২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কোরবানি ও করোনা, হজ ও অলিম্পিক

কোরবানি ও করোনা, হজ ও অলিম্পিক - ছবি : নয়া দিগন্ত

এবারো হজে যেতে পারলেন না বাংলাদেশসহ বিশ্বের লাখ লাখ মুসলমান। গত বছরের মতো এবারো এর কারণ অভিন্ন, করোনা মহামারীর প্রচণ্ড প্রকোপ। কবে তারা পবিত্র হজ পালন করার মতো বিরাট ইচ্ছা পূরণ করতে পারবেন, পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউ জানেন না। এর মধ্যে অনেকে হয়তো পৃথিবী থেকেই চিরবিদায় নেবেন মহাকালের অনিবার্যতায়। হজ ইসলামের পাঁচটি রোকন বা স্তম্ভতুল্য মূল বিষয়ের একটি। এটি যে প্রধানত মক্কা শরিফে অনুষ্ঠিত হয়, সবার জানা। আর সে শহর (সেই সাথে রাসূলুল্লাহ সা:-এর রওজা মোবারক যেখানে, সেই মদিনা শরিফও) রাষ্ট্র হিসেবে সৌদি আরবে অবস্থিত।

এটিও সবাই জানেন। হজের ব্যাপারে আলাদা একটি সৌদি মন্ত্রণালয় রয়েছে, যার কাজ চলে সারা বছর। এবার তারা বাংলাদেশকে যথাসময়ে কোনো কিছু জানাতে না পারলেও এ দেশের কিছু মুনাফালোভী ব্যক্তি হজে লোক পাঠানোর নামে অন্যায়ভাবে ব্যবসায়িক তৎপরতা শুরু করে দিয়েছিলেন। সরকারের কঠোরতা ও মানুষের সচেতনতায় তারা এগোতে পারেননি। না হয় দেখা যেত, অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে তাদের মিথ্যা আশ্বাসের ফাঁদে পা রেখে অনর্থক প্রচুর টাকা পয়সা খুইয়ে আফসোস করছেন। কারণ নিয়মমাফিক সৌদি সরকার সবাইকে জানিয়েছে, ‘এবারো সে দেশের বাইরের কেউ হজে শামিল হতে পারছে না এবং সে দেশে অবস্থানরত যারা এবার এ সুযোগ পাবেন, তাদেরও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’ আর করোনার টিকার বিষয়ে আগে থেকে কঠোরতা তো আছেই। তা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

এক দিকে হজের সমস্যা; অন্য দিকে ‘অলিম্পিক’ নিয়ে টানাটানি। এটিকে ‘পরিস্থিতিজনিত টানাপড়েন’ বলাই উত্তম। The Greatest Show on Earth বলা হয় অলিম্পিককে। কিন্তু গত বছরের এ বৈশ্বিক ক্রীড়া উৎসব ২০২১-এ গড়ালেও অনিশ্চয়তার দোলাচলে অনেকেই দুলেছেন। জাপানিরা জাতি হিসেবে বাংলাদেশীদের চেয়ে কম ক্রীড়াপাগল নন। তবুও তারা মিছিল করে দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘অলিম্পিকের আগে জীবন। তাই মহামারী ঠেকাতে হবে সর্বাগ্রে; অন্যথায় অলিম্পিক বন্ধ থাকবে। আমরা করোনার টিকা চাই; অলিম্পিক চাই না।’

এ দিকে অলিম্পিক ভিলেজে করোনা অণুজীবের সংক্রমণ বাড়ছে। কয়েকটি দেশের প্রতিযোগী ও কর্মকর্তারা এরই মধ্যে কোভিডে আক্রান্ত ও অসুস্থ। এর মধ্যে ব্রাজিলের নাম প্রথমেই। এমনকি ‘সর্বশ্রেষ্ঠ পরাশক্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের টিমেরও রেহাই নেই। রেহাই মেলেনি দক্ষিণ আফ্রিকার। উল্লেখ্য, ব্রাজিলে এমনিতেই করোনায় মারা যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ (যুক্তরাষ্ট্রের পরই)। নেইমারের দেশ ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার প্রধান রাষ্ট্র, যা আমাদের বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ গুণ বড় এবং বিশ্বের বৃহত্তম অরণ্য এ দেশেই।

একটি পত্রিকা অলিম্পিকের আগেই খবর দিয়েছে, ‘টোকিওর অলিম্পিক ভিলেজে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। শনিবার (১৭ জুলাই) একজন আক্রান্তের খবর বেরিয়েছিল। এবার নতুন করে দুই অ্যাথলেট করোনায় আক্রান্ত হলেন। বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। টোকিও অলিম্পিকের মুখপাত্র মাসা তাকায়া জানিয়েছেন, করোনায় তিনজন একই দেশের ও একই ক্রীড়া ডিসিপ্লিনের। তাদের রাখা হয়েছে আইসোলেশনে।’ যা হোক, মোট অন্তত ২৬ জন অলিম্পিক ভিলেজে করোনা আক্রান্ত বলা হয়েছে। যেভাবে এর সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত কী অবস্থা দাঁড়ায়, তা বলা যায় না।

মহান স্রষ্টা আমাদের শিক্ষার জন্য মহামারীর মাধ্যমে মহামার দিচ্ছেন হয়তো। তবুও ইউরো আর কোপা আমেরিকা নিয়ে এই বাংলাদেশে মাতামাতি কম নয়। রংপুরের এক গরু বেপারির নাম ‘অলিম্পিক মিয়া’ জেনে হাসতে পারেন। এর চেয়েও হাস্যকর হলো, কোপা আমেরিকা নিয়ে একজন অন্যজনকে কোপাতে পর্যন্ত আমরা দ্বিধা করি না। যেমন- নেইমার ভক্তের মার খেয়ে বি-বাড়িয়ায় একজনের প্রাণ পর্যন্ত চলে গেছে। সত্যিই, কী বিচিত্র প্রজাতি এই বাঙালি। নিজের দেশের বিশ্বকাপে ফুটবল খেলার খবর নেই; অথচ ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা নিয়ে জোশের কমতি নেই। আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা একবার ‘বাংলাদেশ’ কী জিনিস জানতে চেয়ে বলেছিলেন, ‘What is Bangladesh’?

ঈদের এক দিন আগে কোনো মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছিল, ‘এবার শেষ দিকে রাজধানীর পশুর বাজার জমে উঠেছে। গরুর দাম সন্তোষজনক বলে ক্রেতারা সন্তুষ্ট।’ এর বিপরীতে কোনো কোনো মিডিয়া বলেছে, ‘কোরবানির পশুর দাম চড়া। তাই ক্রেতারা বেশি দাম দেখে হতাশ।’ মিডিয়াগুলো ‘অন্ধের হস্তিদর্শন’-এর মতো নিজ নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেও টিভির শ্রোতা আর পত্রিকার পাঠকরা পড়েন নিদারুণ সমস্যায়। তারা কার কথা বিশ্বাস করবেন?

আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগের কথা মনে পড়ল। আমার বাসার কাছে একটি পুকুরে পাওয়া গিয়েছিল জনৈক যুবকের লাশ। এমন সাঙ্ঘাতিক ঘটনা সেখানে সম্ভবত- এটিই প্রথম। পরদিনের পত্রিকাগুলো দেখতে থাকি এ মর্মান্তিক ঘটনার প্রকৃত খবর পড়ার জন্য। সব পত্রিকাই পুলিশের একই সূত্রের উল্লেখ করে সংবাদ ছাপিয়েছে। কিন্তু এর বয়ান ভিন্ন ভিন্ন। খবরের উৎস অভিন্ন, ঘটনাও ভিন্ন নয়; তা হলে ঘটনার কারণ বা বিবরণ ভিন্ন হয় কিভাবে? তবুও তা হলো।

