং ই-এর সাথে বৈঠক। এতে তালেবানদের দিক থেকে এই প্রথম আমেরিকার বিরুদ্ধে তাদের ‘কাউন্টার ওজন’ প্রকাশ করা মানে পাল্টা-পাল্লায় বাটখারার ভার দেখানো হলো। আর তাতে চীনের পেছনে রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশগুলো আর (হবু ছয় দেশীয় জোট দেখানোর কারণে) সম্ভবত বাংলাদেশও- তাদের সবাই যে আছে সেই অনুমান ছড়িয়ে দেয়া হলো। এর পাল্টা হিসেবে আমেরিকার বগলে এক ভারত ছাড়া আর কেউ আপাতত দৃশ্যমান নয়। আমেরিকা-ভারতের বিপরীতে তালেবানের এই বাটখারার ভার দেখানো তাৎপর্যময় অবশ্যই। এটা আরো তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কিছু মন্তব্যে। যেমন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তালেবানরা ‘এখন আফগানিস্তানে এক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি।’ আবার রয়টার্স রিপোর্টের শিরোনাম করেছে, চীন বলছে, তালেবানদের কাছে চাওয়ার আছে যে, তারা আফগানিস্তানের শান্তি প্রতিষ্ঠায় মিলমিশ ও পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক!’

এ ছাড়া ওদিকে চীনের উইঘুরে (জিনজিয়াং প্রদেশ যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা) ‘পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামী আন্দোলন’ নামে সশস্ত্র সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণে বা রুখতে তালেবানরা চীনকে সাহায্য করবে- চীন এই আশাবাদ রেখেছে। ওই মিটিং শেষে তালেবান মুখপাত্র মোহাম্মদ নাঈম জানিয়েছেন, ‘তারা চীনকে আশ্বস্ত করেছেন, আফগান-ভূমি চীনের বিরুদ্ধে কাউকে ব্যবহার করতে তারা দেবেন না।’ তালেবানদের আরেক মিডিয়া মুখপাত্র সুহেল শাহীন অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন, চীন আফগানিস্তানের অবকাঠামো পুনর্গঠনের ‘স্বাগত-বন্ধু’।

সার কথায়, তালেবানেরা সশস্ত্র এবং অদায়িত্বশীল এক রাজনৈতিক শক্তি বলে পশ্চিমে ও বিশেষ করে ভারতের দিক থেকে যে প্রচার আছে বা খারাপ ইমেজ করে রাখা আছে, একালে সেসব কাটানো ও লঘু করার দিক থেকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এই বৈঠক তালেবানদের অনেক সুবিধা দেবে, ইমেজ বাড়াবে।

দুই.
আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ২৭-২৮ জুলাই ভারত সফর করে গেলেন। এক কথায় বললে এটা ছিল আফগানিস্তানের পরিস্থিতিতে বেদিশা ও একা হয়ে পড়া ভারতকে আশ্বাস দিয়ে পিঠ-চাপড়ে দেয়ার সফর।

প্রথমত, আফগানিস্তান-তালেবান ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি তার অভ্যন্তরীণ জনগণ, কূটনীতিক, একাডেমিশিয়ান ও মিডিয়াকর্মীদের কাছেই আস্থা একেবারে হারিয়েছেন। তারা লেখা শুরু করে দিয়েছেন, ‘আফগানিস্তানে ভারত একা হয়ে গেছে।’ আর উল্টা পাকিস্তানের ভেতরে আমেরিকা ও রাশিয়া নিজ নিজ স্বার্থের আশ্রয় খুঁজছে। ও দিকে পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার চীন তো আছেই। মনে করা হচ্ছে, মূলত এই ফ্যাক্টসটা মিডিয়ায় প্রচার হয়ে পড়াতে মোদি ভীত হয়ে যান। বিজেপির ধারণা, পাকিস্তানের মোদির এই ভারতকে ছাড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা আগামী যেকোনো ভোটে মোদির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে। আর সেটা কাউন্টার করতেই ব্লিঙ্কেনকে এনে যেন দেখিয়ে মোদি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন। তবে এর ফল তেমন সুখকর হয়নি।

এর অনেক কারণের মধ্যে প্রধান কারণ হলো, আফগানিস্তান-তালেবান ইস্যুতে ভারত ও আমেরিকার স্বার্থের অনেক মিল থাকলেও কিন্তু অমিল কম নয়। যেমন- ব্লিঙ্কেনের ফিরে যাওয়ার আগে ভারতে মিডিয়ায় সামনে এসেছিলেন তিনি। ততক্ষণে চীন-তালেবান মিটিংয়ের রিপোর্ট মিডিয়ায় এসে গেছে। তাই, তালেবানের চীন সফরের সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়ে এর জবাব দিতে গিয়ে ব্লিঙ্কেন প্রকারান্তরে চীনের প্রশংসা করে বসেন। বলেন, এই ‘সফরটা ইতিবাচক’। চীন যদি যুদ্ধাবস্থার শান্তিপূর্ণ প্রস্তাব ও আফগানিস্তানে কোনো ধরনের সরকারের কথা বলে যা সত্যিই সবাইকে নিয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক তবে তা ইতিবাচক।’ এখন ব্লিঙ্কেনের পক্ষ থেকে চীনের এই পরোক্ষ প্রশংসা তো মোদির জন্য হজম করা খুবই মুশকিল। এই হলো, আমেরিকা ও ভারতের স্বার্থের বেমিল। ওদিকে ভারতের কূটনীতিক, একাডেমিক বা মিডিয়াকর্মীর সবচেয়ে বড় অনাস্থা হলো- যার যার স্বার্থ আছে সংশ্লিষ্ট এমন সবাই ইতোমধ্যে তালেবানদের সাথে কয়েকবার বৈঠক এবং আলোচনা, বুঝাবুঝি বা সমঝোতা করে নিয়েছে। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ইরান মূলত কেউ বাকি নেই এ দিক দিয়ে। অথচ ভারত এই পথেই নেই। এটাতে তারা অসন্তুষ্ট। ভারত কেবল গোপনে একবার তালেবানদের সাথে দেখা করেছে যা প্রকাশ্যে অস্বীকার করে থাকে। আর পাকিস্তান তালেবানদের ভারতের বিরুদ্ধে প্রভাবিত করছে বা উসকাচ্ছে বলে ডাহা মিথ্যা এমন প্রপাগান্ডায় ভারত লিপ্ত হয়ে গেছে। অতীতে তালেবানরা কী কী খারাপ কাজ করেছে এর বর্ণনা দিয়ে ভারত এখন প্রচার শুরু করেছে।

আসলে একেবারেই সঠিক পলিসিতে মোদির ভারত নেই বলে ভারতের কূটনীতিক, একাডেমিক বা মিডিয়াকর্মীদের প্রধান অনাস্থা। এ ছাড়া আরো ভেতরের খবর হলো, ভারত সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ মুডে আছে। তাই আফগানিস্তান-তালেবান ইস্যুতে ভারত কোনোই প্রস্তুতি নেয়নি। কারণ ভারতের ধারণা- তালেবানরা পরাজিত হবে, হারিয়ে যাবে। আর বর্তমান সরকারই থাকবে যা আসলে অনিশ্চিত জেনেও ভারত আমেরিকার ভরসায় বসে থাকতেই চায়। কিন্তু সে দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরেই সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে আমেরিকার চাওয়া আর ভারতের চাওয়া তো এক নয়।

তবে ব্লিঙ্কেনের এবারের সফর শেষের পর থেকে, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া হুমকি ও আক্রমণ শুরু করেছে। দিল্লি ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের নতুন মুখপাত্র অরিন্দম বাগচিকে দিয়ে বলিয়েছে, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানকে জানাচ্ছে যে, সারা কাশ্মিরই ভারতের অংশ। অর্থাৎ পাকিস্তানের দখলে থাকা কাশ্মির ভারতেরই ভূমি- পাকিস্তানের দখল করে থাকা। তাই পাকিস্তান-কাশ্মিরের কিছু অংশের ওপর দিয়ে চীন-পাকিস্তানের ‘তথাকথিত’ করিডোর নির্মাণ করা হয়েছে সেটাসহ সব অবৈধ দখল ছেড়ে যেন পাকিস্তান চলে যায়Ñ সেই কড়া আহ্বান রেখেছে ভারত।

একই সাথে তালেবানদের চীনে গিয়ে মিটিং করার বিরুদ্ধে ভারত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আর সবশেষে, ‘আফগানিস্তানে গায়ের জোরে কোনো সরকার কায়েমের বিরুদ্ধে’ মানে, তালেবানদের কাবুলের ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে ভারতের আপত্তির কথা জানিয়েছে। তবে এসব হুঙ্কার মোদির ভারত মূলত তার অভ্যন্তরীণ জনমত যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অনুমান, তাকে ফিরানোর লক্ষ্যের বলা হয়েছে বলে দেখেছেন অনেকে। কিন্তু আফগানিস্তানে ভারতের এক সাবেক রাষ্ট্রদূত ছিলেন বিবেক কাটজু; তিনি খুবই কড়াভাবে মোদি-জয়শঙ্করের নীতি পলিসিকে তুলোধোনা করে হিন্দুস্তান টাইমসে কলাম লিখেছেন। আর এর শিরোনামে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ‘ভারত আফগানিস্তানে হেরে যাচ্ছে।’

তিন.
এটা হলো গত ২৫ জুলাইয়ে চীন-আমেরিকার নিজস্ব সম্পর্ক প্রসঙ্গে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক। বাইডেন জানুয়ারিতে মার্কিন ক্ষমতায় শপথ নেয়ার পরে মার্চের ১৮-১৯ তারিখে প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দু’পক্ষের প্রতিনিধির বৈঠক হয়েছিল যা খুবই তিক্ততা দিয়ে শেষ হয়েছিল। এবারের মিটিংটাকে এক দিক থেকে এরই পাল্টা সফর মনে করছেন অনেকে। বিশেষত আগের মিটিংটা হয়েছিল আমেরিকার রাজধানীর বাইরে দেশের উত্তরের আলাস্কা শহরে। আর এবারের আমেরিকার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানের সাথে বৈঠকটা দেয়া হয়েছিল বেজিংয়ের বাইরে তিয়ানজিং শহরে যেটা আসলে চীনা-আফগান সীমান্তের এক শহর।

এই মিটিংয়ের সার কথা ছিল, নিজেদের মধ্যে যত মনোমালিন্যই থাকুক যুদ্ধ তারা কেউ চায় না- এ কথাটা প্রকাশ করে রাখা। যেমন- এই মিটিংয়ের পরে আমেরিকা মিডিয়াকে জানিয়েছে, তাদের সম্পর্ক খুবই ‘টাফ কম্পিটিশনের’। তবে একই নিঃশ্বাসে তারা জানিয়েছে যে, ‘আমেরিকা চীনের সাথে যুদ্ধ-সঙ্ঘাত চায় না’ এবং আমেরিকা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতেই থাকবে। এর পাল্টা চীন বলেছে, ‘তিনটা জিনিস দেখতে চাই আমরা।’ আমেরিকা আমাদের মডেলের রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা বলবে না; চীনা পথের উন্নতি নিয়ে তারা কোনো কথা বলবে না। আর হংকং ও তাইওয়ান চীনের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। ফলে আমেরিকা যেন চীনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে, এ নিয়ে মন্তব্য করতে না আসে। তবে উভয়পক্ষই পারস্পরিক ডায়ালগ চালিয়ে যেতে চায় বলে জানায়। এক কথায়, না চাইতে কোনো যুদ্ধের শঙ্কা যেন কোনো পক্ষের মনে কাজ না করে তা আগেই মিটিয়ে রাখার মেসেজ তারা আদান-প্রদান করে রাখল।

কেন এমনটা হলো?
এর কিছুটা হদিস আমরা পাই ভারতের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচিকে দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মনের চরম ক্ষোভ উপচিয়ে প্রকাশ করা বিবৃতি থেকে। এরপর এ নিয়ে ভারতের সামরিক ইন্টেলিজেন্সিয়ার প্রতিক্রিয়া থেকে। যেমন পারভিন শাওনি নামে এক সাবেক মেজর যিনি একটা ‘ডিফেন্স ম্যাগাজিন’ চালান ও এর সম্পাদক। তিনি টুইট করে লিখেছেন ‘মোদি সম্ভবত যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আঁটছেন, যা তিনি কখনো জিততেই পারবেন না, আর এই যুদ্ধ তো এড়ানোযোগ্য!’ এ ছাড়াও লিখছেন, এটা ‘মোদির দুর্ভাগ্য যে, তার টপ সামরিক জেনারেল রাওয়াত; অগ্রসর সামরিক ওয়ারফেয়ার সম্পর্কে তার কোনো জানাশোনা নেই!’

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

goutamdas1958@hotmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান

সকল