২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফকে কখনো ‘না’ বলতে শুনিনি

আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফকে কখনো ‘না’ বলতে শুনিনি - নয়া দিগন্ত

ড. আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফকে তখনো আমি চিনতাম না। ১৯৭৬ সালের কথা। পাপুয়া নিউগিনির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে অধ্যাপনা করছি। তখনো ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকটা আকস্মিকভাবেই একদিন সৌদি আরব থেকে টেলেক্স পেলাম যে আমি যদি আইডিবিতে চাকরি করতে চাই তাহলে যেন ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে হাজির হই। ৯ দেশের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত ভাইভা বোর্ডের সামনে হাজির হই। বোর্ডের চেয়ারম্যান মিসরের তৎকালীন ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার। ৪০ হাজার আবেদনপত্র থেকে বাছাই করে ৩২ জনকে ডাকা হয়। আমি অবশ্য আবেদন করিনি। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত আমার লেখা ইসলামিক ইকনমিক্স : থিওরি অ্যান্ড প্র্যাকটিস বইটি সে সময় ইসলামি অর্থনীতির পাঠ্য হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়ানো হচ্ছিল। আরবি, তুর্কিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদও হয়ে গিয়েছে। এসব বিষয়ও আমার জানা ছিল না। আইডিবির প্রতিষ্ঠাতারা বইটির সূত্র ধরে আমাকে পাপুয়া নিউগিনিতে খুঁজে বের করেন। সবাই জানেন যে এ ধরনের সাক্ষাৎকার আসলে অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা। আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো কিভাবে কাজ করতে চাই। আমি জানতে চাই আইডিবির কোনো রিসার্চ সেন্টার আছে কি না। কারণ বলি, ব্যাংকিং বিষয়ে কাজ করার জন্য আরো অনেক ইকোনমিস্ট আছেন, তারা হয়তো আমার চেয়ে ভালো করতে পারবেন। আসলে আমি বোর্ডের সামনে হাজির হওয়ার আগেই এ বিষয়ে ভেবে রেখেছিলাম। আমাকে বলা হলো যে আইডিবির রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠিত হতে কয়েক দিন লাগবে।

আইডিবিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে তৎকালীন ইসলামী বিশ্বের অনেক দিকপাল চিন্তাবিদের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। আমাকে দেখে তারাও কিছুটা অবাক হয়েছিলেন বলে পরে কথায় কথায় জেনেছি। আমি ছিলাম ক্লিন শেভড, আমেরিকান আদলে স্যুট-টাই পরা ৩৭-৩৮ বছর বয়সী একজন মানুষ। ইসলামিক অর্থনীতির ওপর আমার বই লেখা দেখে তারা ভেবেছিলেন আমি হয়তো গুরুগম্ভীর, বয়স্ক কেউ হবো। আমার সাথে ইসলামিক ব্যাংকের জনক হিসেবে খ্যাত, বিশ্বের প্রথম ইসলামী ব্যাংক ‘মিট ঘামার’-এর প্রতিষ্ঠাতা মিসরের ড. আহমেদ আল নাজ্জার, ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সাবাহতিন জাইমের সাথে পরিচয় হয়। তাদের কাছে আমার বই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার কথা প্রথম জানতে পারি। তারা আমাকে বললেন, ‘তুমি কেন আইডিবিতে চাকরি করবে? তোমার জায়গা ইউনিভার্সিটিতে।’ তারা আমাকে কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টের (ভিসি) কাছে নিয়ে যান। পদমর্যাদার দিক দিয়ে ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট কেবল বাদশাহর কাছে জবাবদিহি করেন। প্রেসিডেন্ট আমাকে বললেন, আপনাকে আমরা অফার দেবো। আমি জিজ্ঞেস করি, কোথায় অফার দেবেন। তিনি জানালেন যে, আন্তর্জাতিক ইসলামিক অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্র করা হচ্ছে। সেখানে আমাকে রিসার্চ প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। আমি বলি, আমি তো আরবি জানি না। আমার ভাষা ইংরেজিও নয় বাংলা। ইংরেজি সেকেন্ডারি ল্যাঙ্গুয়েজ। তাতে লেখালেখি করি।

যাহোক, সাক্ষাৎ শেষে আমি পাপুয়া নিউগিনি ফিরে যাই। গিয়েই একই সাথে আইডিবি ও কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি থেকে দু’টি অফার লেটার পাই। অনেক ভেবেচিন্তে আইডিবির উচ্চ বেতনের স্থায়ী চাকরি বাদ দিয়ে কম বেতনে এবং প্রতি বছর নবায়নযোগ্য চুক্তিভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিকেই বেছে নেই। আমার ভাবনায় তখন আরো অনেক কিছুর সাথে আরবি ভাষা শেখার আকাক্সক্ষাটিও কাজ করছিল। আমার ইংরেজিতে লেখা ইসলামিক অর্থনীতি বিষয়ক বই বিশেষ করে আরব দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। তা ছাড়া ইচ্ছে ছিল আরবি ভাষাতেই আল-কুরআন বুঝব, ইসলামের বিধিবিধানগুলো একেবারে উৎস থেকে জানব। আমি যখন কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেই তখন আগের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ নতুন প্রেসিডেন্ট হন। আমার সৌদি আরব যাওয়ার ভিসা তিনিই অনুমোদন করেন। বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৭৬ সালে। ফলে তখনো বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাস ছিল না। আমাকে কায়রো থেকে ভিসা সংগ্রহ করতে হয়। তখনই ওমর নাসিফ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা হয়। তিনি সৌদি আরবের শূরা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন। সৌদি আরবের অন্যতম সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য পরিবার হলো নাসিফ পরিবার। ব্যবসা সূত্রে তাদের এই সম্পদ ও যশ-খ্যাতি। জেদ্দার পুরনো অংশে ‘বাইত নাসিফ’ যে প্রাসাদোপম অট্টালিকাটি রয়েছে (২০০৯ সালে বাড়িটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়) এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৭২ সালে এবং শেষ হয় ১৮৮১ সালে, জেদ্দার গভর্নর ওমর নাসিফ ইফেন্দির সময়। ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরে জেদ্দা অবরোধকালে বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ নগরীতে প্রবেশ করেন নাসিফ পরিবারের বাড়িতে অবস্থান গ্রহণ করেন। তখন তার থাকার মতো আর কোনো বাড়ি এই নগরীতে ছিল না। এরপর বাদশাহ অনেক দিন এই বাড়িকে রাজকীয় বাসভবন হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন। সেখানে বিদেশ থেকে অতিথিরা তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসত। আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফের মায়ের পরিবার উর্দুভাষী। আমি নাসির পরিবারে উর্দুতে কথাবার্তা বলতে শুনেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন ইসলামিক ইকোনমিকস’-এ নিয়োগ দেয়া হয়। তখনো সেন্টারটি তৈরি হয়নি। সবেমাত্র বাদশাহর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বলা হলো, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ওমর নাসিফের পরিবারের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে, আপাতত সেখানেই সেন্টারের কাজ শুরু হবে। এরপরেই সরাসরি ওমর নাসিফের সাথে পরিচিত হই। এর মধ্যে একটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়। সেখানে যাওয়ার আগে পাপুয়া নিউগিনিতে আমার সাত বছর বয়সী মেয়ে ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলে অস্ট্রেলিয়ান কারিকুলামে পড়াশোনা করত। সৌদি আরবে গিয়ে দেখি আমেরিকান স্কুলে পড়ানো ছাড়া উপায় নেই। আমার মতো আরো বিদেশী মুসলমানদের সন্তানরা আমেরিকান স্কুলে পড়ছে। এই সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আমি ও আরো কয়েকজন কলিগ মিলে একদিন ওমর নাসিফের সাথে দেখা দেখা করি। তাকে বলি, আমরা আপনাদের সন্তানদের পড়াশোনা করাতে এসেছি। এখন দেখছি আমাদের সন্তানদেরই লেখাপড়া হচ্ছে না। আমাদের কথা শুনে তিনি জেদ্দায় একটি আন্তর্জাতিক স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এবং ঘোষণা দেন যে এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবাসী শিক্ষকদের সন্তানরা এখানে বিনা খরচে পড়বে।