একাধিক মিডিয়ার একাধিক বয়ান দেখে হতভম্ব। শেষাবধি বুঝতে পারলাম না, আলোচ্য যুবকের লাশ সে পুকুরে কিভাবে এলো কিংবা তার মৃত্যু কেন ও কেমন করে হয়েছিল? এ অবস্থা থেকে জনগণের মুক্তি পাওয়া অবিলম্বে দরকার; অন্যথায় ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকগুলো যেমন একই রোগীর একই বিষয়ে রিপোর্ট দিচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন (এমনকি পুরুষকে নারী বানায়) আর হারাচ্ছে মানুষের আস্থা, তেমনি গণমাধ্যমও জনগণের আস্থা বেশি দিন ধরে রাখতে পারবে না। এমনিতেই গণ-আস্থা মিডিয়ার প্রতি কমছে (যদিও বিক্রি বা কাটতি সে তুলনায় কমেনি); এখন আস্থা যতটা আছে, তা ধরে রাখা দরকার। মনে পড়ল, পত্রিকায় একবার ছিনতাইয়ের সংবাদে ‘ডাকুয়া’ মসজিদের উল্লেখ ছিল, আসলে নামটি ছিল তাকওয়া মসজিদ। কোথায় তাকওয়া বা খোদার ভয় আর কোথায় ডাকুয়া অথবা ডাকাত। পত্রিকায় আরেকবার ‘আ. কা. মোল্লা’ লেখা হলো ‘আহকাম উল্লাহ’কে।

হবিগঞ্জের এক জায়গায় বিদ্যুৎস্পর্শে একজনের এবং ঝিনাইদহের এক গাঁয়ে সাপের কামড়ে নানী-নাতির মৃত্যু হয়েছে। ঈদের দিন এসব খবর টিভিতে প্রচারিত হলো। বিদ্যুৎ প্রাণহীন বস্তু এবং সাপ ইতর প্রাণী বা সরীসৃপ। কিন্তু সৃষ্টির সেরা মানুষ ঈদের সুমহান শিক্ষা ত্যাগ ও সংযম এবং আল্লাহর পথে আত্মসমর্পণ কতটা শিখতে পেরেছে? তা যে পারেনি, এরই নমুনা একই টিভি নিউজের আর দু’টি সংবাদ। একটি হলো, এবার ঈদের দিন পটকা ফোটানোকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে জনৈক কলেজছাত্রকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।

অপর খবরটি হলো, গোপালগঞ্জে ফুটবল খেলা উপলক্ষে দুই গ্রাম পরস্পর ঝগড়ায় জড়িয়ে সংঘর্ষ বাধায় যাতে আহত হয়েছে শতাধিক লোক। তা ছাড়া ঈদের দিনে বিভিন্ন অঘটন তো আছেই এ দেশে।
ঈদ মানেই কোলাকুলি-গলাগলি আর সালাম-কালাম। গত বছর থেকে মহামারী করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে এ দু’টি জিনিস। এখন ঈদের সময়েও মুখে থাকে হাসির বদলে উৎকণ্ঠা। টিভিতে দেখা গেছে, এবারো কোনো কোনো দেশে ঈদ জামাত শেষে যথারীতি কোলাকুলি। এমনকি অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীও তা করতে ভোলেননি। এ দিকে বাংলাদেশে যেন কোলাকুলি ও করমর্দন বিদায় নিয়েছে।

সারা বিশ্বে একই দিন ঈদ করা, তথা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদের নামাজ ও কোরবানি আদায় বাংলাদেশে একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয়। তবে এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের নীরবতা এবং সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার প্রেক্ষাপটে দিন দিন এই প্রবণতা বাংলাদেশে বাড়ছে। এবার দেশের মধ্যে উত্তরে ঠাকুরগাঁও থেকে দক্ষিণে পটুয়াখালী, পশ্চিমে সাতক্ষীরা থেকে পূর্বে চাঁদপুর এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল মাদারীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় অনেকে এক দিন আগেই ঈদুল আজহা পালন করেছে সৌদি রাষ্ট্রের সাথে মিল রেখে।

বর্তমানে একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মাস্ক। তবে বাংলাদেশের মানুষ এর পরিধানে অনভ্যস্ত এবং এর প্রতি যেন তারা খড়গহস্ত। তেমনি তারা চায়না স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। পত্রিকার খবর, অনেক জায়গায় মানুষ মাস্ক পরলেও স্বাস্থ্যবিধি মানে না। তারা হয়তো অতি সামাজিক, তাই ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখছে না। বরং এটিকে একটা ‘অসামাজিক’ কর্ম বলেই তারা মনে করে। তবে ধূমপায়ীদের দৌরাত্ম্যে যেভাবে ডাবল মাস্ক পরা অধূমপায়ী লোকজনও অতিষ্ঠ, তার আশু অবসান হওয়া জরুরি, সামাজিক দূরত্ব তো ৩ ফুটের; আর সিগারেট সেবনের ধোঁয়া বোধহয় অনায়াসে ৫-৬ ফুটও পেরিয়ে যায়। যারা ধূমপানের পশ্চাতে দিনে ৪০-৫০ টাকা খরচ করে ফেলে নির্দ্বিধায়, তারা একটি মাস্কও বুঝি কিনতে পারে না?

আসলে নিজের ইচ্ছাই মূল কথা। আমাদের সমাজে যাদের সচেতন থাকার কথা, তারাই অসচেতন। তা হলে অন্যদের কথা আর কী বলা যায়? মাস্কের বেলায়ও একই কথা। শিক্ষিত সচ্ছল লোকজনও এটি পরিধান করা সম্পর্কে উদাসীন ও অনিচ্ছুক। অনেকে বিনা পয়সায় মাস্ক পেলে বড়জোর কানে ঝোলান বা থুতনিতে নামিয়ে রাখেন। তবুও গাঁটের পয়সা দিয়ে একটি মাস্ক কিনবেন না কখনো। আর যারা নিয়মিত মাস্ক পরেন; স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন এবং সামাজিক দূরত্ব বরাবর বজায় রাখেন, তারা যেন এসব করে ‘অপরাধ’ করে ফেলেছেন। অথচ খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে হাসপাতাল বাড়িয়ে কিংবা হাজার হাজার ডাক্তার নিয়োগ করেও মহামারী ঠেকানো যাবে না।’

এ দিকে কোরবানির গরুর বাজার নিয়ে বিপাকে পড়ার দশা হয়েছিল অনেক ক্রেতার। কারণ এক দিকে অনলাইন প্লাটফর্ম খুলে কর্তৃপক্ষের ব্যাপক প্রচারণা ডিজিটাল পশু ক্রয়ের জন্য। অন্য দিকে সরকারের আওতাধীন সিটি করপোরেশনগুলো অফলাইন বা পশুর বাস্তব মার্কেট ইজারা দিয়ে পশু বিক্রির হাসিল আদায়ের তোড়জোড়। এবার কোরবানির গরু ৫০ শতাংশ আগেভাগেই খামার থেকে বেঁচে ফেলার প্রচারণা। আবার এই অনলাইন পশু বিক্রি ১০ শতাংশও না হওয়ার প্রপাগান্ডা!

এমনিতেই মহামারীর ভয়ে সবাই কাঁপছেন, তার ওপর মেঘ বৃষ্টি বাতাস মিলে বর্ষার বিশ্রী আবহাওয়া। এর মধ্যে ১৯ জুলাই সকালে টিভি খুলতেই কয়েকটি খবরে মন সত্যিই আরো খারাপ হয়ে গেল। প্রথমত, দেশে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ডতুল্য ২৩১ জনের মৃত্যু কোভিডের কারণে। দ্বিতীয়ত, ইরাকের রাজধানী বাগদাদে আত্মঘাতী হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত। তৃতীয়ত, পাকিস্তানে সড়কে প্রচণ্ড দুর্ঘটনায় হতাহত প্রায় ৭৫ ব্যক্তি- এর মধ্যে নিহতই ৪০ জন অন্তত! এর সাথে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়ে দিলো, ঈদের দিন বৃষ্টি হবে। এটি ঈদ-পরবর্তী কড়া লকডাউনঘটিত ‘মেন্টাল ব্রেকডাউন’ বাড়িয়ে দেয়।

এবার অসংখ্য মানুষের ঈদের আনন্দ ছিল না। যে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে নাড়ির টানে বাড়ির দিকে ছুটে গেলেন ছুটি পাওয়া-না পাওয়ার কথা না ভেবেই, তাদেরও আনন্দের চেয়ে উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক ছিল অধিক। এ উৎকণ্ঠা সময়মতো ও কম দুর্ভোগ পোহানোর মধ্য দিয়ে বাড়ি যাওয়া; আর এ আতঙ্ক শহরে সম্ভাব্য কঠোর লকডাউন এবং কর্মচ্যুতি ও অনাহার, তা ছাড়া পথের নানা দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ভয়ে। স্মর্তব্য, এবার ঢাকায় বহু সাধারণ মানুষ আর্থিক অনটন ও কঠোর লকডাউনের সম্ভাবনার দরুন বাড়ি যায়নি। তাদের এই কোরবানির স্বীকৃতি দিতে হবে। তারা আমাদের এই সমাজের বিরাট অংশ।

আর কোরবানির ঈদে কেন ‘পানির দামে’ চামড়া বেচতে বাধ্য হওয়ার অভিযোগ ওঠে? এবারো কোরবানি দাতারা এ জন্য দায়ী করছেন মৌসুমি কারবারিদের। আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দোষ চাপাচ্ছেন ট্যানারি মালিকদের ঘাড়ে। কিন্তু পারস্পরিক দোষ চাপানোর খেলায় সাধারণ কোরবানি দাতাদের পশুর চামড়ার দাম বাড়ে না। অন্য দিকে এক মিডিয়া যখন বলে, ‘এবার চামড়ার দাম পড়ে গেছে’! তখন আরেকটির প্রচারণা, ‘এ বছর চামড়ার দাম বেশ ভালো হওয়ায় কোরবানি দাতারা খুশি!’


মুখ ও মুখোশ
আমরা সাধারণত মাস্ক পরতে চাই না করোনাকালেও। এর অর্থ, আমরা মুখ দেখাতে চাই; মুখোশ নয়। তবে এ সমাজের অসংখ্য কেউকেটা লোক ভালো মানুষের চেহারার মুখোশ পরার মতো নিজেদের মন্দ পরিচয় লুকিয়ে দিব্যি আরামে আছেন। তাদের অপরাধ-অন্যায়-অযোগ্যতা-অনাচার বজায় ও ঢেকে রেখে অন্যদের বিভ্রান্ত করা এবং বেকুব বানানোর জন্য এই মুখোশ বা মাস্ক পরাকে তারা জরুরি ভাবেন। তা হলে করোনা থেকে রেহাই পেতে ও দিতে একটি সস্তা মাস্কও কেন পরিধান করতে পারবেন না? আর মাস্ক পরা কোনো কঠিন কাজ নয় যে, তা প্রাপ্তবয়স্ক কাউকে শিখিয়ে দিতে হবে।


নদী ও সেতু
কিছু দিন আগে একজন জবরদস্ত ক্ষমতাবান ব্যক্তি বলেছেন পদ্মা সেতু নির্মাণে জোর দিয়ে, ‘এ সেতুর কারণে হয়তো পদ্মা নদীর নাব্যতা কমেছে। কিন্তু আমরা নদীর চেয়ে সেতুকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’ কথা হলো, নদীই যদি না থাকে, তা হলে সেতু দিয়ে কী হবে? সেতুর প্রয়োজন নদীর কারণেই। মনে পড়ল একটি চুটকি। এক নেতা ভোটে দাঁড়িয়ে ভোটারদের আশ্বাস দেন, ‘জিতলে এ গ্রামে সেতু বানিয়ে দেবো।’ শুনে শ্রোতারা বলল, ‘এখানে কোনো নদীই নেই; সেতু হবে কিভাবে?’  নেতাজি দমার পাত্র নন। তিনি বললেন, ‘দরকার হলে তখন আগে এ গ্রামে নদী বানিয়ে দেবো।’

তেমনি কঠোর লকডাউনে গরিব মানুষের জীবনই চলে যাওয়ার উপক্রম! যদি জীবন না থাকে, তা হলে জীবিকা কার জন্য? সরকার নাগরিকদের জীবিকা টেকাতে চান; কিন্তু করোনাকালে প্রণোদনার টাকা গরিবের হাতে না পৌঁছালে ওদের জীবনই যে থাকবে না। গরিবের ভাত কারা কিভাবে মেরে দিচ্ছে, তা আগে উদঘাটন করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement