২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আর বিলম্ব নয়

কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আর বিলম্ব নয় - ফাইল ছবি

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটির মতো। সেই ‘পূর্ব পাকিস্তান’ এখন স্বাধীন বাংলাদেশ, আর তার জনসংখ্যা গত ৫০ বছরে ১৬ কোটির বেশি বলে ধারণা করা হয়। সে সময় খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রীর চাহিদা ছিল কম। এর পরও মানুষকে তখন অভাব অভিযোগ নিয়ে হাপিত্যেশ করতে শোনা যেত। এখন মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমা যা ছিল তা-ই রয়েছে। ভূমির বাড়তি কিছু না হলেও আগের মানুষের খাদ্য নিয়ে আহাজারি এখন তেমন শোনা যায় না। সব ধরনের খাদ্যশস্যের যতটুকু প্রয়োজন সেটি পুরোপুরি পূরণ না হলেও ঘাটতির ফারাকটা বেশ কমেছে।

বাংলাদেশে অন্যান্য দ্রব্য ও পণ্যের চাহিদা এবং উৎপাদন নিয়ে কোনো নিরীক্ষা বা সুপরিকল্পিত সমীক্ষা নেই। বিশেষ কোনো উদ্যোগের কথাও শোনা যায় না। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করা নিয়েও সুচিন্তিত তেমন কোনো উদ্যোগের খবর পাওয়া যায় না। এর একটা জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে, গত কয়েক বছর থেকে পেঁয়াজের ঘাটতি নিয়ে মানুষকে যে চরম ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেটি প্রমাণ করে পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদন নিয়ে প্রশাসন পুরোপুরি রয়েছে অন্ধকারে। সঙ্কটের কারণে ভোক্তাশ্রেণীকে অনেক উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। ঘাটতি মোকাবেলার জন্য আমদানি করা হয়েছে বটে। কিন্তু দেশে নতুন পেঁয়াজ ওঠার আগপর্যন্ত কী পরিমাণ পেঁয়াজের প্রয়োজন, তা নিয়েও প্রশাসনের কোনো ধারণা বা হিসাব-নিকাশ ছিল না- এমন দুর্বলতাও বোঝা গেছে। কারণ আমদানীকৃত পেঁয়াজ অবিক্রীত থেকে গেছে এবং এখনো সরকারি গুদামে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। বাজারে নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর সেই আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা আর নেই বললেই চলে। হিসাব-নিকাশ ছাড়া পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করায় অবশ্যই অনেক টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। এখানে আরো একটা কথা বলা যেতে পারে যে, পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে যে প্রশাসন বেখবর, তাকে অবশ্যই কোনো দক্ষ এবং ওয়াকিবহাল প্রশাসন বলা যায় না। তেমনি বাজার নিয়ন্ত্রণের যে কর্মকৌশল, সেখানে প্রশাসন একেবারেই আনাড়ি। কেননা পেঁয়াজের এখন ভরা মৌসুম। তার পরও হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশ পেয়েছে। কোনো প্রশাসন যদি দেশের বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা নিয়ে ওয়াকিবহাল না থাকে, তবে পণ্যের আমদানি-রফতানি হবে নিছক অনুমাননির্ভর। এতে প্রশাসনের দক্ষতা নিয়ে সঙ্গত কারণেই সংশয় সৃষ্টি হবে। সেই সাথে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহে সঙ্কট সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। একটি প্রশাসনের জবাবদিহিতার দুরবস্থার কারণেই মূলত এমন পরিণতি ঘটে থাকে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনগণের প্রতিটা পয়সা খরচের জন্য যে নিয়মপদ্ধতি থাকে, সেটি আমাদের এখানে আছে কি নেই, তা বোধগম্য নয়। এভাবে পণ্য আমদানি করলে কৃষকের স্বার্থেও আঘাত আসাটা অনিবার্য। অবাক হওয়ার বিষয় যে, আমাদের কৃষকদের জন্য এসব সঙ্কটে কোনো প্রণোদনা নেই। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিল্পের ক্ষেত্রে সরকার নানা প্রণোদনা দিয়ে থাকে। এটাকে মন্দ বলছি না। কিন্তু দেশের কৃষকদের এমন প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত করা হয় কোন নীতির ভিত্তিতে, এটা একটা নৈতিক প্রশ্ন। বিশ্বের কৃষিপ্রধান দেশের যে ধারণা রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ তো থাকবেই। বিশ্বের কৃষিপ্রধান দেশগুলোর কৃষিব্যবস্থা এতটা উন্নত এবং আধুনিক যে, প্রকৃতি সেখানে কখনো প্রতিকূল হয়ে পড়লেও সেটি তাদের তেমন ভাবনায় ফেলে না। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে কৃষিব্যবস্থা দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। অথচ সেই কৃষি এখনো প্রধানত প্রকৃতিনির্ভর। তাই প্রকৃতি কখনো বিরূপ হয়ে উঠলে তা শুধু কৃষককেই বিপর্যস্ত করে না, গোটা দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি করে থাকে। শস্য উৎপাদন করতে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। কিন্তু তার কোনো আর্থিক বা কারিগরি সুযোগ পাওয়ার উপায় নেই। এত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে শস্য উৎপাদন করার পরও তা সুষ্ঠু বাজারজাত করারও কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বিপুল আত্মত্যাগের পর উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকেও তারা বরাবর বঞ্চিত হয়ে আসছেন। বাজারের মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা এর সুযোগ নিয়ে নিজেদের পকেট ভরছে।

বস্তুত বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় দেশের ৮০ শতাংশের মতো মানুষের কর্মসংস্থান হয়। জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান অনেক বেশি। দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কৃষির যে গুরুত্বটুকু পাওয়া দরকার ছিল, সেটি হচ্ছে না। দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে, সব মানুষের মৌলিক চাহিদা- অন্ন, বস্ত্র, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত করা। যে কৃষিতে ৮০ শতাংশ মানুষ নিয়োজিত, তাদের এসব চাহিদা পূরণ ব্যতিরেকে জাতীয় উন্নয়ন ভাবনা অর্থহীন বলে বিবেচিত হবে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে এটা বারবার উঠে আসছে যে, কৃষককুলের মধ্যে দরিদ্র আর অতিদরিদ্র মানুষের হার সর্বাধিক। এটাকে কিভাবে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি বলা যাবে? শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ তাদের চাহিদা ও প্রাপ্যতা নিয়ে সঙ্কটে পড়লে আন্দোলন সংগ্রাম করে থাকে; কিন্তু নিরীহ কৃষককুল তাদের বঞ্চনা নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করার শক্তি আজো অর্জন করতে পারেনি।

দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত এবং তারা সব দিক থেকেই বঞ্চিত। তাদের পুরোপুরি প্রকৃতির করুণার ওপর নির্ভর করে চলতে হয়। জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে কৃষিকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এত সব সমস্যার পরও সংবাদপত্রে কৃষির নানা সাফল্য এবং বৈচিত্র্য আনার বহু কাহিনী প্রকাশ পায়। তাতে কিন্তু কোনো সরকারি সহায়তার ছিটেফোঁটার কথাও শোনা যায় না। কৃষকদের নিজস্ব মেধা বুদ্ধি বিবেচনা ও উদ্ভাবনী চিন্তাই এ ক্ষেত্রে কাজ করছে। তাই এমন সব অনুপ্রেরণাদায়ক গল্পের সৃষ্টি হচ্ছে। এই লেখার সূচনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের জন্মের পর জনসংখ্যা বহু গুণে বেড়েছে। সেই সাথে খাদ্যের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। তা সত্ত্বেও খাদ্যের বাড়তি চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে আমাদের কৃষকরাই বড় অবদান রেখে চলেছে। এটা সন্তুষ্টির ব্যাপার বটে। কিন্তু এ নিয়ে তৃপ্ত থাকা যাবে না। কারণ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিপুল এবং ক্রমাগতভাবে তা বাড়ছে। সে জন্য খাদ্য উৎপাদনের বিষয়টি সাবেকি কায়দা অবলম্বন করে আর শুধু কৃষকদের ওপর সব দায়িত্ব দিয়ে রাখলে চলবে না। তাতে এর পরিণাম শুভ হবে না; তথা দেশে খাদ্যাভাব তীব্রতর হবে।

কোনো জাতিকে স্বয়ম্ভর করে তোলার জন্য যা কিছু করা দরকার, তার সাথে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখতে হবে। স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল এক কোটি ১০ লাখ টন। সে সময়ও জনসংখ্যার অনুপাতে সে খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। প্রায় ৫০ বছর পর এখন মানুষ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি আর আবাদি জমি কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অথচ দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হচ্ছে তিন গুণের অধিক। আগেই বলা হয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে কৃষকের প্রচেষ্টাই সর্বাধিক। কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির যে চ্যালেঞ্জ সেটি মোকাবেলা করার প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আধুনিকায়নের অপরিহার্যতা নিয়ে বলার খুব প্রয়োজন নেই।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন আনা অপরিহার্য। শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বহুমুখী করার জন্য অধিক উৎপাদনশীল বীজের ব্যবহার, প্রয়োজনীয় সারপ্রাপ্তি আর কীটনাশকের প্রাপ্ততা নিয়ে যে সমস্যা তার সুরাহা করা প্রয়োজন। কৃষি দফতর থেকে উন্নত চাষাবাদের গুরুত্বের কথা বলা হয় অহরহ। কিন্তু উন্নত চাষাবাদের প্রায়োগিক দিকটা কী সে সম্পর্কে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের বোঝাতে হবে। শুধু তত্ত্বকথা বললে চলবে না, হাতে-কলমে তা শেখাতে হবে। কৃষিসংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে সরকারি সংস্থার কর্মীরা কতটুকু উদ্যোগী এবং দায়িত্ব পালনে তাদের আন্তরিকতা সম্পর্কে কৃষকদের আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। উপর থেকে এর তদারকি দরকার।

কৃষির জন্য সেচসুবিধার গুরুত্ব অনেকখানি। বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে বিরাজমান যে সেচসুবিধা তা আরো বাড়ানো না হলে উৎপাদন বৃদ্ধি করার বিষয়টি কল্পনায় ফানুস ওড়ানোর মতো হবে। সেচের জন্য এখন ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারই বেশি হচ্ছে। আগে নদী, খাল বিলের পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হতো। এখন সে উৎস থেকে সেচের পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কেননা এসব খালবিল, নদীনালা পলিতে ভরাট হয়ে গেছে, যার কোনো সংস্কার নেই। কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ক্রমাগত বাড়তে থাকায় ভূগর্ভের পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। বড় বিপদ হচ্ছে পানির স্তর নিচে নামতে থাকলে পরিবেশ বিপর্যয় অবধারিত। স্মরণ রাখা দরকার যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি যেসব দেশ তার অন্যতম। তাই কৃষিক্ষেত্রে সেচের উৎস হিসেবে নদী খাল বিলগুলোর সংস্কার তথা তার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করার গুরুত্ব সর্বাধিক।

কৃষি বিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে ‘মাটির স্বাস্থ্য’ নির্ভর করে মাটির মধ্যে বিদ্যমান পানি, বায়ু, আর জৈব উপাদানের ওপর। এসব নির্ভর করছে মাটির নিচে বসবাসরত অণুজীবসমষ্টির ওপর। অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, বালাইনাশক ও আগাছানাশকের ব্যবহারের ফলে এ অণুজীব ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু মাটির অণুজীব বা মাটির স্বাস্থ্য ধ্বংস হচ্ছে না, জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশের ওপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। জমিতে ক্রমাগত আগাছানাশকের ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে যার কারণে ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে। নিবিড় ফসল ও ফল চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক সার। অথচ মাটির প্রাণ হচ্ছে জৈবসার যার ব্যবহার দ্রুত কমছে। কৃষকের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে তারা কৃষিসংক্রান্ত অতি জরুরি তথ্য সম্পর্কে একেবারেই অবহিত নন। কৃষিতে সাফল্য অর্জনকারী পশ্চিমের দেশগুলো এসব বিবেচনা করে জমিতে গোবর সার ব্যবহার করছে এবং তার ব্যবহার বাড়াচ্ছে। অথচ আমরা চলছি উল্টো দিকে। গোবর সার ব্যবহারকারী দেশগুলোর জমিতে জৈবসার ব্যবহার করে জমির ‘স্বাস্থ্য’ সংরক্ষণের সাথে সাথে ফসলের উৎপাদনও বাড়ছে।

বাংলাদেশে এক দিকে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। অন্য দিকে ফসলি জমিতে বেআইনিভাবে ইটভাটা স্থাপন করায় তার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের ফসলি জমি ও গাছপালার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতি বছর কোথাও না কোথাও ধানে চিটা, ফসলহানি এবং ফলগাছে ফলনশূন্য হওয়ার এক অনাকাক্সিক্ষত বিষয় ঘটছে। এমনিতেই গ্রামের মানুষ বিনাচিকিৎসায় নানা রোগে ভোগেন। এখন ইটভাটার দূষিত ধোঁয়ার কারণে সেসব মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে তার প্রভাব কৃষির ওপর পড়ছে। এর ফলে শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অসময়ে হচ্ছে ঝড়ঝঞ্ঝা আর বৃষ্টি, বন্যা ও খরা। নদীতে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা লবণাক্ততায় ভরে যাচ্ছে। দেশে ১০ লাখ হেক্টর জমি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বহু স্থানে সমুদ্রের লোনাপানি প্রবেশ করায় সেখানে পরিবেশগত নানা সমস্যা মানুষের জন্য চরম ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।

আগেই বলা হয়েছে, দেশের বেশির ভাগ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। ফলে সে এলাকা থেকে বরাবরই বেশি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসেন। সরকারের বেশির ভাগ পদস্থ কর্মকর্তাও কোনো-না-কোনো গ্রাম থেকেই এসেছেন। তাই এমন আশা জাগা স্বাভাবিক ছিল যে, গ্রামীণ জনপদে বসবাসকারী মানুষের জীবনজীবিকা তথা কৃষি বিষয়ের সমস্যা নিয়ে সংসদে সর্বাপেক্ষা বেশি আলোচনা হবে এবং এসব সমস্যা সমাধানের জন্য নীতি ও পথ পদ্ধতি সম্পর্কে কার্যকর নির্দেশনা আসবে। আর সরকারি কর্মকর্তারা সেই আলোকে দায়িত্ব পালন করবেন। তাতে আবারো গ্রামীণ জীবনের সুখ স্বস্তি এবং বসবাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি হবে। কিন্তু কোথায় সেই আলোচনা বা নীতি নির্দেশনা? শহরে এসে সেই জনপ্রতিনিধিরা সব ভুলে বসেন বলেই মনে হয়। একজন সংসদ সদস্য যিনি তার এলাকার মানুষের ভোট পাওয়ার জন্য নানা অঙ্গীকার করে থাকেন; নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদে যাওয়ার আগে যে শপথবাক্য উচ্চারণ করেন সেখানে জনসেবায় আত্মনিয়োগের প্রতিজ্ঞা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। বাস্তবে তার প্রতিফলন না ঘটলে সেটি একধরনের প্রতারণার শামিল এবং নৈতিকতার চরম স্খলন।

শেষে বলতে চাই, ভূমিতে নানা সমস্যার কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন দেশও নানা সমস্যায় নিপতিত। কিন্তু তাতে তারা হতোদ্যম নয়, সাহস ও প্রচেষ্টা জারি রেখে সমস্যার কিনারা করতে পেরেছেন। আমাদের নেতৃত্ব রয়েছে বটে; কিন্তু তাদের দুর্বলতাটা কাটাতে হবে। দেশে যোগ্য গবেষক ও প্রথিতযশা কৃষিবিজ্ঞানী রয়েছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা যোগ করলে অবশ্যই আমাদের সাফল্য আসবে। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে কাজের মূল্যায়ন, অগ্রগতির তদারকি সবপর্যায়ে নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে যত প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত হয়েছে তার সাথে কৃষির যাবতীয় সমস্যাকে যোগ করে দ্রুত এগুলোর সমাধান করা অতি জরুরি। সরকার দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে; কিন্তু কৃষিকে অবহেলা করে সে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। জাতীয় আয়বৃদ্ধির ক্রমধারা বজায় রাখা সম্ভব হলেই মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব। যেসব খাত জাতীয় আয়কে সমৃদ্ধ করবে, তার মধ্যে কৃষির অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একে পরিচর্যা করে এগিয়ে নিতে হবে।

ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement