২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমেরিকান গণতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট

আমেরিকান গণতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট - ছবি : সংগৃহীত

নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নানা ক্ষেত্রে ইতিহাস সৃষ্টি করে বিদায় নিচ্ছেন। তাকে অপসারণের একটি প্রক্রিয়াও চলছে, যেটি রিপাবলিকানদের সেভাবে সমর্থন না পাওয়ার কারণে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে কার্যত সফল হয়নি। তবে ভবিষ্যতে ট্রাম্পের আগমন বন্ধ করার ব্যাপারে একটি প্রতীকী অভিশংসনে সম্ভবত দ্বিমত করবেন না। ডেমোক্র্যাট নীতিপ্রণেতারাও সম্ভবত বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি জোরাজুরি করতে চাননি এ কারণে যে, কোনো রাজনৈতিক বিভেদকে ফাটলে পরিণত করা হলে তা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে।

তবে এর মধ্যে নানা ঘটনা আমেরিকার গণতন্ত্র নিয়ে অনেক প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। এই প্রথমবারের মতো আমেরিকান কোনো বিজিত প্রেসিডেন্ট তৃতীয় বিশ্বের কোনো কোনো দেশের মতো, নির্বাচনের ফল মেনে নিতে শেষ পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানালেন। একই সাথে সক্রিয়ভাবে এই ফল বাতিল করতে সহিংস পদক্ষেপও নিয়েছেন। যার কারণে প্রাণক্ষয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে খোদ আমেরিকান অহঙ্কার হিসাবে পরিচিত, ওয়াশিংটনের ‘ক্যাপিটল হিলে’। আমেরিকা রাষ্ট্রের স্থপতিরা প্রেসিডেন্টের দফতর তথা হোয়াইট হাউজকে সাদামাটা ভবন হিসেবে রেখে অলঙ্কৃত করেছিলেন ক্যাপিটল হিলকে, যেখানে কংগ্রেসম্যানরা অধিবেশনে মিলিত হন। হোয়াইট হাউজের এক বিদায়ী কর্ণধারের ইন্ধনে তার উগ্র সমর্থকদের সেই ক্যাপিটল হিলে হামলায় আমেরিকার গণতন্ত্রের অহঙ্কারে কালিমা লেপন করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

এসব কিছু যে অঘটনের মতো ছিল তা নয়। সেটি স্পষ্ট বোঝা যায়, চার দিকে নিন্দার রব পড়ার পরও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক এ ঘটনার নায়কদের ‘দেশপ্রেমিক’ আখ্যা দেয়ার মধ্য দিয়ে। এমনকি ট্রাম্পের সমর্থকরা এরপর আরো ঘোষণা করেছেন যে, ২০ জানুয়ারি বাইডেনের ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন ‘সশস্ত্র বিক্ষোভ’ করা হবে সারা দেশে।

আমেরিকান গণতন্ত্র চর্চায় ট্রাম্পের এই কর্মকাণ্ডের প্রভাব সম্পর্কে প্রচুর মন্তব্য করা হয়েছে। আমেরিকান এক বিশ্লেষকের মতে, ‘আমরা কেবল-ই আশা করতে পারি যে, কংগ্রেসের আক্রমণটি শেষ গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত লড়াই ছিল, নতুনের কোনো সূচনা নয়।’ এ প্রসঙ্গে তিনি উনিশ শতকের জার্মান চ্যান্সেলর অটো ভন বিসমার্কের মন্তব্য উল্লেখ করে বলেন, তিনি প্রায়ই বলতেন যে, ‘বোকা, মাতাল এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্রষ্টার বিশেষ প্রভিশন রয়েছে।’ ঠিকই যদি তিনি (ঈশ্বর) থাকেন তবে আমাদের বিশ্বাস করার যুক্তি রয়েছে যে আমেরিকা শেষ অবধি তার বর্তমান সঙ্কট অতিক্রম করবে। কিন্তু দেখার বিষয় হলো, এর মধ্যে কী হয়।

বিশ্ব আমেরিকাকে সম্মান ও সমীহ করার মতো অবস্থানে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষ পর্যন্ত তিনি এর কোনোটিই অর্জন করেননি। ক্যাপিটল হিলে তার দ্বারা প্ররোচিত উগ্র জনতার আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে আমেরিকা এবং এর গণতন্ত্রকে কার্যত একটি হাসির পাত্র বানিয়েছেন ট্রাম্প। এ ঘটনার জন্য কেউ রাশিয়ান, চীনা বা ইরানি নেতাদের এবার দোষ দিতে পারেননি। যদিও আমেরিকান বোমারু বিমানগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের শেষ দিনগুলোতেও মধ্যপ্রাচ্যের ইরান সীমানার অদূরে উড়াল দিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

