২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সাম্প্রদায়িকতা, ভুল ব্যাখ্যার শিকার

-

মোটামুটি জনপ্রিয় অনলাইন একটা পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করেছি। সে সময়ের একটি অভিজ্ঞতা প্রায়ই মনে পড়ে। একদিন এক মেয়ে রিপোর্টার কোত্থেকে একটি বাল্যশিক্ষার বই নিয়ে এলো। বইটিতে লেখক মুসলিম শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দেয়ার জন্য পুরোপুরি ইসলামী অনুষঙ্গ ব্যবহার করেছেন। যেমন, স্বরে অ-তে ‘অজগরটি আসছে ধেয়ে’ বা এরকম অন্য কোনো ধর্মনিরপেক্ষ বাক্যের পরিবর্তে লিখেছেন, ‘অজু করে নামাজ পড়ি’। তেমনই স্বরে আ-তে লিখেছেন, ‘আল্লাহতা’য়ালার সেজদা করি।’ অথবা ক-তে ‘কালাম খোদার পাক কোরান’; খ-তে- ‘খাস দিলে হই মুসলমান’। না, আমি যেমনটা লিখলাম সেটি হুবহু উদ্ধৃতি নয়। আসলে বইটিতে লেখক কী কী বাক্য দিয়ে শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তা এখন আর মনে করতে পারছি না। তবে আমি ওই রিপোর্টারের রিপোর্টটি পড়েছিলাম। মেয়েটি সদ্য চাকরিতে ঢুকেছে। জীবনের প্রথম চাকরি। স্বাভাবিকভাবেই নিজের কাজ দেখানোর এবং নতুন কর্মক্ষেত্রে কিছু একটা করে দেখানোর প্রচণ্ড উদ্দীপনা তখন তার ধ্যানজ্ঞান। যে কোনোভাবে একটি রিপোর্ট লিখে একটু ‘নাড়াচাড়া দেবার’ ইচ্ছাও বোধ হয় প্রবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনো সে পড়ছে; পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি, নাটক ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটু একটু করে পা রাখার চেষ্টা করছে। সে ওই বইটিকে নিয়েছে একজন লেখকের সাম্প্রদায়িক চেতনার নমুনা হিসেবে। সেভাবেই লিখেছে, একজন লেখক, কতটা সাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হলে শিশুদের মন-মগজে এমন করে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে পারে, এই বই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একটি শিশুতোষ বইতে কেন সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো হবে সে প্রশ্ন তুলেছিল সে তার রিপোর্টে। রিপোর্টটি আমাকে দিলেন মুখ্য বার্তা সম্পাদক। বললেন, আপনি দেখে মতামত দিন, এটা রিপোর্ট হিসেবে কেমন এবং ছাপা ঠিক হবে কি না। আমি রিপোর্ট পড়ে বললাম, এটিতে সাম্প্রদায়িকতার কোনো ব্যাপারই ঘটেনি। এ বইতে সাম্প্রদায়িকতার ছিটেফোঁটাও নেই। বিষবাষ্প-টাষ্প তো দূর অস্ত।

মুখ্য বার্তা সম্পাদক জানতে চাইলেন, কেন বলছেন, সাম্প্রদায়িকতা নেই? তাকে বললাম, সাম্প্রদায়িকতা আর সম্প্রদায়ের প্রতি ভালোবাসা দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। আমি একজন মুসলমান, আমি আমার মুসলিম সম্প্রদায়কে ভালোবাসব, তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হবো, তাদের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়াব, মুসলিম সমাজের বা সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, বিকাশ এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য যা কিছু করণীয় তার সবই করব- এ আমার অধিকার। একজন মুসলিম হিসেবে আমি চাইতেই পারি যে, আমার ছেলে বা মেয়ে যেন ছেলেবেলা থেকেই তার মুসলিম পরিচয়টুকু জেনে নিতে পারে এবং সেভাবেই বড় হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য তার যে ধরনের বইপুস্তক দরকার তা আমাদের নেই। এই লেখক তেমনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন। এই চেষ্টাকে কোনোভাবেই ‘সাম্প্রদায়িক’ বলার সুযোগ নেই। কারণ জাতিসঙ্ঘ সনদ প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে তার ধর্ম, তার সংস্কৃতি, তার ভাষা, তার যাবতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ, পালন এবং তার বিকাশে কাজ করার অধিকার দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আমাদের যে জাতীয় সংবিধান তাতেও একই অধিকার দেয়া হয়েছে প্রতিটি ধর্ম বর্ণ জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে এ দেশের প্রতিটি মানুষকে। তাহলে এই লোকটি মানে লেখকটিকে কেন কাঠগড়ায় তোলা হবে? মুখ্য প্রতিবেদক আমার ব্যাখ্যা শুধু শুনলেন তা-ই নয়, একমতও পোষণ করলেন। কিন্তু পরে দেখেছি সেই রিপোর্ট ঠিকই প্রকাশ করা হয়েছে। এটিই হলো এখনকার বাংলাদেশের বাস্তবতা। কোনো বিষয়েরও ভেতরের সত্য-মিথ্যা কেউ খতিয়ে দেখার দরকার মনে করেন না। এই সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ এবং প্রতিক্রিয়াশীলতা এই শব্দগুলোর ভাগ্যেও সেটিই ঘটেছে। আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীল রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদরা বুঝেশুনে এবং ক্ষেত্রবিশেষে না বুঝে ধর্ম পালন ও ধর্মের অনুকূলে যে কোনো কর্মকাণ্ড করলেই তাকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এখানেও আবার একটু সূক্ষ্ম মোচড় আছে। আপনি যদি হিন্দু হন, খ্রিষ্টান হন বা অন্য কোনো ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় বহন করেন তখন কিন্তু আপনার ধর্মাশ্রয়ী কোনো কাজই সাম্প্রদায়িক হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। একজন হিন্দুর সন্তান তার নিজের ধর্মীয় অনুষঙ্গের উল্লেখে লেখা বর্ণশিক্ষার বই পড়লে সেটি দোষের নয়। একজন হিন্দু নারী তার ধর্মের রীতি অনুযায়ী শাঁখা পলা সিঁদুর পরলে তা কখনোই সাম্প্রদায়িকতা হবে না। কিন্তু একজন মুসলমান মেয়ে তার ধর্মের নির্দেশ মেনে আপাদমস্তক কালো বোরখায় আবৃত যদি না-ও হয়, নিছক মাথায় হিজাব পরলেও সেটি দোষের হয়ে যাবে। এমনকি স্কুলে ঢুকতে বাধা দেয়ার দৃষ্টান্তও এই ঢাকা শহরেই একাধিকবার দেখা গেছে। সহপাঠীরা তাকে ব্যঙ্গ করে বলবে, ঘোমটার নিচে খেমটা নাচে। প্রকারান্তরে তার মানে দাঁড়াচ্ছে, বাংলাদেশে মুসলমানদের ধর্ম-সংস্কৃতির চর্চা করাই সাম্প্রদায়িকতা।

অথচ সাম্প্রদায়িকতার সাথে যে বিষয়টি মূলত জড়িত সেটি হলো, কোনো একটি সমাজে বা দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তাকে আঘাত করে বা তার বিনাশ কামনা করে কোনো কর্মকাণ্ড চালায় সেটিকেই কেবল সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড বলা যেতে পারে। সাম্প্রদায়িকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিরা কিভাবে ভ্রান্তি ছড়িয়েছেন তার সামান্য নমুনা না দিলে এ লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। একটি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বাংলাদেশী অধ্যাপকের ভ্রান্তি ছড়ানোর নমুনা দিচ্ছি।

নিউইয়র্কের স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মো: নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের একটি বহুল জনপ্রিয় দৈনিকে লিখছেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা’ হচ্ছে সম্প্রদায়ভিত্তিক চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ড। আমি যে সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত সেটি বিশ্বে সবচেয়ে সেরা এবং আর সব সম্প্রদায় নিকৃষ্ট, এ ধারণায় বিশ্বাস স্থাপন। এরপর এ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে আমার সব কার্যপদ্ধতি পরিচালনা করা। এই চিন্তাটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। আমি যে সম্প্রদায়ের মানুষ সেটি ধর্মীয় বা জাতিগত যে ধরনের সম্প্রদায়ই হোক না কেন আমার সম্প্রদায়কে শ্রেষ্ঠ ভাবার মধ্যে কোনো সমস্যা থাকতেই পারে না। বরং উল্টো বলা যায়, আমার সম্প্রদায় যদি শ্রেষ্ঠ না-ই হবে তাহলে আমি সেই সম্প্রদায়ের সদস্য থাকব কেন? আমি তো ধর্মত্যাগ করতে পারি। আমার ধর্মের চেয়ে যেটি শ্রেষ্ঠ সেটি গ্রহণ করতে পারি। একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ তার জাতির সাথে সম্পর্ক অস্বীকার করে শ্বেতাঙ্গ হতে পারবে না কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের আদর্শ অনুসরণে জীবন গঠন করতে পারে। নিজের জাতিগত ও ধর্মীয় আদর্শকে শ্রেষ্ঠ মনে করি বলেই আমি এই সম্প্রদায়ের সাথে থাকব, অন্যথায় নয়। এ জন্যই জাতিসঙ্ঘের সর্বজনীন মানবাধিকার সনদে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে তার নিজের ধর্মবিশ্বাস, সংস্কৃতি আঁকড়ে থাকার এবং তার ভিত্তিতে জীবন পরিচালনার ও অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আসল কথা হলো, ড. নজরুল ইসলাম বা তার মতো পণ্ডিত ব্যক্তিরা দেশে প্রচলিত ভ্রান্তির রাজনীতির বাইরে যাওয়ার সাহস পান না। তারা জনপ্রিয়তার সহজ পথটিই গ্রহণ করেন। যেমন অধ্যাপক অজয় রায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রবীণ শিক্ষক ডয়েচে ভেলে রেডিওর ওয়েবসাইটে লিখছেন, ‘আমি সাম্প্রদায়িকতা বলতে যা বুঝি তা একাধিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ, হিংসা এবং একই বস্তু বা লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য পারস্পরিক প্রতিযোগিতা থেকে উদ্ভূত।’ খুব ভালো কথা, সাম্প্রদায়িকতার মূল সংজ্ঞার্থটি তিনি বুঝেছেন। কিন্তু তার পরেই যেসব কথাবার্তা বলেছেন, সেগুলোকে বুঝেশুনে ভ্রান্তি ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই বলার উপায় নেই। তিনি বলছেন, ‘নিজ কমিউনিটির, ধমের্র, শ্রেণীর মানুষের কল্যাণ ও স্বার্থ অর্জনের ... অ্যাটিচুডকেই বলা যেতে পারে নিখুঁত সাম্প্রদায়িকতা বা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, পারস্পরিক সাম্প্রদায়িক রেষ ও হিংসা।’ কী ভয়াবহ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বিবৃতি। আমাদের পণ্ডিতরা এভাবেই অবলীলায় আগাগোড়া মিথ্যার বাণিজ্য করে গেছেন, এখনো করে চলেছেন।

যারা এই বিষয়টি সত্যিই বুঝতে চান তাদের জেনে নিতে হবে, নিজের সম্প্রদায়কে ভালোবাসা বা তার কল্যাণে ও বিকাশে কাজ করাটা কখনো, কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িকতা নয়, বরং সংখ্যালঘুর অধিকার হরণ করে তার উন্নয়ন, বিকাশ ও স্বাভাবিক চর্চার পথে বিঘœ সৃষ্টিই হলো সাম্প্রদায়িকতা। আমাদের দেশে অনেক বড় জ্ঞানী গুণী পণ্ডিত এবং খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃত কেউ সাম্প্রদায়িকতার এই সংজ্ঞার্থটি তাদের কোনো লেখায় বা বক্তৃতায় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন না। বরং রাজনীতিকরা হীন রাজনৈতিক স্বার্থে যেভাবে সাম্প্রদায়িকতা শব্দটিকে প্রতিপক্ষরূপে ধর্মীয় ভাবাদর্শের রাজনীতি প্রতিহত করতে অবিরাম ব্যবহার করে চলেছেন সেভাবেই লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ সবাই একযোগে সেই রাজনৈতিক শক্তির ইচ্ছার কাছেই নিজেদের বোধবুদ্ধি সমর্পণ করে থাকেন। তারা সত্য গোপন করেছেন।

আমাদের সমাজে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের চেতনায়, মস্তিষ্কে-মগজে সাম্প্রদায়িকতার যে ভ্রান্ত রূপকল্প বদ্ধমূল হয়ে গেছে তার উদাহরণ হিসেবেই শুরুতে এক মেয়ে রিপোর্টারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছি। আজ বাংলাদেশে বাস্তবতা এটাই যে, মুসলমানের ছেলে বা মেয়ে হয়ে আপনি যদি কাব্যচর্চা করেন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে যান তো, আপনাকে নিজের ধর্মটাকে ঘরে রেখে যেতে হবে। কবিতায় ধর্মীয় অনুষঙ্গ প্রকাশ পায় এমন যে কোনো শব্দের প্রয়োগ সযত্নে পরিহার করবেন। নাটক-নভেলে নিজের ধর্মকে একটু ব্যঙ্গ, একটি বিদ্রূপ, একটু আঘাত করবেন তা হলেই না আপনার প্রতিষ্ঠার জায়গাটি নিশ্চিত হতে পারে। না হলে নয়। এ ক্ষেত্রে খুব মজার ঘটনা লক্ষণীয় সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে। কিছু তরুণ-তরুণীকে খুব কৌশলের সাথে মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়েছে এমন সব পোস্ট দিতে যা সাধারণ মুসলমান ছেলেমেয়েদেরকে নিজের ধর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। বিশেষ করে সাহসী, মেধাবী এবং তেজী যেসব মেয়ে সমাজ পরিবর্তনের দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ, তাদের টার্গেট করেছে ইসলামবিদ্বেষী শক্তি। এসব টার্গেটেড মেয়েদের কেউ কেউ ব্রা ও ব্লাউজ ছাড়া পাতলা শাড়ি পরে ছবি তুলে পোস্ট দিচ্ছে। কেউ হিন্দি ফিল্মের নায়িকাদের মতো পুরো পিঠ খোলা ব্লাউজ পরে পিঠের ছবি পোস্ট করছে। কেউ এমন সব গল্প-কাহিনী লিখছে যা তরুণ-তরুণীদের শুধু ধর্মবোধ নয়, সব রকমের নীতিনৈতিকতার বোধই মাথা থেকে ছুটিয়ে দেয়। আমরা ওই সব মেয়ে বা ছেলের সমাজ পরিবর্তনের সদিচ্ছার বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দিহান নই।

বরং এদের প্রতি মায়া ও দরদ বোধ করি এ জন্য যে, সত্য ও সুন্দরের যে রূপ আমাদের চিত্তে ও মননে স্থায়ী হয়ে আছে, তাদেরকে সেটি দেখাতে পারিনি। তাদের বোঝানোর মতো যোগ্যতা আমাদের নেই। তাই কাক্সিক্ষত শিক্ষাটাও আমরা তাদের দিতে পারিনি। বরং যারা ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতিসঞ্জাত মূল্যবোধের বিরোধী তারাই আমাদের এসব মেধাবী ও তেজোদীপ্ত ছেলেমেয়েদের মন-মগজ-হৃদয় অধিকার করে নিয়েছে। তাদের নাকের সামনে সমাজ পরিবর্তনের বিরাট একটি মহৎ কাজে শরিক হওয়ার মুলা ঝুলিয়ে দিয়ে তাদের ইসলামের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণধার তলোয়ারের মতো ব্যবহার করছে।

এতে যে কাজ একেবারে হচ্ছে না তা নয়। কেউ কেউ প্রকাশ্যে পোস্ট দিয়ে ইসলামের নিন্দামন্দ করে এর সাথে সব রকম সম্পর্ক ছিন্ন করছে। আর মুসলমানের ঘরে জন্ম নেয়ার কারণে কত তরুণ-তরুণী যে গোপনে মর্মবেদনায় ভোগে, লজ্জায় কুঁকড়ে থাকে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আমাদের সম্মানিত আলেমসমাজ বা ইসলামী দল এসব নিয়ে ভাবার দরকার মনে করেন না। নারীকে ঘরে আটকে রাখা, তাদের পর্দার গুরুত্ব, নামাজের মাসলা-মাসআলা শেখা কেন জরুরি, গান-বাজনা থেকে কেন দূরে থাকতে হবে সেসব বয়ান নিয়েই তারা মহাব্যস্ত। এ দিকে যে, লুঙ্গি খুলে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে সে দিকে তাদের বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।

ভ্রান্তির এই প্রলয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় থেকে কে এই জাতিকে রক্ষা করবে তা কোনোভাবেই ভেবে পাই না। ভরসা তো সেই এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহই। কিন্তু তিনি কোনো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরাই এ বিষয়ে সচেষ্ট হয়!।


আরো সংবাদ



premium cement