২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিরোধী দলকে এখন খুঁজে কী হবে?

-

একটা সময় ছিল যখন নীতিবাগিশরা নানা নীতিকথা বলতেন। সে সময় সাধারণ মানুষও সেসব নীতিবাক্যকে মূল্যায়ন করত এবং সে আলোকে তার চর্চাও হতো। তখনকার সমাজে এর প্রতিফলন যেমন হতো তেমনি এসব বাক্য অনুসরণ করে মানুষ শান্তি-স্বস্তিও লাভ করত। এসব নীতিবাক্য যারা উচ্চারণ করতেন তাদের জীবনাচরণে তা প্রতিফলিত হতো এবং এর প্রভাবে সাধারণ মানুষ সেটি অনুসরণে উদ্বুদ্ধ হতো। সমাজে যদি একটি শৃঙ্খলা বিরাজ করে তবে ধরে নিতে হবে যে, এমন চর্চা আসলে ওপর নিচে নেমে আসে। এ কথার অর্থ এটাই যে, সমাজের নেতৃত্বে যারা তারা যদি নীতিবোধকে মূল্য দেন এবং নিজেরা তা অনুসরণ করেন তবে সে সমাজের মানুষ নীতিবোধের চর্চার ফলে সেখানে শৃঙ্খলার ও নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশে বসবাস করা সুযোগ পেয়ে থাকে সব শ্রেণীর মানুষই।

কিন্তু আজকে আমাদের সমাজে এমন চর্চা নেই, তাই মানুষ নানা অশান্তি ও অনিয়মে ভোগে। এ কথার অর্থ এই নয় যে, এখানে নীতিবাক্য উচ্চারণে কোনো কমতি আছে। আমাদের সমাজে যারা নেতৃত্ব দেন তারা মানুষের শ্রদ্ধা-ভক্তি ও মান্যতাকে পুঁজি করে নেতা হন না। এখানে নেতা তারাই হন যারা সমাজের সব উচ্ছৃঙ্খল দাঙ্গাবাজ আইনকানুন অমান্যকারীকে যত বেশি নিজের কাছে ভিড়াতে পারেন আর তাদের দিয়ে হাঙ্গামা অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারেন। তারাই মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে নেতা বনে যান। তাই স্বাভাবিকভাবে নীতি মূল্যবোধ ন্যায্য ইত্যাদি তাদের কাছে মূল্যহীন। সমাজের কেউকেটা হওয়ার জন্য আর কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে না।

আজ সমাজে যারা নীতির চর্চা করতে চান এবং নীতির আলোকে পরিচালিত হন, তাদের অবস্থান সমাজে সবার পেছনে। তা ছাড়া আজকের সমাজে তারা ‘হালনাগাদ’ বলে বিবেচিত হন না। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই ন্যায়বোধের ধারণা ও চর্চার কোনো দৃষ্টান্ত নেই। উচ্চশিক্ষা মূলত মানুষকে উন্নত চরিত্র ও ন্যায়বোধ শিষ্টাচারের উচ্চমার্গে পৌঁছানোর প্রেরণা সৃষ্টি করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আজ যারা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে আসছেন তাদের একটা বড় অংশ সমাজের আজকের পরিবেশের সাথে মিশে যাচ্ছেন। সমাজে যে শুদ্ধাচারের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে, এই উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে সে জন্য অনুশোচনা নেই। অথচ এটাই কাম্য ছিল যে, তারা শুদ্ধ সমাজ তৈরির জন্য নিবেদিত হবেন; তাদের সংস্পর্শে এসে সাধারণ মানুষ তাদের নেতৃত্বে এ নিয়ে আন্দোলন সৃষ্টি করবে এবং তা সর্বত্র সঞ্চারিত হবে। কিন্তু তা হয়নি। দেশের মানুষ যে গড্ডলিকায় ভেসে চলছে তারাও তাতে শামিল হয়ে গেছেন। ভালোকে মন্দ থেকে পৃথক করার কোনো চেতনা তাদের মধ্যে নেই।

আমরা এ লেখা শুরু করেছিলাম নীতিবোধ ও তার চর্চা নিয়ে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, এখন নীতিবাক্য উচ্চারণ করা হয় না এমন নয়। কিন্তু তা শুধু মানুষকে প্রবোধ দেয়া ও ভুল বুঝিয়ে রাখার জন্য। এর সাথে বিশ্বাসের কোনো সংযোগ নেই। সম্প্রতি সংবাদপত্রের পাতায় দেখলাম, ক্ষমতার বলয় থেকে বলা হলো- দেশে গণতন্ত্রের জন্য দরকার শক্তিশালী বিরোধী দলের। এ কথা অবশ্যই সর্বাংশেই সত্য। কিন্তু এখন দেশে বিরোধী দলকে যেভাবে বনসাই করে রাখা হয়েছে, সে পরিপ্রেক্ষিতে এমন বক্তব্যকে নিছক কথার কথাই বলতে হয়। এমন কেতাবি বক্তব্যের সাথে বিশ্বাস ও আন্তরিকতার লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিরোধী দলের সাথে প্রতিনিয়ত যে বৈরী আচরণ করা হয় তাতে উপরের বক্তব্যের ক্ষেত্রে বাস্তবতার কোনো প্রতিফলন নেই। শুধু এখন নয়, গত এক দশক থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা যেভাবে হচ্ছে এবং বিরোধী দলের প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে; তারপর সে কথাকে নিছক উপহাস ছাড়া ভিন্ন কিছু বলা যাবে না। তবে সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে যে, মানুষ সময়ের বাঁধনে জড়িয়ে আছে। এ থেকে কারো বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। আর সময় এক জায়গায় স্থায়ী হয় না।

দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ এবং জবাবদিহিতার জন্য অবশ্যই শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। তা নিয়ে দ্বিমত করার অবকাশ নেই। কিন্তু এখন শক্তিশালী বিরোধী দলের অস্তিত্ব কোথায়? দেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিবেশ সেখানে প্রশাসনের সামান্যতম সমালোচনা করার সুযোগটিও নেই। প্রশাসনের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরার প্রয়াসটুকুকেও রাষ্ট্রবিরোধী বলে আখ্যায়িত করা হয়। তার পরিণতি হিসেবে দেখা যায়, প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলার স্থান সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। জাতীয় সংসদ এখন এক দলের করায়ত্ত আর সব ধরনের মিডিয়া যে চাপের মুখে তা মোকাবেলা করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে।

এবার দেশে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোর ভোটের যে করুণ হাল মানুষ দেখেছে, তা থেকে এটা প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যে, জনমতের কোনো অবস্থান আর থাকছে না। এর পরিবর্তে ‘লাঠিতন্ত্র’ই যেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার একমাত্র পথ। এই তত্ত্বের অনুসারীদের বিপক্ষে যদি কেউ অবস্থান নেয় এবং সাহস দেখিয়ে ভোট বা নির্বাচন করতে চায় তবে তাকে জান বাজি রেখেই তা করতে হবে। এই বাস্তব অবস্থার পর যদি গণতন্ত্র ও শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনের কথা বলা হয় তবে তাকে পরিহাসই বলতে হয়। অথচ গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি তৈরি হয় তবে তা একদিন সবার জন্যই কল্যাণকর হবে। আজ দেশে উন্নয়নের যত স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, একে বাস্তব রূপ দিতে হলে অবশ্যই কথা বলার জন্য মুক্ত পরিবেশের অপরিহার্যতা বুঝতে হবে। উন্নয়ন তখনই এগিয়ে যাবে যখন উন্নয়নের জন্য অর্থ ব্যয় হবে। সেখানে দুর্নীতির ছোবল পড়বেই। তার বিরুদ্ধে কথা বলার স্বাধীনতা থাকাটা জরুরি। আর সে স্বাধীনতা কেবল গণতান্ত্রিক সমাজেই নিশ্চিত হতে পারে। স্মরণ রাখা উচিত, বাংলাদেশে দুর্নীতির চিত্রটা এতটা ভয়াবহ যে, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

অথচ আজ ভাবতে অবাক লাগে, এ দেশের নিত্য স্মরণীয় ব্যক্তি তথা দেশের স্থপতিরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কত না আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আজকের বাংলাদেশ। আমাদের বরণীয় নেতৃত্ব সে আমলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দীর্ঘকাল আন্দোলন করেছেন; জেল জুলুমসহ অসহনীয় অত্যাচার নির্যাতন এবং দীর্ঘ জেল জীবনযাপন করেছেন। সেসব ভুলে যাওয়ারই নামান্তর হবে যদি আজ তাদের উত্তরসূরিরা দেশে নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে নেতিবাচক আচরণ করেন। অধুনা তাদের অধীনে নির্বাচন যেন প্রহসনে পরিণত হয়েছে, যা তাদের পূর্বসূরিদের প্রতি এক চরম অবহেলা এবং তাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার শামিল। ইতিহাসে তাদের পূর্বসূরিদের প্রতি যে শ্রদ্ধা এবং তাদের অবদান বিশেষ করে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য যে ত্যাগ, তা শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করতে হবে। এটা কি ভাবা উচিত নয় যে, পূর্বসূরিদের পাশে তাদের ভূমিকা ইতিহাসে কত নেতিবাচকভাবে সংযোজিত হতে চলেছে? আজ গণতন্ত্রের জন্য তাদের মুখে হাজার বুলি বচন উচ্চারিত হয়। কিন্তু এসব বক্তব্যের সাথে তাদের বাস্তব ভূমিকা এতটা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ, যাকে ছলনাই বলতে হবে। এ দেশের জন্মের মূল চেতনাটাই ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার যে সংবিধান প্রণীত হয়, সেখানে অতীতের সেই গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতিফলন এবং জন-আকাক্সক্ষাকে পরিপূর্ণভাবে ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে তার পরিবর্তন করা হয়। সে থেকেই গণতন্ত্রের পথ থেকে বিচ্যুতির সূচনা। আজ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে। তাই একে দেশে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাওয়ার নতুন উদ্যোগ বলা চলে। এই চেতনার আলোকেই প্রশাসনের কাঠামোও সাজানো হচ্ছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে করা যেতে পারে।

নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নির্বাচন কমিশন ও মাঠপর্যায়ের প্রশাসন। গণতন্ত্রকে অর্থপূর্ণ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোদ্ধা সমাজকে বুঝিয়ে বলার কোনো অবকাশ নেই। যেসব দেশে গণতন্ত্র মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান তথা নির্বাচন কমিশন সব বিতর্ক আর অনুরাগ বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে। তাদের এমন ভূমিকার জন্যই সেসব দেশে নির্বাচনে অনিয়ম অব্যবস্থার কোনো অভিযোগ ওঠে না। সেখানে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া এমন যে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যথার্থ ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়। দায়িত্ব পালনের জন্য যে বিধিবিধান রয়েছে তার সুষ্ঠু প্রয়োগের ক্ষেত্রেও নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার ব্যাপারে আইন ও ঐতিহ্য থেকে তারা এক চুল সরে যান না। বাংলাদেশের স্থপতিরা দেশে গণতন্ত্রকে তথা দেশের মানুষের মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার জন্য সংবিধানকে যেমন আদর্শ রূপ প্রদান করেছিলেন, সে সংবিধানে নির্বাচন কমিশন পূর্ণ স্বাধীন এবং শক্তিশালী করে গঠন করেছেন। দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা এবং নির্বাচন নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা মনে করেন, বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে যতটা স্বাধীন ও শক্তিশালী করা হয়েছে পৃথিবীর খুব কম দেশেই নির্বাচন কমিশনকে এতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হয়েছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত যাদের ভোট ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন ওঠে না। সেই কমিশনও বাংলাদেশের কমিশনের মতো এতটা শক্তিশালী নয়। সেই কমিশন প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে সে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে এতটুকু ক্ষুণœ হতে দেয়নি। কমিশনের কর্মকর্তাদের ভূমিকা হওয়া উচিত বিচারকদের অনুরূপ। বিচারকরা যেমন আইনের এতটুকু ব্যত্যয় ঘটলেই দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি কোনো অনুকম্পা প্রদর্শন করেন না। কমিশনের কর্মকর্তারাও তেমন, নির্বাচনে অনিয়ম কারচুপি অবলম্বনকারীদের প্রতি যদি কোনো অনুকম্প না দেখাতেন তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটাধিকার এভাবে হারিয়ে যেত না। বিশ্বে ভোট এবং গণ অধিকার হারিয়ে ফেলার যে সূচক রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান এত নিচে নেমে গেছে যে, তা জাতির জন্য চরম বেদনার। শুধু কি তাই! নির্বাচনে বিশেষ দলের প্রতি কমিশনের শীর্ষ ব্যক্তিদের যেভাবে পক্ষপাতিত্ব করতে দেখা গেছে, তা তাদের পদ ও নীতিবোধের চরম বরখেলাপ। এমন দায়িত্বহীনতা শুধু সাম্প্রতিককালের ব্যাপার নয়। গত পাঁচ বছরে এমন পদস্থলনের নজির অসংখ্য।

শুধু এতে শেষ নয়, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ ব্যক্তির বিরুদ্ধেও আর্থিক কেলেঙ্কারির নানা অভিযোগ রয়েছে। এই মানের নৈতিকতা নিয়ে সাংবিধানিক পদে বহাল থাকা চরম দুর্ভাগ্যের।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ভূমিকাও কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারা আনুগত্য প্রদর্শন করবেন রাষ্ট্রের প্রতি এবং দায়িত্ব পালনসংক্রান্ত বিধিবিধানের প্রতি। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের আর কোনো দিকে দৃষ্টি দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে অধিকাংশ কর্মকর্তাকে বহু ক্ষেত্রে দল বিশেষের প্রতি আনুকূল্য আর সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে দেখা গেছে। তবে কিছু কর্মকর্তা যে, এর ব্যতিক্রম ছিলেন না এমন নয়। কিন্তু তাদের আইনের প্রতি নিষ্ঠার পরিচয় দিতে গিয়ে জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। অথচ তাদের অন্য সহযোগীরা এ সময় তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেননি। এমনটা প্রকৃতপক্ষে প্রজাতন্ত্রের মৌলিক নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী। এভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি নিঃগৃহীত হতে হয় তবে দেশে সুশাসন তথা আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের ভীতি ও আপসকামী হতে হবে। তার ফলে প্রশাসন তথা রাষ্ট্রের কাছ থেকে মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে। দুর্বৃত্ত ও সমাজের শৃঙ্খলার পরিপন্থীদের দৌরাত্ম্যে সমাজে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হবে। অথচ প্রজাতন্ত্রের মুখ্য দর্শন হচ্ছে জনগণের নিরাপত্তা এবং তাদের জীবনে শান্তি স্বস্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা।

গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়লে মানুষ শুধু ভোটাধিকার হারায় না, সংবিধানে তাদের যেসব অধিকার সন্নিবেশিত রয়েছে সেগুলোর দৈন্য প্রকটভাবে লক্ষ করা যায়। মানুষের নিরাপদ জীবনযাপন করা তার অন্যতম মৌলিক অধিকার। এই অধিকারকে সুরক্ষা দিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বহাল রাখতে হবে। কেননা এ অধিকার কখনো কারো দ্বারা খর্ব হলে তার প্রতিবাদ প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে সামাজিক শক্তির পক্ষে। এই শক্তির উদ্ভব সম্ভব যদি গণতন্ত্র কায়েম থাকে। গণতন্ত্রই মানুষকে এসব সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার অধিকার দিয়েছে। কোনো স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এসব অধিকার থাকে না। গণতান্ত্রিক সমাজেই কেবল পত্রপত্রিকার মাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ থাকে। গণতন্ত্রই দেশের সংবিধানকে রক্ষা করতে পারে। সংবিধান কার্যকর থাকলে দেশে এর আলোকেই আইনের শাসন বহাল থাকে। সুশাসনই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। আইনের শাসন ক্ষমতাধরদের নিগ্রহ থেকে দুর্বলকে সহায়তা দিতে পারে। দেশে বিচারব্যবস্থার সক্ষমতা ও প্রসার তখনই ঘটতে পারে যখন আইন এবং সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত দেয়া ও তা কার্যকর করা হয়। এসবের ঘাটতি তখনই লক্ষ করা যায়, যখন দেশে গণতন্ত্র দুর্বল থাকে এবং তার চর্চা বাধাগ্রস্ত হয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা নিরীহ মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়। এভাবে মানবাধিকার মুমূর্ষু হয়ে পড়লে সমাজ ভেঙে পড়বে। এর কোনো প্রতিকার না হলে দুর্বৃত্ত এত শক্তিধর বেপরোয়া হয়ে উঠবে যে এদের নিবৃত্ত করা যাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য

সকল