২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

করোনা সঙ্কট ও দুটি মৃত্যু

করোনা সঙ্কট ও দুটি মৃত্যু - ফাইল ছবি

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন হয়ে গেল। বিশ্ব নেতারা অভিনন্দন জানিয়েছেন। এটা একটা প্রথা বা রেওয়াজ। শুধু বাংলাদেশের বেলায় প্রযোজ্য নয়, পৃথিবীর সব দেশে এ ধরনের প্রথা চালু রয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা অর্জন একটু ব্যতিক্রমই বটে। কারণ স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। তবে আমাদের স্বাধীনতা একটি ব্যতিক্রম বলতেই হবে। এভাবে জনযুদ্ধের মাধ্যমে কম দেশই স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এর কারণ আমাদের জনযুদ্ধ ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। ব্রিটিশ মুক্তির সময়ও আমরা জনযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয়দের রক্ত মিশে আছে। নির্মোহ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে একটি ভিন্ন চিত্রও ভেসে ওঠে। পাকিস্তান-হিন্দুস্তান বিভাজন হয়েছিল জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। এক দিকে হিন্দুরা অন্য দিকে মুসলমানরা।

এভাবেই নির্মোহ ইতিহাস বিচার করার সুযোগ আছে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণায় আর ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র করা হয়নি। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রতিই বাংলাদেশ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এ জন্যই বলা হয় ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার। অনেকের এ ধরনের বক্তব্যে বিশ্বাসী নয়, কার্যত। কারণ ধর্ম যার, কার্যত উৎসব তারই। এই দেশে বাস্তবে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ বলা হয়। এটা চালু হয়েছে। অনেকের মতে, বাস্তবে একজন মুসলমান এটা মানতে পারে না।

বাংলাদেশ এখনো সেই ধারণার উপর টিকে আছে। কিন্তু ভারতের কংগ্রেস শাসনের আমলে দেশটি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রতিই নিষ্ঠাবান ছিল। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আর সেই অবস্থা নেই। এখন কার্যত ভারত হিন্দু রাষ্ট্র। বাংলাদেশের একজন সিনিয়র সাংবাদিক ‘তৃতীয় মাত্রায়’ মন্তব্য করেছেন, নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে গান্ধী পুরস্কার নেয়া তার দৃষ্টিতে সম্মানের নয়, বরং সেই পুরস্কার গ্রহণ করা গ্লানির। কারণ বিজেপিই গান্ধিজীকে হত্যা করেছিল।

আরএসএসই গান্ধীকে হত্যা করেছে। আরএসএসই রূপান্তরিত হয়ে বিজেপি হয়েছে কথাটা ষোলোআনা সত্য। এ জন্যই নরেন্দ্র মোদি কুরআনের আয়াত ‘সংশোধনের’ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া বাবরী মসজিদ ধ্বংস করে দেয়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন মোদি। গুজরাট হত্যাকাণ্ডের দায়ও মোদির ওপর বর্তায়। তা ছাড়া জানানো হয়েছে, আশপাশের রাষ্ট্র থেকে হিন্দুরা ভারতে গেলেই নাগরিকত্ব পাবে। আর মুসলমানদের ঠেলে দেশ ত্যাগের জন্য সব অপকৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যেটা ’৪৭ সালের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

বাংলাদেশের আলেম ওলামা নরেন্দ্র মোদির আগমন ঠেকাবার চেষ্টা করার মূল কারণও তার নীতিগত অবস্থান। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। তবে পৃথিবীর আর কোনো দেশের সীমান্তে এভাবে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয় না। অথচ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রতিনিয়ত হত্যাকাণ্ড হয়ে আসছে। বিভিন্ন বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দেন, আর সীমান্তহত্যা হবে না। বাস্তবে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি কোনো দিনই রক্ষা করা হয় না। তারকাঁটার ওপর ফেলানীর মতো কিশোরীর লাশ ঝুলে থাকার ঘটনা এখনো আমাদের স্মৃতি থেকে ম্লান হয়নি। কোনো দিন হবে না। ফেলানী হত্যার বিচার হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে ভারত কথা দেয় কিন্তু কথা রাখে না। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ এখনো ভারতের হাতে বন্দী। অথচ বিষয়টি দু’দেশের চুক্তির মধ্যে রয়েছে। আসামের অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশ ফেরত দিয়েছে। এই হলো আমাদের ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, তা অক্ষরে অক্ষরে মানা হচ্ছে। অথচ ভারত প্রতিশ্রুতি দেয়, রক্ষা করে না। ভারত চায় কানেকটিভিটি। ইতোমধ্যে সেই পথে বাংলাদেশের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। অথচ ভারত দেবে দেবে বলে বাস্তবে দেয় না। এই ট্র্যাজেডি নিয়েই আমাদের বলতে হবে, ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র!

হেফাজত নেতারা এখন দৌড়ের ওপর আছেন। তাদের মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা হেফাজতপন্থী নই; তবে যে কারণে হেফাজত প্রতিবাদ করেছে তাকে সমর্থন না করে পারা যায় না। দেখুন, ভারত পাকিস্তানকে সমীহ করে। পানি বণ্টন মেটাতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। পাকিস্তান সীমান্তে কোনো গোলাগুলি নেই। বরং ওয়াগাহসহ কয়েকটি সীমান্তে তারা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পতাকা নামায়। স্বচক্ষে দেখেছি দুই পাড়ের জনগণ কত স্বতঃস্ফূর্তভাবে এর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সেই উৎসব উদ্দীপনা কোনো দিন সম্ভবত দেখা যাবে না। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে বিরোধী দলের মতামত অবশ্যই ভিন্ন। তারা মনে করে, অঘোষিত কারফিউর মাধ্যমে সরকার দিবসটি উদযাপন করেছে। এই ইস্যুটি নিয়ে এত কথা বলার ইচ্ছা ছিল না। তার পরও যেন কথা ফুরাতে চায় না।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার যেন আমাদের ললাটের অখণ্ডনীয় লিখন। সম্প্রতি শেয়ারবাজার থেকে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ শেয়ারবাজার নিয়ে এই সরকার কোনো আমলেই স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারেনি। জানি না, শেয়ারবাজার একসময় বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে কি না। অথচ শেয়ারবাজার দেশের অর্থনীতির জন্য একটা বড় সূচক।

করোনা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। ১৭ হাজার রোগীর জন্য একটি মাত্র করোনা বেড। এই অবস্থা চললে গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ কী অবস্থা দাঁড়াবে বলা মুশকিল। এ ব্যাপারে সরকার ‘অনেক বড় সাফল্য’ দেখিয়ে আসছে।

অন্য দিকে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে করুণ চিত্র তুলে ধরেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। হত্যা, নির্যাতন, সমাবেশে বাধা ছাড়াও গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ করার নজির তুলে ধরেছে। সরকার গণতন্ত্র ও সুশাসনের কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমরা যারা বাংলাদেশের ভেতর বসবাস করি তারা সবাই এর সাক্ষী। আমাদের মানবাধিকার কমিশন ‘কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন’ গাওয়া ছাড়া বাস্তবে কিছুই করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক দায়িত্বশীল ব্যক্তি যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। জানি না সরকার কবে এ বিষয়টি নিয়ে ভাববে। সরকার আত্মতুষ্টির সাথে ঢেঁকুর তুলে জনগণকে প্রবোধ দিচ্ছে। অথচ কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে আশাবাদ প্রদর্শনের কোনো কারণ দেখি না। যে দেশে সরকার মানে দল, দল মানে সরকার, সেই দেশে কোনোকালেই মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে না। আমরা জানি না, এই ভয়াবহ সঙ্কট থেকে উত্তরণের কোনো পথ খোলা আছে কি না। এই প্রশ্নের জবাব দেবে কে? সেটাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা।

করোনা শুধু একটা সঙ্কট সৃষ্টি করে চলে না। চিকিৎসা সঙ্কট তো আছেই। তার ওপর করোনাপূর্ব বেতন পাচ্ছেন না ৩৪ শতাংশ চাকরিজীবী। মানুষের ধর্মীয় আবেগ এত বেশি যে, ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের অবস্থায় পবিত্র শবেমেরাজ পালন করার সময় কোনো সংযম ছিল না। তাছাড়া প্রিয়নবী সা: যে প্রক্রিয়ায় শবেমেরাজ পালন করেছেন, আমাদের দেশে তার কোনো ধার ধারা হয় না। রাসূল সা: প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রেখেছেন। এমন আমল করতে রাসূল সা:-এর অনুসরণ জরুরি। আমরা শবেমেরাজকে নিয়ে কত রকম ওয়াজ নসিহত শুনি। এর সাথে বাস্তবতার মিল তেমন দেখা যায় না। এ ব্যাপারে সব আলেম ওলামার দায়িত্ব বেশি।

