১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি যুগান্তকারী রায় ও কারা-সংস্কার

কেরাণীগঞ্জ কারাগার
কেরাণীগঞ্জ কারাগার - ছবি সংগৃহীত

গত ৮ নভেম্বর বিচারপতি জাফর আহমদ চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। ইয়াবা মামলায় দণ্ডিত আসামি মতি মাতবরের দায়ের করা এক রিভিশনের শুনানি শেষে এই ব্যতিক্রমী রায় দেয়া হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানিয়েছেন, এই রায়ে প্রবেশনের সুযোগ চেয়ে করা আবেদন গ্রহণ করে বিচারপতি আসামির রিভিশন খারিজ করে দেন এবং প্রবেশন আবেদন গ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালের প্রবেশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয় মাদক মামলায় প্রথম রায়। তিনি এই রায়কে ‘একস্ট্রিমলি প্রমিজিং অ্যান্ড গ্রাউন্ডব্রেকিং’ বল্লেখ করেন।

রায়টির মতে- পাঁচ বছরের দণ্ডিত আসামি মতি জেলে নয়, থাকবেন নিজ বাড়িতে, পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে। তবে তিনি তিনটি শর্তে একজন প্রবেশন অফিসারের অধীনে দেড় বছর বাড়িতে থাকার এ সুযোগ পাবেন। শর্ত তিনটি হচ্ছে- ৭৫ বছরের বৃদ্ধ মায়ের যত্ন নিতে হবে; দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হবে এবং নির্ধারিত বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে দেয়া যাবে না। এসব শর্ত মানতে ব্যর্থ হলে তাকে জেলে ফেরত যেতে হবে। এই রায়ে আসামির পাঁচ বছরের সাজা এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে বিচারপতি জাফর আহমদ চৌধুরী মতি মাতবরের জন্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে সমাজে বসবাসের অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করলেন।

এ মামলার বিবরণ মতে- ৪০১টি ইয়াবা বড়ি রাখার দায়ে মতি মাতবরসহ দু’জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর মামলা করে ঢাকার কোতোয়ালি থানার পুলিশ। ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি তাদের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন ঢাকার একটি আদালত। ওই বছরে আসামিরা আপিল করলেও তা খারিজ করে দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। এরপর ২০১৭ সালের ১ জুলাই মতি মাতবর হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। ওই বছরের ৯ জুলাই মতি জামিন পান। এর আগে তিনি ২০ মাস কারাভোগ করেছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেছেন, যেহেতু তার এটি প্রথম অপরাধ এবং আর কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই, তাই তিনি রিভিশনের শুনানিতে ‘প্রবেশন অধ্যাদেশ ১৯৬০’-এর ধারা ৫ অনুযায়ী প্রবেশন চেয়ে আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মতি মাতবরকে প্রবেশনে থাকার অনুমতি দেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক এবং আসামিকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা জেলা প্রবেশন অফিসার আজিজুর রহমান মাসুদের তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেন।

নানা কারণে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের রায়ের সংখ্যা বাড়ানো খুবই প্রয়োজন। প্রথমত, এতে অনেক অপরাধী সংশোধনের মাধ্যমে সমাজে ফিরে নতুন করে সুষ্ঠু ও আইনানুগ জীবনযাপনের সুযোগ পাবেন। দ্বিতীয়ত, দেশের কারাগারগুলোতে বিদ্যমান ‘ওভারক্রাউডিং’ সমস্যা সমাধানে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তৃতীয়ত, কারাগার ব্যবস্থাপনারও উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। সে কারণেই বলতে হবে- এই রায় যুগান্তকারী এবং রায় প্রদানকারী বিজ্ঞ বিচারক মোবারকবাদ পাওয়ার যথার্থ দাবি রাখেন। আমাদের প্রত্যাশা- অন্য বিজ্ঞ বিচারকরা যথাসম্ভব এ ধরনের রায়ের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে আগ্রহী হবেন।

উল্লেখ্য, আজকের দিনে বিশ্বের সব দেশেই এটি স্বীকৃত যে, কারাগার শুধু শাস্তিদানের স্থান নয়, এটি কার্যত একটি সংশোধনাগার। তাই ব্যবস্থাপনা এমন হওয়া উচিত, যেখানে কারাগার একজন অপরাধীকে আরো বড় মাপের অপরাধী না বানিয়ে তাকে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দেয়। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকার অবকাশ নেই। সে কারণেই দেশে দেশে এর আলোকে কারা-সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও কারাগার সংস্কারের বিষয়টি বহুল আলোচিত একটি বিষয়। তবে এ কথাও ঠিক- আমরা এখনো কারাগারকে সংশোধনাগার বানানোর পথে তেমন অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি। ফলে এমন কথা চালু আছে : ‘বাংলাদেশে ছোট অপরাধী কারাগারে গেলে ফিরে আসে আরো বড় অপরাধী হয়ে।’ ‘প্রবেশন অধ্যাদেশ ১৯৬০’ জারি করা হয়েছিল মূলত অপরাধীদের নিজেদের শুধরে নেয়ার সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই।

প্রবেশন হলো, অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সংশোধনী কার্যক্রম। এর আওতায় দণ্ডিত ব্যক্তির শাস্তি স্থগিত করে তাকে কারাগারের বাইরে রেখে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ দেয়া হয়। প্রবেশনের মাধ্যমে একজন অপরাধী দ্বিতীয়বার কোনো অপরাধ না করে নিজেকে সংশোধন করে হয়ে উঠতে পারেন একজন আইন মান্যকারী নাগরিক। মতি মাতবরকে কার্যত সে সুযোগ দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারপতি। আমাদের দেশে এই আইনি সুযোগ দেয়ার পথটি খোলা হয় ১৯৬০ সালের প্রবেশন অধ্যাদেশের মাধ্যমে। কিন্তু ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও এই প্রবেশনের রায় আমাদের আদালতগুলোতে ততটা বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ, এই অধ্যাদেশ জারির পর ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি- ১৯৬০ সালের প্রবেশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশে আলোচ্য রায়টি হচ্ছে দ্বিতীয় মাদক মামলায় ‘প্রথম রায়’।

বন্দীসংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া আমাদের দেশের কারাগারগুলোর অন্যতম প্রধান সমস্যা। কারাগারগুলোর ওপর থেকে এ চাপ কমানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের রায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। ছোটখাটো অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এ ধরনের আসামিকে সুনির্দিষ্ট কিছু শর্তাধীনে প্রবেশনের আওতায় কারাগারের বাইরে রাখলে তার সংশোধনের সম্ভাবনা আছে বলে বিচারক যদি মনে করেন, তবে এমন ব্যক্তিকে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশনে কারাগারের বাইরে থাকার রায় দিতে পারেন। শর্তগুলো পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন হতে পারে। কিন্তু শর্তগুলো যেন কঠিন না হয়, অপরাধী যেন তা সহজে পালন করতে পারেন। মতি মাতবরের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ বিচারপতি যথার্থ তিনটি শর্ত আরোপ করেছেন। এ ধরনের রায়ের চর্চা বাড়ালে কারাগারে বিদ্যমান ওভারক্রাউডিং অনেকটা কমিয়ে আনা যেমন সম্ভব, তেমনি সমাজে অপরাধীর সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এ কথা অনস্বীকার্য, এই করোনা মহামারীর সময়ে দেশের কারাগারগুলোতে বন্দীসংখ্যা কমিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই এই সময়ে লঘু অপরাধের কিছু বন্দীকে কারাগারের বাইরে প্রবেশনে পাঠানো যেতে পারে।

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বেড়ে চলার সাথে সাথে কারাগারগুলোতে বন্দীর সংখ্যাও নজিরবিহীন হারে বেড়ে চলেছে। প্রায়ই শোনা যায়- এসব কারাগারে যে পরিমাণ বন্দী থাকার কথা, সে সংখ্যা এর তিনগুণে পৌঁছেছে। কখনো কখনো সে সংখ্যা ত্রিগুণেরও উপরে চলে যায়। ফলে এই অতিরিক্তসংখ্যক বন্দীর জীবনযাপন যে দুঃসহ অবস্থায় চলে, এর খবর গণমাধ্যমের সূত্রে আমরা পাই। অনেক কারাগারে পালা করে বন্দীদের ঘুমাতে হয়। অনেক বন্দী তার জন্য প্রয়োজনীয় বালিশ ও কম্বল পর্যন্ত পায় না। একই বিছানা একাধিক বন্দীকে ভাগাভাগি করে ঘুমানোর জন্য দেয়া হয়। তবে যাদের টাকা আছে, তারা টাকার বিনিময়ে কারাগারে ‘রাজার হালে’ থাকেন। দুর্ভোগ যত গরিব বন্দীদের। এ ছাড়া কারাগারগুলোতে কায়েমি দুর্নীতির কারণে কেউ কেউ বিশেষ সুবিধাভোগী, আর কেউ কেউ সীমাহীন বঞ্চনার শিকার। এর পেছনে নানা কারণ। লোকসংখ্যা বেড়ে চলার সাথে সাথে বন্দীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, বিচারের আগেই বছরের পর বছর কারাগারে আটকে রাখা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলকভাবে আটকে রাখার প্রবণতা বেড়ে চলা এবং সমাজের অপরাধের পরিমাণও ব্যাপক বেড়ে যাওয়া।

বিচারপূর্ব সময়ে কাউকে কারাগারে আটকে রাখার ক্ষেত্রে তিনটি মূল বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রথমত, বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও বিচারপূর্ব কারাবন্দীর সংখ্যা সাজাপ্রাপ্ত বন্দীর সংখ্যার চেয়েও বেশি। এটি আন্তর্জাতিক মানের সাথে মানায় না। ১৯৬৬ সালে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত আইসিসিপিআর (ইন্টারন্যাশনার কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস) অনুযায়ী কিছু সুনির্দিষ্ট শর্তাধীনে বিচারপূর্ব সময়ে সীমিত পর্যায়ে কারাগারে আটক রাখা যেতে পারে। কিন্তু আমরা সেসব সুনির্দিষ্ট শর্ত না মেনেই বিচারপূর্ব সময়ে আসামিকে কারাগারে পাঠাচ্ছি। দ্বিতীয়ত, ‘ক্রিমিনাল-জাস্টিস’ প্রক্রিয়ায় বিচারপূর্ব সময়ে আটক রাখার ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। সে লঙ্ঘন আমাদের দেশে ব্যাপক। তৃতীয়ত, বিচারপূর্ব সময়ে আসামিকে নিরপরাধ বিবেচনার নীতি লঙ্ঘিত হয় তাকে এভাবে আটক রাখার মধ্য দিয়ে। সে জন্য শুধু সুনির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে বিচারপূর্ব আসামিকে কারাগারে পাঠানোর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে। এমনটি করা হলে কারাগারের ওভারক্রাউডিংয়ের তীব্রতা কমে আসবে। এ ছাড়া কারাগার ব্যবস্থাও বন্দীদের প্রতি অমানবিক আচরণের জন্য দায়ী। এর অবসান ঘটাতে দেশের নিজস্ব আইন, নীতিমালা ও অনুশীলন প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক আইনানুগ করতে হবে।

একটা সময় ছিল, যখন কারাগারগুলো তৈরি করা হতো অপরাধীদের শুধু শাস্তিদানের জন্যই। হিন্দু ও মোগল শাসনামলে অপরাধ দমনে ভারতবর্ষে অপরাধীর শাস্তি ছিল কঠোর- ফাঁসিতে ঝুলানো, হাতির পায়ের নিচে মাথা থেঁতলানো, চাবুক মারা, বেত্রাঘাত করা, নির্দয় প্রহার, গরম লোহার ছ্যাঁকা দেয়া অথবা না খেতে দিয়ে তিলে তিলে মেরে ফেলা। তখন কারাগারগুলো কার্যত ছিল বন্দী নির্যাতনশালা। হেন অমানবিক নির্যাতন নেই, যা সেখানে চালানো হতো না। কিন্তু একসময় অপরাধ দমনে এসব পদক্ষেপ ভুল প্রমাণিত হয় এবং নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে তা অগ্রহণযোগ্য বলে স্বীকার করে নেয়া হয়। শুরু হয় কারাগার সংস্কার। ভারতবর্ষে কারা সংস্কার শুরু করে ব্রিটিশরাই। নীতিগতভাবে তারা স্বীকার করে নেয়- অপরাধীকে কারাগারে পাঠানোর লক্ষ্য হচ্ছে, একজন অপরাধীকে আইনানুগ নাগরিক হিসেবে সমাজে ফিরিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে ১৮৩৬ ও ১৮৬২ সালে কারা-সংস্কারে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। এসব কমিটি ভারতের কারাগারগুলোতে বন্দী নির্যাতনের বিষয়টিকে ‘কারা-কর্তৃপক্ষের পাগলামি’ বলে মন্তব্য করেছে।

নানা কারণে, আজকের কারাগারগুলো আগের মতো নেই। কারাগারের অর্থ, বন্দীদের চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রাখা নয়। আধুনিক কারাগারগুলো এক-একটি সংশোধনাগার। আন্তর্জাতিকভাবে এগুলো পরিচিতি লাভ করছে ‘কারেকটিভ সেন্টার’ নামে। কোনো কোনো দেশে কারাগারগুলোকে বলা হচ্ছে ‘বন্দীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র’। বলা হচ্ছে, অপরাধীদের প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসনের উপযুক্ত করে তোলাই আজকের দিনের কারাগারের কাজ। এ লক্ষ্যেই কারাগারগুলোতে চলছে অব্যাহত সংস্কার।

কারাগারে বন্দীদের প্রতি আচরণ করতে হবে সাংবিধানিক ম্যান্ডেট অনুসারে। তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীকে সংশোধন করে সমাজে পাঠিয়ে দেয়া কিংবা সমাজে পাঠিয়ে দিয়ে তাকে সংশোধনের সুযোগ দেয়াই কারাগারের মুখ্য কাজ। সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের মধ্যে এক ধরনের অনুশোচনা সৃষ্টি হয়। বেশির ভাগ সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীই সমাজে ফিরে যেতে চান আইনানুগ নাগরিক হিসেবে। অল্প কিছু অপরাধী আছে, যারা চিরদিনই সমাজবিরোধী। এরা বারবার অপরাধ করে এবং বারবার কারাগারে যায়- এদের কথা আলাদা। কারা এই শ্রেণীর অপরাধী, তা বিচারকরা বোঝেন; সে অনুযায়ীই রায় দেন। কিন্তু বাকিদের বেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে, তাদের পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ দিলে তাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ভালো মানুষের কাতারে আনা সম্ভব। তবে প্রচলিত ধারার কারাগারে রেখে তা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন কারাগারগুলোর আধুনিক ধারার সংস্কার।

বাংলাদেশের কারাগারগুলোর প্রশাসন চলে ঊনবিংশ শতাব্দীর সেকেলে আইন ও ক্রিমিনাল-জাস্টিস সিস্টেমের মাধ্যমে। এ ব্যবস্থায় জোর দেয়া হয় রেস্টোরেটিভ জাস্টিসের বিপরীতে পিউনিটিভ জাস্টিসের ওপর। এখানে প্রাথমিকভাবে অপরাধ দমনে নজরটা থাকে অপরাধীকে কারাগারে পাঠানোর ওপর। এ ব্যবস্থায় দুটো বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রথমত, চাপ সৃষ্টি হয়েছে পুরো কারা-ব্যবস্থাপনার ওপর। দ্বিতীয়ত, চাপ পড়ছে বিচারব্যবস্থার ওপরও। লাখ লাখ মামলার দুঃসহ এক জট চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। অনেক বন্দী, বিশেষত গরিব বন্দীরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের অধিকার থেকে। বহু বন্দী বিনা বিচারে এত দীর্ঘদিন কারাগারে আটক রয়েছেন; যারা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের সাজার মেয়াদ হবে এর চেয়ে কম। এরা কোনো আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না। সুখের কথা, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা কমানোর অংশ হিসেবে এ ধরনের বন্দীদের খুঁজে বের করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এনজিওগুলো সে কাজে সরকারকে সহায়তা করেছে। এর ফলে ভুল নামে অন্যের অপরাধের কারণে অনেকে দীর্ঘদিন কারাগারে রয়েছেন- এমন অনেক বন্দী বেরিয়ে আসছেন।

এ ধরনের সংস্কারে আমাদের বেশ কিছু ক্ষেত্রে জরুরি নজর দেয়া দরকার। উদাহরণত এ ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে : কারাব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থায় বিদ্যমান সেকেলে আইনগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংবিধানের ম্যান্ডেট অনুসারে বন্দীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, রিমান্ড প্রক্রিয়ার সংস্কার, মহিলাদের জন্য আলাদা নিরাপদ কারাগারের ব্যবস্থা করা, শিশুদের জন্য বিশেষ সংধোনী কেন্দ্র নিশ্চিত করা, বিদ্যমান শিশু সংশোধনাগারগুলোর সংস্কার, কারাগারের চিকিৎসা প্রশাসনকে কার্যকর ও বন্দীবান্ধব করে তোলা, বন্দীদের ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, বন্দীদের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের সুযোগ নিশ্চিত করা, বন্দীদের আইনজীবী ও আত্মীয়স্বজনের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ-ব্যবস্থার উন্নয়ন, গরিব বন্দীদের প্রতিদিনের অভাব-অনুযোগের প্রতি মনোযোগী হওয়া, বন্দীরা যাতে কারাগারের বাইরে এসে কাজকর্ম করে বেঁচে থাকতে পারে সে জন্য উপযুক্ত বৃত্তিমূলক ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ দেয়া, দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে বাইরে আসা বন্দীদের ভালো থাকার হলফনামা আদায় ও অন্যান্য শর্তসাপেক্ষে পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা দেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা করা এবং কারাগারের কিছু লোকের কায়েমি দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। এসব বিষয়ে নজর দিলে কারাগার পরিস্থিতি নিশ্চিত উন্নত হবে। পাশাপাশি চালাতে হবে বিভিন্ন দেশের কারা-সংস্কারের সাফল্যের আলোকে আমাদের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করার সার্বিক সংস্কার।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সাথে টেস্ট খেলতে চান রোহিত অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামের বাসভবনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ইউক্রেনের ২০টি ড্রোন, ২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্কিৃয় করল রাশিয়া তালেবানকে আফগান মাটি অন্যদের ব্যবহারের সুযোগ না দেয়ার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের।

সকল