বস্তুত, এসব কিছুর মধ্য দিয়ে আমেরিকান রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের গভীর ফাটলের বিষয়টি বড় হয়ে সামনে চলে এলো। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সূচনাটি খুব সুখকর ছিল এমন নয়। অনেকের ধারণা ছিল, জার্মানি থেকে আসা অভিবাসীর আমেরিকান সন্তান, ট্রাম্প তার চার বছর মেয়াদ-ই হয়তো শেষ করতে পারবেন না। অনেকে অবশ্য রিপাবলিকান পার্টির রাজনীতিতে একেবারে নবাগত এই ব্যবসায়ী শেষ পর্যন্ত এত বড় এক ঐতিহ্যবাহী দলের মনোনয়ন পাবেন, সেটিও ভাবতে পারেননি। অনেকে আবার মনোনয়ন পাওয়ার পর ধরে নিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনের মতো উল্লেখযোগ্য প্রার্থীর কাছে তিনি হেরে বিদায় নেবেন।

বাস্তবে যা ঘটেছে তা হলো, ট্রাম্প বিপুল ব্যবধানে প্রাইমারিতে জয়ী হয়ে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ‘আমেরিকান (শ্বেতাঙ্গ) ফার্স্ট’ স্লোগান দিয়ে উগ্রবাদী কট্টর ডানপন্থী এবং ইভানজেলিক্যাল চার্চের অনুসারীদের ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনে জয়লাভও করেছেন। প্রভাবশালী রিপাবলিকান নেতাদের এড়িয়ে ট্রাম্প তার মতো করেই রাষ্ট্র চালিয়েছেন গত ৪ বছর। কোনো কোনো দফতরে বছরে ৩-৪ বার মন্ত্রী বদল করেছেন। রিপাবলিকান নীতিপ্রণেতা বলয়ের চেয়ে ট্রাম্পের পরিবার রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিনির্ধারণ বা বাস্তবায়নে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। এর পরও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ডেমোক্র্যাটদের অভিশংসন প্রস্তাব রিপাবলিকানরা সম্মিলিতভাবে ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আর অনায়াশে দ্বিতীয়বার রিপাবলিকান মনোনয়ন লাভ করে করোনাভাইরাসে সার্বিকভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের মধ্যে তার বিরামহীন প্রচারণাও চালিয়ে গেছেন। কট্টর আমেরিকান জাতীয়তাবাদী বলয় ও ইভানজেলিক্যাল রক্ষণশীলরা যথারীতি পাশে দাঁড়ান ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

আর নির্বাচনের ফলাফল। সেটিও এক বিবেচনায় বিস্ময়কর। ট্রাম্প এবার যে পরিমাণ পপুলার ভোট পেয়েছেন অতীতের কোনো বিজিত প্রেসিডেন্ট এত ভোট পাননি। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে যারা ভোট দিয়েছেন তাদের ভোট হিসাব করা হলে ট্রাম্প আবারো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতেন। এ কারণে তিনি বারবার অগ্রিম ভোট ও ডাকযোগে দেয়া ভোট হিসাবে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে এসেছেন এবং এ নিয়ে মামলা করে বারবার হেরে গিয়ে অবশেষে সমর্থকদের একধরনের ‘অভ্যুত্থান’ ঘটানোর জন্য উসকে দিয়েছেন।

এ কথা ঠিক যে, আমেরিকান গণতন্ত্রের গভীর প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ট্রাম্পের অস্বাভাবিক সব পদক্ষেপকে সফল হতে দেয়নি। তবে আমেরিকা রাষ্ট্রের দুর্বল সমাজ ভিত্তিসম্পন্ন সাম্প্রতিক সময়ের অভিবাসী ভোটারদের, যারা বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতে গিয়ে ভোট দেয়ার অবকাশ পেতেন না, অগ্রিম ও ডাক ভোটের সুযোগ দেয়ায় ব্যাপকভাবে ভোট দিতে পেরেছেন। তারা গতবার ভোটকেন্দ্রে কম যাওয়ার কারণে হিলারি ক্লিনটন হেরে গিয়েছিলেন। বাইডেনের প্রচার কৌশলবিদরা এবার এর একটি বিহিত করার ব্যবস্থা আগে থেকে করেছিলেন।

এর ফলে প্রত্যক্ষ ভোটকেন্দ্রের ফলাফলে ট্রাম্প যখন ২৮৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে জয়ী হওয়ার আভাস দেয়া হচ্ছিল, তখনো জো বাইডেন জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় মনোবলেই ছিলেন। তিনি বলছিলেন, ভোটের ফলাফলের সব কিছু ঠিকঠাকভাবেই অগ্রসর হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বাইডেন জয়ী হয়েছেন। লড়াইয়ের রাজ্যগুলোতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফা ভোট গণনার পরও বাইডেনের জয়ের ব্যবধান বড় হয়েছে। প্রতিনিধি সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর বেশ খানিকটা পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত জর্জিয়ার সিনেটের দুই আসনে রেকর্ড সৃষ্টিকারী জয়ের পর সিনেটের নিয়ন্ত্রণও ডেমোক্র্যাটদের হাতে চলে গেছে। এরপর কী হবে?

আমেরিকার চার পাশের উপকূলীয় ও অভিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যগুলো ছাড়া মধ্য আমেরিকায় রিপাবলিকানদের জয়-জয়কারে আগের কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। তদুপরি অনেক রাজ্যে রিপাবলিকানদের জয়ের ব্যবধান বেড়েছে। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী, ইভানজেলিক্যাল ধর্ম প্রচারক গোষ্ঠী, কট্টর জাতীয়তাবাদীরা এবং অভিবাসীদের জন্য দ্বাররুদ্ধ করার পক্ষপাতী কট্টরপন্থী আর বৃহৎ পুঁজির মালিক ধনপতিদের বড় অংশ এবারো ট্রাম্পকে জেতানোর জন্য একপায়ে খাড়া ছিলেন। ৪ শতাংশ বৈশ্বিক জনসংখ্যার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের হযবরল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কারণে বিস্তার করোনাভাইরাস মৃত্যুর ১৯ শতাংশ ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এটি ট্রাম্প সমর্থক ভোটারদের সংশয়ে ফেলতে পারেনি। এর ফলে ৪৮ শতাংশের বেশি প্রদত্ত ভোট ট্রাম্পের প্রতীক হাতির পক্ষে পড়েছে।

আমেরিকান নির্বাচনে আধাআধি ভোট পেয়ে জিত এবং হার নতুন কোনো ঘটনা নয়। নতুন বিষয়টি হলো, অর্ধেকের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ীদের মেনে না নিয়ে সশস্ত্র বিক্ষোভ বা অভ্যুত্থানের হুঙ্কার দেয়া। এই হুঙ্কারদাতারা ক্যাপিটল হিলে জোর করে ঢুকে পড়ে স্পিকারের আসনে লম্বা হয়ে শুয়ে পোজ দিয়ে অন্য কোনো বার্তাই কি দিতে চেয়েছেন? ডেমোক্র্যাট বিরোধী রাজ্যগুলো নিয়ে আলাদা আমেরিকা বানানোর যে আওয়াজ উঠেছে তা যতই ক্ষীণ শোনা যাক না কেন, এক কথায় ভয়ঙ্কর তাৎপর্যপূর্ণ এটি।

এ কারণেই হয়তো বলা হচ্ছে, আমেরিকানদের শিগগিরই একজন নতুন প্রেসিডেন্ট হবেন, তবে তাদের নতুন দেশ হবে না। প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জো বাইডেন যেভাবে এগিয়ে যেতে আগ্রহী হন না কেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চার বছরের পর বিশ্বজুড়ে আমেরিকা নিয়ে নতুন করেই লেখা হবে, মূল্যায়ন চলবে নতুনভাবে। এটি নিশ্চিতভাবেই নতুন প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির দু’টি মূল অগ্রাধিকারকে প্রভাবিত করবে; যার একটি হলো উদারনীতিবাদী গণতন্ত্রের দেশগুলোর কার্যকর জোট গঠনের আশা এবং চীনের উত্থান ও তার কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার বিপরীতে একটি সাধারণ আমেরিকান-ইউরোপীয় প্রচেষ্টা ও জোট বানানো।

জো বাইডেন তার মেয়াদের প্রথম দিকে ‘গণতন্ত্রের শীর্ষ সম্মেলন’ ডাকার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তার নিজস্ব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যখন নড়বড়ে অবস্থায়, তখন নতুন প্রশাসন কি আমেরিকাকে বৈধভাবে মুক্ত বিশ্বের নেতা হিসেবে তার ভূমিকায় ফিরিয়ে আনতে পারবে? তুরস্কের রজব তাইয়্যেব এরদোগান এবং ব্রাজিলের জাইর বলসোনারোর মতো রাজনৈতিক নেতাদের এই শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ করা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হলে তা কি তাদের গণতান্ত্রিক বৈধতা হিসাবে গণ্য হবে? আর যদি ওয়াশিংটন এই জাতীয় সরকারগুলোকে গণতান্ত্রিক ক্লাব থেকে দূরে রাখে, তবে রাশিয়া এবং চীনের মতো উদীয়মান শক্তির দেশগুলোকে উপহার হিসাবে কি দেয়া হবে না যারা তাদের নিজস্ব একটি বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

