২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাইলামের হাত ধুয়ে ফেলা অগ্রহণযোগ্য

মাইলামের হাত ধুয়ে ফেলা অগ্রহণযোগ্য - ছবি : সংগৃহীত

উইলিয়াম ব্রায়ান্ট মাইলাম, একজন আমেরিকান ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট। অবসর নিয়েছেন জুলাই ২০০১ সালে। এর পরও মাঝে মধ্যে ছোট ছোট অ্যাসাইনমেন্টে আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে স্বল্প সময়ের খুবই অস্থায়ী রাষ্ট্রদূত বা বিশেষ দূত ধরনের চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে এখন সেসবও ছেড়ে পুরোপুরিভাবে ‘উড্রো-উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার’ নামের থিংকট্যাংকের ফেলো বা সিনিয়র পলিসি স্কলার। বাংলাদেশে তার আরো পরিচয় আছে। বৈধভাবে লবি করার দেশ আমেরিকা; সেখানে আমেরিকান প্রশাসনে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যারা কোনো লবি করতে চান বা করেছেন, তাদের চোখে মাইলাম একজন ভালো প্রভাবশালী ওজনদার ব্যক্তিত্ব, যিনি পলিটিক্যাল ক্লায়েন্টকে ‘অনেক দূর’ পৌঁছে দিতে পারেন। অনুমান করা হয়, তার এমন পরিচয় তৈরি হয়ে যাওয়ার পেছনে মূল ঘটনা দু’টি।

এরশাদ যুগের পরে গত ১৯৯১ সাল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ‘নবজন্মের কাল’ বলে খামোখা উচ্ছ্বাস দেখানোর চেষ্টা করতে অনেককে দেখা যায়। সেটি এমন এক অর্থে যেন তা ছিল এরশাদের পতনের পরের কথিত ‘স্বৈরাচারমুক্ত’ যুগের শুরু। বলা বাহুল্য, এটি অতি-আবেগি বাস্তবতাশূন্য ও নিজেকে খামোখা বড় দেখানো দাবি। আসলে এটার সাথে বুদ্ধি-বিবেচনাহীন আরেক প্রবল আবেগ ওই সময় কাজ করত যাতে বলা হয়ে থাকে যে, সেটি ‘স্বৈরাচার পতন ঘটিয়ে’ নির্বাচিত সরকারের যুগের পথের সূচনা হয়েছিল। এখানে ‘স্বৈরাচার পতন’ বলে গলা কাঁপানো হচ্ছে, অথচ আমাদের কনস্টিটিউশন আগেরটাই আছে, বরং আরো ‘দানব’ হয়েছে যে, সে একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করার মুরোদও নেই। এ ছাড়া সরকার মনে করছে, বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য কোনো নির্বাচন আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ না; পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। বরং মুজিব হত্যার বিচার ও বাংলাদেশের ৫০ বছরপূর্তিতে তার নাম উজ্জ্বল করে সর্বত্র লিখে দিলে এটিই হবে দেশের জন্য বড় অর্জন। নিশ্চয় আজকের এই বাংলাদেশকে দেখার পর পুরনো সেসব উচ্ছ্বাস জ্ঞাপনকারী লোকজনের এখনো কিছু জীবিত থাকলে তাতে তারা নিজেকেই আসলে মূল্যায়ন কিভাবে করেন তা আমরা দেখতে অপেক্ষা করতে পারি।

উইলিয়াম বি মাইলাম-বাংলাদেশে ওই ‘এরশাদ থেকে নির্বাচিত সরকার’ এই রাজনৈতিক ট্রানজিশনের কালে বাংলাদেশে ছিলেন রাষ্ট্রদূত। তিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন আগস্ট ১৯৯০ থেকে অক্টোবর ১৯৯৩ পর্যন্ত, এই হলো প্রথম ঘটনাটা। এ ছাড়াও তার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়ের পয়েন্ট ছিল। সেটি হলো, তার রাষ্ট্রদূতের অ্যাসাইনমেন্টেরই আগে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট আরেক অ্যাসাইনমেন্টে ছিলেন তিনি।

প্যারিস ক্লাব
যাদের জন্ম ১৯৮৫ সালের পরে তারা টার্মটা অ্যাকাডেমিক পড়াশোনায় শুনে থাকবেন হয়তো কিন্তু সেকাল দেখেননি। সেই শব্দটা হলো, ‘প্যারিস ক্লাব’। জন্মের পর থেকেই আমরা প্রতি বছরের রাষ্ট্রীয় বাজেট নিজেই সংগ্রহ করে করতে পারতাম না। কারণ সরকারের রাজস্ব ও অন্যান্য আয় খুবই কম, ফলে কম (এডিপি) উন্নয়ন বা বিনিয়োগ ব্যয়। আবার যত কম উন্নয়ন ব্যয় ততই পরের বছর আরো কম রাজস্ব আয়- এমনই এক চক্রের মধ্যে ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়া ঘটছিল আমাদের। এর একেবারে মূল কারণ অবকাঠামো খাতে ব্যয়-বিনিয়োগ আনা বা জোগাড়ের অক্ষমতা। আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ আর জনগণের ট্যাক্স দেয়ার ক্ষমতাও এতই কম ছিল যে এর থেকে সরকার চালানোর খরচ ও ব্যয়নির্বাহের দায় এবং যা প্রয়োজন এ দুইয়ের মধ্যে ঘাটতিতে আমাদের দিন যেত। এ ছাড়া সরকারের প্রশাসনিক অদক্ষতায় অপচয়ও ছিল সীমাহীন। ফলে প্রথমে বিদেশী অনুদান আর পরে বিদেশী ঋণপ্রাপ্তি ছিল আমাদের আয়-ব্যয়ের ঘাটতি মেটানোর একমাত্র উপায়। এখানে একটা কথা বলে নেই। বিদেশী ঋণ ও অনুদানে বাজেট তৈরির এই যে বিশেষ রকম, এটিই শেখ মুজিবের শাসনের সাড়ে তিন বছর আর তার মৃত্যুর পরের বাংলাদেশের প্রধান ফারাক। আগেরটা মানে বিদেশী অনুদান ও ঋণ নেবো না বলে ‘কমিউনিস্ট গোঁয়ার্তুমি’ করে চলা এটিই ছিল তাজউদ্দীনের অর্থনীতি। এতেই অর্থনীতি ‘ডুবেছিল’ আর একসময়ে দেখা গিয়েছিল ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ। আর এখান থেকেই ক্ষুব্ধ মুজিবের সব কিছু নিজ একক কর্তৃত্বে নেয়া, তাজউদ্দীনকে বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভা ঢেলে সাজানো আর শেষে ওই সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে সফর, কিসিঞ্জারের সাথে সাক্ষাৎ, ‘বটমলেস বাস্কেট কেস’ বলে মন্তব্য শোনা এবং বিশ্বব্যাংকের সাহায্য পাওয়ার জন্য বন্দোবস্তের আবেদন ইত্যাদি ফেরেন। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য, বেঁচে থাকতে তিনি আমাদের অর্থনীতিতে বিশ্বব্যাংকের নজর, পরামর্শ ও অনুদান-ঋণ পাওয়া প্রভৃতি দেখে যেতে পারেননি। মুজিবের আবেদন ও গ্রাউন্ড ওয়ার্কের নড়াচড়া আমরা পরে জিয়ার আমলের শুরুতে পেতে শুরু করেছিলাম।

এর মধ্যে আবার ‘প্যারিস ক্লাব’ কী? এটি হলো, প্রতি বছর আমাদের বাজেটের আগে এপ্রিল মাসে কেবল বাংলাদেশের জন্য আমেরিকাসহ পশ্চিমের দাতা দেশগুলোর একটি সমন্বয় বৈঠক বসত, প্যারিসে। তাই ‘প্যারিস ক্লাব’ নামকরণ। এরই ব্যাকগ্রাউন্ড কর্তা বিশ্বব্যাংক অনেক আগে থেকেই সরকারের অনুরোধে ও পরে সাথে বসে যেসব প্রকল্প সুপারিশগুলো তৈরি করত যে, কী কী প্রজেক্ট সে অনুদানের জন্য বা ঋণের জন্য স্থানীয় বিশ্বব্যাংক অফিস প্রাক-অনুমোদন দিয়েছে সেসবের উপরে যাতে দাতারা ফান্ড দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বিশ্বব্যাংকের আইডিএ লোন ও অনুদান পাওয়ার ব্যবস্থাটা কাজ করে এভাবে। আর ওই প্যারিস বৈঠকে প্রাপ্ত ফান্ড অনুমোদন বা প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা করেই পরের জুন মাসে আমাদের বাজেট তৈরি হতো। আমাদের আজ যা কিছু অর্থনৈতিক রূপান্তর ও উন্নতি তা সেখান থেকেই। তবে পরবর্তীকালে এরই এক পর্যায়ে এপ্রিলের বৈঠকটা ঢাকাতেই বসা শুরু হয়েছিল। কারণ তত দিনে আমরা অনেক স্বাবলম্বী; ফলে লোন ও অনুদানের পরিমাণ কমে এসেছিল। আর সেটিই এখন একেবারেই রুটিন, আমরা আরো অনেক স্বাবলম্বী বলে এখন দেখা যাচ্ছে। মধ্য আয়ের দেশের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার অবস্থা। তবে এমন করার জন্য বিশেষ কিছু আইডিএ লোন ছাড়া স্বল্পসুদে (০.৭৫ শতাংশ) পাওয়া যেত, এমন আইডিএ এখন প্রায় সব বন্ধ। লোনে সুদের হারও বেড়ে গেছে ২-৪ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু সেসবের সাথে মাইলামের কী সম্পর্ক?

গত ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগে তিনি পাঁচ বছর ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের (১৯৮১-৮৯) ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, যার দায়িত্ব ছিল আমেরিকার বিদেশে দান-অনুদান দেয়া মানে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট দেখাশোনা করা। আর এই সূত্রে তিনি বাংলাদেশের জন্য ওই ‘প্যারিস ক্লাবে’ দাতা আমেরিকার প্রতিনিধি হয়ে হাজির থাকতেন।

এ দিকে আজকের বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যা কিছু হয়েছে বা আরো হওয়ার সম্ভাবনা ভালো-মন্দ মিশিয়ে এরই ফাউন্ডেশন গড়া হিসেবে অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারটা (তাতে বহু বড় বড় নেগেটিভ দিক আছে) ঘটেছিল এই আশির দশকে ১৯৮২ সালে এরশাদের ক্ষমতা দখল থেকে। বিগত ১৯৮৫ সালের পরের সেসব দিন থেকে মাইলাম বাংলাদেশের সাথে অনেকভাবে জড়িত হয়ে যান। বিশেষ করে পরে ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার আমলে প্রথম তিন বছর তিনি এ দেশে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত বলে নিয়োগ পাওয়ায় সম্ভবত বিএনপির নেতাদের সাথে ব্যক্তি-সম্পর্ক অন্য সবার চেয়ে বেশি, এমনটি মনে করা হয়।

সেই উইলিয়াম বি মাইলামের এক রচনা-মন্তব্য গত মাসে অনেক মিডিয়ায় ছাপা হয়েছে। শিরোনাম ‘পলিটিক্যাল হিপোক্রাসি নোজ নো বাউন্ড অর বর্ডারস’। নিজ দায়িত্বে এর একটি ভাব-বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘রাজনৈতিক ভণ্ডামির কোনো সীমা থাকে না।’

অনেক কিছুই সীমাহীন হয় যেমন, অমুক ফ্যানক্লাব অমুকের সীমাহীন সমর্থক; এমন হতেই পারে। কিন্তু মাইলাম বলছেন, কেন সীমান্তও থাকে না? কারণ তিনি বাংলাদেশের সরকারপ্রধান আর আমেরিকান কিছু সিনেটরের আচরণ-বক্তব্যকে তুলনা করছিলেন। ট্রাম্পের টার্ম শেষের পরে, তাকে নিয়ে সিনেট ইমপিচমেন্ট শুরু হয়েছিল। আর সেখানে কিছু সিনেটর-পলিটিশিয়ানের তিনি তুলনা করছিলেন। মাইলাম ওই রচনায় বলছিলেন, আমেরিকান কোনো জার্নালে ঢাকার ডেইলি স্টারের একটা খবর কোট করা হয়েছে যেখানে প্রধানমন্ত্রী নাকি বলেছেন বলে লেখা হয়েছিল যে, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতার জন্য গণতন্ত্রে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল অবশ্যই থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের বর্তমান সংসদের বিরোধী দলগুলো উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস কাক্সিক্ষত স্তরে অর্জন করতে পারেনি।’

এ মন্তব্যকে আমেরিকান সিনেটের কিছু সদস্যের ট্রাম্পের ইম্পিচমেন্টকে বাতিলের পক্ষে ভোট দেয়ার সময়ে দেয়া বক্তৃতার তুলনা করে এসবকে সীমানা অতিক্রম করে যাওয়া দুই ‘ভণ্ডামি’ হিসেবে দেখাচ্ছিলেন মাইলাম।

আমরা মাইলামের এ লেখার ডিটেলের দিকে আর আগাচ্ছি না। তবে মাইলাম তার এ রচনায় যা সিদ্ধান্ত টেনেছেন যেটা তার রচনার শুরুতে শিরোনামের নিচে সারসংক্ষেপ হিসেবে দেয়া আছে, সেটিতে চলে যাবো। কারণ সেটিই আমাদের প্রসঙ্গ। মাইলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ব্যর্থতায় ডুবে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাই দায়ী যদিও, বিরোধী দলের ওপরও কিছুটা দায় বর্তায়।’ তাই কী? বাংলাদেশের বাইরের বন্ধুদের কোনো দায় নেই?

উড্রো-উইলসন সেন্টারের দুই ফেলো
মাইলামের মতো আরেক বাংলাদেশী-অরিজিন স্কলার ড. আলী রিয়াজও ‘উড্রো-উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার’ থিংকট্যাংকের ফেলো। তবে বর্তমানে রিয়াজ নিয়োগকর্তা বদলে নিয়ে ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’ নামে আরেক থিংকট্যাংকের সিনিয়র ফেলো। আর গত ১৮ মার্চ থেকে তিনি চার পর্বের এক মতামত-কলাম যৌথ নামে ঢাকার পত্রিকায় ছাপানো শুরু করেছেন। সেই লেখার প্রথমপর্বটাই যেন একটি সাক্ষ্য দলিল। সেখানে তিনি আমাদের জানিয়েছেন যে, বুশ প্রশাসন একান্তই নিজের সঙ্কীর্ণ রাষ্ট্রস্বার্থে কিভাবে ও কেন বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করে ক্ষমতা নেয়াই ছিল আর ভারতের হাতে তুলে দিয়ে বাংলাদেশকে বেচে দিয়েছিল। তা নিয়ে লেখা কিছু অংশ এখানে নিচের প্যারাটা, বুশ সম্পর্কে তার এক সাক্ষ্য অবশ্যই।

আলী রিয়াজ লিখছেন, ‘নাইন-ইলেভেনের হামলার পর মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনার কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। নিরাপত্তার বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া এবং বুশ প্রশাসনের কথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ বিবেচনা থেকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হয় নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়। জর্জ ডব্লিউ বুশের আমল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র মূলত ভারতের চোখেই বাংলাদেশকে দেখে এসেছে। এর পেছনে একটি বড় কারণ হচ্ছে, এ অঞ্চলে ভারতীয় আধিপত্য নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তি চীনকে ঠেকাতে চায়।’

এ প্যারাটা আসলে শত কথার বদলে কয়েকটা কথা। প্রথমত, ‘আমেরিকা ভারতের স্বার্থের চোখে বাংলাদেশকে দেখেছিল।’ কেন? ‘আমেরিকা এশিয়ায় ভারতের আধিপত্য নিশ্চিত করতে চায়।’ মানে শুধু দেখা নয়, ভারতের আধিপত্য একেবারে নিশ্চিত করতে চায়। সেটি আবার কেন? কারণ আমেরিকা ‘পরাশক্তি চীনকে ঠেকাতে চায়’। মানে চীনের অর্থনৈতিক উত্থানের বিরুদ্ধে ‘চায়না কনটেইনমেন্ট’ বা চীন ঠেকানো করতে চায়। এটি বৃথা ও অকার্যকর হবে ও হয়েছে জানা সত্ত্বেও।

অর্থাৎ আমরা দেখছি আলী রিয়াজ ক্লিয়ার ও ক্যানডিড হয়েই কথা তিনটি বলেছেন। যার কোনো দুই রকমের মানে নেই। এর ভেতরে এশিয়ায় চীনের বদলে ভারতীয় আধিপত্য ছেয়ে ফেলা নিশ্চিত করেছে আমেরিকা- এ স্বীকারোক্তির মধ্যে রিয়াজ কোনো সমস্যা মনে করেছেন বা অন্যায় দেখেছেন, তা মনে হয়নি। স্বাভাবিকভাবে দেখেছেন। অথচ এরপর ভারতকেই দায়ী করে বলেছেন, ‘প্রায় এক দশক ধরে ভারত আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী সরকারব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে।’

আমরা তা হলে দুই থিংকট্যাংক ফেলোর বক্তব্য জানলাম। রিয়াজ আমাদের পরিষ্কার সাক্ষ্য দিয়ে জানাচ্ছেন বুশের আমল থেকেই আমেরিকান প্রশাসনগুলোর বাংলাদেশে সংশ্লিষ্টতা ও হস্তক্ষেপগুলো কত গভীরে ছিল।

তা হলে আজকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্দশাগুলোর জন্য মানুষের যে সাফোকেশন, এ জন্য মাইলাম আমাদের সরকার আর বিরোধী দলকেই পুরো দায়ে দায়ী করলেন; এ দিকে নিজেদের দেশ আমেরিকার প্রশাসনের হাত ধুয়ে ফেললেন; এটি কী ঠিক হলো? এ নিয়ে তার ব্যাখ্যা দেয়া উচিত। নিজ দল-গোষ্ঠীর কাজের দায় অস্বীকার করা কোনো কাজের কথা নয়। ভুল মনে করলে তা স্বীকারের সৎসাহস দেখানোই আমরা আশা করব। স্টার্টার হিসেবেও এসব খুবই অখাদ্য!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com


আরো সংবাদ



premium cement