২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ইইউ আদালতের হিজাববিরোধী কপট রুলিং

-

গত ১৫ জুলাই, ২০২১ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কোর্ট অব জাস্টিস (সিজেইইউ) এক কলঙ্কজনক রুল জারি করেছে। এই রুলে কোর্ট বলেছে- ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোম্পানিগুলো তাদের কর্মস্থলে কর্মীদের ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে কোনো কিছু পরিধান বা ব্যবহারের ব্যাপারে বৈধভাবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পারবে। কার্যত এই রুলিংয়ের মাধ্যমে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে কর্মক্ষেত্রে মুসলিম মহিলাদের হিজাবসহ ধর্মীয় পোশাক-আশাক পরার বিষয়টিকেই অবৈধ ঘোষণা করা হলো। তবে সমালোচনা এড়াতে রুলিংয়ে সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর কথাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর পরও এর বিরুদ্ধে সমালোচনা থামানো যায়নি। সমালোচনার জবাবে এই আদালত বলছে, এ রুলিংয়ের সিদ্ধান্ত হচ্ছে কোম্পানির মালিকেরা চাইলে তাদের কর্মস্থলে ‘রাজনৈতিক, দর্শনগত ও ধর্মীয়’ প্রতীক ব্যবহারের ওপর সাধারণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পারবে। আর এই আদালতের মতে, সিদ্ধান্তটি কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরাসরি বৈষম্য নয়। সমালোচকরা বিশেষ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আদালতের এই দাবি মানতে নারাজ।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। এই সংস্থার দাবি : ‘সিজেইইউ-এর এই হতাশাজনক রুলিং কোম্পানি মালিকদের জন্য মুসলিম নারী ও সেই সাথে পুরুষদের ওপরও ধর্মীয় বিশ্বাসের অজুহাতে আরো বৃহত্তর পরিসরের বৈষম্য চালানোর অনুকূল সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
সংস্থাটির মতে- ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই শীর্ষ-আদালতের রুলিংয়ের সুবাদে কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট কিছু শর্তাধীনে তাদের কর্মস্থলে মুসলিম মহিলাদের মাথার স্কার্ফ তথা হিজাব ব্যবহার নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার সুযোগ পাবে। এই রুলিং কার্যত ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের এক উদাহরণ। এর ফলে ইউরোপের মুসলিম মহিলাদেরকে তাদের কাজ অথবা ধর্মানুসরণ, এ দুটির একটিকে বেছে নিতে হবে।
মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটসওয়াচ’ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, বেসরকারি চাকরিজীবীদের ওপর ধর্মীয় পোশাক পরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ সৃষ্টির এই রুলিং সবচেয়ে বেশি আহত করবে মুসলিম মহিলাদের। তা ছাড়া এ সংস্থা এই রুলিংকে অভিহিত করেছে ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ হিসেবে। এইচআরডবিøউ-এর বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, ‘জামার্নিতে টিচার ও অন্যান্য বেসামরিক চাকরিজীবীদের ওপর আরোপিত ধর্মীয় পোশাক ও প্রতীক ব্যবহারে একই ধরনের বৈষম্যমূলক নিষেধাজ্ঞার ফলে মুসলিম মহিলারা তাদের স্কুলের শিক্ষকতার পেশা ছাড়ছেন। মুখ ঢেকে রাখার জন্য সে দেশে গত তিন বছরে ৬০০ মহিলাকে জরিমানা করা হয়েছে। আর ফ্রান্সে ২০০৪ সালে জারি করা নিষেধাজ্ঞার কারণে সে দেশের স্কুলগুলোতে চলছে হিজাব পরা মুসলিম বালিকাদের ড্রপ আউট প্রবণতা।’ এই সংস্থা বলছে, এই রুলিংয়ের মাধমে ধর্মীয় স্বাধীনতা- বিশেষ করে মুসলিম মহিলাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর ক্ষত সৃষ্টি করা হয়েছে। মুসলিম মহিলাদের হিজার ও বোরখা পরার ওপর এ ধরনের জবরদস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে।

আদালতটি বলেছে- কখনো সত্যিকার অর্থে প্রয়োজন দেখা দিতে পারে গ্রাহকদের কাছে কোম্পানির ভাবমর্যাদা নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরা ও সামাজিক বিরোধ এড়ানোর। সে প্রয়োজন মেটাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোম্পানিগুলো তাদের কর্মস্থলে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও দর্শনগত মতপ্রকাশ সীমিত করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অভিমত হচ্ছে, ‘সত্যিকারের প্রয়োজন’, ‘গ্রাহকদের কাছে কোম্পানির ভাবমর্যাদা রক্ষা’ ও ‘সামাজিক বিরোধ এড়ানো’ ইত্যাদি অজুহাত তুলে অতীতে বারবার খোলা হয়েছে কর্মসংস্থানে বৈষম্য সৃষ্টির দুয়ার। এই সংস্থার বিবৃতিতে সবিশেষ উল্লেখ করা হয়- মুসলিম মহিলাদের হিজাব বা বোরখা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে সমভাবে উচিত ইহুদিদের মাথায় কিপ্পাহ পরা ও শিখদের পাগড়ি পরার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই। নানা অজুহাতে যত নিষেধাজ্ঞা সবই শুধু মুসলমানদের ওপর, বিশেষত মুসলিম মহিলাদের ওপর।

মুসলিম মহিলারা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে ঐতিহ্যগতভাবে তাদের মাথা ও কাঁধ ঢেকে হিজাব পরে আসছে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরেই এই হিজাব পরা না পরা নিয়ে ইউরোপজুড়ে দ্বিধাবিভক্তি চলে আসছিল। ইউরোপে হিজাব পরা মুসলিম মহিলারা বেশ কয়েক বছর ধরেই তাদের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রশ্নে এক উদ্বেগজক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সিজেইইউ এই বিতর্কিত রুল জারি করল। এই রুলিং নিশ্চিতভাবেই নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রশ্নে এসব মহিলার উদ্বেগ আরো শতগুণ বাড়িয়ে তুলবে। এই রুলিং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ ও বৈষম্য সৃষ্টির এক কপট পদক্ষেপ। ইউরোপে এভাবে মুসলিম মহিলাদের ওপর খোলাখুলি বৈষম্যের আয়োজন চলছে, এতে ইউরোপ কোনোমতেই নিজেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নিরাপদ দুর্গ হিসেবে দাবি করতে পারে না।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কোর্ট অব জাস্টিস এই রুল জারি করে দুটি মামলার সূত্রে। বেলজিয়ামের এক মহিলা ও ফ্রান্সের আরেক মহিলা তাদের মামলা নিয়ে যায় এই আদালতে। বেলজীয় সিকিউরিটি ফার্মে চাকরি করার পর সামিরা ২০০৬ সালে সিদ্ধান্ত নেন শুধু অবসর সময়েই নয় কাজের সময়টায়ও হিজাব পরা অব্যাহত রাখবেন, যেভাবে এর আগেও তিনি তা করে আসছিলেন। কোম্পানি তাকে জানায়, এটি তাদের কর্মবিধানের পরিপন্থী। তাদের কর্মবিধানে ‘রাজনৈতিক, দর্শনগত ও ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহারে নিষেধ করা আছে। এরপর হিজাব পরার কারণে সামিরাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সামিরা এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করেন।
অপর দিকে, ফ্রান্সের মহিলা সফটওয়্যার ডিজাইনার আসমা ২০০৮ সালেও যখন হিজাব পরে গ্রাহকদের সাথে বৈঠক করতেন, তখনো এ ব্যাপারে তার কোম্পানির কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। কিন্তু যখন গ্রাহকের পক্ষ থেকে হিজাব সম্পর্কে অভিযোগ এলো, তখন কোম্পানি তাকে বলে, পরবর্তী সময়ে তিনি যেন আর হিজাব না পরেন। কিন্তু তিনি হিজাব পরা অব্যাহত রাখেন। এর ফলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

লুক্সেমবার্গের এই আদালত বলে- কেউ হিজাব পছন্দ করেন না, শুধু এই অজুহাতে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করতে পারেন না। অধিকন্তু এই আদালত বলে, একটি কোম্পানিতে চাকরিরত সবার সাথে সম-আচরণ করতে হবে, তাদের ব্যক্তি বা ধর্মীয় বিশ্বাস যা-ই থাকুক না কেনো। তবে আলোচ্য রুলিংয়ে বলা হয়েছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোম্পানিগুলো তাদের কর্মস্থলে কর্মীদের ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে কোনো কিছু পরিধান বা ব্যবহারের ব্যাপারে বৈধভাবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পারবে।

সে যা-ই হোক, আদালতের এই রায় তাদের অবাক করেনি, যারা ইউরোপের ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া তথা অহেতুক ইসলাম-ভীতির সাথে পরিচিত। বহু বছর আগে থেকে নিয়মিতভাবে ইউরোপের মুসলমানদের মর্যাদা হরণ, প্রান্তিকায়ন ও অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বিশ্বে এই ইসলাম-ভীতি অধিকতর সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয় যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলা ও সেই সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের তথাকথিত ‘ওয়ার অন টেরর’ শুরু হওয়ার পর। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে এই ইসলামভীতি ঢুকছে ইউরোপীয় রাজনীতির মূলধারায়। আর ইউরোপীয় রাজনীতিকরা সেই সূত্রে বলির পাঁঠা করে তুলছেন মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবনতি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, অনিয়মিত অভিবাসন, সামাজিক বিরোধ ও বৈশ্বিক সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে ইসলামভীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

ইউরোপে যখন মুসলিমবিরোধী মনোভাব ক্রমেই বেড়ে চলেছে, তখন সিজেইইউর এই রুলিং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে মুসলমানদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মোড়-ঘোরানো বিষয় হিসেবে কাজ করবে। কোম্পানিগুলোকে মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করার অনুমতিজ্ঞাপক রুল জারি করে, এই আদালত কার্যত ইউরোপের দেশগুলোতে কর্মক্ষেত্রে মুসলিমবিরোধী বৈষম্যের প্রাতিষ্ঠানিকায়ন, বৈধতাদান ও যৌক্তিক করে তোলার কাজটিকেই পাকাপোক্ত করল। বিগত পাঁচ বছরে পাশ্চাত্যে বর্ণবাদী ও মুসলিমবিরোধী হামলা বেড়েছে আড়াই গুণ। আর এসব হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের সংখ্যা বেড়েছে ৭০ শতাংশ। একই সময়-পরিধিতে ইউরোপের পাঁচটি সবচেয়ে বড় দেশে ১৫ হাজারেরও বেশি ইসলামোফোবিক হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এমনি প্রেক্ষাপটে সিজেইইউর রুলিং ইউরোপের মুসলমানদের কাছে স্পষ্ট এই বার্তাটিই পাঠাল : তোমরা ইউরোপে নিরাপদে ও শান্তিতে থাকতে পারবে, তবে তোমাদেরকে ধর্ম থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে এবং পরিহার করতে হবে দৃশ্যমান ধর্মীয় সত্তার জাতীয় প্রতীক।

এই আদালত মুসলিম দেশগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করার সুযোগটিও হাতছাড়া করেনি। অথচ এই আদালত কর্মক্ষেত্রে নিছক ধর্মীয় চিহ্ন প্রদর্শনের কারণে একজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা চাকরিচ্যুতি ঘটানোর বৈধতা দিলো। অথচ এই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বারবার ঘোষণা দিয়েছে, নারী-পুরুষের সমতা বিধানে প্রতিশ্রæতিশীল থাকার ব্যাপারে। গত ১৫ জুলাইয়ে দেয়া সিজেইইউর রুলিংয়ের মাধ্যমে ইইউ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রশ্নে কার্যত গ্রহণ করল চরম ডানপন্থীদের অবস্থান। অথচ ইউরোপের নিজস্ব ঘোষণা মতে ইউরোপ হচ্ছে : ‘চ্যাম্পিয়ন অব ডেমোক্র্যাসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডম’। কী চমৎকার বৈপরীত্য।
ইউরোপের এই হিপোক্র্যাসি তথা কপটতা কোন মাত্রার, তা বোঝার জন্য নজর দেয়া যাক অন্য একটি কাল্পনিক ঘটনার ওপর। ধরা যাক, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ তুরস্ক জারি করল একই ধরনের একটি রুলিং। এ রুলিং কার্যত জারি করা হলো দেশটির খ্রিষ্টান, ইহুদি ও হিন্দু নাগরিকদের বিরুদ্ধে। বলা হলো, তুরস্কের কোম্পানিগুলো তাদের কর্মক্ষেত্রে এসব ধর্মের প্রতীকী কিছু ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে পারবে। তখন ইউরোপীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া কী হতো? প্রতিক্রিয়া হতো স্পষ্টত এমন : ইউরোপীয় নেতারা তুরস্কের এই রুলিংয়ে নিন্দা জানাত এই বলে যে, এই রুলিং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকাবিরোধী। এমনটি বলেই থামত না। বরং এরা একযোগে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাত তুরস্কের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য। বলত, এর মাধ্যমে দেশটির নাগরিকদের ওপর ধর্মীয় বিশ্বাস লালনের কারণে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ইইউ এই রুলিংকে অন্যায্য ও অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করত। কিন্তু একই ধরনের রুলিংটি যখন শীর্ষ ইউরোপীয় আদালত জারি করল মুসলমান নাগরিকদের বিরুদ্ধে, তখন ইউরোপীয় নেতাদের যেন কিছুই বলার নেই। এটিই হচ্ছে ইউরোপীয়দের হিপোক্র্যাসির/কপটতার নমুনা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই হিপোক্র্যাসি তুরস্ককে বিন্দুমাত্র অবাক করেনি। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিপোক্র্যাসির কথা তুরস্কের ভালো করেই জানা। বিগত এক দশক ধরে তুরস্ক চেষ্টা করে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার জন্য। কিন্তু ইইউ সে সুযোগ দিচ্ছে না নানা অজুহাতে। আসলে এ ক্ষেত্রে বড় বাধা হচ্ছে তুরস্ক একটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া। অবশ্য অনেক ইউরোপীয় দেশ ইউরোপকে ইইউ-এর সদস্য হতে না দেয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে এর সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়টি খোলাখুলি উল্লেখ করতেও দ্বিধা করেন না। তাই আমরা আশা করতে পারি না কোনো ইউরোপীয় নেতা এই রুলিংয়ের বিরুদ্ধে কথা বলবেন। প্রকৃতপক্ষে এই রুলিং ইউরোপীয়দের ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নিরাপদ দুর্গ’ হওয়ার নিজস্ব দাবিকে হাস্যকর করে তোলে। আসলে, এ ধরনের বৈষম্যমূলক রুলিং নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক মহলে ইইউর মর্যাদাকে নিচে নামিয়ে এনেছে। আর এটি প্রমাণ করে, ইইউ তখনই মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, যখন তা তার স্বার্থের জন্য প্রয়োজন হয়। হতে পারে, ইউরোপীয় নেতাদের এই রুলিং প্রশ্নে চুপ থাকার কারণ হচ্ছে, এই রুলিং তাদের কল্পিত ‘ইউরোপীয় ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাদের হাইপোথেসিস হচ্ছে, এই নতুন ধরনের ইসলামের শেকড় প্রোথিত থাকবে ইউরোপে এবং এর ভিত্তি হবে ইউরোপীয় মূল্যবোধ। আর তা ইউরোপের মুসলমানদের ইউরোপীয় সমাজভুক্ত করে নেয়ার কাজটিও সুসম্পন্ন হবে। ইউরোপের অনেক নেতার বিশ্বাস- মুসলিমবিরোধী বৈষম্য প্রাতিষ্ঠানীকরণের মধ্য দিয়েই তাদের ইউরোপিয়ান করা সম্ভব।

বাস্তবতা হচ্ছে, ইইউ নিজেকে সত্যিকার অর্থে মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, যদি ইউরোপের দেশগুলোতে আলোচ্য রুলিংয়ের মতো বৈষম্যমূলক, ক্ষতিকর ও চরম বর্ণবাদী নীতি অবলম্বন ও চর্চা থেকে বেরিয়ে না আসে। তাই ইউরোপীয় কর্মকর্তা ও নেতাদের উচিত, জরুরি ভিত্তিতে এই কপট নীতির রুলিং যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি প্রত্যাহার করে নেয়া।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল