১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সম্ভাবনা?

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সম্ভাবনা? - নয়া দিগন্ত

২০২১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। আমেরিকায় জো বাইডেনের জয়ী হওয়া, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা প্রশ্নে ইসরাইলবিরোধী আরব জনমত সৃষ্টি, ইরানের আগ্রাসী ধরনের নীতি পদক্ষেপে কিছু আরব দেশের বিপন্নতা ইত্যাদি নতুন মেরুকরণের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে তার কিছু প্রাথমিক সঙ্কেতও সুস্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের এই সম্ভাব্য মেরুকরণের সাথে সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতির যোগসূত্র থাকতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার আগ্রাসী চীনবিরোধী নীতি, বিশেষত বাণিজ্যযুদ্ধ, বেইজিংয়ের ওপর একধরনের বিনিয়োগ ও বাজার অবরোধ, গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়ার নামে চীনা নাগরিকের ওপর অভিযান ও ভ্রমণ বিধিনিষেধ, সর্বোপরি করোনাভাইরাসের জন্য চীনকে দায়ী করে এক তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করেন। একই সাথে স্নায়ু দ্বন্দ্বের ফলে দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান ও ভারত সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। চীনের শি জিন পিং এসব ইস্যুতে নমনীয়তার পরিবর্তে প্রতি জবাব দেয়ার মতো নীতি গ্রহণ করেন। এতে করে, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শীর্ষ নিরাপত্তা বিশ্লেষক হেনরি কিসিঞ্জারের মতে, চীন ও আমেরিকার মধ্যে একটি বিপর্যয়কর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হতে পারে। কিসিঞ্জার মনে করেন, চীনের ব্যাপারে ট্রাম্পের মতো আগ্রাসী মনোভাব নেই বাইডেনের। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শেষ সময়ে এমন কিছু চীন বিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছেন ও নিচ্ছেন যেখান থেকে ইউ টার্ন করা পরবর্তী প্রশাসনের জন্য বিপর্যয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ছাড়া জো বাইডেনের মনোভাবও চীনের প্রতি পুরোপুরি ইতিবাচক এমন নয়। এই অবস্থায় কিসিঞ্জারের আশঙ্কা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের মতো একধরনের ধোঁয়াশা ও জ্ঞাত গন্তব্যহীন অবস্থায় দুই পক্ষ বিপর্যয়কর যুদ্ধে জড়াতে পারে।

কিসিঞ্জারের আশঙ্কা সত্যি হবে কি না নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। তবে চীনের এক ধরনের প্রস্তুতি ভেতর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে। ট্রাম্পের পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার সময়টিতে আসিয়ান ও আশপাশের ১৫টি দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীন। যার মধ্যে জাপান অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের মতো আমেরিকান মিত্র দেশও রয়েছে। এ চুক্তিতে ভারতকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে আবার ব্রিকসকে চাঙ্গা করার চেষ্টা হচ্ছে।

মার্কিন বলয়কে সর্বাত্মকভাবে মোকাবেলার প্রচেষ্টা সব সময় নিয়ে রেখেছে চীন। এর অংশ হিসেবে রাশিয়ার সাথে একটি কৌশলগত সমঝোতা গড়ে তুলেছে। ইরানের সাথে একটি দীর্ঘ মেয়াদি কৌশলগত সমঝোতায় উপনীত হয়েছে। এই সমঝোতার অংশ হিসেবে চীন জ্বালানির বড় অংশ নেবে ইরান থেকে। সেই সাথে ইরানে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করবে আর সেখানে একটি সামরিক ঘাঁটি রাখবে। এই সমঝোতার অনুল্লিখিত দিকটি হলো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব কাজে লাগিয়ে বেইজিং তার আধিপত্য বিস্তার ও সংহত করার প্রচেষ্টা নেবে।

ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লব হওয়ার পর থেকে এর বিরুদ্ধে মার্কিন-ইসরাইল এবং আরব দেশগুলোর বৈরিতা ছিল লক্ষণীয়। এর অংশ হিসেবে বিপ্লবোত্তর ইরানে ব্যাপক অন্তর্ঘাতী ঘটনা ঘটে, ইরাক-ইরান দশকব্যাপী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আয়াতুল্লাহ খোমেনির ইরান বিপ্লব রফতানির ঘোষণায় রাজতান্ত্রিক উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে আতঙ্কিত প্রতিরোধ প্রয়াস লক্ষ করা যায়, যা অনেক সময় জাতিগত ও রাষ্ট্রগত প্রতিহিংসা পদক্ষেপ পর্যন্ত গড়ায়। এই দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাতের পথ ধরে গত দুই দশকে মধ্যপ্রাচ্যে অনেক ভাঙচুর ও মেরুকরণের সৃষ্টি হয়। এই মেরুকরণে ইরানের দৃশ্যমান প্রতিপক্ষে পরিণত হয় একইসাথে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো এবং ইসরাইল। লক্ষ্য নির্ধারণের মাত্রায় ইরানের সামনে ইসরাইলের চেয়েও তাৎক্ষণিক প্রতিপক্ষে পরিণত হয় উপসাগরীয় আরব দেশগুলো, বিশেষত সৌদি আরব। এর মধ্যে ২০০২ সালে তুরস্কে ক্ষমতায় আসে ইসলামী পটভূমি থেকে গঠিত রক্ষণশীল দল একে পার্টি। দলটির নেতা রজব তাইয়েব এরদোগান তুরস্কের অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতার ভিত্তি মজবুত করার পাশাপাশি পররাষ্ট্র সম্পর্কে প্রভাব সম্প্রসারণের প্রতি মনোযোগী হন।

এ দিকে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হতে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি নিরাপত্তায় সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব কমতে থাকে। ওবামা-বাইডেন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে একনায়ক শাসিত দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি সমর্থন দেন একপর্যায়ে। এর ফলে আরব বসন্তের জের ধরে একাধিক আরব একনায়কের পতন ঘটে। সৌদি আরবসহ বেশ কিছু আরব দেশের রাজতন্ত্র হুমকিতে পড়ে যায়। গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় প্রকাশ্য ভূমিকা নেন তুরস্কের এরদোয়ান। এই পরিস্থিতিতে আরব শাসকদের বেশির ভাগ এবং ইসরাইল ইরানের চেয়েও তুরস্ককে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে। আর মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় আন্দোলন হিসেবে মুসলিম ব্রাদারহুডকে প্রধান প্রতিপক্ষ চিহ্নিত করে এই শক্তিটিকে দমন করার তৎপরতায় লিপ্ত হয়। মিসরে মুরসির নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে সিসির সামরিক অভ্যুত্থান এবং পরে ব্রাদারহুডের ওপর গণহত্যার মতো নির্বিচার দমন পীড়ন, সিরিয়ার বিদ্রোহীরা জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার পর রাশিয়ার বিমান আক্রমণ ও ইরান সহায়তাপুষ্ট হিজবুল্লাহর অভিযানে একবারেই তিন লাখ সিরীয় নিহত হওয়া এবং লিবিয়ায় খলিফা হাফতারকে দিয়ে রাষ্ট্র দখলের প্রচেষ্টার সাথে এর যোগসূত্র রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে আরব রাজতন্ত্রগুলোর সামনে একই সাথে দু’টি মুসলিম প্রতিপক্ষ হাজির হয়। এর একটি হলো শিয়া রাষ্ট্রশক্তি ইরান আর অন্যটি হলো মধ্যপন্থী সুন্নি রাষ্ট্রশক্তি তুরস্ক। এ সময়ে উগ্র ইসরাইল বান্ধব ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রশাসন আরব রাষ্ট্র ও সরকারগুলোর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ব্যবস্থাপত্র প্রদান করে। গোয়েন্দা সমন্বয় ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এই ব্যবস্থাপত্র বাস্তবায়ন চলে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম কয়েক বছর। এ সময় আরব-ইসরাইল আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে ফিলিস্তিনকে বিদায় করা হয়। শেষ পর্যন্ত আরব ইসরাইল আলোচনায় ফিলিস্তিন ইস্যু গৌণ হয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। আরো কয়েকটি আরব দেশের নাম এই প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এর মধ্যে জো বাইডেনের আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ নিশ্চিত হওয়ার পর অনেক হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইল লবি আইপ্যাকের সাথে জো বাইডেনের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে। তার বর্তমান স্ত্রীও একজন ইহুদি। তিনি গত ১৩ আগস্ট ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার সম্পর্ক সাধারণীকরণ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ যা উত্তেজনা ও মধ্যপ্রাচ্যের গভীর বিভাজনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে সহায়তা করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদানকে সাহসী কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তদুপরি, এমন কোনো লক্ষণ নেই যে বাইডেন প্রশাসন এই চুক্তিগুলোর (বাহরাইন এবং সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্ব অনুসরণ করেছে), ধারাবাহিকতা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। তবে উদার চিন্তা চেতনার নেতা জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র ধরনের ইসরাইল বান্ধব নীতি থেকে সরে আসতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি জবরদস্তি কোনো সমাধান চাপিয়ে দেয়ার পরিবর্তে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে আরব ইসরাইল একটি সমাধান চাইবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি খবরের উপর দৃষ্টি রাখলে মধ্যপ্রাচ্যে ভেতর থেকে কিছু পরিবর্তন ঘটার বিষয় দৃশ্যপটে আসতে পারে। দুই সপ্তাহ আগের খবর ছিল সৌদি আরব তুর্কি পণ্য বয়কটের একটি অনানুষ্ঠানিক তৎপরতা শুরু করেছে। অন্য দিকে খাগোশি হত্যাকাণ্ডের মামলা চাঙ্গা করার খবর আসে তুরস্ক থেকে। একই সাথে সৌদি দরবারি আলেমদের সংগঠন স্কলার্স ফোরাম মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত হিসেবে বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখান থেকে ধারণা তৈরি হয় যে তুরস্ক-সৌদি সম্পর্কের অবনতি ঘটতে চলেছে।

এর মধ্যে খবর আসে সৌদি বাদশাহ সালমানের সাথে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের লম্বা টেলিফোন সংলাপ হয়েছে। এই আলোচনায় তুর্কি পণ্য বর্জনের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে এবং দুই দেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য পরস্পরের সাথে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। একই সময়ে আরো দু’টি খবরের একটি হলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দেয়া হলেই সৌদি আরব ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয় বিবেচনা করবে। আর কাতারকে বয়কট করার বিষয়টির অবসান কিভাবে করা যায় সে বিষয়টি ভাববে রিয়াদ।

সর্বশেষ উন্নয়নের অন্তরালের যে খবর তাতে জানা যায়, ইসরাইলের নিরাপত্তা আশ্রয়ে থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত চাইছে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্য মুসলিম দেশগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নেতা হতে। এতে আরব বিশ্বে সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রক প্রভাবের যেমন ক্ষতি হবে তেমনি দেশটির জনগণের মৌলিক ভাবনা থেকে বিচ্যুত হয়ে ক্রমেই এক নিপীড়ক রাজতন্ত্রে পরিণত হবে সৌদি শাসন। এর চেয়ে সৌদি আরবের সাথে ঐতিহ্যগতভাবে মুসলিম ব্রাদারহুড ও অন্য ইসলামী সংগঠনগুলোর যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ছিল সেটি পুনর্নির্মাণ করা গেলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত এবং রাজতন্ত্রের পতনের ঝুঁকি অনেকখানি কমে আসবে বলে ধারণা করছে সৌদি রাজতন্ত্রের ক্ষমতাবলয়। নতুন মূল্যায়ন অনুসারে ইরান-তুরস্ক দুই শক্তির মোকাবেলা করতে গিয়ে ইসরাইলের নিরাপত্তা আশ্রয়ে যাওয়ার যে মূল্য সৌদি আরবকে দিতে হবে সেটি দেশটির আদর্শগত চেতনা এবং অখণ্ডতার বিবেচনায় অনেক বেশি।

নতুন ভাবনা অনুসারে সৌদি আরব আবার উম্মাহর মৌলিক এজেন্ডায় ফিরে আসতে পারে। ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতা দেয়ার ইস্যুকে আলোচনা-সমঝোতার সামনে নিয়ে আসবে। মুসলিম ব্রাদারহুডকে নির্মূল করার কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে আগের মতো রাষ্ট্র গঠনে সহযোগিতার সম্পর্ক নির্মাণ করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলের সহযোগিতায় তুরস্কের ক্ষমতা থেকে এরদোগান ও একে পার্টিকে আগামী নির্বাচনে বিদায় করে কামালপন্থী উগ্র ধর্মনিরপেক্ষ পিএইচপিকে ক্ষমতায় আনার যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তা থেকে সরে আসবে রিয়াদ। আঙ্কারাও সৌদি শাসনের সামনে বিদ্যমান ঝুঁকি অপসারণে সহায়তা দেবে। বিশেষত, ইয়েমেনে হুথিদের সাথে অব্যাহতভাবে চলমান যুদ্ধ অবসানে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। সিরিয়ায় প্রতিনিধিত্বমূলক একটি ব্যবস্থা এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসনে অভিন্ন ভূমিকা পালন করবে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে ফাতাহ ও হামাসের ব্যাপারে গঠনমূলক সহায়তা প্রদান করবে দুই দেশই।

এটি বাস্তবে রূপায়িত হলে মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি বলয়ে এখন যে বিভাজন রয়েছে, তা অনেকখানি কেটে যাবে। আমিরাতের ইসরাইলের এক্সটেনশন হিসাবে রাখা ভূমিকা উম্মাহর বড় ক্ষতির কারণ হতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক-সৌদি যৌথ শক্তি অনেক ইস্যুর নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

এ বিষয়গুলো সহজভাবে বাস্তবে রূপ নিতে পারবে এমনটি প্রত্যাশা করা যায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি সম্পর্কে যে ধারণা করা যায় তাতে এই অঞ্চলকে প্রত্যক্ষভাবে চীন-রাশিয়ার প্রভাব বলয়ের একতরফা নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখার জন্য ন্যাটো মিত্র তুরস্ক ও কৌশলগত আমেরিকান মিত্র সৌদি আরবের মধ্যকার দূরত্ব ঘোচানোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ওয়াশিংটনের সামনে।

আর বাইডেন প্রশাসন যদি ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তিতে ফেরত গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ভূমিকাকে প্রধান করে তুলতে চায় সে ক্ষেত্রে চীন-রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধির একটি ঝুঁকিও থেকে যেতে পারে। ফলে বাইডেন প্রশাসনের জন্যও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সৌদি-তুরস্ক সমঝোতার বিষয়টিকে সমন্বয় করে মধ্যপ্রাচ্য নীতি বিন্যাস করা আমেরিকান স্বার্থ অনুকূল বিবেচিত হতে পারে।

তবে কৌশল পরিবর্তনের কাজ সৌদি আরবের জন্য একেবারে সহজ হবে না। এর মধ্যে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে গিয়ে গোপন বৈঠক করেছেন সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের সাথে। ব্যক্তিগত জেটে সেখানে তিনি ইসরাইলি গোয়েন্দা প্রধানকেও নিয়ে যান। সেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও উপস্থিত ছিলেন। ইসরাইলি পত্রিকা হারেৎজ এ বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়নি, কেবল এই ইঙ্গিতটি দিয়েছে যে, এটি সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক নির্ধারণে ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। সম্ভবত সৌদি নীতি প্রণেতারা এখন ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার ব্যাপারে দু’টি রাস্তাই খোলা রাখতে চাইছেন। তুর্কি সৌদি কৌশলগত সমঝোতা হলে তার রূপ হবে এক রকম, আর ইসরাইলের নির্দেশিত পথ সৌদি ভাগ্য নির্ধারণ করলে সৌদি রাজতন্ত্রে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা হবে ভিন্নমুখী। এই পথ নির্ধারণে বাইডেন প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে।

mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement