২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হিন্দুত্ববাদীদের চোখে মুসলমান ও খ্রিষ্টান

হিন্দুত্ববাদীদের চোখে মুসলমান ও খ্রিষ্টান - ছবি : নয়া দিগন্ত

মোহন ভগবত। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) প্রধান। ২০০৯ সালে থেকে এ পদে আছেন। গত শনি ও রোববার তিনি কলকাতা সফরে ছিলেন। হয়তো সেখানে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে গেছেন। এর বাইরে অন্য কিছু তার কাছে আশা করার সুযোগ নেই। এরও আগে তিনি সম্প্রতি ভারতের হিন্দি সাময়িকী ‘বিবেক’-এ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘ভারতের মুসলমানরা কন্টেন্ডেড, অর্থাৎ দ্বান্দ্বিক ও বৈপরীত্যপূর্ণ। ভারতে তাদের জন্য একটি স্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। আর সেটি হচ্ছে, ভারতে তাদের কেউ থাকতে চাইলে তাকে ‘হিন্দু সুপিরিওরিটি’ মেনে নিতে হবে।’ অন্যান্য ধর্র্মীয় গোষ্ঠীর প্রতি হিন্দু সুপিরিওরিটি মেনে নেয়া ও হিন্দুদেরকে অন্য সব ধর্মাবলম্বীদের ওপরে প্রাধান্য দেয়ার এই দাবি ভারতে নতুন নয়। শুরু থেকেই আরএসএস নেতাদের চিন্তাচেতনার অবিচ্ছিন্ন অংশ এই ‘হিন্দু সুপিরিওরিটি।

বলে রাখা ভালো, হিন্দুত্ববাদ আর হিন্দুধর্মীয় মতবাদ এক নয়। সব হিন্দু হিন্দুইজম তথা হিন্দু ধর্মমতে বিশ্বাসী, তবে সব হিন্দু হিন্দুত্ববাদ বা হিন্দুত্বে বিশ্বাসী নয়।

বিনায়ক দামোদর সাভারকার ছিলেন হিন্দু মহাসভার শীর্ষনেতা ও হিন্দুত্ববাদের জনক। তিনি মারা যান ১৯৬৬ সালে। সাভারকার তার লেখা ‘হিন্দুত্ব’ বইটিতে উল্লেখ করেন, “ভারতীয় মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা ধর্মান্তরিত হিন্দুদের বংশধর হলেও ‘হিন্দু নেশন’-এর অংশ হতে চাইলে তাদের জন্য হিন্দু সংস্কৃতি মেনে নেয়া এবং তাদের গোঁড়ামিপূর্ণ অন্ধ বিশ্বাস মোচন করা অপরিহার্য। তাদের ভারতকে দেখতে হবে শুধু মাতৃভূমি হিসেবে নয়, দেখতে হবে হলিল্যান্ড তথা পবিত্র ভূমি হিসেবেও।”

মাধব সদাশিব গুলওয়ালকার ছিলেন আরএসএসের দ্বিতীয় প্রধান। তার মৃত্যু ১৯৭৩ সালে। গুলওয়ালকার তার লেখা ‘বাঞ্চ অব থটস’-এ উল্লেখ করেছেন, ‘হিন্দুস্থানের অহিন্দু জনগোষ্ঠীকে অবশ্যই হিন্দু সংস্কৃতি ও ভাষা মেনে নিতে হবে; অবশ্যই সম্মান করতে শিখতে হবে এবং শ্রদ্ধা ধারণ করতে হবে হিন্দুধর্মের প্রতি; হিন্দু জাতি ও সংস্কৃতি ছাড়া অন্য কোনো ধারণা লালন ও ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে পারবে না; তাদের থাকতে হবে বিদেশী হিসেবে অথবা থাকতে হবে পুরোপুরি হিন্দু জাতির অধঃস্তন হয়ে; কোনো দাবিদাওয়া করতে পারবে না, কোনো বিশেষ সুবিধা পাবার অধিকারী হবে না, পাবে না কোনো অগ্রাধিকার আচরণ- এমনকি পাবে না নাগরিকত্বের অধিকারও।’

একই মাতৃভূমির সন্তান হয়ে কেউ ধর্মবিশ্বাসের কারণে নিজ দেশে নাগরিকত্ব পাবে, আবার কেউ পাবে না, তা সভ্য আচরণ হতে পারে না। কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা কিংবা ধর্মব্যবস্থার রীতিনীতির সাথেও তা যায় না। হিন্দুত্ববাদের এই নীতি জাতিসঙ্ঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণারও পরিপন্থী।

জাতিসঙ্ঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় বলা আছে : সব মানুষ জন্মে মুক্তভাবে, সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিয়ে। সব মানুষ এই ঘোষণায় উল্লিখিত সব অধিকার ভোগের অধিকার রাখে। সব মানুষের জীবনের অধিকার আছে। অধিকারী স্বাধীনভাবে ও নিরাপদে বাঁচার। অন্যান্য ন্যায্য অধিকার ভোগের পাশাপাশি তাদের আছে : শিক্ষার অধিকার, নিজস্ব ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির লালন ও চর্চার অধিকার, কাজ করার অধিকার, সমাজের সদস্য হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার, সরকারে অংশ নেয়ার অধিকার, সমবেত ও সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার, মতপ্রকাশের অবাধ অধিকার, সম্পদের মালিক হওয়ার অধিকার এবং বয়স, নারী-পুরুষ, বর্ণ, জাতীয়তা ও ধর্মবিশ্বাস নির্বিশেষে কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই সমান অধিকার ভোগের অধিকার। স্পষ্টতই এই মানবাধিকার ঘোষণায় স্বীকৃত এসব অধিকার হিন্দুত্ববাদীরা সর্বাংশে অস্বীকার করে।

স্বামী বিবেকানন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি হিন্দুত্ববাদীদের জেনে রাখাটা প্রাসঙ্গিক, “মানবজাতিকে শেখাতে হবে সব ধর্ম হচ্ছে ‘একত্ববাদ’ তথা ‘ওয়াননেস’-এর বিভিন্নমাত্রিক প্রকাশ। অতএব প্রত্যেকেই তার নিজের পছন্দের ধর্মপথটি বেছে নিতে পারে, যেটি তার কাছে সর্বোত্তম মানানসই বলে মনে হয়। আপনি যদি উপরিভাগের একটু নিচে গিয়ে তলিয়ে দেখেন, দেখতে পাবেন : নারী-পুরুষ, বিভিন্ন বর্ণগোষ্ঠী, উচ্চ-নীচ, ধনী-গরিব, ভালো-মন্দ, এমনকি মানুষ ও জন্তু-জানোয়ারের মধ্যেও একটি ঐক্য আছে। যদি আরো গভীরে তলিয়ে দেখেন, তবে দেখবেন, এর সবই ‘এক’-এর ভিন্নতা। আর যারা এই ওয়াননেস তথা একত্ববাদের ধারণা অর্জন করতে পেরেছে, তাদের আর কোনো অলীক বিভ্রম নেই।”

অন্য দিকে বরীন্দ্রনাথের বক্তব্য হচ্ছে, ধর্মমতে অসংখ্য বিভিন্নতা রয়েছে। কেউ তীর্থে যায়; পবিত্র হওয়ার জন্য গঙ্গাস্নান করে, অন্যেরা যায় মক্কায়। কেউ প্রার্থনা করে মন্দিরে, কেউ মসজিদে; কেউ শ্রদ্ধায় মাথা নোয়ায়, কেউ পড়ে বেদ, অন্যরা পড়ে কুরআন, কেউ নিজেকে বলে হিন্দু, কেউ বলে মুসলমান। তবে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাস : ‘সবজীবন এক- এই প্রকৃত বিশ্বাস লালনের মধ্যেই ‘হিন্দু ধর্মের প্রধান বিশ্বাসের মূল্য নিহিত রয়েছে, অর্থাৎ সব জীবনেরই সৃষ্টি এক সর্বজনীন সত্তা থেকে; সে সত্তাকে আল্লাহ, গড বা পরমেশ্বর যাই বলি না কেন।

রবীন্দ্রনাথ তার আরেক বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলেন, ভারতের উচ্চ আকাক্সক্ষাতাড়িত স্বাধীনতার ধারণা হচ্ছে আধ্যাত্মিক ঐক্যের বাস্তবায়ন। ভারতের এখনো যে মহা অর্জনটি বাকি, তা হচ্ছে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের ঐক্যবদ্ধ করা। আর এই ঐক্য আনতে হবে সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে।

তা হলে কথাটা দাঁড়াল, যে হিন্দুত্ববাদে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সুপিরিওরিটি মেনে নিতে বাধ্য থাকার কথা বলে এবং এই ধারণা ও সংস্কৃতির সাথে সাযুজ্য করে অন্যদের চলার দাবি করে, তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে সব বিভেদ ভুলে অভিন্ন মূল্যবোধভিত্তিক সর্বজনীন বিশ্বাস ও অধিকার নিয়ে ভারতবাসীকে জাতীয়ভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এতে আহ্বান আছে সহযোগিতার চেতনা নিয়ে পারস্পরিক সহাবস্থান বাস্তবায়নের। এখানে চলবে না ‘সুপিরিওর-ইফেরিওর’ নামের কোনো বিভাজন। বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ কিংবা এমনি আরো ভারতীয় মনীষীদের দাবিও এটাই। বিবেকবান সাধারণ মানুষও এমনটিই মনে করে।

ভারতীয় সংবিধান বলছে, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু সব দিক বিবেচনায় আরএসএস আইডিওলগ নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর একের পর এক বড় ধরনের আঘাত আসছে। দেশটিতে এখন চলছে হিন্দুত্ববাদী দর্শনের অনুশীলন। সে অনুযায়ী চলছে নতুন নতুন বিতর্কিত আইন প্রণয়ন। ২০১৩ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় তিনি নিজেকে ঘোষণা করেন ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে। সেটি স্বাধীন ভারতের প্রথম ঘটনা, যেখানে কোনো ব্যক্তি সাংবিধানিক পদে থেকে নিজেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। আরো উল্লেখ প্রয়োজন, ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি যিনি বা যারা গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করেন, তারাও নিজেদের হিন্দুত্ববাদী বলে বর্ণনা করেছিলেন।

সে যা-ই হোক, নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বে আরোহণের বিষয়টি আরএসএস ও এর অসংখ্য জানা-অজানা অঙ্গ সংগঠন উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে খোলা আকাশের নিচে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দিয়ে। আরএসএস নেতারা ঘোষণা দেন : পৃথ্বিরাজের শাসনের (১১৭৮-৯২) প্রায় এক হাজার বছর পর আবার ভারত হিন্দু শাসকের অধীনে এলো। আরএসএসের পদস্থ নেতা রাজেশ্বর সিং তো তখনই দিন-তারিখ উল্লেখ করে ঘোষণা করে বসেন : ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে শেষ দিন। এর পর ভারতে আর কানো মুসলমান ও খ্রিষ্টান থাকতে পারবে না। অতএব ওই সময়ের মধ্যে হয় তাদেরকে হিন্দুধর্মে ফিরে আসতে হবে, নয়তো তাদের ভারত থেকে বের করে দেয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে আমরা ভারতকে মুসলমান ও খ্রিষ্টানমুক্ত করব। এটিই আমার প্রতিজ্ঞা।’

আসলে এ প্রক্রিয়াই ভারতে এখন চলছে। প্রায়ই গণমাধ্যমে খবর আসছে মুসলমান বা খ্রিষ্টান পল্লীতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পুলিশ ও প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যাসহ বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করছে। ঘরওয়াপসি ও ঘৃণা কর্মসূচিও চলছে সমতালে। এথনিক ক্লিনসিং থেমে নেই। এসবই আরএসএসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেরই অংশ। এর জিনে রয়েছে সন্ত্রাসের বীজ। আরএসএসের নিজস্ব আর্কাইভ ঘাঁটলেও এর নিশ্চিত প্রমাণ মিলবে।

আরএসএস মহলে ডক্টরজি নামে পরিচিত কেবি হেডগিওয়ার ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আরএসএস। একসময় তার মেন্টর বিএস মুনজি এবং হিন্দুত্ববাদ ধারণার রূপকার সাভারকার ও হেডগিওয়ার নিজে ভারতীয় কংগ্রেসের রাজনীতি করতেন। কিন্তু হেডগিওয়ার একসময় কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যান। কারণ তিনি ছিলেন গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে। হেডগিওয়ারের লেখা জীবনীগ্রন্থে এ কথার উল্লেখ করেন তার কংগ্রেস ছাড়ার কারণ হিসেবে। তার বর্ণনায় জানা যায়, গান্ধী কাজ করেছেন হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পক্ষে। কিন্তু ডক্টরজি তাতে বিপদের আভাস পেয়েছিলেন।

এই হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতাগোষ্ঠী ঘোষণা দিয়েছিলেন, ভারত হবে একটি ‘হিন্দু নেশন’। ভারতে প্রধান শত্রু হবে মুসলমান ও খ্রিষ্টান। তাদের মতে, মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের এই জাতির বাইরে রাখার কারণ, এরা হিন্দু সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অথবা ধর্মের সাথে নিজেদের আত্তীকৃত করেনি। সাভারকার অভিমত দেন, ‘এদেরকে হিন্দু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া যাবে না; কারণ নতুন ধর্মীয় প্রথা গ্রহণের ফলে এরা পুরোপুরি হিন্দু সভ্যতায় (সংস্কৃতি) ফিরে আসতে পারবে না।’

এরা মনে করে ভারতীয় খ্রিষ্টান ও মুসলমানরা বিদেশী ধর্মানুসারী অভিবাসী এবং এরা ভারতীয় হিন্দু জাতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। মুসলমান ও খ্রিষ্টান সমস্যার মোকাবেলায় এরা সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায় নাৎসিবাদী ও ফ্যাসিবাদী ইহুদি বিশোধন প্রকল্পের মাঝে। ইতালীয় গবেষক মার্জিয়া ক্যাসোলারি মুনজির একটি ডাইরিভিত্তিক এক গবেষণায় সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছেন আরএসএস ও মুসোলিনির মধ্যে। তার গবেষণা মতে, আরএসএসের রাজনীতিক মুনজির সাথে ১৯৩১ সালের ১৯ মার্চ বেলা ৩টায় রোমে ‘ম্যান-টু-ম্যান’ যোগাযোগ ঘটে মুসোলিনির। মুনজির ডায়েরি মতে, তিনি মুসোলিনিকে বলেন, ‘আমি আজ সকালে ও বিকেলে দেখলাম ইতালীয় ফ্যাসিস্ট ইয়ুথ অরগ্যানাইজেশন ‘ব্যালিল্লা’ এবং ইতালীয় ফ্যাসিস্ট অরগানাইজেশনগুলো এবং আমি খুবই অভিভূত। ইতালির সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য এগুলো প্রয়োজন ...... প্রতিটি উচ্চাকাক্সক্ষী ও বিকাশমান জাতির জন্য এ ধরনের সংগঠনের প্রয়োজন রয়েছে...... মুসোলিনিকে মনে হচ্ছিল সন্তুষ্ট। তিনি বললেন, আপনাদের কাজ খুবই দুরূহ। তা সত্ত্বেও আমি চাই আপনারা শেষ পর্যন্ত সফল হোন।’

মুনজির ডায়েরির তথ্যমতে, রোম থেকে ফেরার পরপরই তিনি হিন্দু নেতাদের বললেন, ‘জার্মানির আন্দোলন এবং ইতালির ব্যালিল্লা ও ফ্যাসিবাদী সংগঠনগুলোর অনুকরণ করতে হবে। আমি মনে করি, এগুলো ভারতে সূচনা করার এটাই উপযুক্ত সময়। বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে এগুলো অবলম্বন করতে হবে।’

১৯৩৪ সালের ৩১ মার্চে মুনজি, হেডগিওয়ার ও লালু গোখলের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের বিষয় জার্মানি ও ইতালির আদলে হিন্দুদের সামরিক সংগঠন। বৈঠকে মুনজি আহ্বান জানান, তাদের ভারতজুড়ে হিন্দুইজমের প্রমিতকরণের ব্যাপারে কাজ করতে...... কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই আদর্শ কার্যকর করা যাবে না, যদি না পুরনো দিনের ডিক্টেটর শিবাজীর মতো কিংবা আজকের দিনের ইতালি বা জার্মানির ডিক্টেটর মুসোলিনি বা হিটলারের মতো হিন্দু স্বরাজ না থাকে...... কিন্তু এর অর্থ এই নয়, ভারতে তেমন কোনো ডিক্টেটরের উত্থান ঘটার আগে পর্যন্ত আমাদেরকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে...... আমাদেরকে সূত্রায়িত করতে হবে বৈজ্ঞানিক পরিকল্প এবং এ জন্য প্রপাগান্ডা চালিয়ে যেতে হবে......’

ইতালীয় গবেষক মার্জিয়া জানিয়েছেন, মুনজি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, হিন্দু সমাজের সামরিক পুনর্গঠন সম্পর্কিত তার ধারণা ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মান ও ইতালির সামরিক প্রশিক্ষণ স্কুলের প্রেরণাপ্রসূত। মুনজি তার ‘The Scheme of the Central Hindu Military Society and its Military School’-এর ভূমিকাংশে লিখেন : ‘This training is meant for qualifying and fitting our boys for the game of killing masses of men with the ambition of winning victory with the best possible causalities of dead and wounded while causing the utmost possible to the adversary; কী ভয়াবহ পরিকল্প?

সেই ভয়াবহ পরিকল্প নিয়ে আরএসএস নেতারা তখন থেকে আজো মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। মোদি সরকারের আমলে তা শতগুণে বেগবান হয়েছে। এর পরিণতিতে ভারতীয় মুসলমান, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়, আর ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ভারতের পরিণতিই বা কী হয়- সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।


আরো সংবাদ



premium cement