২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মহামারী জলবায়ু ও চীনকে মোকাবেলা!

মহামারী জলবায়ু ও চীনকে মোকাবেলা! - ফাইল ছবি

জলবায়ু সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছেন ধনী দেশগুলোর সংস্থা জি-৭ নেতারা। তারা বলেছেন, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু সংরক্ষণ ও কার্বন নির্গমন রোধে তারা নতুন সংরক্ষণ এবং লক্ষ্য চূড়ান্ত করেছেন।

যুক্তরাজ্যের কারবিস বেতে আয়োজিত তিন দিনের এ সম্মেলন শেষে এক ইশতেহারে আগামী বছরের মধ্যে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ১০০ কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ধনী দেশগুলো। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ কোটি ডোজ, যুক্তরাজ্য ১০ কোটি ডোজ এবং অন্যরা বাকি টিকা দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। এ টিকা হয় সরাসরি অথবা জাতিসঙ্ঘ কোভ্যাক্স প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র দেশগুলোতে পৌঁছানো হবে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল ১ হাজার ১০০ কোটি টিকা প্রয়োজন। এর তুলনায় জি-৭ যে টিকা বরাদ্দ করেছে তা খুবই কম।

সম্মেলনে ২০১০ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ধনী দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির কথাও রয়েছে। এ ছাড়া দশকের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে ভূমি ও সমুদ্রের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে তারা সম্মত হয়েছেন। নেতারা ‘নেচার কম্প্যাক্ট’ নামে একটি চুক্তি সই করেন। সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে ভর্তুকি দেয়ার বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের অঙ্গীকার করা হয়েছে। তবে ডিজেল ও পেট্রলচালিত গাড়ির ব্যবহার বন্ধের সময়সূচি নির্ধারণে সমঝোতা হয়নি। এবারের সম্মেলনে অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল করোনা মহামারী মোকাবেলা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি। আগামী নভেম্বরে জাতিসঙ্ঘের কপ ২৬ সম্মেলনের আগে এ বিষয়ে ভিত্তি স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।

‘কারবিস বে ডিক্লারেশনে’ কোভিড-১৯ অংশে রয়েছে আগামী বছরের মধ্যে ৮৪ কোটি ডোজ করোনার টিকা সহজলভ্য করা। এ ছাড়া জি-৭ নেতারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বান অনুযায়ী স্বচ্ছ বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে বিজ্ঞানভিত্তিক করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) উৎস তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। এ ছাড়া আর কোনো বৈশ্বিক মহামারী যাতে ভবিষ্যতে না হয় তা ঠেকানোর জন্য এখনই পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলা হয়।

তবে সম্মেলনে জলবায়ু এবং করোনা মহামারী মোকাবেলাকে মূল এজেন্ডা বলা হলে নেপথ্যে ‘চীন বিরোধিতা’ প্রাধান্য পেয়েছে। চীনকে মোকাবেলায় জি-৭ নেতারা ‘বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর অর্থ আরো সমৃদ্ধ, আরো উন্নত এবং ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে বিকল্প জোট গঠনে ঐকমত্য হয়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিথ্রিডব্লিউ (বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড) নামে প্রকল্পে নেতারা স্বাক্ষর করেন। এতে তারা বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে তহবিল জোগানের ঘোষণা দেন। চীনের ‘বেল্ট এরোড’ ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) পাল্টা হচ্ছে এ প্রকল্প। চীন বিআরআই প্রকল্পে ১০০টি দেশকে যুক্ত করেছে দেশগুলোর রেলওয়ে, সড়ক বন্দর, মহাসড়ক ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে। এটা চীনের ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকল্প।

চীনবিরোধী পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে চীন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, ছোট একটি গ্রুপ বিশ্বের ভাগ্য নির্ধারণ করবে- সেই দিন এখন আর নেই। চীনের লন্ডন দূতাবাস থেকে এ বিবৃতি দেয়া হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এ দুর্যোগ করোনার চেয়েও ভয়াবহ। তারা বলেন, কোভিড-১৯ ভয়ানক। তার চেয়েও ভয়ানক জলবায়ু পরিবর্তন। মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিত্ব বিল গেটস ইতোমধ্যে বলেছেন, ২০৬০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তন ঠিক কোভিড-১৯ মতোই প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে। আর ২১০০ সাল নাগাদ এটা হয়ে যাবে পাঁচগুণ বেশি ভয়াবহ।

বর্তমানে বিশ্ব লড়ছে নতুন মহামারী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে এ ভাইরাসের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। দেশে দেশে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। ফলে ধীরে ধীরে পৃথিবী সেরে উঠতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা এখন জলবায়ুর বিপর্যয় রুখতে কাজ শুরুর আওয়াজ তুলেছেন। কারণ জলবায়ু বিপর্যয়ের ক্ষতির প্রভাব করোনা মহামারীর চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বা তাপমাত্রা হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে বায়ুচাপ। ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। সাগরের উচ্চতা বাড়ছে। লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে, যা জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে জলবায়ু বিষয়ক একটি ভার্চুয়াল সম্মেলন হয়ে গেল। রাশিয়া ও চীনসহ ৪০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এ সম্মেলনে অংশ নেন। তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় চলতি দশকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রতিশ্রুতি দেন যে, তার দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে নিজের দেশের কার্বন নিঃসরণের হার ২০০৫ সালের তুলনায় ৫০ থেকে ৫২ শতাংশ কমাবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী সুগা জানান, তার দেশ এ সময়ে ২০১৩ সালের তুলনায় ৪৬ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাবে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানান, তার দেশ ২০৩০ সাল নাগাদ ২০০৫ সালের তুলনায় ৪০-৪৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাবে। চীন এবং ভারত কোনো প্রতিশ্রæতি দেয়নি। যদিও জাতিসঙ্ঘে কয়েক বছর আগে দেয়া এক ভাষণে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, চীন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। চীন বায়ুমণ্ডলে ২৮ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী।

ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালের কার্বিস উপসাগরের কর্নিশ রিসোর্টে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এই ৭টি ধনী দেশের সংস্থা জি-৭ এর শীর্ষ সম্মেলন হয় গত ১১-১৩ জুন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও জোটের অংশ। ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেয়। সম্মেলনে নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বের উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার ব্যাপারে একমত হন। এ ছাড়া উন্নয়নশীল বিশ্বকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করার পরিকল্পনাও নেন। সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি ২০২১ সালের নভেম্বরে গ্লাসগো শহরে জাতিসঙ্ঘ সম্মেলন বা কপ টোয়েন্টি সিক্স আয়োজন করা হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ একেবারে নামিয়ে আনতে এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণে মাত্রা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা অর্থাৎ ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে যাতে রাখা যায়; সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন নেতারা। এ ছাড়া প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করতে উন্নত দেশগুলো যাতে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ওই সম্মেলনে কয়লার ব্যবহারে বন্ধ করা, বনভূমি উজার কমিয়ে আনা, বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়ানো এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।

২০১৫ সালের ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের ধারাবাহিকতায় গ্লাসগো শহরে এ সম্মেলন হচ্ছে। গত বছর এটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে হয়নি। ১৯০টি দেশ ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তিতে একমত হয়েছিল যে, বৈশ্বিক উচ্চতা বৃদ্ধি শিল্পায়ন পূর্ব সময়ের ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখবে সবাই। সম্ভব হলে তা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা হবে।

বৈশ্বিক উচ্চতা বাড়াতে দায়ী মানবসৃষ্ট গ্রিন হাউজ গ্যাস। কার্বনডাই অক্সাইড, মিথেন, ওজোন, নাইট্রিক অক্সাইড, ক্লোরফ্লোর কার্বন বা সিএফসি এবং জলীয়বাষ্প হলো গ্রিন হাউজ গ্যাস। বায়ুমণ্ডলে নির্গত এ গ্যাসের ৮০ শতাংশই কার্বনডাই অক্সাইড। এ ছাড়া ১০ শতাংশ মিথেন, ৭ শতাংশ নাইট্রাস অক্সাইড এবং বাকি ৩ শতাংশ সিএফসিসহ অন্যান্য। বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাই অক্সাইডের ৩৪ শতাংশ পরিবহন থেকে, ৩২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে ১৫ শতাংশ শিল্পকারখানা এবং বাকি ৭ শতাংশ অন্যান্য উৎস থেকে বায়ুমণ্ডলে যোগ হচ্ছে।

১৯৫০ সালে শিল্প বিপ্লবের পর বায়ুমণ্ডলে বেড়ে যাওয়া কার্বনডাই অক্সাইড বৈশ্বিক উষ্ণতা লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে বড় একটি কারণ বেশি পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ। বায়ুমণ্ডলে মিথেন কার্বনডাই অক্সাইডের তুলনায় কম যোগ হলেও তা কার্বনডাই অক্সাইডের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি শক্তিশালী বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে।

বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে শিল্পোন্নত দেশগুলোই দায়ী। এক গবেষণায় দেখা যায়, বড় দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মিলে ৪০ শতাংশ কঠিন নিঃসরণ করছে বায়ুমণ্ডলে। এর মধ্যে চীন বেশি করছে। দেশটি প্রতি বছর ১১ হাজার ২৫৬ মেগা টন (প্রতি মেগা টনে ১০ লাখ টন)। এরপর যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছরে পাঁচ হাজার ২৭৫ মেগাটন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিলিতভাবে তিন হাজার ৪৫৭ মেগাটন, ভারত দুই হাজার ৬২২ মেগাটন, রাশিয়া এক হাজার ৭৪৮ মেগাটন, জাপান এক হাজার ১৯৯ মেগাটন। এরপর জার্মানি ৭৫৩ মেগাটন, ইরান ৭২৮ মেগাটন, সৌদি আরব ৬২৫ মেগাটন, কানাডা ৫৯৪ মেগাটন ও ইন্দোনেশিয়া ৫৫৮ মেগাটন।

জাতিসঙ্ঘের বিজ্ঞানীদের একটি প্যানেল ইতোমধ্যে হুঁশিয়ার দিয়েছে, বিশ্ব উচ্চতা বাড়ায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সাগরের উচ্চতা বাড়ছে। অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলছে। সেই সাথে জীবজন্তুর বিভিন্ন প্রজাতি আবাস বদলাচ্ছে। লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিবেশ বা ইকো সিস্টেম ধ্বংস হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। পৃথিবী এখন মহাসঙ্কটে। ১৯৭০ সাল থেকেই সাগর-মহাসাগরের উষ্ণতা বেড়ে চলেছে। পরিবেশে যে বাড়তি তাপ তৈরি হচ্ছে তার ৯০ শতাংশ শুষে নিচ্ছে সাগর। ১৯৯৩ সালে এই শুষে নেয়ার মাত্রা ছিল দ্বিগুণ। ২১০০ সাল নাগাদ সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

কার্বন নিঃসরণের সাথে বাংলাদেশ জড়িত নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের লাখ লাখ উপকূলীয় এলাকার মানুষ বড় হুমকিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগ যেমন- বন্যা, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস ঘন ঘন দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বাস। এরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাগরে উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে গাঙ্গেয় বদ্বীপের অনেক অংশ ডুবে যাবে। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। দারিদ্র্য বাড়াবে। একই সাথে সাগরের পানির লবণাক্ততা পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট করে ফেলবে।

চীনকে রুখো!
চীনকে রুখো! জি-৭ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এটাই ছিল মুখ্য আলোচনার বিষয়। বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব পশ্চিমা সব দেশকে নিয়ে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে। হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে বিবিসিকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনকে মোকাবেলায় নতুন একটি জোট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন জি-সেভেন সম্মেলনে। বিশ্বব্যাপী চীন প্রভাব বলায় যেভাবে বাড়াচ্ছে তা মোকাবেলায় বিকল্প একটি অভিন্ন কৌশল প্রণয়নের কাজ করবে এই জোট।

গত তিন দশকে চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ নিয়েই পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে আমেরিকা উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের আরো একটি কারণ হলো চীন এখন ওয়াশিংটনকে ছাড়িয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশ। ইইউ এবং চীনের মধ্যে ২০২০ সালে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। চীনে ইইউ দেশগুলোর রফতানির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। জার্মানি এবং ইতালির সাথেও চীনের বাণিজ্য বাড়ছে। বিশ্বের ১০০রও বেশি দেশে চীন বিনিয়োগ করেছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জি-সেভেন সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিরে এসেছে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো একত্রে দাঁড়িয়েছে। সম্মেলনে জো বাইডেনের সাথে সুর মিলিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, চীন থেকে উৎপন্ন করোনা মহামারী আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। সম্মেলনে আসার আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন চীনা প্রযুক্তির সাথে টক্কর দিতে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষে একটি বিল আনেন। তা পাসও হয়। বিলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ও গবেষণা খাত শক্তিশালী করতে ১৯০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সেমিদন্ডাক্টর ও টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম তৈরি ও গবেষণায় ৫৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। দুই বিলিয়ন ডলার শুধু ব্যয় হবে গাড়ির চিপ তৈরিতে। প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছে, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনকে কাল্পনিক শত্রু হিসেবে দেখার আপত্তি জানাই।’

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক


আরো সংবাদ



premium cement