২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রবীন্দ্রনাথ কি হিন্দুত্ববাদী ছিলেন?

রবীন্দ্রনাথ কি হিন্দুত্ববাদী ছিলেন? -

‘বিশ্বভারতী’ হচ্ছে ১৯২১ সালের ২৩ ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তি নিকেতনে অবস্থিত একটি কেন্দ্রীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্র। এখন এটি সরকারি মালিকানাধীন এবং চলে সরকারের অর্থায়নে। সদ্যবিগত ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ পূরণ করল। এর প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি এর নাম বিশ্বভারতী রাখেন এই চিন্তা থেকে যে, এটি হবে ভারতের সাথে গোটা বিশ্বের এক ‘কমিউনিয়ন’ তথা অভিন্ন লোকঐতিহ্যের আশ্রয়স্থল। ১৯৪৭-এ ভারত স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি ছিল একটি কলেজ। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫১ সালে পার্লামেন্টে আইন পাস করার মধ্য দিয়ে এটি মর্যাদা লাভ করে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের।

শান্তিনিকেতন আজো ভারতের অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এক বিশ্ববিদ্যালয়। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুরের এই বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ধারণ করে রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের সেই প্রতীকী গ্রামীণ পরিবেশ। আজো সেখানে ক্লাস নেয়া হয় খোলা আকাশের নিচে আমগাছের ছায়াতলে। দূষণকে দূরে রাখতে সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ব্যবহার করে থাকেন সাইকেল। কাদামাটির তৈরি দেয়াল আর খড়ের ছাউনির পুরনো ভবনগুলো আজো সেখানে যথারীতি দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো মূল ক্যাম্পাসে অক্ষত অবস্থায়ই রেখে দেয়া হয়েছে। কিছু রেখে দেয়া হয়েছে ঐতিহাসিক মূল্য সংরক্ষণের খাতিরে, আর কিছু ভবন আজো ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। অনেকের কাছে, বিশেষ করে বাঙালিদের জন্য এ যেন এক ‘পবিত্র স্থান’। প্রায় সব ধরনের স্থানীয় উৎসব- যেমন পৌষমেলা, বসন্ত উৎসব ইত্যাদি মহাসমারোহে এখানে পালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে। রবীন্দ্রনাথ একে বিবেচনা করতেন স্বপ্নের এক শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে। তিনি এর মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন গান্ধী ও নেহরুর জীবনাদর্শ। এরা দু’জনেই বিশ্বভারতীকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেয়ার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

বিশ্বভারতীর এই শতবর্ষে সুশীলসমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষের মধ্যে প্রচুর মতানৈক্য আর টানাপড়েন প্রত্যক্ষ করা গেছে। তা আজো অব্যাহত আছে। সামনে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সুশীল সমাজের মধ্যে সেই টানাপড়েন আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের ভাষণে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি তার ভাষণে বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে একজন যথাযথ ‘হিন্দুত্ববাদী’ বানানোর প্রয়াস চালিয়েছেন। অথচ রবীন্দ্রনাথকে সে দেশের মানুষ জানে একজন সর্বজনীন আধ্যাত্মবাদী তথা ইউনিভার্সেল স্পিরিচ্যুয়ালিস্ট হিসেবেই। নরেদ্র মোদি তার এই ভাষণ দিলেন বড়দিনের ঠিক এক দিন আগে।

এই তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাটির সূচনা ২০২০ সালের শুরুতেই। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজেপির একজন রাজ্যসভার সদস্যকে আমন্ত্রণ জানান নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিষয়ে বক্তব্য রাখার জন্য। বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানায়। তারা বলে, এ ধরনের বক্তব্য বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব বাড়িয়ে তুলবে। অতএব, এই কর্মসূচি বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া রবীন্দ্রনাথের ধারণার বিপরীতে গিয়ে কংক্রিটের দেয়াল তৈরি করা হচ্ছে বিশ্বভারতীর পাশের আবাসিক কলোনি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচ্ছিন্ন করতে। আর এখানেই শেষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাতিল করে দিয়েছে এবারের বসন্ত উৎসব ও পৌষমেলা। তা ছাড়া ভিসি নরেন্দ্র মোদি রবীন্দ্রনাথকে ‘আউটসাইডার’ বলে অভিহিত করেছেন। পৌষমেলা মাঠের চার পাশে দেয়াল নির্মাণের ব্যাপারেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এমনি প্রেক্ষাপটে নরেন্দ্র মোদি পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে পৌষমেলা সম্পর্কে অনেকটা আপসমূলক বক্তব্য দেন এবং রবীন্দ্রনাথকে ‘গুরুদেব’ অভিধায় অভিহিত করেন। কিন্তু সেই সাথে তিনি ফিরে যান তার নিজস্ব পথে। তিনি রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনাকে চিহ্নিত করেন ভক্তি আন্দোলনের ধারাবাহিকতা হিসেবে। ভক্তি আন্দোলন হচ্ছে দেবী কালীভক্ত রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রভাবিত আন্দোলন। মোদি উল্লেখ করেছেন, ওই সময়ে বিশ্বভারতীর মতো আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি এর মাধ্যমে নির্দেশ করতে চেয়েছেন বিশ্বভারতী অনন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, এটি ছিল মূলত হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রবণতারই অংশ। তিনি বলতে চান, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে গুজরাটের সাথে। এসব কিছুই করা হয়েছিল নরেন্দ্র মোদির এক অপউদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে। তিনি জনগণের মাঝে এ ধারণাই দিতে চেয়েছেন : রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এক হিন্দু জাতীয়তাবাদী।

আসলে বিজেপি ভারতীয়দের বিশ্বাস করাতে চাইছে : রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন হিন্দু জাতীয়তাবাদী অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদী। যত দূর জানা যায়- প্রথমত, রবীন্দ্রনাথ একনিষ্ঠভাবে একজন সনাতনী হিন্দু ছিলেন না। ছিলেন সংস্কারপন্থী ব্রাহ্মসমাজের একজন। তিনি মূর্তিপূজা ও প্রচলিত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি জাতীয়তাবাদ বা দেশপ্রেমের চেয়ে আন্তর্জাতিকতাবাদ ও মানবতাবাদকে অগ্রাধিকার দিতেন। রবীন্দ্রনাথ ১৯০৮ সালে তার বন্ধু এ এম বোসকে এক চিঠিতে লিখেন : ‘দেশপ্রেম চূড়ান্ত আধ্যাত্মিক আশ্রয় হতে পারে না। আমার আশ্রয় মানবতায়। আমি হীরের দামে কাচ কিনি না এবং যত দিন বেঁচে থাকি, কখনোই দেশপ্রেমকে মানবতার ওপর বিজয়ী হতে দেবো না।’

দীননাথ বাত্রার নেতৃত্বাধীন আরএসএস-এর অধিভুক্ত ‘শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস’ রবীন্দ্রনাথের এই চিন্তাভাবনার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে। বিশেষ করে আপত্তি তুলেছে দেশপ্রেম এবং ধর্ম ও মানবতার মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির ব্যাপারে। ‘শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস’ দাবি তুলেছে, এ কথাগুলো এনসিইআরটি (ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং) স্কুলের পাঠ্যবই থেকে বাদ দিতে হবে।

বিশ্বভারতীর তিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের কথা আমরা অনেকেই জানি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণে বিশ্বভারতীর এই তিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করলেই ভালো করতেন। তা না করে বরং তিনি প্রবল পরাক্রমে ব্যর্থ প্রয়াস চালালেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার শিক্ষা সম্পর্কিত ধারণাকে বিজেপির প্রেক্ষাপটে কঠোর কাঠামো ও চিন্তাধারার মধ্যে বন্দী করতে। আমাদের জানা বিশ্বভারতীর দিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- প্রথমত, রবিঠাকুরের শিক্ষাসংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও এর অনন্যতা লক্ষ করা যাবে তার ‘আশ্রম স্কুল’ থেকে। আর রবীন্দ্রনাথ তার এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার সূচনা করেছিলেন ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে। তিনি অবজ্ঞার চোখে দেখতেন প্রচলিত চার দেয়ালে ঘেরা স্কুল ও কঠোর পাঠক্রমকে। তিনি প্রচলিত বিদ্যালয়কে বিবেচনা করতেন ‘কারাগার’ হিসেবে। সে কারণেই শান্তিনিকেতনের ক্লাসগুলো নেয়া হয় খোলা আকাশের নিচে গাছের ছায়ায়। সেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা পরস্পরের সহজ সাহচর্য পায়। প্রশিক্ষণ চলে স্ব-উদ্যোগে স্ব-নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ পাঠক্রমের বাইরে সহপাঠক্রম বিষয়ক কার্যক্রমের (সমাজবিদ্যা, সাহিত্য, শিল্পকর্ম ও খেলাধুলা) ওপর জোর দেয়া হয়। রবীন্দ্রনাথের ধারণা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে রাখতে হবে। কারণ, এর ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানের পরিধি সংজ্ঞায়ন করতে পারে। মুখস্থবিদ্যা চর্চার মাধ্যমে নম্বর বাড়ানোর বদলে শিক্ষার্থীদের চিন্তার সক্ষমতার ওপর জোর দিতেন রবিঠাকুর। দ্বিতীয়ত, বিশ্বভারতী ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল এর চার পাশের গ্রামগুলোর মানুষের সাথে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে নিয়মিত চলত মিথষ্ক্রিয়া। সেখানকার করুশিল্পীদের সাথে ছিল তাদের যোগাযোগ। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে যেত চার পাশের গ্রামগুলোতে এবং শিক্ষালাভ করত প্রকৃতি থেকে। পৌষমেলা আয়োজনের লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থী ও আশপাশের গ্রামের মানুষের মাঝে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ গড়ে তোলা। পৌষমেলায় বিপণন চলত গ্রামীণ কারুপণ্যের। তৃতীয়ত, বিশ্বভারতীর পাঠক্রম অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অনুরূপ ছিল না। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠক্রম কঠোরভাবে কলা, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান শিক্ষায় সীমিত। কিন্তু বিশ্বভারতীর পাঠক্রম ছিল খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বহুমুখী। এর পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল তুলনামূলক ধর্র্মতত্ত্ব, ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাষা, ললিতকলা, ভাস্কর্য, কুটিরশিল্প এবং সর্বোপরি সঙ্গীত। এতে পড়াশোনা করেছেন অনেক বিখ্যাতজন। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন শান্তিনিকেতনে থেকে আশ্রম স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। বিখ্যাত মিডিয়া হাফিংটন পোস্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যারিয়ানা হাফিংটন এখানে পড়েছেন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব। চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় কলাভবনে তিন বছর পড়েছেন ললিতকলা। বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেছেন টানা ছয় বছর। এ ধরনের বৈচিত্র্যময় শিক্ষা ভারতের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজে পাওয়া যাবে না।

নরেন্দ্র মোদি এসব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ না করে নিজের ধারণাই প্রচারের প্রয়াস পেয়েছেন। তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন- বিশ্বভারতী অনন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, ছিল না জাতীয় প্রবণতা থেকে বিচ্ছিন্ন আলাদা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। তা প্রমাণ করতে তিনি একই সময়ে (১৯১৫-৩০) প্রতিষ্ঠিত বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নামোল্লেখ করেন। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতেও গ্রামীণ জনগণের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার অস্তিত্ব ছিল না। তাদের পাঠক্রমও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বহুমুখী ছিল না। এখানেই ভারতের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে- যেমন, ১৮৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়, ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বভারতী অনন্য এবং ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত লাহোরের ন্যাশনাল কলেজ অব আর্টস থেকেও ভিন্ন ধরনের।

নরেন্দ্র মোদি তার এই নির্বাচনপূর্ব ভাষণে নিজের উদ্দেশ্য সাধনের প্রয়াস থেকে একদম সরে আসেননি। তিনি তার ভাষণ শেষ করেন রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে : ‘ওরে গৃহবাসী, খোল দুয়ার খোল’। কিছু অর্ধসত্য, কিছু অতিকথন বা মিথ ও কিছু কল্পরচনার ওপর ভিত্তি করে দেয়া এই ভাষণে নরেন্দ্র মোদি কার্যত ভোটারদের কাছে আহ্বান রেখেছেন তার রাজনীতি ও দলের জন্য দুয়ার খুলে দিতে। তার এই দুয়ার খুলে দেয়ার আহ্বান ছিল একদেশদর্শী। কারণ, তার ভাষণে নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি বিশ্বভারতীর শত বছরের লালিত মর্যাদা রক্ষার প্রতি। নিশ্চয়তা ছিল না বিশ্বভারতীকে শান্তির পরিবেশে চলতে দেয়ার ব্যাপারে।

১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ মারা যান। এর এক বছর আগে তিনি মহাত্মা গান্ধীর হাতে একটি চিঠি তুলে দিয়েছিলেন। এই চিঠিতে তিনি লিখেন :‘Visva-Bharati is like a vessel which is carrying the cargo of my life’s best treasure, and I hope it may claim special care from my countrymen for its preservation’.

স্পষ্টতই তিনি বিশ্বভারতীকে তুলনা করেছেন একটি জাহাজের সাথে, যে জাহাজ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে রীন্দ্রনাথের সারাজীবনের অর্জিত সেরা সম্ভারে পরিপূর্ণ কার্গো। আর তার প্রত্যাশা হচ্ছে, দেশের মানুষ এর সংরক্ষণে অধিকতর যত্নশীল হবে। আজকের এই দিনে ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দায়িত্ব হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের সেই শেষ ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। বিশেষ করে মোদি যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট, তখন তার এ দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ কে, কী তার ধর্ম, কী তার চিন্তাচেতনা- এসব ভারতীয়র ভালো করেই জানা, তাকে কেউ জোর করে হিন্দুত্ববাদী বানাতে চাইলেই তিনি তা হবেন না। এ উপলব্ধি সবার থাকা উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement
মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ

সকল