ওই সাক্ষাতের পর থেকে আমাদের মধ্যে হৃদ্যতা ও অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে। ব্যক্তি ওমর নাসিফকে আমি চিনতে শুরু করি। ইতঃপূর্বে আমি ওআইসি মহাসচিব হামিদ আলগাবিদের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে এই পত্রিকার কলামে লিখেছি। ওমর নাসিফের সাথে তারও ঘনিষ্ঠতা ছিল। জেদ্দায় আমাদের তিন জনের বাসা ছিল কাছাকাছি। বিশেষ করে শুক্রবার আমাদের ঘরোয়া বৈঠকগুলো হতো। আমি ফোন করলে ওমর নাসিফ বলতেন, চলে এসো। আমি গেলে তিনি আলগাবিদকেও আসতে বলতেন। আমরা অন্তরঙ্গ পরিবেশে নানা বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা পর্যালোচনা করতাম। ওই আলোচনায় আরেকজন প্রায়ই সঙ্গী হতেন। তিনি ছিলেন সৌদি আরবের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী শেখ আহমেদ সালেহ জুমজুম। তাদের নিয়ে ওমর নাসিফের একটি টিম ছিল। পরবর্তীকালে এই তিনজনই আমার প্যাট্রনে পরিণত হন।

মানুষ কতটা মহৎ ও উদার হতে পারে তা আমি ওমর নাসিফের সান্নিধ্য পেয়ে জেনেছি। তাদের সাথে মিশে আমার মধ্যে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে পারার মতো ক্ষমতা তৈরি হয়। ওমর নাসিফের মুখে আমি কখনো ‘না’ শব্দটি শুনিনি। কথা দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করার গুণ ছিল তার। সব সময় তিনি ‘পজেটিভ’। দুই দশকের বেশি সময় আমি তার সান্নিধ্য পেয়েছি। মুসলিম বিশ্বতো বটেই বিশ্বে এমন কোনো দেশ নেই যে দেশের মানুষ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফকে চেনে না। কিং আব্দুল ইউনিভার্সিটিতে থাকতে তিনি সেখানেই বসতেন। রাবেতার মহাসচিব হওয়ার পর তাকে মুসলিম দেশগুলোতে তাকে ঘুরে বেরাতে হতো। এমন কোনো মুসলিম দেশ নেই যেখানে তিনি যাননি।

ওআইসি নিয়ে কিছুটা হতাশ ছিলেন ওমর নাসিফ। মুসলিম বিশ্বের উন্নয়নে সংস্থাটি ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না বলে তার অনুযোগ ছিল। অনেক মুসলিম দেশ থেকে অভিযোগ আসত যে তারা ঠিকমতো ওআইসির সহায়তা পাচ্ছে না। ওআইসি কিছুটা রাজনীতির ঘেরাটোপে পড়ে গেছে বলে তিনি মনে করতেন। তখন তৃতীয় বিশ্বে মুসলিম দেশের সংখ্যাই বেশি ছিল এবং এরা গরিব। তিনি চাচ্ছিলেন, ওআইসির বিকল্প এমন একটি সংস্থা দাঁড় করাতে। তিনি রাবেতার মাধ্যমে আফ্রিকার অনেক দেশে ইসলামী অর্থব্যবস্থা প্রসারের উদ্যোগ নেন। যদিও সবগুলোতে আমাকে যুক্ত করেননি।

আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আইডিবিতে চলে এসেছি একদিন তিনি আমাকে তার অফিসে ডেকে পাঠালেন। তিনি বললেন, মান্নান, তোমাকে ইন্দোনেশিয়া যেতে হবে। জানতে চাইলাম কেন। বললেন, ওখানে মুহাম্মাদিয়া নামে একটি অরগানাইজেশন আছে। ওদের অ্যাডভাইস করো কিভাবে ইসলামী ব্যাংক করতে পারে। ওনার হাতে বিমানের টিকিট করাই ছিল। আমার হাতে দিয়ে বললেন- যাও।

আইডিবিতে থাকাকালে আমি বাংলাদেশে একটি নতুন ধারার ‘থ্রি-সেক্টর মডেল’ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথা ওমর নাসিফকে জানাই (যা বর্তমানে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক)। তিনি আমার মডেলটি দেখতে চাইলেন। এ নিয়ে আমার মেয়ে রেশমি একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছিল। এটি দেখে তিনি এতটাই চমৎকৃত হন যে বললেন, আমি তো এমন কিছুই চাইছিলাম। তিনি ব্যাংকটি স্থাপনের জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এরশাদকে চিঠি লিখেন। তিনি খালেদা জিয়ার সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন। রাবেতার পর তিনি সৌদি আরবের শূরা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হলেন, পদমর্যাদায় আরো উপরে উঠলেন। এই ব্যাংকের ধারণাটি কিভাবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে প্রসারিত করা যায় তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে আমার। তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে এই ধারার ব্যাংক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পেছনে আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ, হামিদ আল গাবিদ, আহমেদ সালেহ জুমজুম ও মোহাম্মদ আল নাজ্জারের মতো ব্যক্তিত্বদের ব্যাপক অবদান রয়েছে। কর্তৃপক্ষীয় সহযোগিতার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতাও পেয়েছি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য।

আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমি নির্দিধায় বলব যে এই ব্যাংক ওনারা করেছেন। আরেকটি লোক ছিলেন, যাকে বলা হয় ইসলামী ব্যাংকের জনক, মিসরের মোহাম্মদ আল নাজ্জার। ওমর নাসিফ বাংলাদেশে এসে এই ব্যাংক নিয়ে এরশাদের সাথে কথা বলেছেন। এরশাদ সরকার মনে করত দেশের বাজারে আর কোনো নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এসব ব্যক্তিদের সুপারিশের কারণে তিনি আমাকে ব্যাংকটি সম্পর্কে বঙ্গভবনে একটি প্রেজেন্টেশন দিতে বললেন। আমি প্রেজেন্টেশন দিলে বিশ্বে এই প্রথম কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবক খাত নিয়ে কাজ করার ধারণাটি তাকে আগ্রহী করে এবং তিনি ব্যাংকটির অনুমতি দিতে রাজি হন। নাসিফ ও অন্যদের প্রত্যেকে বাংলাদেশে অনেকবার এসেছেন। তারা আমাকে শুধু লিপ সার্ভিসই দেননি। একটি ইনস্টিটিউশন গড়ার জন্য ব্যক্তিগত তহবিল দিয়ে সাহায্য করেছেন। ব্যাংক করতে গিয়ে আমি যখন অর্থসঙ্কটে পরি তখন তারা আমাকে নগদ অর্থ নিয়ে যাওয়ার জন্য সাধেন। আমি সেটা করিনি। আমি চেকের মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলে তাদের কাছ থেকে তহবিল এনেছি যেন স্বচ্ছতা বজায় থাকে। তারা ব্যাংকের শেয়ার কিনেছেন। এই শেয়ার পরিচালনার জন্য আমাকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দিয়েছেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে তারা ঢাকা পর্যন্ত আসেন। নোটারির সামনে এই আমমোক্তার নামায় সই করেন। ওনারা চাইলে দেশের বাইরে বসেই এ কাজটি করতে পারতেন। কিন্তু তারা সেটা চাননি এবং কোম্পানি সেক্রেটারির উপস্থিতিতে কাজটি করেন। তারা কতটা নিবেদিত প্রাণ ছিলেন এ থেকে বুঝা যায়।

আমার আত্মতৃপ্তি যে আমি তাদের এতটুকু বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পেরেছিলাম। আমার ওপর তাদের আস্থাকেও আমি রক্ষা করতে পেরেছি। তাদের শেয়ারের আমানত শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। তারা বহুবার ঢাকা এসেছেন। ব্যাংকের বোর্ডরুমে বসে আমার সাথে আলোচনা করেছেন। সর্ব শেষ দুই বছর আগে হামিদ আল গাবিদের শেয়ার বিক্রি করে মুনাফাসহ টাকা পাঠিয়ে দেই।

ওমর নাসিফের হাসিমাখা মুখ এতটাই নিষ্পাপ ছিল যে তাকে দেখে যে কারো মনে হবে এ লোকটির সবকিছুই ভালো। তিনি একজন সত্যিকারের মুসলমানের উদাহরণ। তারা সবাই বিশ্বমুসলিম উম্মাহর সম্পদ। মুসলিম উম্মাহ থেকে যে কেউ তাদের সামনে দাঁড়ালে তারা প্রাণ উজার করে সাহায্য করতেন। তারা যদি দেখতেন কেউ আন্তরিকভাবে কোন কাজ করছে, তার মধ্যে সততা আছে, নিবেদিত প্রাণ, তাহলে তাকে প্রাণ উজার করে ভালোবাসতেন। এদের সান্নিধ্য আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। তাদেরকে আমার মহামানব বলেই মনে হয়েছে। তাদের অবদান চিরকাল ইসলামের ইতিহাসে লেখা থাকবে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড; সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ
ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দা
hmct2004@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement