২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চীন-পাকিস্তান-ইরান ভূকৌশলগত জোট

চীন-পাকিস্তান-ইরান ভূকৌশলগত জোট - নয়া দিগন্ত

দুই আঞ্চলিক শক্তি ও এক পরাশক্তি, পাকিস্তান, ইরান ও চীন, তিনটি দেশ মিলে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার জোট গড়েছে। তিনটি আঞ্চলিক জোন দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে এদের অবস্থান। ইরানের কৌশলগত ও নিরাপত্তা প্রভাব রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে, রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রাচীন সভ্যতা ও কৃষ্টি যা বিশ্বসভ্যতার এক গৌরবময় অংশ। ইরানের সাথে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর আছে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধন- এসব মিলে ইরান আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবরোধ ও কোভিডের আক্রমণ সত্ত্বেও ইরান সামরিক শক্তিতে বলীয়ান। অবরোধ সত্ত্বেও কয়েকটি দেশে ইরান দেদার তেল বিক্রি করছে যার মধ্যে জাপান ও ভারত রয়েছে।

চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভেটো ক্ষমতা, বৈশ্বিক প্রভাব অনেক আগে রাশিয়াকে অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমকক্ষতা অর্জন করেছে। পুরো বিশ্বের সাথে অর্থনৈতিক-উন্নয়নের সংযুক্তকরণ প্রক্রিয়া দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তিতে পরিণত করেছে। পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর এক মুসলিম দেশ। সে জন্য মুসলিম বিশ্বে পাকিস্তানের আলাদা কদর রয়েছে। পাকিস্তান কয়েক বছরে ফাইটার জেট প্রকল্পে বিমান তৈরি করে অস্ত্রবিক্রির ফোরামে প্রবেশ করেছে, যা ভারতের নেই। ইউরোপে খাদ্য রফতানিতে ভারত-পাকিস্তান সমান। অর্থনীতি ও ডিফেন্স খাতে পাকস্তান আঞ্চলিক হাব। চীন ইরানের মধ্যবর্তী দেশ হিসেবে পাকিস্তান ত্রিশক্তির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। নতুনভাবে তেল-গ্যাস প্রাপ্তি ও চীনের রোডবেল্ট ইনিসিয়েটিভ পাকিস্তানি পণ্যের বিরাট সম্ভাবনা খুলে দিয়েছে।

চীন এবং ইরান ৪০০ বিলিয়ন ডলারের যে বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়েছে সে চুক্তিতে বাণিজ্যের সাথে সামরিক বিষয়ও সংযুক্ত। মূলত এ কারণে এবং অহেতুক দেরির কারণে রেল প্রকল্প থেকে ভারতকে বাদ দেয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপে পাকিস্তান উপকৃত হয়েছে। পাকিস্তানের সাথে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক বিষয়ে একাধিক চুক্তি রয়েছে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে বেলুচিস্তানে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করছে বলে পাকিস্তান অভিযোগ করে আসছে। চীনের সঙ্গে বর্তমান সুসম্পর্ককে পাকিস্তান উভয় দেশের আরো ঘনিষ্ঠতার একটি উপকরণ হিসেবে দেখছে। পাকিস্তানের সাথে সৌদি আরবের বিশেষ বন্ধুত্বের কারণে পাকিস্তান-ইরান সম্পর্কে অগ্রগতির পরিবর্তে অবনতি হয়েছিল, সাম্প্রতিক বিরোধের পর ইরান পাকিস্তানের সুসম্পর্কের বিষয়টি উপরে উঠে আসে। ইরানের সাথে সুসম্পর্ক হলেও পাকিস্তান সৌদি আরবের সাথে ব্যালেন্স রক্ষা করে চলার চেষ্টা করছে।

২০১৮ সালে ইয়েমেনে সেনা পাঠানোর রিয়াদের অনুরোধ পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করেছিল। তখন সৌদি জোট গঠিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইয়েমেনি হুতিদের নিঃশেষ করার ব্রত নিয়ে মাঠে নামে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মক্কা-মদিনা আক্রান্ত হলে যে কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বিষয়টি জানায় এবং ইয়েমেনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সেনা পাঠিয়ে যুদ্ধ করার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করে। অনেক মুসলিম দেশ সরাসরি এই জোটে অংশ নিতে অস্বীকার করে। গত বছর, ২০১৯ সালে ইরান কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন ছিনিয়ে নেয়ায় ভারতের সমালোচনা করে। ইরানের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে যখন অনেক মুসলিম দেশ কাশ্মির বিষয়ে মুখ খোলেনি। এটা আরো প্রমাণ করে যে, তেহরান নয়াদিল্লির সাথে জোট করে কোনো সুবিধা পাচ্ছে না, তখন ইসলামাবাদ তেহরান সখ্যতার বিষয়টি বৃদ্ধি পায়।

নিকট অতীতে কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও বিছিন্নতাবাদী দল, যাদের সাথে বিদেশী শক্তির ইন্ধনও রয়েছে তারা উভয় দেশের সীমান্তে রক্ষী ও সেনাদের ওপর হামলা চালিয়ে শিয়া-সুন্নি বিষয়টিকে উসকে দিয়েছে। এতে দুই দেশের সরকার ও জনগণের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে ঘটনাগুলো উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শেষ করে, কোনো সেনা সঙ্ঘাত হয়নি। মাত্র মাসখানেক আগে উভয় দেশ যৌথ সেনা টহল চুক্তি করেছে। দুই দেশে সৈন্যরা ইরান-পাকিস্তান সীমান্তে টহল দিয়ে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মোকাবেলা করবে। সম্প্রতি, বেলুচিস্তান প্রদেশে বালুচ বিছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী পাকিস্তানি বর্ডার ফোর্সের ওপর চড়াও হয় সেটি যৌথ সেনা দল সফলভাবে মোকাবেলা করে। উভয় দেশের এই অগ্রগতিকে চীন স্বাগত জানিয়েছে। পাকিস্তানের একটি বড় লাভ হলো যে ইরানের সহযোগিতায় বেলুচিস্তানের গোলযোগপূর্ণ সীমান্ত এখন আরো মজবুতভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে। এটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভ (বিআরআই) এবং চীন পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিইপিসি) একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবেও কাজ করছে। ইরানের বিআরআই ও সিইপিসিতে যোগদানের কারণে পাকিস্তানের বতর্মান এনার্জি সঙ্কটও বড় সহায়তা লাভ করবে। ইরান পাকিস্তানে ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম। তাছাড়া ইরান-পাকিস্তান গ্যাস প্রকল্পের ইরান অংশ ইতোমধ্যে সমাপ্ত করেছে। এটির নামকরণ করা হয়েছে ‘শান্তির পাইপলাইন’।

ত্রিশক্তি ভৌগোলিকভাবে, ভূরাজনৈতিকভাবে ও কৌশলগতভাবে বিশ্বের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করছে। তিন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে। সামুদ্রিক পথ, আন্তঃদেশীয় সমস্যার মধ্যে মিল রয়েছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে স্থলপথে তিন দেশের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠাও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখানকার কোনো সমস্যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে হঠাৎ উত্তপ্ত করে দেয়ার মতো। অনেক আঞ্চলিক সমস্যা চাইলে ত্রিশক্তি সমাধান করতে পারে। আফগান সমস্যায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সব পক্ষ জড়িত। সব দেশই আফগানিস্তানে শান্তি চায়। সব স্টেকহোল্ডার একত্র হয়ে কারা অশান্তির জন্য দায়ী চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। অশান্ত আফগানিস্তানের জন্য পাকিস্তান অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। চীন ও ইরানের নিরাপত্তাও আফগান ইস্যুর সাথে জড়িত। আফগান সমস্যা নিয়ে পাকিস্তান ও ইরান একই অবস্থানে ছিল না। কেননা পাকিস্তান ছিল তালেবানদের পক্ষে ইরান ছিল উত্তর অ্যালায়েন্সের পক্ষে। চীন আফগানিস্তানের সাথে জড়িত, কেননা চীন বেল্ট ও রোড প্রকল্পে আফগানিস্তানকে সংযুক্ত করতে চায়। আফগানিস্তানে শান্তি ও রাজনৈতিক স্থায়িত্ব না এলে প্রকল্পটি কার্যকরভাবে সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। চীন মধ্য-এশিয়ায়ও বিআরআই প্রকল্প কার্যকর করতে চায়। এসব স্থানে অশান্তি অর্থনৈতিক দুর্গতি থাকলে চীনের এ প্রকল্প সফলতার মুখ দেখবে না। তাই আফগানিস্তানসহ পুরো মধ্য এশিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ব্যাপারে চীন আগ্রহী। আফগানিস্তান অশান্ত হলে জিনজিয়াঙেও সমস্যা বাড়াবে। এ জন্য চীন চায় তাড়াতাড়ি আফগান সমস্যা শেষ হয়ে শান্তি ফিরে আসুক। মধ্য এশিয়ায় পাকিস্তান এবং ইরান উভয়েই বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চায়। তাই ত্রিশক্তির সম্মিলিত উন্নয়ন প্রচেষ্টা আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য বড় নিয়ামক হতে পাারে। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির ১৮ বছরেও শান্তি আসেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে ত্রিশক্তি কাজে নামতে পারে। এই প্রচেষ্টাতেও পাকিস্তান বড় ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তি আলোচনায় পাকিস্তান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘ভারতের এখানে কোনো কাজ নেই।’ যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানে অবস্থান এবং ভারতের সাথে সম্পর্ক আফগান পরিস্থিতিকে আরো অস্থির করে তুলেছে। এ জন্য ত্রিশক্তির প্রত্যেকটি দেশের স্বার্থহানি হয়েছে। এই অবস্থায় ত্রিশক্তি জোট গঠনে এগিয়ে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তি আলোচনায় পাকিস্তান মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। পাকিস্তান-রাশিয়া সাম্প্র্রতিক সামরিক মহড়া এতদঅঞ্চলে আবারও রাশিয়ার ফিরে আসা ও উন্নয়নে অংশীদারিত্ব করার বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়। ভারত নিজ স্বার্থের জন্য চেয়েছে আমেরিকার সেনা আফগানিস্তানে আরো সময়ের জন্য থাকুক। কেননা চীন ও পাকিস্তান কাশ্মির ও লাদাখ নিয়ে কোনো আগ্রাসন চালালে এই সেনা দল হয়তো কাজে আসতে পারে। ট্রাম্পের ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়া আঞ্চলিক কৌশলের জন্য সুখকর নয় বলে মনে করে এই ত্রিশক্তি। ভারত আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে নিজকে জাহির করতে চায়।

ভারত-চীন বিরোধে বহিঃশক্তি ইচ্ছা করেই যুক্ত হতে চায়। একইভাবে কাশ্মির নিয়েও ভারত-পাকিস্তান বিরোধে বহিঃশক্তি এগিয়ে আসতে চায়। এই রকম উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বেইজিংকে দুর্বল করার কিছু নিয়ামক ওয়াশিংটনের রয়েছে। ২০০৫ সালের ‘যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বেসামরিক পরমাণু চুক্তি’ এবং পরবর্তী রাজনৈতিক অগ্রগতি প্রমাণ করে যে ইরান-পাকিস্তান-চীনের সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলা একেবারে সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল অক্ষ ভারতকে অ্যাডভান্স ডিফেন্স সিস্টেম দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ‘বেনিফিট’ না পাওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান বা চীনের সাথে কোনো যুদ্ধে ভারতকে সমর্থন দেবে না। যুদ্ধের যেকোনো অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র চাইবে চীন যেন দুর্বল হয়ে পড়ে বা কোনো অঙ্গহানি ঘটে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ফ্রন্ট চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের জন্য থ্রেট হিসেবে কাজ করছে। তাই ত্রিশক্তির বলয় যেন আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। ভারতের সাথে চীনের সমঝোতা ও বন্ধুত্ব থাকলেও ‘ঢিমেতেতলা ও গড়িমসি’ চালের জন্য ভারত-চীন বন্ধুত্বে খরা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান চীন বন্ধুত্ব মজবুত। এখন ইরান যুক্ত হয়ে পাল্লা ভারী হলো। ইরানের অনেক ঝুঁকি রয়েছে। ওবামা থেকে শুরু হয়ে ট্রাম্প পর্যন্ত অবরোধের স্রোত প্রবাহিত হয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে। ইরানবিরোধী শক্তি মুজাহেদিন খালককে ইরানের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ইরান সময় অতিবাহিত করছে এবং ইসরাইল ইরানের সাথে একটি যুদ্ধ পরিচালনা করছে। বাইডেনের আমলে পরমাণু আলোচনা আবার শুরু হলেও রাতারাতি ইরানবিরোধী কার্যক্রম বন্ধ হবে এমন কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ঘায়েল করার জন্য ইসরাইল ও ভারতকে ব্যবহার করতে চায়। ভারত-চীন অনেক চুক্তি রয়েছে যেগুলো শুধু ‘পেপার ওয়ার্ক’। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইরান-পাকিস্তান-ভারত গ্যাসলাইন প্রকল্প মুখথুবড়ে পড়েছে। ত্রিশক্তি লক্ষ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া পলিসি সবসময় ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছে; ফলে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যাহত হয়েছে এবং শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়েছে। এতদঅঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, আরো একটি জোট তৈরি হচ্ছে যেখানে এই ত্রিশক্তি ছাড়াও রাশিয়া ও তুরস্ক যুক্ত হচ্ছে। রাশিয়ার ডিফেন্স অ্যানালিস্ট মাইকেল বরিস পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পলিসির কারণে রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্ক নিয়ে এই জোট হচ্ছে এবং ভারতকে বাইরে রাখা হচ্ছ।’ ভারতের সাথে কোনো পড়শির সুসম্পর্ক নেই। বরিস আরো জানান, মূলত মোদির রেসিস্ট পলিসি এই জোট গঠনের পিছনে কাজ করেছে। চীন সিপিইসিকে সার্থক ও কার্যকর করার জন্য সব কিছুই করবে। ভারত বাধা দিয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারবে না বরং অপদস্থ হবে। যেমনভাবে ইরানের রেল প্রকল্প থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার সাথে ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নতি হয়েছে। পাকিস্তান ও রাশিয়া সম্প্রতি নর্থ-সাউথ গ্যাস পাইপলাইন প্রজেক্ট (এনএসজিপিপি)-এর ২০১৫ চুক্তি সংশোধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করাচি থেকে কাসুর পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি রাশিয়ান কোম্পানিগুলোর জন্য পাকিস্তানের বাজার খুলে দেবে। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চুক্তি ছাড়াও রাশিয়া ও পাকিস্তান সামরিক চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। ২০১৮ সাল থেকে যৌথ মহড়ার জন্য পাকিস্তানে অবস্থান করছে রাশিয়ান সেনারা। পাকিস্তান আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হলে ওই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যেটার কারণে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে সামরিক বিনিময় কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়।

এই জোট গঠনে ইরানের দূত মুখ্য ভূমিকা নেন। তিনি ৫ রাষ্ট্র জোটের রূপরেখা তুলে ধরেন। জোটের মূল উদ্দেশ্য হবে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সমস্যা নিরসন। পাকিস্তানে ইরানের রাষ্ট্রদূত সাঈদ মোহাম্মদ আলী হোসেন ইসলামাবাদে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটে বলেন, ‘উন্নত ভবিষ্যতের জন্য এই ৫টি দেশের একটি জোট গঠন করার শক্তিশালী সব উপকরণ রয়েছে। তাছাড়া জোটের অর্থনৈতিক উন্নয়নও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক বছরে ইরান ও চীনের উপর কঠিন অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়েছে। ডলারের মান ধরে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের অর্থনৈতিক উত্থান এবং বেল্ট ও রোডের বিশ্বব্যাপী বিস্তারের কর্মসূচিতে ভীত। তাই ইরানকে পরাভূত করার জন্য এবং চীনকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য ওয়াশিংটনের এই প্রচেষ্টা। রাশিয়ার উপরও অবরোধ দেয়া হয়েছে তাই এই জোটে রাশিয়াও শামিল হয়েছে। ইরানের চবাহার বন্দর ও পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সোনালি দুয়ার খুলে দিয়েছে। দুটি প্রকল্পই চীনের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় হয়েছে এবং আরো সংযুক্ত উপপ্রকল্পের কাজ সমানে চলছে। এই দুটি প্রকল্পের কারণে মধ্য এশিয়া, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে সহজ চলাচল সম্ভব হবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব


আরো সংবাদ



premium cement