২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মানিব্যাগ মোবাইল গেল কোথায়?

মানিব্যাগ মোবাইল গেল কোথায়? - ফাইল ছবি

মাওলানা মামুনুল হক, আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। গত বছর মার্চের ৬ তারিখে মোহাম্মদপুর সাতমসজিদ এলাকায় সাতগম্বুজ মসজিদে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আপনি ও আপনার ভাই মামলার বাদিকে সাতগম্বুজ মসজিদ থেকে জোর করে বের করে দিয়েছেন। তাতে বাদির ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই কাজে আপনার মাদরাসার ৭০-৮০ ছাত্রকে লেলিয়ে দিয়েছেন। বাদিকে আচ্ছামতো পিটিয়ে মসজিদ এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে বাদি আপনার পূর্বপরিচিত ছিল কি না, পত্রপত্রিকায় রিপোর্টে তা স্পষ্ট নয়। আল্লাহর ঘরে যে কেউ ইবাদত করতে পারেন। আপনি তা করতে না দিয়ে বাধা দিয়ে মহা অন্যায় করেছেন। না, কাউকে ধর্মীয় কাজে শুধু বাধা দেননি, আপনি তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছেন, সাত হাজার টাকা ও ২০০ ডলারসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছেন। সেই মানিব্যাগে বাদির ডেবিট কার্ডও ছিল। বাদিকে জিম্মি করে তার ডেবিট কার্ডের পিন নম্বর দিয়ে ব্যাংক থেকে কোনো টাকা তুলে নিয়েছেন কি না, জানা যায়নি। তবে মামলার বাদি এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো অভিযোগ করেননি। এ থেকে মনে হতে পারে, আপনার সম্ভবত সে ধরনের কোনো উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসেনি বলে, আনা যাবে না, এমন তো কোনো কথা নেই। প্রয়োজনে নতুন করে এজাহার লেখা হবে। সমাজে ন্যায়বিচার তো প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। আপনি নিজে তো শিক্ষিত লোক। আপনিই বলুন, এটা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না। নিশ্চয়ই পড়ে।

ওই ঘটনা থেকে আরো একটা বিষয় প্রমাণিত হয় যে, আপনি মোহাম্মদপুর এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারী। আপনার মাদরাসার ছাত্রদের নিয়ে আপনি সন্ধ্যার পর এ ধরনের ছিনতাই কাজে লিপ্ত হন। আপনাকে ভালো করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ছিনতাইকৃত মোবাইলগুলো আপনি কোথায় রেখেছেন সেটিও বের করা দরকার। নাকি আপনি গুলিস্তানে পুরনো চোরাই মোবাইল হাতে নিয়ে মোবাইল নেবেন, মোবাইল নেবেন বলে ফেরি করেছেন- সেটিও বের করতে হবে। প্রয়োজনে সাক্ষীর অভাব হবে না। আমরা সাক্ষী জোগাড় করে নেবো। একই কথা মানিব্যাগের বেলায়ও সত্য। বাদির যে মানিব্যাগ আপনি ছিনতাই করেছিলেন, তার দামই ছিল কয়েক হাজার টাকা। সেটিইবা আপনি কোথায় বিক্রি করে দিয়েছেন।

তবে আপনার চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সমাজে বাইরে যারা সম্মানিত ব্যক্তি তারা এ ধরনের অপকর্মে হামেশাই লিপ্ত হন। আমরা পুলিশের রিপোর্ট থেকে জেনেছি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মিউনিসিপ্যালিটির ময়লার গাড়িতে আগুন দিয়েছেন। এরও প্রত্যক্ষদর্শীর অভাব নেই। একেবারে মশাল জ্বালিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি ময়লার গাড়িতে আগুন দিয়েছিলেন।

মিউনিসিপ্যালিটির ময়লার গাড়িতে যে ময়লা থাকে, সাধারণত সেগুলো ভেজা থাকে। গাড়ি যখন চলে, তখন সেগুলো চুঁইয়ে চুঁইয়ে ময়লা পানি পড়ে। মির্জা ফখরুলের মশালে দুর্দান্ত জাদু ছিল, তাই তা দিয়ে পানিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছিল। প্রয়োজনে সরকার ডজন ডজন সাক্ষী হাজির করবে- যারা নিজ চোখে দেখেছেন যে, বিএনপি মহাসচিব ময়লার গাড়িতে আগুন দিচ্ছেন।

ময়লার গাড়িতে আগুন দেয়ার প্রসঙ্গ থাক। ছিনতাইয়ের কথাই ধরুন না কেন। বিএনপির সময় সফল শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ছিলেন এহছানুল হক মিলন। তিনিও আপনার মতো পেশাদার ছিনতাইকারী ছিলেন। তাই একদিন তিনি মহিউদ্দিন খান আলমগীরের স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাই করে নেন। তাতে কত টাকা ছিল, কত দামি মোবাইল ছিল, এখন আর স্মরণ করতে পারছি না। কিন্তু আপনার পর্যায়ের লোকেরাও যে পেশাদার ছিনতাইকারী হতে পারে, মিলন তো তার চাক্ষুষ প্রমাণ। এতেও সাক্ষীর অভাব হয় না। বহু লোক দেখেছেন, মিলন মহিউদ্দিন খানের স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রয়োজনে ডজন ডজন সাক্ষী হাজির করা সম্ভব। কিন্তু এই মহিউদ্দিন খান আলমগীর যখন আস্ত একটা ফারমার্স ব্যাংক গিলে খেয়ে ফেললেন, তার বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না। এ আবার কেমন বিচার। হ্যাঁ, এমন বিচারই চলছে সমাজে। সে নিয়মে মির্জা ফখরুল ময়লার গাড়িতে আগুন দেন, এহছানুল হক মিলন মহিউদ্দিন খান আলমগীরের স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাই করেন, আর আপনি মসজিদে আগত ব্যক্তির মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন।

মামলার বিবরণে প্রকাশ, আপনি শুধু বাদি নয়, তার সঙ্গে আগত অন্যদেরও মসজিদ থেকে বের করে দিয়েছেন। তারা সংখ্যায় কতজন ছিলেন, সে তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু আপনি কেমন অপেশাদার ছিনতাইকারী যে, এতগুলো লোক এলো, শুধু একজনের মোবাইল আর মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিলেন, সবার মোবাইল-মানিব্যাগ কেন ছিনিয়ে নেননি, তা বোঝা গেল না। অন্তত তার সঙ্গী সাথীরা সে রকম অভিযোগ করেননি। ছিনতাই যদি করলেনই তো অন্যদের কেন ছাড় দিলেন! অনেক বেশি টাকা পেতেন। অনেক মোবাইল গুলিস্তানে বিক্রি করতে পারতেন, অনেক মানিব্যাগ ফেরি করতে পারতেন। কী যে করেন না!

কিন্তু আপনার আইনজীবী একজন বেরসিক মানুষ। তিনি আদালতে বলেছেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ওই ব্যক্তির সঙ্গে (বাদি) ঘটেনি। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলেই আপনি দোষী হবেন না, এমন কোনো কথা নেই। রানা প্লাজা ধসের পর মহিউদ্দিন খান আলমগীর রানা প্লাজার মালিককে দোষারোপ করেননি। তিনি বললেন, বিএনপির লোকেরা রানা প্লাজার পিলারে ধাক্কাধাক্কি করেছে বলে ভবন ধসে পড়েছে। তাই নিয়ে সারা পৃথিবীতে তোলপাড়। যারা বাংলাদেশী গার্মেন্ট পণ্য কেনেন, তেমন তরুণেরা পৃথিবীর দেশে দেশে ভবনের পিলার ধরে ধাক্কা দিয়ে ছবি তুলে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, কই ভবন তো ধসে পড়ে না।

জনাব মামুনুল হক, আপনি নাকি বলেছেন যে, আপনার আইনত স্ত্রী একজন। বাকি দু’জনকে চুক্তিভিত্তিক বিবাহ করেছেন। অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে পরে আপনি আরো দু’টি বিয়ে করেন। কোনো কোনো কাগজ লিখেছে, কন্টাকচুয়াল ম্যারেজ। এখন খবরের কাগজে বা ভিজুয়াল মিডিয়ায় কোনো কিছু প্রচার করতে কোনো নীতি-নৈতিকতার প্রয়োজন হয় না। যে গাল-গল্প আপনার নামে পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। সত্যি আপনি কী বলেছেন, তা কেউ জানে না। ‘তদন্ত সূত্র’ বলেছে, আপনি এই করেছেন, সেই করেছেন। এসব হলুদ সাংবাদিকতা বা অপসাংবাদিকতা। আপনি কি বলেছেন, সেটি আপনার কাছ থেকে নিশ্চিত হতে হবে। কিন্তু এখনকার সাংবাদিকরা তার কোনো ধার ধারছেন না। এটা হয়েছিল এক/এগারোর সময়। সে সময়কার সামরিক সরকার যাকে দিয়ে যা খুশি বলিয়ে নিয়ে পত্রপত্রিকায় তার স্ক্রিপ্ট বা ক্যাসেট পাঠিয়ে দিত, আমরা অত্যুৎসাহে তা ছাপিয়ে দিতাম। সে সময় এসব আবর্জনা ছাপতে অস্বীকার করেছিল, দু-একটি সংবাদপত্র। সে জন্য নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবিরকে ধন্যবাদ। তিনি প্রথম থেকেই সে আবর্জনা ছাপতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, যা আমি কনফার্ম করতে পারছি না, তা আমি ছাপব না। কিন্তু ডেইলি স্টার তা ছেপেছিল। পরে যখন এই অপসাংবাদিকতা তার ভুল বলে স্বীকার করলেন স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, তখন সবাই একযোগে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারাই ঝাঁপিয়ে পড়ল, যারা ওই ইতর বক্তব্য ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছিল। এখানে আমি মাহফুজ আনামকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি বিলম্বে হলেও উপলব্ধি করেছিলেন যে, সরকার বা গোয়েন্দা সংস্থার পাঠানো বিষয় কনফার্ম না করে ছাপানো কতটা বিপজ্জনক।

মওলানা মামুনুল হক, আপনার বিপদ শুধু আপনাকে আমাদের ছিনতাইকারী প্রমাণ করতে হবে এবং আমরা তা নির্বিঘ্নে পারব। বহু লোক, যারা কোনো দিন ঢাকা দেখেওনি, তারা সাক্ষ্য দেবেন, আপনি ছিনতাই করেছেন। তার জন্য আপনার শাস্তি হবে যেভাবে এক/এগারোতে অনেকের হয়েছে। কিন্তু আপনার সবচেয়ে বড় অপরাধ আপনি সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ কায়েম করতে চান। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে আপনি বিরাট এক আপদ।

আপনাকে অপদস্থ করতে হবে, আপনার চরিত্র হনন করতে হবে। আপনি চরিত্রহীন বদমাশ-এটা প্রমাণ করতে পারলেই যেন বাংলাদেশ থেকে ইসলাম দূরীভূত হয়ে যাবে। তা যে হয় না, সে বোধ সরকারেরও নেই, তার পুলিশ বাহিনীরও নেই। নইলে চরম সাম্প্রদায়িক ইসলামবিদ্বেষী কোনো ব্যক্তির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ করায় কেন ২০ বাংলাদেশীকে হত্যা করা হলো?

জনাব মাওলানা মামুনুল হক, আপনার সঙ্গে আমার আদর্শের কোনো মিল আছে কি না, বলতে পারি না। শুধু বলতে পারি, পূর্ব বাংলার মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ছিলেন বলেই তারা ভারত না, পাকিস্তানে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখানকার মানুষ মুসলমান বলেই তারা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আপনি মাওলানা মামুনুল হক, মহান আল্লাহ আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। আপনি ধৈর্য ধরুন। মোবাইল মানিব্যাগের কৈফিয়ত আপনাকে না-ও দিতে হতে পারে।

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক

সকল