এবার একটা খুশির খবর দিলেন সৌদি বাদশাহ। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, এবার হজ সীমিত পরিসরে হবে না। এ ব্যাপারে অনেক বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ হজে যান ‘হাজী’ পদবি নামের সাথে জুড়ে দেয়ার জন্য। অথচ হজ এমন একটি মৌলিক ইবাদত যাতে সামান্য প্রদর্শনেচ্ছার ভাব এলেই হজ কবুল হবে না। এই ফতোয়া আমার ব্যক্তিগত বিষয় নয়, কুরআন সুন্নাহ অন্তত তাই বলে। হজে অবশ্যই শারীরিক ও আর্থিক সঙ্গতি থাকা পূর্বশর্ত। তা ছাড়া হজের টাকা হতে হবে শতভাগ হালাল পথে উপার্জন করা। আমরা ছোটবেলায় শুনেছি ‘বোম্বাইয়া হাজী’। তখন পারি জাহাজে জেদ্দা পৌঁছতে হতো, মাঝপথে মুম্বই বা বোম্বাইতে যাত্রা বিরতি করতে হতো। এটা করা হতো জ্বালানি সংগ্রহের জন্য। অনেক হজ গমনেচ্ছু ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে বোম্বাই পর্যন্ত পৌঁছে কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় বৈধতার পরীক্ষার সম্মুখীন হতে। তাই অনেকেরই কাগজপত্রের অভাবে আর জেদ্দা যাওয়া হতো না। তাই বোম্বাই থেকে দেশে ফেরত আসতেন। এ জন্যই বলা হতো বোম্বাইয়া হাজী। চট্টগ্রাম কলেজে পড়ার সময় শুনতাম ‘নাবালক হাজী’, ‘করল্যা হাজী।’ আগে হজে যাওয়ার সময় অনেক প্রচার করে হজে যেত। চট্টগ্রামের রীতি অনুযায়ী হজে যাওয়ার জন্য জেয়াফতের আয়োজন করা হতো। একবার এক হাজী সাহেবের জেয়াফতে ভাতের মধ্যে করল্যা অর্থাৎ পাথর জাতীয় কিছু একটা ছিল। তাই তাকে বলা শুরু হলো ‘করল্যা হাজী’। আরেকজন অল্প বয়সে হজ করেছিল। তাকে বলা শুরু হলো ‘নাবালক হাজী’। এসব উদাহরণ দেয়ার অর্থ নামাজ রোজা হজ জাকাত মৌলিক ইবাদত। এটা প্রচার করার বিষয় নয়। নামের আগে ‘হাজী’ লেখাটা একটা প্রদর্শনেচ্ছা, যা হজের মৌলিক বিষয়টি নষ্ট করে দেয়।

মিয়ানমারে সেনাদের গুলিতে নিহতের সংখ্যা ছাড়াল পাঁচ শতাধিক। গেল শুক্রবার বিক্ষোভে ফের গুলিতে নিহত হলো সাতজন। এভাবে মৃত্যুর মিছিল দেখার পরও বিশ্ববিবেক জাগ্রত হচ্ছে না। যেন এক ট্র্যাজেডির নাম মিয়ানমার।

বিদ্রোহীরা অন্তত মিয়ানমার সেনা সরকারের ভাষায়; বাস্তবে বিদ্রোহী যাদের বলা হচ্ছে তারা গণতন্ত্রকামী। আমাদের জানা মতে, কয়েকটি দেশের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলেই মিয়ানমারের জান্তা সরকার এতটা বেপরোয়া হতে পারছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া একজন পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা না মরা পর্যন্ত গুলির নির্দেশ ছিল জান্তা সরকারের। অন্য দিকে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ ফের বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হলো। এই যখন অবস্থা, এখন মিয়ানমার ইস্যু, বিশেষত রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য এক জীবন্ত ট্র্যাজেডি। এর স্থায়ী সমাধান হওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ই দায়ী থাকবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।

করোনা সংক্রমণ বিস্ময়কর অবস্থায় পৌঁছে গেছে। বইমেলা ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধের পরামর্শ দেয়া হলো। বৃহস্পতিবার এই লেখা যখন লিখছি তখন মৃত্যুর মোট সংখ্যা হাজারের ঘর ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের। শনাক্ত ছয় হাজারের সীমা অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার এটাই ছিল এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু। যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা অনেকেই মানছে না। এটা কোনো ব্যতিক্রমই শুধু নয়, গতিপ্রকৃতি যা তাতে সন্দেহ হয় কিংবা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। ভবিষ্যতে এর হার আরো বাড়বে। এমনিতেই কোনো হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই। তাহলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টি শতভাগ অনিশ্চিত।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। বাড়তি মাস্ক ব্যবহার ছাড়াও ঘরে ঢুকেই গরম পানির ভাপ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। আগে দফাওয়ারি অনেক সতর্ক সঙ্কেত দিলেও এবার নতুন করে মাস্ক এবং গরম পানির ভাপ নেয়ার পরামর্শ যোগ করলেন। বিয়ে-শাদির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো না। যেসব স্থানে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি হয়ে থাকে সেসব কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ করা হয়নি। অনেক কমিউনিটি সেন্টার এবং হলরুম যেখানে বিয়ে-শাদি হয়, আনুষ্ঠানিক সভা-সমাবেশ ডাকা হয় সেসব ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো শুনিনি, কোনো নির্দেশনা আছে কি নেই। করোনা নিয়ে আশঙ্কা করে প্রহর গোনা ছাড়া সাধারণ মানুষের আর কিছুই করার নেই।

সর্বশেষ দুটি মৃত্যু মনে ভীষণ দাগ কেটেছে। একজন সাবেক ধর্মমন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, অন্যজন মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। মুফতি ওয়াক্কাস রাজনীতিতে বিরল মানুষদের একজন সম্ভবত। মুফতি ওয়াক্কাসের আগে বাংলাদেশে কোনো মুফতি মন্ত্রী ছিলেন না যদিও নূরুল ইসলাম একজন মাওলানা ছিলেন। তার ব্যাপারে প্রতিপক্ষ মনে করেন তিনি পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন এবং সুযোগ মতো আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হয়ে যান। মৃত্যুর পর মানুষের ভালো কিছু থাকলে বলা যায়, কিংবা ভালো কিছু না থাকলেও সেসব ব্যাপারে নীরব থাকা সঙ্গত। প্রসঙ্গটা ছিল সাবেক ধর্মমন্ত্রী মুফতি ওয়াক্কাস সম্পর্কে। তাকে কাছ থেকে দেখেছি। বাড়ি সম্ভবত ঝিনাইদহ যা বৃহত্তর যশোরের অংশ।

ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান বর্ণাঢ্য মানুষ ছিলেন। নয়া দিগন্তে প্রায় শুক্রবারে লিখতেন। সম্ভবত মৃত্যুর আগেও তার লেখা দেখেছি। একসময় আইডিবির পরামর্শক ছিলেন। তারপর দেশে এসে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বলা চলে, ওটি তৃতীয় ইসলামী ব্যাংক হিসেবে কাজ শুরু করেছিল। একবার আমাদের ক’জনকে সোনারগাঁও হোটেলে ডেকে ছিলেন। নানা বিষয়ে পরামর্শ করেছিলেন।

দুর্ভাগ্য, শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটি তার হাত ছাড়া হয়ে যায়। অর্থনীতির ওপর বিশেষজ্ঞটিকে আর কেউ কাজে লাগালেন না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অর্থনীতির বিষয়ে লেখালেখি করে গেছেন। অনেক সময় দেশের মানুষ গুণী লোকের কদর করতে পারে না। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে তারপর তার গুণাবলিগুলোর স্বীকৃতি দেয়া হয়। সব মৃত্যুই সমান কিন্তু কোনো কোনো মৃত্যু ব্যতিক্রমভাবে মনে দাগ কেটে যায়। আমাদের দুই মরহুমের জন্য জান্নাত কামনা করা ছাড়া আর কী-ইবা করার আছে।

masud2151@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement