২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দেশ অসুস্থ রাজনৈতিক শৈলী নিয়ে চলছে

দেশ অসুস্থ রাজনৈতিক শৈলী নিয়ে চলছে - ছবি : সংগৃহীত

সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই একটা সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এটা রাজনীতির শৈলী ও সৌন্দর্য বটে। রাজনীতি কূটচালের প্রাধান্য থাকবে, আন্তঃদলের সাথে দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা ও ভোটযুদ্ধে পরস্পর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু নীতি ও মতের পার্থক্য সত্ত্বেও পরস্পরের মধ্যে শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা পোষণের শিষ্টাচারের অনেক দৃষ্টান্তই দেখা যায়। নীতির কারণে ভিন্ন দলের সাথে বৈরিতা ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান কোথাও কোথাও হলেও রাজনীতির অঙ্গনের প্রকৃত আদর্শ স্থাপনকারীরা নিজ মত পোষণ এবং বাস্তব জীবনের নিজের বিশ্বাস ও আদর্শের প্রতি অটল থাকা, তার প্রচার ও অনুশীলন করা সত্ত্বেও আর ভিন্ন দলের আদর্শের প্রতি অনাস্থার পরও তাকে অশ্রদ্ধা অকারণ নিন্দা পরিহার করে থাকেন। অপরকে তার মতের ওপর আস্থায় রাখার জন্য, নিন্দা না করে তার ভিন্ন মত পোষণের অধিকারকে স্বীকার করে অপূর্ব সহিষ্ণুতা দেখান। তারা বিরুদ্ধবাদীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার নীতিতেই বিশ্বাসী।

এর ফলে সেখানে রাজনীতিতে সঙ্ঘাত সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়। এই পথ অনুসরণ করলে রাজনীতি হয়ে ওঠে ‘বুদ্ধির যুদ্ধ’। সে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের শ্রেষ্ঠত্ব এভাবেই প্রতিষ্ঠা করে থাকেন। এমন পথ থেকে বিচ্যুতি ঘটলে রাজনৈতিক দলগুলো একসময় হয়ে উঠবে মাসলম্যানদের ক্লাব। দলের আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে শক্তি ও সংঘর্ষ সঙ্ঘাত। জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা যে রাজনীতির প্রধান দর্শন তা আর বজায় থাকবে না। শুরু হয়ে যাবে শক্তির প্রদর্শনী, যার অনিবার্য ফল হবে জীবনক্ষয়ের বিষয়। দীর্ঘ দিনের অনুশীলন ও চর্চার ফলেই আজকে ক্ষমতার হাতবদল ঘটছে জনমতের প্রাধান্যে। না হলে ফিরে যেতে হতো অতীতের সেই জংলি শাসনে। পথ পরিহার করায় বিশ্বের শান্তি সংহতি প্রতিষ্ঠা হয়েছে বটে। তবে পৃথিবীর সর্বত্র এমন অর্জন সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশেই ক্ষমতার হাতবদলের প্রক্রিয়া আজো এমন মসৃণ হয়ে উঠেনি। সেখানে গণতন্ত্রের ব্যাখ্যাও সার্বজনীন নয়। আরো পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের পথ এখনো এমন মসৃণ তো নয়ই বরং এত বেশি কণ্টকাকীর্ণ যে, নিয়তই এখানে ঘটছে সংঘর্ষ, সঙ্ঘাত ও প্রাণহানি।

এ দিকে পশ্চিমা দুনিয়ায়ও সম্প্রতি ঘটে গেছে এক দুর্যোগ। মাত্র কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও রাজনীতিতে সৃষ্টি হতে চলেছিল সেই পুরনো দিনের দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাতের পুনরাবৃত্তি। এই অঘটনের মূলে ছিল জনমতের প্রতি অনাস্থা এবং আইনের সরল পথ থেকে বিচ্যুতি। ফলে সে দেশের গণতন্ত্রের শত বছরের যে শৈলী ও ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, তাকে নস্যাৎ করার প্রয়াস চালিয়ে ছিলেন সে দেশেরই বিগত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই বিচ্যুতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহ্য বিনষ্ট হয়েছে তো বটেই সেই সাথে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক সঙ্ঘাত ও বিভেদ সৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। ট্রাম্প জনমতের তোয়াক্কা না করে কোনো নজির ব্যতিরেকেই জাতীয় নির্বাচনে কল্পিত কারচুপির কথা বলে গোটা যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়াবহ এক বিভেদ ও বিপর্যয়ের মুখোমুখি করেছিলেন।

তিনি এত দূরও বলেছিলেন, মার্কিন নির্বাচনকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর কারচুপির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; অথচ তার সেই ভুয়া অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের স্বচ্ছ নির্বাচন পরিচালনাকারীদের ললাটে কালিমা লেপনের অশুভ চেষ্টা এবং তিনি অন্ধ স্বার্থেই তা করেছিলেন। তার এমন আচরণ যদি পর্যালোচনা করা যায় তবে এটাই প্রতীয়মান হবে যে, তৃতীয় বিশ্বের যেসব খল রাজনীতিক নির্বাচনে জনগণের দেয়া রায়কে বরাবরই যে ভাবে নস্যাৎ ও ফল উল্টে দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন, ট্রাম্পও সেভাবে ফল উল্টে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনের ফলাফলকে অনুমোদন দেয়ার জন্য সে দেশের জনপ্রতিনিধিদের ক্যাপিটল ভবনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও ট্রাম্প তার উগ্র সমর্থকদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া এর তীব্র নিন্দা করেছে। এরপরও তার এতটুকু সম্বিত ফিরে আসেনি। তিনি নিজেকে মূলত ক্ষমতালিপ্সু একজন কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি হিসেবেই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন মার্কিন রাজনীতিতে যা অভূতপূর্ব।

সে যাই হোক, আমরা মূল আলোচনায় ফিরে আসতে চাই। রাজনীতির উত্তম শৈলী ও সদাচরণ নিয়েই আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম। গণতন্ত্রকে যারা মূলমন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করেন তারা ক্ষমতাসীন হলে জনকল্যাণের পাশাপাশি রাষ্ট্রে জবাবদিহিমূলক প্রশাসনকে আরো শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চালান; যাতে সমাজ ও রাষ্ট্রে শুদ্ধাচারের নীতি প্রতিষ্ঠা পায় এবং ন্যায় থেকে অন্যায়কে পৃথক করার কোনো উদ্যোগই যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়। সমাজে গণতন্ত্র মানবিক মূল্যবোধ যাতে বিঘ্নিত হতে না পারে সে জন্য স্বাধীন মতপ্রকাশের সব গণমাধ্যমকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে মানুষের অধিকার দেখভালের জন্য এসব মিডিয়াকে ‘ওয়াচ ডগের’ ভূমিকায় রাখা হয়।

তবে এসব গণতান্ত্রিক দেশের অনেকগুলোতেই, সেখানে বসবাসকারী বহু মানুষ বৈষম্যের শিকার হন না এমন নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত করা হচ্ছে। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা এবং ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী তাদের অনেক অধিকার ভোগ করতে পারেন না। বিশেষ করে ধর্ম ও বর্ণের নিরিখে বহু মানুষ নিগৃহীত হয়ে থাকেন এমন কি তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো করে রাখা হয়। তাদের বহু অধিকার ভোগ করার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। যেমন ভারত নিজেকে ‘গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে জাহির করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। কিন্তু সেখানে উগ্র ধর্মান্ধরা যারা বর্তমান সরকারের সমর্থক তারা সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রতিনিয়ত চরমভাবে আক্রমণ করে থাকে এবং বহু মুসলিম নর-নারীকে এতে জীবন দিতে হয়। ভারতে মুসলিম জনগণের বহু অধিকার এমনকি তাদের নাগরিকত্ব পর্যন্ত হরণ করে নেয়া হয়েছে। সে দেশের সরকারই বস্তুত এমন বৈষম্যমূলক আচরণ করে এবং তাদের সমর্থকদের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে থাকে।

তৃতীয় বিশ্বে গণতন্ত্রের স্বরূপ একেবারেই ভিন্ন, তা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এসব দেশে গণতন্ত্র নিয়ে এতটা বাগাড়ম্বর করা হয় যা বাইরের পৃথিবীকে বিভ্রান্ত করছে। এসব দেশের গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা শাসকশ্রেণীর মর্জিমাফিক হয়ে থাকে। দেশের শাসকদের মেজাজ মর্জি, চিন্তা ও আচরণকেও সুষমামণ্ডিত করার জন্য সরকারের পেটোয়া সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী সাংস্কৃতিক কর্মীরা লাগাতারভাবে সব ভ্রান্ত মতের প্রচার কাজে নিয়োজিত থাকেন। এসব সংগঠনের মোকাবেলায় নিরপেক্ষ কোনো প্লাটফর্ম সৃষ্টির চেষ্টা করার কোনো উদ্যোগই সফল হতে পারে না। কেননা প্রশাসন সৃষ্টি করে থাকে নানা বাধা বিপত্তি। তাই এমন উদ্যোগ গ্রহণকারীরা নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। একটা চরম অবরুদ্ধ পরিবেশে তাদের জীবন যাপন করতে হয়। এমন দেশে ক্ষমতাসীনদের সমর্থক যারা সরকারের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেন, তারা মূলত পেশিতন্ত্রে বিশ্বাসী।

তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, সরকারের সহায়তা এবং বিরুদ্ধবাদীদের শায়েস্তা করা। এভাবে সাধারণ জনগণের মত ও তাদের স্বাধীন আকাক্সক্ষা পণ্ড করে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ন্যক্কারজনক ভূমিকা রাখা হয়। এসব পেটোয়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অপ্রতিরোধী হয়ে ওঠে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সমৃদ্ধি বা নিরাপত্তার বিষয়গুলো সেই সমাজে মূল্যহীন। এসব সমাজে সঙ্ঘাত সন্ত্রাস মূলত যেন নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনা। মানবিক মূল্যবোধের চর্চা যেখানে নেই সেখানে ন্যায়-অন্যায়ের প্রভেদ, সুনীতিকে দুর্নীতি থেকে পৃথক করা মহৎ চেতনা ও সুবিবেচনা দুর্লভ বিষয় হয়ে ওঠে। সেখানে আইন কানুনের কোনো কমতি নেই। কিন্তু তা শুধু কেতাবেই লিপিবদ্ধ। এসব বিধিবিধানের কোনো অনুশীলন নেই। ক্ষমতার স্বার্থে যা দরকার সেটিই সেখানে আইন এবং সামগ্রিক অধিকার কোনো বিবেচনার বিষয় নয়।

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের এক সদস্য দেশ। তাই এখানে তৃতীয় বিশ্বের ভিন্ন রাষ্ট্রের সব বৈশিষ্ট্যই প্রবলভাবে দৃশ্যমান। প্রতিটি দেশের পথ চলার জন্য তাদের শাসনতন্ত্র বা সংবিধান রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা অর্থহীন কেননা সব বিধানই প্রকৃতপক্ষে স্বৈরাচার তৈরি করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধান নানা বিবেচনায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ জন্য অবশ্যই প্রশংসা করা যেতে পারে। কিন্তু এই শুদ্ধ গ্রন্থের সব বিধিবিধান অনুশীলন করা হয় না। এখানেও স্বার্থ সুবিধার বিষয়গুলো দেখেশুনে এবং বেছে বেছে চর্চার নজির রয়েছে। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন কায়েমের যেসব ধারায় দিকনির্দেশনা রয়েছে তা সযতনে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। ফলে জনমানুষের অধিকার ও আইনের আশ্রয় লাভ করা দুরূহ। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ তাই নানা দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়ে থাকে। মানুষের এমন বঞ্চনা নিয়ে দেশে যেমন দুঃখ হতাশা রয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক বিশ্বেও এর ঢের সমালোচনা রয়েছে। দেশের মানুষের বেদনা ও কষ্ট যেমন উপেক্ষিত হয়, তেমনি আন্তর্জাতিক আলোচনা-সমালোচনার প্রতি প্রশাসনের মনোযোগ ও উপলব্ধির কোনো উদাহরণ নেই।

কোনো গণতান্ত্রিক অবস্থার বিষয় বিবেচনার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, তাদের গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কতটা এবং নির্বাচনে প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিয়ে আলোচনা অতি আবশ্যক। তা দেশের গণতন্ত্র পরিমাপের জন্য জরুরি এবং অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার। এখন যদি শুধু নির্বাচন ও তাতে বিরোধী দলের সুযোগ-সুবিধা লাভের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয় তবে এ কথা বলতেই হবে যে, তারা এখন বনসাইয়ের পর্যায়ে পৌঁছেছেন যা শুধু দেখার বস্তুতেই পরিণত হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা কোনোভাবেই অনুমোদন করা হয় না। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের হামলা চলে এবং সেই সাথে শত শত মামলা দায়ের করা হয়। এত সব সমস্যার ভারে দেশের কোনো বিরোধী দলের পক্ষে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে শরিক হওয়া সম্ভব নয়। অথচ দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের আইন মান্য করা সাপেক্ষে রাজনৈতিক দল গঠন ও তার আদর্শ অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালনার পূর্ণ সুযোগ দেয়া হয়েছে। সংবিধান তাদের এমন সব অধিকার ভোগের সুযোগ দিয়েছে। তাই তাদের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে কেউ কোনো বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের দায়িত্ব হলো, দলগুলোর নিরাপত্তা বিধান ও তাদের সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে যদি প্রশাসন অন্যথা করে তবে সেটি আইনের বরখেলাফ। কিন্তু এখন বাস্তব অবস্থাটি হচ্ছে, প্রশাসন রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রশাসনের অনুগত বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এমন ভ্রান্ত পথ অনুসরণ করার কারণে রাজনৈতিক দলের যে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে তা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। বস্তুত আজকে দেশে আইনের শাসনের সব ধারণাই ব্যর্থ হতে চলেছে।

আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের ওপর ক্ষমতাসীন দলের সহযোগীরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার পরিবর্তে শক্তি তথা পেশিশক্তি প্রয়োগ করে থাকে। এমন হামলার নানা কারণ থাকলেও মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিরোধী মতকে স্তব্ধ করে দেয়া। আন্তঃদলের এমন সঙ্ঘাতের পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ। কিন্তু বাংলাদেশে অন্তঃদলের সঙ্ঘাত সংঘর্ষ যে ইতিহাস শুধু সাম্প্রতিককালের নয়। বাংলাদেশে নিজ দলের মধ্যে বিবাদ, শক্তির প্রদর্শন ও সঙ্ঘাতের কারণ কিন্তু রাজনৈতিক আদর্শের কারণে নয়। এর মুখ্য লক্ষ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গোষ্ঠীবিশেষের প্রাধান্য বিস্তার ও অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্টতা।

এলাকায় যারা প্রাধান্য বিস্তারে সমর্থ হয় তাদের শুধু ক্ষমতাই বৃদ্ধি পায়- শুধু তা নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অসৎ পথে অর্থবিত্তের অধিকারী হওয়া। তাদের সাথে জনগণের অধিকার ও কল্যাণের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং তাদের শোষণ এবং নিজ স্বার্থকে ষোলোআনা নিরঙ্কুশ করাই এসব সংঘর্ষ সঙ্ঘাতের প্রকৃত কারণ। এমন সংঘর্ষ সঙ্ঘাত দলের ভেতর বিরাজ করা সত্ত্বেও দলীয় নেতৃত্ব তার কোনো বিহিত করতে পারছে না। আমাদের রাজনীতিতে এসব অনুষঙ্গ এতটা গভীরে চলে গেছে যে, তা দেশের রাজনীতির বৈশিষ্ট্য ও কদর্য শৈলীর রূপ লাভ করেছে।

এমন রাজনীতিকে প্রকৃতপক্ষে দেশে শিষ্টাচার শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায় হিসেবেই দেখতে হবে। একটি স্বাধীন দেশ গত ৫০ বছরেও যদি সহিষ্ণুতা ও শৃঙ্খলা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়, সে ব্যর্থতার জন্য দেশের দলগুলোর এমন বিশৃঙ্খলাকেই বহুলাংশে দায়ী করতে হবে। গত ৫০ বছর দেশের উন্নয়নের যে শ্লথ গতি সেটি নেতৃত্বের দুর্বলতার জন্যই। তারা শৃঙ্খলা অনিয়ম দুর্নীতির রাশ টানতে সক্ষম হননি। উন্নয়নের জন্য দক্ষ নিবেদিত প্রাণকর্মী সৃষ্টি করতে পারেনি জাতীয় নেতৃত্ব। এসব ব্যর্থতা শুধু দেশেই আলোচনা হয় না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের এসব ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে। সরকার দেশকে দ্রুত মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার যে প্রত্যয়ের ঘোষণা বহু আগে দিয়েছে পরে তার অন্তরায়গুলো বহু আগে থেকেই চিহ্নিত হয়েছে। সে তালিকা ধরে একে একে তার সমাধানের উদ্যোগই হচ্ছে দেশকে এগিয়ে নেয়ার পূর্বশর্ত। বর্তমান সরকার দু’টি ইতিবাচক অবস্থা থেকে তেমন সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। তারা টানা প্রায় তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে এবং দীর্ঘ দিন থেকে দেশে বজায় রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এসব অনুকূল; কিন্তু সে সুযোগ তো সরকার গ্রহণ করতে পারেনি।

ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী

সকল