২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা - ফাইল ছবি

আমাদের দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যুগে প্রবেশ করে ১৯৯২ সালের আগস্টে অধ্যাদেশ পাসের মধ্য দিয়ে। তখন প্রতি বছর দেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে যেত। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত ছিল অন্যতম গন্তব্য। প্রধানত আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যেত। গত শতকের আশির দশকের শেষ ও নব্বইয়ের শুরুতে এ প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। উচ্চতর পর্যায়ে, বিশেষ করে পিএইচডি লেভেলে পড়াশোনা ও গবেষণায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা সব সময়ই ছিল। এসব দেশে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পড়তেও যেত। তবে সংখ্যায় কম। যুক্তরাজ্যে যেত অনেকে। আমেরিকায়ও গিয়েছে। আমি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটিতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী দেখেছি। এরা খুবই মেধাবী। আমার জানা মতে, তখন প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যায়। ওই সময় যারা এইচএসসি পাস করত তাদের বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেত না। ফলে যাদের আর্থিক সঙ্গতি ছিল বিদেশে পাড়ি জমাত তারা। ভারতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেগুলোতে ভর্তি হওয়া ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে সহজ এবং খরচও অনেক কম।

১৯৯১ সালে দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ৯টি। তখন বেশ কিছু বিশেষায়িত কলেজ যেমন, কৃষি বা প্রকৌশল কলেজ ছিল। কোনো মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। একমাত্র প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বুয়েট। দেশে এখন সরকারি ৪৬টি ও বেসরকারি ১০৭টি বিশ্ববিদ্যালয়। নব্বই দশকের শুরুতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালুর সিদ্ধান্তটি দেশের জন্য সত্যিকারের কল্যাণকর হয়েছিল। এতে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা দেশ হতে বেরিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়, যা মূলত আমাদের প্রবাসীদের কষ্টার্জিত আয়।

২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রসারে আরো জোরালো উদ্যোগ নেয় সরকার। তখন সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়ানো হয়। আইনি ব্যাখ্যা আরো সুস্পষ্ট করা হয়। দেশে বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রসারের সাথে সাথে বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রবণতা তখন কমে আসে। বর্তমানে সাড়ে চার লাখের মতো শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়ন করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় চার লাখ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকার সুবাদে এসব শিক্ষার্থী দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। এটি অনেক বড় বিষয়। আমি চার বছর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করি। এতে অনেক কিছু প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তা ছাড়া ১৯৯৭ সাল থেকে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেছি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরুতে প্রচুর শিক্ষার্থী পেলেও মূল সমস্যায় পড়ে ভালো শিক্ষক পাওয়া নিয়ে। বেছে যোগ্যকে উচ্চ বেতনে হয়তো ভাইস চ্যান্সেলর করে এনেছে, কিন্তু এভাবে কতজন সিনিয়র শিক্ষককে রাখা যায়? তখন তারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের খণ্ডকালীন শিক্ষকতায় নিয়ে আসত। এ ছাড়া তাদের কাছে কোনো বিকল্পও কম ছিল। কেউ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পেলে তাকে বেশি বেতন দিয়েও আনা যেত না। কারণ এখানে চাকরির নিশ্চয়তা নেই। এ ছাড়া সুনামের প্রশ্ন আছে। দেশে-বিদেশে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয় আছে। তা ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হওয়া যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাহিদাভিত্তিক বিষয়গুলো পড়ানো হয় বিধায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সব বিষয়ের শিক্ষকরাই মূলত খণ্ডকালীন শিক্ষকতার সুযোগ পাচ্ছেন।
আমরা যখন খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করতে যাই; তখন নিয়ম ছিল সপ্তাহে একটি কোর্সের (৩ ঘণ্টা) বেশি ক্লাস নেয়া যাবে না। অবশ্য এ নিয়ম ততটা কার্যকর হয়নি। এভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তৈরির ক্ষেত্রে ও সেগুলো এগিয়ে নিতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখেন। একে আমি ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখি। সময়ের সাথে সাথে নতুন শিক্ষক তৈরি হয়েছে। যেসব মেধাবী ছাত্রছাত্রী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পাননি, তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। এখন শিক্ষক সমস্যা অনেকটা কেটে গেছে। তবে ‘হাইলি কোয়ালিফায়েড’ শিক্ষক এখনো কম। অবশ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের বিধান অনুসারে ১০ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ২০ বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একই সাথে ভিসির অবশ্যই অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণী অথবা পিএইচডি থাকার শর্ত রয়েছে। সে হিসাবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ পাওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি নির্ধারণ করা আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মানে জ্ঞানের ভাণ্ডার। ইতঃপূর্বে এক লেখায় আমি বলেছি, একমাত্র জ্ঞানই সৃষ্টি করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় হলো সেই জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা, শুধু জ্ঞান বিতরণের জায়গা নয়। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটানো, দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশ, ইতিহাস-ঐতিহ্য চর্চাসহ অনেক বিষয় থাকে। তাই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিষয় পড়ানো হয় জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সম্প্রসারণে। এর সবগুলোর চাকরিভিত্তিক প্রয়োগ নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থাকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। এখানে শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ে পড়বে সেগুলোর চাকরি পাবে, তা কিন্তু নয়। অন্য দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান মূলত চাহিদাভিত্তিক। যেমন- দেশের প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ানো হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদে একসময় যেসব বিষয় পড়ানো হতো সেগুলোর নাম পরিবর্তন করে বিবিএ করা হয়েছে। বিবিএ শুরু করেছিল ঢাবির ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ)। এখানকার বিবিএর মান অনেক ভালো। যারা এখান থেকে পাস করে তাদের মান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক উপরে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ত্রিপল-ই (ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং), সিএসই (কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং) পড়ানো হচ্ছে। দেশে-বিদেশে এগুলোরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ইংরেজি ও আইনেরও চাহিদা আছে। বহুজাতিক ও বিদেশী কোম্পানিগুলো ইংরেজির ছাত্রদের চায়। আইনের ছাত্রদের বাড়তি সুবিধা হলো এ বিষয়ে পাস করে চাকরি পাওয়ার জন্য বসে থাকতে হয় না। তারা যেকোনো ফার্মের সাথে যুক্ত হয়ে নিজস্ব প্র্যাকটিস করতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয় রয়েছে। ফার্মেসি ছাড়া উপরে উল্লিখিত বাকি সব বিষয় মোটামুটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়।

আমি যে বিষয়ে অধ্যাপনা করেছি সেই ফার্মেসির চাহিদাও অনেক। আমার জানা মতে, বর্তমানে ২৬-২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয় পড়ানো হয়। আমাদের ওষুধ ও সংশ্লিষ্ট শিল্পে এর চাহিদা অনেক। বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। আমাদের ফার্মেসির শিক্ষার্থীরা দেশে ও দেশের বাইরে উচ্চ বেতনে চাকরি করছে। যেসব বিষয় অতিমাত্রায় গবেষণাগারভিত্তিক সেগুলো তুলনামূলক কম পড়ানো হয়। মূলত উপরোক্ত সাত-আটটি বিষয় পড়ানোই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টার্গেট থাকে। এর বাইরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আরো কিছুটা কম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হচ্ছে।

ভালো শিক্ষার্থীরা বরাবরই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। তাই বলে সব ভালো শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় না। আমার হিসাবে ১০ শতাংশ ভালো শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে আবার মেয়েদের সংখ্যা বেশি। আমাদের ছাত্রীরা তুলনামূলক ভালো। আমার নিজের বিভাগে দেখেছি প্রায় অর্ধেক মেয়ে। অন্যান্য ভালো বিভাগেও একই অবস্থা। ফলের ক্ষেত্রে ৬০-৭০ শতাংশ মেয়ের অবস্থান উপরের দিকে। মেধা তালিকায় শীর্ষ অবস্থানসহ এক থেকে দশের মধ্যে বেশির ভাগ মেয়ে থাকে। উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষকতা পেশায় মেয়েদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণের বিষয়টি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোতে লক্ষ করেছি। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, মিসর- এসব দেশে মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় বেশ এগিয়েছে। আমাদের মেধাবী মেয়েরা বেশি সংখ্যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কারণ হলো এরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলেও অনেক পরিবার তাদের দূরে পাঠাতে রাজি হয় না। আমাদের ছাত্ররা পিএইচডি করতে বিদেশে চলে যায়। ছাত্রীরা কম যায়। এবার আমার বিভাগ থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থী আমেরিকায় পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জন আমার রেফারেন্স বা রিকমেন্ডেশনে গেছে। ফার্মেসিতে সব মিলিয়ে ৭৫ জনের মতো ছাত্র। এদের পাঁচ ভাগের এক ভাগই আমেরিকায় পিএইচডি করতে যাচ্ছে, ভাবা যায়?

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা মেয়েদের সংখ্যা বেশি। শিক্ষকতার প্রতি ভালো শিক্ষার্থীদের এক ধরনের মোহ থাকে। এদের অনেকে বিসিএস দিতেও আগ্রহী হয় না। দেখেছি, মেধা তালিকায় উপরের দিকে থাকা সাত-আট শিক্ষার্থী শিক্ষক হতে চায়। তাদের টার্গেট থাকে পিএইচডি করা। এরা যখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায় না; তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয় অথবা পিএইচডি করতে বিদেশে চলে যায়। দুঃখের বিষয় হলো সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ কম হচ্ছে। এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। রাজনৈতিক-সংযুক্তির কারণে অতীতে এমনটি যে হয়নি, তা নয়। কিন্তু ইদানীং প্রকট হয়েছে। আমাদের সময় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকারী শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষক পদে নেয়া হতো না। সাম্প্রতিক সময়ে মেধাক্রমের শেষের দিকে থাকাদেরও নেয়া হয়েছে। এটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এ অবস্থায় শিক্ষকতায় আগ্রহীরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১০ শতাংশ ভালো শিক্ষার্থীর কথা আমি আগে বলেছি তাদের অনেকে একসময় শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী হয়েছে। ফলে সেখানে শিক্ষক সঙ্কট অনেকটা কেটেছে। সময়ের পরিক্রমায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জব-সিকিউরিটিও তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় সব বেসরকারি। আমেরিকাও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশটির তিন সেরা বিশ্ববিদ্যালয়- এমআইটি, হার্ভার্র্ড ও স্ট্যানফোর্ড বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার সরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী বেশি, বেতন কম। কিন্তু পড়াশোনার মান বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সেগুলোর বড় বড় ‘এনডাওমেন্ট ফান্ড’ রয়েছে। এরা সরকারের কাছ থেকে টাকা নেয় না। পশ্চিমা জগতে দেখা যায় অনেক বিলিয়নিয়ারের উত্তরাধিকারী নেই। মৃত্যুর আগে তারা নিজেদের সম্পদ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দান করে যান। এই তহবিল অনেকটা আমাদের ‘ওয়াকফ’-এর মতো। নিজস্ব তহবিল থাকায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সারা বিশ্ব থেকে মেধাবী ছাত্রদের বিশাল অঙ্কের স্কলারশিপ দিয়ে নিয়ে যেতে পারছে। এশিয়ান শিক্ষার্থীরা সেখানে বেশি যাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও চীনা শিক্ষার্থী বেশি। আমাদের দেশে ‘এনডাওমেন্ট ফান্ড’ দিয়ে এখনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলে না। তবে আমাদের ২০-২৫টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এখন সুনামের সাথে শিক্ষা দিচ্ছে। ভালো মানের শিক্ষার্থী তৈরি করছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম দিকে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে আছে। বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রেডিট ট্রান্সফারেরও ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রায় বিনা মূল্যে পড়ায়। মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা যদি বলি, তা হলে বলব সেখানে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রায় বিনা মূল্যে পড়ে। আমি দেখেছি, যারা ভালো রেজাল্ট করে তারা ৬০-৭০ হাজার টাকায় চার বছরের পুরো কোর্স শেষ করতে পারে। এতে তাকে বছরে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। রেজাল্ট ভালো করতে পারলে এখানেও প্রায় বিনা পয়সায় পড়ার সুযোগ আছে। উপরন্তু ২০১০ সালের অধ্যাদেশে ৩ শতাংশ অনুন্নত মেধাবী দরিদ্র ছাত্রদের বিনা খরচে পড়ানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানেই অনেক টাকা, অনেক খরচ- এটি ভুল ধারণা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো- সময়মতো কোর্স শেষ হওয়া। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স শেষ হতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরি হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট বলতে কিছু থাকে না। এতে শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষা খরচ কমে আসে। হ

লেখক : ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স এবং সাবেক ডিন ও অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
cmhasan@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement