১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতীয় সরকার গঠন করুন

-

একজন সজ্জন জানতে চাইলেন, দেশে যখন টিকার প্রয়োজন কোটি কোটি- আমদানি ও আয়োজন কেন লাখে লাখে। আমি মজা করেই উত্তর দিলাম, হিসাবটা তো সোজা। আমরা সেই কালে পুঁথিতে পড়েছি না ‘লাখে লাখে সৈন্য মরে-কাতারে কাতার, শুমার করিয়া দেখি পঞ্চাশ হাজার।’ অঙ্কে না মিললেও ছন্দে তো মিলল! আসলে সরকার লাখো শুমার করিয়াই তো কোটি কোটি বানাবে। সেদিক দিয়া তো ঠিকই আছে। এরকম অঙ্ক হয় কখন? যখন দুইয়ে দুইয়ে পাঁচ হয়। দুইয়ে দুইয়ে পাঁচ হয় কখন- যখন ভুল হয়। পুঁথির ভাষায়ই আবার বলি ‘হেই ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ রওনা হইল, কিছুদূর গিয়ে মর্দ হাঁটিয়া চলিল।’ এই সরকারের এই সময়ের কাজকর্ম সম্পর্কে এর চেয়ে ভালো পদ্য আর খুঁজে পেলাম না। মূলত পরিকল্পনাহীন ও সুচিন্তিত ব্যবস্থাপনার অভাবেই দেশের করোনা পরিস্থিতির এই অবস্থা। ভুয়া তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে করোনা মোকাবেলায়ই আমাদের এই দশা। এবারে দশার নমুনা নিন :

১২ জুলাই নয়া দিগন্তের করোনা সংক্রান্ত শিরোনামটি ছিল এরকম : ‘২৩০ মৃত্যু, সর্বোচ্চ শনাক্ত’। মহামারী করোনার বিস্তার রোধে দেশে কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে আবারো একই দিনে মৃত্যু ও শনাক্তের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মারা গেছেন আরো ২৩০ জন। আর একই দিনে আরো ১১ হাজার ৮৭৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গত বছর মার্চে দেশে করোনার মহামারী শুরুর পর এক দিনে এত বেশি মৃত্যু আর এত বেশি রোগী শনাক্ত কখনো হয়নি। কোভিড-১৯ ভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিস্তারের কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরেই রেকর্ডের ভাঙাগড়া চলছে, পরিস্থিতি ক্রমশ আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত ৯ জুলাই দেশে রেকর্ড ২১২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল। তার আগের দিন রেকর্ড ১১ হাজার ৬৫১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
তিন দিনের মাথায় সব রেকর্ড ভেঙে গেল। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৬ হাজার ৪১৯ জনের মৃত্যু হলো করোনাভাইরাসে। এ ছাড়া শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখ ২১ হাজার ১৮৯ জনে। অন্য দিকে, এক দিনে সর্বাধিক নতুন রোগীও শনাক্ত হয়েছেন এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক নমুনা পরীক্ষায়। দেশে মহামারীকালে একদিনে এত নমুনা এর আগে পরীক্ষা করা হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৩৯ হাজার ৮৬০টি। আর পরীক্ষা করা হয়েছে ৪০ হাজার ১৫টি। মহামারী করোনার বিস্তার রোধে দেশে কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে আবারো একই দিনে মৃত্যু ও শনাক্তের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মারা গেছেন আরো ২৩০ জন। আর একই দিনে আরো ১১ হাজার ৮৭৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ দিকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর তাতে বিপদে পড়তে হবে বলেও জানিয়েছেন অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা: রোবেদ আমিন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ শঙ্কার কথা জানান তিনি। অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘বর্তমান ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে মৃত্যু শুধু বয়স্ক মানুষের হচ্ছে না, তরুণদেরও হচ্ছে।’ বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে সব জেলাতেই করোনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে, সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।

এ ভয়াবহতার মোকাবেলায় সরকার এক রকম দিশেহারা। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, এভাবে বাড়তে থাকলে অবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। মৃত্যুর হার দেখে মনে হয় এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এক দিকে মানুষ করোনায় মরবে। অপর দিকে না খেয়েও মরবে। বাংলাদেশের জনগণ ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় এখন ত্রিশঙ্কু। এরা হচ্ছে সরকার, আমলা আর ব্যবসায়ী। সরকার অদক্ষ। আমলারা অসৎ। আর ব্যবসায়ীরা অসাধু। এই মহামারীতেও কারো বিবেক সাড়া দেয় না। এ সময়েও চিকিৎসা, ত্রাণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে লুটপাটে ব্যস্ত এই তিন গোষ্ঠী। তাদেরকে ধরার কেউ নেই। কারণ এরা একই ছত্রছায়ায় লালিত পালিত। রাজনৈতিক প্রভুদের কাছে তাদের ‘সাত খুন মাফ’। করোনায় যেমন কাতরাচ্ছে মানুষ তেমনি কাতরাচ্ছে ক্ষুধার জ্বালায়।
এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন গোটা জাতির সমন্বিত কর্মপ্রয়াস। দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারি পর্যায়ে বিরোধী সব পক্ষকে সঙ্কট মোকাবেলায় এক করার প্রয়াস অনুপস্থিত, তেমনি বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক সেবামূলক কার্যক্রমও অনুপস্থিত। সব মিলিয়ে অসহায় অবস্থা। বিপুল জনসংখ্যার গরিব এই দেশে খাওয়া পরার ব্যবস্থা না করে লকডাউন মানানো যেমন অসম্ভব, তেমনি কোনো কিছুতেই পাত্তা না দেওয়া জনগণের এক মনোরোগ। সুতরাং সামাল দেয়া কঠিন হয়ে উঠছে। এর মধ্যে সামনে কোরবানির ঈদ। বাড়ি না গেলেই নয়। লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কী হবে না হবে বোঝা কঠিন। এখন বাংলাদেশের ‘খোদা হাফেজ’ বলা ছাড়া আর কিইবা বলার আছে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেই ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে সরকারের তোঘলকি কারবার নিয়ে হতাশ সকলে। অন্তত এক সপ্তাহের জন্যও এই সরকার একটা সর্বাত্মক শাটডাউন কার্যকর করতে পারেনি। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে যখন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেখা দেয়, তখন সরকার ব্যর্থ হলো গোটা সীমান্ত সিল করে দিতে। হয়তো বা বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে! এখন জাতি তার কুফল ভোগ করছে। এ সরকার করোনা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। এখন সব পক্ষ এ কথা বলছেন। তাই জাতীয় উদ্যোগ ও জাতীয় সরকারের প্রাসঙ্গিকতা যৌক্তিক হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো বিদ্বজ্জন জাতীয় সরকারের কথা বলেছেন। সরকারের অভ্যন্তরেও ব্যর্থতার স্বীকৃতি আছে। জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে। দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী প্রবীণ সাংবাদিক এই সরকারের শুভাকাক্সক্ষী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হাসিনা সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি এখন প্রবাদে পরিণত হয়েছে। আরো কয়েকটি মন্ত্রকের মন্ত্রী প্রমাণ করেছেন, তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ারও যোগ্য নন। এদের সরানো দরকার। মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল দরকার। এটি সবদেশের সরকার করে থাকে।

সন্দেহ নেই, করোনা বাংলাদেশে একটি জাতীয় দুর্যোগ। দেশে গণতন্ত্রমনা বিরোধী দল থাকলে তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে জাতীয় দুর্যোগ প্রতিরোধ করা যেত। তাতে জনগণের মনোবল বৃদ্ধি পেত।’ এ ধরনের জাতীয় সরকারের প্রমাণ দিতে জনাব চৌধুরী ব্রিটেনের জরুরি অবস্থায় জাতীয় সরকার গঠনের উদাহরণ দিয়েছেন। ‘ব্রিটেনে নাৎসি হামলা চলাকালে চার্চিল সব গোঁয়ার্তুমি ত্যাগ করে বিরোধী লেবার ও লিবারেল দলকে নিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছিলেন। এ জাতীয় সরকারের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিরোধী লেবার পার্টির নেতা ক্লিমেন্ট এটলিকে। এমনকি মার্কসবাদী বিভানকেও তিনি মন্ত্রিসভায় নিয়েছিলেন।’ (যুগান্তর : ১২ জুলাই ২০২১) জনাব চৌধুরী মন্ত্রিসভায় রদবদলের মাধ্যমে যে উন্নতি আশা করছেন, তা আসলেই বৃথা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, এখন আর মলম লাগিয়ে লাভ নেই। ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিবো কোথা!’ সুতরাং সরকারের খোলনলচে পাল্টে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমেই সঙ্কট উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। জনাব চৌধুরী জাতীয় সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন। হয়তো বা আওয়ামী আনুকূল্যের কারণে প্রস্তাবটি সুস্পষ্ট করেননি।

কোনো দেশ ও জাতির সঙ্কট থেকে উত্তরণে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনে ‘জাতীয় সরকার’ গঠিত হয়ে থাকে। জাতীয় সরকারের আরেকটি প্রতিরূপ হচ্ছে : অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে যেমন জাতীয় সরকার হয়ে থাকে, ঠিক তেমনি একটি শাসন থেকে অপর শাসনে উত্তরণে যে সময় অতিবাহিত হয়, সে সময়ের সরকারকে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার বলে। এর আরেকটি নাম আছে ‘অস্থায়ী সরকার’। গ্রেট ব্রিটেনে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালে চার্চিলের নেতৃত্বে এ ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, চীনসহ বিভিন্ন দেশে ইতিহাসের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এ ধরনের সরকার পরিস্থিতির অনিবার্যতায় দেশ পরিচালনা করেছে। বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের মনোভঙ্গি, প্রধান বিরোধী দলের সীমাবদ্ধতা, সুশীলসমাজের সদিচ্ছা সর্বোপরি জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার নিরিখে আমাদের এখন এ বিষয়ে সহজ জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে।

বর্তমান জাতীয় সংসদ তথা সংসদীয় সরকারপদ্ধতির মধ্যেই আমরা মনে করি, একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান সম্ভব। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি ছোট নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেছিল। ২০১৮ সালে এসে তাদের সেই সৌজন্যও উবে যায়। যা হোক, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১০ সদস্যের একটি ‘জাতীয় সরকার’ গঠিত হতে পারে। বর্তমান রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন তাদের থেকে ছয়জন এবং প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ থেকে চারজন, মোট ১০ জনের ছোট ক্যাবিনেট দুর্যোগকালীন সরকার পরিচালনা করবে। যারা সংসদ সদস্য নন তারা ‘টেকনোক্র্যাট’ কোটায় সংবিধানসিদ্ধভাবে ক্যাবিনেট সদস্য হতে পারেন। ১০ জনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে পারেন। বর্তমান সরকারপ্রধানও জাতীয় সরকারের প্রধান হতে বাধা নেই। বাংলাদেশের রাজনীতি যেহেতু রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তাই প্রধান রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে এই ১০ সদস্যের জাতীয় সরকার গঠিত হলে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া অবশেষে কার্যকর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতীয় দুর্যোগের উত্তরণ ঘটবে।

বাংলাদেশে জাতীয় সরকার গঠনের ধারণা নতুন নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর জাতীয় সরকার গঠনের দাবি উঠেছিল। মওলানা ভাসানীসহ সব রাজনৈতিক দল একই দাবি জানিয়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে জাতীয় ঐক্য ছিল অবধারিত। কিন্তু আওয়ামী সরকার তাদের প্রাধান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো কাজ করতে রাজি ছিল না। ১৯৭৫ সালে যখন একদলীয় সরকার কায়েম করা হয়, তখন তার পূর্বে ‘জাতীয় শব্দ’টি ব্যবহার করে একে সর্বজনীন রূপ দেয়ার প্রয়াস নেয়া হয়। তারা দাবি করে থাকে, সেটাও এক ধরনের জাতীয় সরকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর জাতীয় সরকারের দাবি জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতির ছয় দিন পর এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত রূপরেখা দেন ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি এর প্রধান আ.স.ম আবদুর রব। তাদের ভাষায় বিদ্যমান ‘অবৈধ’ সরকারের পদত্যাগের পর সাংবিধান শূন্যতা ও সঙ্কট পূরণের জন্য প্রয়োজন ‘জাতীয় সরকার’।

তাদের প্রদত্ত রূপরেখা মোতাবেক জাতীয় সরকার গঠন করা হবে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শক্তিগুলোর সংলাপের মাধ্যমে। জাতীয় সরকারের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে রব বলেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখের আগের রাতে ভোট কেটে নেয়ার যে জালিয়াতি তা সারা দেশের জনগণ প্রশাসন সবাই অবহিত। এই পরিপ্রেক্ষিতেই তারা সরকারকে অবৈধ বলছেন এবং জাতীয় সরকারের দাবি জানাচ্ছেন। আ.স.ম রব তার বক্তব্যে আরো বলেন, বিদ্যমান অবৈধ সরকারের পতনের মাধ্যমে বিপন্ন রাষ্ট্রকে সাংবিধানিক চেতনায় পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি অনুসন্ধান করতে হবে। উল্লেখ্য যে, জাতীয় সরকারের এই প্রস্তাবনা কাগজেই থেকে যায়। এর জন্য কোনো ব্যাপক আন্দোলন ও সংগ্রাম বিরোধী দলগুলো করতে ব্যর্থ হয়।

আজকের যে সময় ও পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সরকারের কথা বলা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক নয়। মানবিক ও দুর্যোগকালীন। এতে রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছা ও জাতীয় ঐক্যের কথাই প্রাধান্য পাচ্ছে। কোনো বিরোধীদলীয় দাবি ও আন্দোলনের মুখে এ জাতীয় সরকার গঠিত হবে না। বরং দুর্যোগকালীন সময়ে সবার মত ও সামর্থ্যকে এক করে এগোনোর জন্য একটি ইতিবাচক বিষয় হিসেবেই বিবেচিত হবে। ২০১৯ সালে যে যুক্তিতে ড. কামাল হোসেন তথা যুক্তফ্রন্ট জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন, তা মেনে নেওয়া সরকারের জন্য ছিল নেতিবাচক। অবশ্য সে নির্বাচনের বিষয়টি এখন আর তীব্রভাবে আলোচিত হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য এটি একটি ওয়ে আউট। সবাই অনুভব করেন, সরকার যেভাবেই হোক একটি ‘বাঘের পিঠে’ সওয়ার হয়েছেন। সে রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে সরকারের প্রস্থান কৌশল নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে এরকম একটি জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে। তাতে সরকারের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে না, বরং যে গণঅগ্রহণযোগ্যতা তারা মোকাবেলা করছেন তার একটি সুন্দর ও সাবলীল প্রস্থানপট তৈরি হবে।
সরকার সবসময় আশঙ্কা করে আসছে যে, সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিপুল রক্তক্ষয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিষয়টি অমূলক নয়। ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠিত হলে সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে যে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদ বিনষ্টের আশঙ্কা থেকে যায়’ তা তিরোহিত হবে। কোনো রাজনৈতিক সরকারই চিরস্থায়ী নয়। কোনো না কোনো সময়ে তাদের ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হয়। এই প্রস্থানটি কখনোই রক্তাক্ত বা সঙ্ঘাতপূর্ণ হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি দুর্যোগকালীন জাতীয় সরকার গঠিত হলে তা সরকারের ধারাবাহিকতা, নিয়মতান্ত্রিকতা ও গ্রহণযোগ্যতার পরিপূরক হিসেবে প্রমাণিত হবে। বিরোধিতা, শত্রুতা ও সঙ্কীর্ণতা পরিহার করে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতীয় সরকার গঠন এখন সময়ের দাবি।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement