২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তুরস্ক-মিসর সম্পর্ক ও নতুন সমীকরণ

তুরস্ক-মিসর সম্পর্ক ও নতুন সমীকরণ - ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক সবচেয়ে আলোচিত খবর হলো তুরস্ক ও মিসরের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি। ২০১৩ সালে মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল সিসির ক্ষমতা গ্রহণের পর কায়রো-আঙ্কারা কূটনৈতিক সম্পর্ক অচল হয়ে পড়ে। এরপর দুই দেশের মধ্যে ন্যূনতম যে সম্পর্ক অবশিষ্ট থাকে, সেটি ছিল গোয়েন্দা সংস্থা পর্যায়ে। সর্বশেষ যেসব খবরাখবর মিসর ও তুরস্কের উচ্চপর্যায় থেকে আসছে তাতে স্পষ্ট যে, মিসর-তুরস্ক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা কেবল ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে সীমিত নয়। এ সমঝোতা বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের নতুন সমীকরণের একটি অংশ হতে পারে।

তুরস্ক ও মিসর কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনা আবার শুরু করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। কাভুসোগলু জানিয়েছেন, মিসরের সাথে গোয়েন্দা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উভয় স্তরেই আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে বন্ধনগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছিল, সেগুলো দ্রুত বা সহজেই সংযোজন করা যাবে, এমন নয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আস্থার অভাবও স্বাভাবিক এবং উভয়পক্ষেই এটি থাকতে পারে। এ কারণেই একটি নির্দিষ্ট কৌশল, একটি রোডম্যাপের অধীনে আলোচনা হয় এবং তা চলতে থাকে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক বিষয় প্রকাশ করে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে তার দেশের কোনো সমস্যা নেই।

পরিবর্তনের পূর্বাভাস
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সর্বশেষ উন্নয়নের ঘটনাগুলোর প্রতি নজর রাখলে এখানে চলমান পরিবর্তনের বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে।

প্রথমত, সৌদি আরব ও আমিরাতের সাথে তুরস্কের যে আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে মতের ব্যবধান তৈরি হয়েছে তা নিরসনে উভয়পক্ষ কাজ শুরু করেছে। এর একটি প্রাক-ঘটনা হলো উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) সদস্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন এবং এর সাথে মিসর মিলে যে ‘কাতার অবরোধ’ করেছিল তার অবসান ঘটানো; আর সব ক’টি দেশের সাথে কাতারের সম্পর্ক নতুন করে সচল হওয়া। কাতারের অবরোধের অবসানের যে নেপথ্য আলোচনা তার সাথে য্ক্তু ছিল আঙ্কারাও।

দ্বিতীয়ত, লিবিয়ায় দু’পক্ষের মধ্যে যে মুখোমুখি লড়াই ও স্বার্থের সঙ্ঘাত অনেক বড়ভাবে সামনে এগোচ্ছিল তা বন্ধ হওয়া। দেশটিতে জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় সমঝোতার সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যে সরকার পূর্ব-পশ্চিমে বিভক্ত প্রশাসনকে সমন্বিত ও একীভূত করে আগামী ডিসেম্বরে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে অখণ্ড লিবিয়ার শাসন বা নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে। লিবীয় দ্বন্দ্বে জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত ত্রিপোলি সরকারের পেছনে সর্বাত্মক সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা জুগিয়েছে তুরস্ক। অন্য দিকে মিসর, আমিরাত, রাশিয়া ও ফ্রান্স সমর্থন জুগিয়েছে বিদ্রোহী খলিফা হাফতার ও সালেহর নেতৃত্বাধীন বেনগাজিভিত্তিক সরকারকে। এক বছরের বেশি সময় যুদ্ধ করেও শেষ পর্যন্ত তুরস্কের সক্রিয় সমর্থনের কারণে খলিফা হাফতার ত্রিপোলি সরকারের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হন। এখন সব পক্ষ নতুন সমঝোতায় সম্মত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

তৃতীয়ত, ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রসীমা বিরোধে তুরস্কের অধিকারকে প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার ব্যাপারে গ্রিস, মিসর, সাইপ্রাস, ইসরাইল ও ফ্রান্সের মধ্যে অক্ষ তৈরির পর তুরস্ককে অনেকখানি একঘরে মনে হয়েছিল। এখন সব পক্ষ এমনকি, জাতিসঙ্ঘের সহায়তায় গ্রিসও তুরস্কের সাথে আলোচনা করছে। ভূমধ্যসাগরের জ্বালানি অনুসন্ধান ও উত্তোলন নিয়ে কায়রো-আঙ্কারা সমঝোতার এক বিরাট প্রভাব পড়বে এ অঞ্চলে। তুরস্ক ও লিবিয়া ত্রিপোলিভিত্তিক সররাজ সরকারের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে যে চুক্তি করেছিল, তার প্রধান প্রতিবাদকারী ছিল মিসর। মিসরের সাথে তুরস্কের সমঝোতা হলে কায়রো গ্রিস-সাইপ্রাসের চুক্তির চেয়ে সমুদ্র অঞ্চলের বেশি অধিকার লাভ করবে দেশটি। অন্য দিকে জ্বালানি উত্তোলন চুক্তিতেও বাড়তি সুবিধা ভোগ করবে কায়রো।

চতুর্থত, মিসর ও সুদানের জন্য বাঁচা-মরার প্রশ্ন হলো ইথিওপিয়ার আননাহদা (রেনেসাঁ) বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি। দু’টি দেশই কৃষির জন্য বহুলাংশে নীল নদের পানি প্রাপ্তি নির্ভর। ইথিওপিয়া এই নীল নদের উজানে বাঁধটি নির্মাণ করছে। মিসর ও সুদানের সাথে সমঝোতা চুক্তি ছাড়াই বাঁধটি ভরার জন্য পানি প্রত্যাহার শুরু করতে চাইছে ইথিওপিয়া। মিসর এককভাবে প্রভাব বিস্তার করে ইথিওপিয়াকে নিবৃত্ত করতে পারছে না। তুরস্ক অতি সম্প্রতি ইথিওপিয়ার কাছে আননাহদা বাঁধ নির্মাণবিষয়ক বিরোধে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রজব তৈয়ব এরদোগানের বিশেষ দূত ভিসেল ইরোগলু বলেছেন, তার দেশ ইথিওপিয়ার এই বাঁধ সম্পর্কিত মধ্যস্থতা আলোচনার নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এ ইস্যুটির সাথে তুরস্কের সম্পৃক্ততা সঙ্কটের সমাধানের ব্যাপারে বড় চাপ তৈরি করতে পারে ইথিওপিয়ার ওপর।

মিসর-তুরস্ক সম্পর্কের সমীকরণ
গত মাসে মিসর পূর্ব ভূমধ্যসাগরে নতুন তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের ‘বিড’ ঘোষণা করেছে। তুরস্ক ও লিবিয়ার মধ্যে ২০১৯ সালের চুক্তি অনুসারে এটি আঙ্কারার ঘোষিত ‘কন্টিনেন্টাল শেল্ফ’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছিল। আঙ্কারা মিসরীয় পদক্ষেপকে একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে নিয়েছে। আর এটি এ ধরনের প্রথম বার্তা ছিল না। তুরস্ক-লিবিয়া সমুদ্র চুক্তির সমালোচনা করা সত্ত্বেও, মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিসেম্বর ২০১৯ সালের রোম সম্মেলনে এ চুক্তিটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ‘মিসরের স্বার্থের ক্ষতি করে না’ বলে উল্লেখ করেছিল।

২০২০ সালের আগস্টে মিসর গ্রিসের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ চুক্তি স্বাক্ষর করলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন যে, এই চুক্তি দ্বীপের সমুদ্রসীমা নিয়ে তুরস্কের দৃষ্টিভঙ্গির বিবেচনায় নিয়েছিল।

কায়রো সম্প্রতি তার লিবিয়া নীতিতে এমন কিছু পরিবর্তন আনে, যা দেশটিকে আঙ্কারার আরো কাছে এনেছে। উত্তর আফ্রিকার এ দেশটিতে আঙ্কারা জেনারেল হাফতারের অভিযানকে সাফল্যের সাথে ঘুরিয়ে দেয়ার পরে সেখানে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে মিসর বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মিসর একটি উচ্চপদস্থ কূটনীতিক ও নিরাপত্তা প্রতিনিধিদল ত্রিপোলিতে পাঠায় এবং আবার দূতাবাস খোলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে। এটি ছিল ২০১৪ সালে এরপর প্রথমবারের মতো ত্রিপোলিতে মিসরের দূতাবাস খোলা।

কায়রোর এসব বার্তা আঙ্কারার নজর এড়ায়নি। গত ৩ মার্চ তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, কায়রো তার দেশের সমুদ্রসীমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাভুসোগলু মিসরের সাথে সমুদ্রসীমা এখতিয়ার চুক্তি বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রস্তুতির বিষয়ে ইঙ্গিত দেন।

এর তিন দিন পরে তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার ‘ব্লু হোমল্যান্ড’ ২০২১ কৌশলগত অনুশীলনের সময় জোর দিয়ে বলেন যে, ‘দুটো দেশ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে শেয়ার করে।’ এর মাধ্যমে তিনি সম্পর্কের নতুন উন্নয়নের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন।

রাষ্ট্রপতি এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন ব্লুমবার্গকে যখন বলেন, ‘মিসরের সাথে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় চালু হতে পারে’ তখন তিনি আগের বক্তব্যগুলোকেই প্রকারান্তরে সমর্থন করেন। এসব বার্তা তুর্কি শাসনের উচ্চপর্যায়ের নীতি প্রণেতাদের কাছ থেকে আসায় বিষয়টির গুরুত্বকে বিশেষভাবে প্রতিফলিত করে।

সম্পর্ক বাড়াতে পারস্পরিক স্বার্থ
দুই দেশের মধ্যে সাবধানে তৈরি করা বার্তা কেবল তাদের সাধারণ স্বার্থেই নয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক গতি পরিবর্তনকেও প্রভাবিত করতে পারে। গত বছরের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় মিসর ও তুরস্কসহ অনেক আঞ্চলিক দেশকে নতুন প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য নীতিগুলোর পুনর্বিন্যাস করতে বাধ্য করেছে।

মিসর উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের (জিসিসি) সাম্প্রতিক শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। কারণ তার মিত্র সৌদি আরব ও আরব আমিরাত কায়রোর সাথে এ বিষয়ে কোনো সমন্বয় করেনি এবং তারা দোহার সাথে পুনর্মিলন করতে রাজি হওয়ার সময় মিসরের স্বার্থগুলোকে বিবেচনায় রাখেনি।

জিসিসির সমঝোতা তুরস্ককে কাতার, কুয়েত ও ওমানের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির সুযোগ এনে দেয় আর সৌদি আরব এবং কিছুটা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথেও সমঝোতার অবকাশ তৈরি করে। গত জানুয়ারিতে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা যে তুরস্কের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং তাদের পারস্পরিক অর্থনৈতিক স্বার্থ গড়ে তোলার ইচ্ছা নিয়ে এগোচ্ছেন সে বিষয়টি জানতে পারে মিসর। অথচ আমিরাতের চাপে মিসর লিবিয়ায় তুরস্কের সাথে সংঘর্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।

এর পাশাপাশি গ্রিস ও তুরস্ক পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় স্থবিরতার বিষয় নিয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম প্রত্যক্ষ আলোচনা শুরু করে। আর এ সময় জাতিসঙ্ঘ সাইপ্রাস সমস্যার সমাধান সম্ভব কি না , তা পরীক্ষা করার জন্য একটি সভা আহ্বানের প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। এ ধরনের এক অবস্থায় কায়রো হিসাব করেছে যে, তুরস্কবিরোধী থাকা তার পক্ষে আর স্বার্থানুকূল হবে না। বিশেষত যখন উপসাগর ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরের অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, গ্রিস, ইসরাইল এমনকি ফ্রান্স ও আঙ্কারার সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে যাচ্ছে। এটি মিসর ও তুরস্কের মধ্যে সাম্প্রতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার কারণ বলে মনে হচ্ছে।

সমুদ্রসীমার স্বার্থ
সমুদ্রসীমায় নিজস্ব স্বার্থ বিবেচনায় ইসরাইল পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের অবস্থানের সমালোচনার ব্যাপারে সতর্ক ছিল। ইউরোপে গ্যাস রফতানি করতে তেল আবিব ইস্টমেড পাইপলাইন প্রকল্পের ওপর নির্ভর করছে। এই পাইপলাইনটির চূড়ান্ত দৈর্ঘ্য ১,৯০০ কিলোমিটার, ব্যয় প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার এবং তুরস্কের দাবি করা অঞ্চল দিয়ে এটি যাওয়ার কারণে তা কখনো ‘দিনের আলো দেখতে পাবে’ কি না সংশয় রয়েছে। এ কারণে ইসরাইল সম্ভবত তার বিকল্পগুলো তুরস্কের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত রাখতে চাইবে। এ জন্য ইসরাইল মিসর-তুরস্ক সম্পর্কের বিরোধিতা করছে না।

মিসরও সমুদ্রসীমা নিয়ে তুরস্কের সাথে একই ধরনের সমস্যায় রয়েছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গ্রিসের চেয়েও তুরস্কের সাথে একটি সমুদ্রচুক্তির পক্ষে বেশি রয়েছেন। কারণ এটি মিসরকে আরো অনেক বড় সমুদ্রাঞ্চল দেবে। তবে মিসরীয় প্রেসিডেন্ট কিছু রাজনৈতিক সুবিধার জন্যও এথেন্সের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তুরস্কের দরজা বন্ধ না করার জন্য সম্মত হয়েছেন। বিশেষত মিসরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্তকারী আমিরাত-ইসরাইল চুক্তির পরে এর প্রয়োজন বিশেষভাবে অনুভব করেছে কায়রো।

এসব ঘটনার এবং কায়রোর ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ করে আঙ্কারা পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও লিবিয়ায় তাদের সাধারণ স্বার্থের ভিত্তিকে নীরবে মূল্যায়ন করছে। আঙ্কারার সাবধানে তৈরি করা বার্তাগুলো একটি বিজয়ী সূত্র হিসেবে কাজ করেছে। তুরস্কের সাথে সহযোগিতার মধ্যে কায়রোর স্বার্থের বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে, প্রাক-করোনাভাইরাস সময়কালেই, আঙ্কারা কায়রোকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং গ্যাস আমদানির পরিমাণ বাড়াতে প্রস্তাব করেছিল। তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক, রাজনৈতিক ওঠানামার মধ্যেও দেখা গেছে। গত কয়েক বছরে তা বেড়ে ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পাঁচ বিলিয়ন ডলারকে অতিক্রম করেছে। তুরস্ক ও মিসর যদি লিবিয়ার পুনর্গঠনে একসাথে কাজ করে তবে লিবিয়ার স্থিতিশীলতা এই সহযোগিতাকে এক অভূতপূর্ব মাত্রায় বাড়িয়ে তুলতে পারে।

চ্যালেঞ্জ এখনো আছে
রাজনৈতিকভাবে তুরস্কের জন্য মিসরকে বিশেষত সংযুক্ত আরব আমিরাত, গ্রিস ও অন্যান্য রাষ্ট্রের হাতে জিম্মি হওয়া থেকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। এসব দেশ তুরস্কের বিরুদ্ধে তাদের নিজস্ব লড়াইয়ে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কায়রোকে। এই অর্থে আঙ্কারা মিসরকে উন্মুক্ত হতে সহযোগিতা করেছে।

তবুও মিসর ও তুরস্কের মধ্যে ইতিবাচক বার্তাগুলো বিনিময় হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের সম্ভাব্য সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে না। এর সহজ অর্থ হলো, তারা চেষ্টা করছেন- নির্দিষ্ট বিষয়ে মতপার্থক্য তাদের সাধারণ স্বার্থে একসাথে কাজ করা থেকে যেন বিরত না করে।

তবে স্পষ্টভাবে এমন ছদ্মবেশী অনেক শক্তি রয়েছে যারা তাদের নিজস্ব প্রভাব রক্ষার জন্য তুরস্ক আর মিসরের মধ্যে সহযোগিতা করার চেয়ে সঙ্ঘাতকে বেশি পছন্দ করবে। আঙ্কারার বিপরীতে মিসরের বার্তাগুলো আসল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এমনও হতে পারে যে, কায়রো তার অংশীদারদের (আমিরাত, গ্রিস ও ইসরাইল) চোখে নিজের মূল্য পুনরুদ্ধার করতে আঙ্কারাকে ব্যবহার করে কৌশলগত লাভ অর্জন করতে চাইছে। অথবা সর্বাধিক নিরাপত্তার জন্য তুরস্কের সাথে তার বিকল্পগুলো খোলা রেখে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রয়েছে দেশটির, যাতে সব ‘খেলোয়াড়’ থেকে লাভ আদায় করে নিতে পারে।

এ ধরনের ব্যাখ্যা কায়রো কখনো কখনো মিশ্র বা বিবাদযুক্ত বার্তা কেন পাঠায়, তার কারণ হতে পারে। দেশটি অন্যের সমর্থন না হারিয়ে তুরস্কের কাছে নিজেকে উন্মুক্ত করতে চাইতে পারে। যেভাবেই হোক, তুরস্কের সাথে যোগাযোগ স্থাপন মিসরের নিজস্ব এজেন্ডাকে সামনে হাজির করে।

তুরস্ক ও আরব সম্পর্কে নতুন বাতাস?
আরব-তুর্কি সম্পর্কে ‘শান্তি তৈরির’ নতুন বাতাস বইছে এবং অভিন্ন স্বার্থ সন্ধানে উত্তেজনা লাঘব করতে উভয়পক্ষ সহায়তা করছে। আঙ্কারা, কায়রো ও রিয়াদের মধ্যে সহযোগিতার বার্তা আদান-প্রদান নিয়মিতই হচ্ছে। আর যদি পরিস্থিতি ঠিকঠাক হয় তবে অনুরূপ বার্তা অন্যান্য আরব রাজধানী থেকেও আদান-প্রদান হতে পারে। মনে হচ্ছে, বিভিন্ন পক্ষ দীর্ঘমেয়াদি প্রক্সি যুদ্ধের ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

মিসর-তুরস্কের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা নিয়ে উপরে আলোচনা হয়েছে। রিয়াদের ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন আঙ্কারার সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ এনে দিয়েছে। বাদশাহ সালমান ও রাষ্ট্রপতি এরদোগানের মধ্যকার টেলিফোনে ওআইসির সম্মেলন চলাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের দ্বার উন্মুক্ত হয়। এখন দুই দেশের মধ্যে সহমর্মী বার্তা আদান-প্রদান অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ ফাঁস হওয়া তথ্যে ইয়েমেনে তুর্কি-সৌদি সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা তুরস্কের ড্রোন চুক্তি দিয়ে শুরু হয়েছিল। ড্রোনগুলো লিবিয়া ও আজারবাইজানে তাদের কার্যকারিতা প্রমাণ করার পর রিয়াদ তা কেনার বিষয়ে আগ্রহী বলে মনে হয়। আঙ্কারা ও রিয়াদ উভয়েই ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনসুর হাদির বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় এবং উভয়ে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করা হুতির প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলাহ পার্টির সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। অধিকন্তু উভয়পক্ষই বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিশেষভাবে মানবাধিকারের বিষয়ে এবং নতুন মার্কিন রাষ্ট্রপতি যে সমালোচনা করছিলেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

লিবিয়া তুরস্কের সাথে প্রকাশ্যে ও গোপন সংলাপের জন্য মিসরের প্রবেশদ্বার ছিল। তেমনি উপসাগরীয় মিলনে কাতার সৌদি আরবের প্রবেশদ্বারে পরিণত হয়েছে। সৌদি-কাতার সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে উন্নত হওয়ায় এটি স্পষ্ট যে, তুরস্ক ও সৌদি আরবের সম্পর্ক শান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আর কাতারের এতে ভূমিকা থাকতে পারে। এ সম্পর্কের যে রাজনৈতিক দিক রয়েছে, বিশেষত মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর এর কী প্রভাব পড়বে, সেটি বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে। আগামী কোনো কলামে এর ওপর আলোকপাত করা হবে।

mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
বাকৃবির এক্স রোটারেক্টরর্স ফোরামের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ১ দাগনভুঞায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তির ঘটনায় আ’লীগ নেতাকে শোকজ দখলে থাকা ৪ গ্রাম আজারবাইজানকে ফিরিয়ে দেবে আর্মেনিয়া স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর আত্মহত্যা! কুলাউড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু যেসব এলাকায় রোববার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে পলাশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মনা, সম্পাদক রনি তীব্র গরমে আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না বগুড়া পশ্চিম সাংগঠনিক জেলা জামায়াতের উদ্যোগে ভার্চুয়ালি রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত তেঁতুলিয়া নদীর তীরে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

সকল