আমেরিকান নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ পরে এবং বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণ নিশ্চিত হওয়ার দিন ইউরোপীয় কাউন্সিলের ফরেন রিলেশনস কমিশন এক জরিপ প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায় যে, বেশির ভাগ ইউরোপীয় সন্দেহ করছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট আমেরিকাকে বিশ্ব নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনতে পারবেন কি না। সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দেশের বেশির ভাগ নাগরিক নিশ্চিত যে, আগামী ১০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে শীর্ষ বৈশ্বিক শক্তি হবে চীন। আরো তাৎপর্যপূর্ণ হলো, বেশির ভাগ জার্মান বিশ্বাস করেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচিত করার পরে আমেরিকানদের আর সম্ভাব্য মিত্র হিসেবে আস্থা রাখা যায় না। বলা হচ্ছে, কংগ্রেসে ট্রাম্পপন্থী দাঙ্গাকারীদের আক্রমণ ছিল আসলে আমেরিকান জোটের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর হামলা।

একসময় বিল ক্লিনটন ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘আমেরিকানদের মূল কাজটি হলো আমরা এমন একটি পৃথিবী তৈরি করতে চাই, যখন আমরা বিশ্বের আর একমাত্র পরাশক্তি থাকব না তখনো এটি আমেরিকানদের মর্যাদার সাথে বসবাস নিশ্চিত করবে।’

নিউ ইয়র্ক টাইমসে কয়েক দিন আগে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে ইভান ক্রাস্টেভ লিখেছেন, ‘জো বাইডেন হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করার সাথে সাথে দেখবেন, যুক্তরাষ্ট্র আর একমাত্র কার্যকর পরাশক্তি নেই। দুর্ভাগ্যক্রমে, যে পৃথিবীতে তিনি শাসন করবেন, স্বৈরাচারী শক্তিগুলোর উত্থান এবং উগ্র জাতীয়তাবাদ ও বৈষম্যের বিস্তার সেখানে এমন হবে, যেখানে বসবাস করা আমেরিকান বা ইউরোপীয়দের জন্য কাক্সিক্ষত হওয়ার মতো নয়’।

ক্রাস্টেভ আরো মন্তব্য করেছেন, ‘গত শতাব্দীকাল ধরে আমেরিকার শক্তি গণতন্ত্রের শক্তিকেও প্রতিনিধিত্ব করেছে। ক্যাপিটলের ঝড়ের পরের দিনগুলোতে ইউরোপের গণতান্ত্রিক নেতারা আমেরিকান গণতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতা গ্রহণ করতে আর পারবেন না অথবা আমেরিকার বিশ্বব্যাপী স্থায়ী প্রভাবের শক্তির ওপর তারা আর ভরসা করতে পারবেন না।’

আমেরিকানদের মধ্যে বিশ্বাস চেতনা ও রাজনীতির এমন এক দেয়াল এখন তৈরি হচ্ছে যা ডিঙ্গানো কতটা বাইডেনের পক্ষে সম্ভব হবে বলা কঠিন। বাইডেন প্রশাসনের সময় নিম্নবিত্ত আমেরিকান ও সাম্প্রতিক অভিবাসীরা বেঁচে থাকার জন্য আরো কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন। প্রক্রিয়াধীন অভিবাসীদের অনেকে নাগরিকত্বও পেতে পারেন। এর মধ্যে অভিবাসীদের নাগরিকত্ব লাভের জন্য ৮ বছরের একটি প্রক্রিয়ার কথা বাইডেন ঘোষণা করেছেন। ‘ওবামাকেয়ার’ পুনর্বহাল হলে গরিব আমেরিকানরা বাড়তি স্বাস্থ্যসুবিধা পাবেন, চীনের সাথে বোঝাপড়ার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হলে গরিবদের জন্য কম দামে পণ্য প্রাপ্তিও নিশ্চিত হবে।

তবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে উগ্র শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী চেতনা যেভাবে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে তাতে ট্রাম্পের মতো মানুষের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়তেও পারে। এই ট্রাম্প গেলেও আরেক ট্রাম্প হয়তো আসতে পারে। মনে রাখতে হবে, আমেরিকান জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই এখন শ্বেতাঙ্গ। তাদের মধ্যে উগ্র চেতনার বিস্তার ঘটা মানে বিভক্তি ছাড়াই আমেরিকার কর্তৃত্ব তাদের হাতে চলে যাওয়া। সেই আশঙ্কা অনেক বেশি তীব্র হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।

mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement